কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস - Romantic Golpo

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৩

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৩
Rawnaf Anan Tahiyat

হসপিটালে ব্যস্ত হয়ে পায়চারি করছে হুমায়ূন কবীর। স্বামীকে এভাবে পায়চারি করতে দেখে ভয়ে বারবার ঢোক গিলতে লাগলেন সুইটি কবীর, না জানি আজকে আদরের মেয়ের কপালে কি আছে? রাগের বশে কি না কি করে বসেন তিনি সেটা ভেবেই ভয়ে বারবার কেঁপে উঠছেন সুইটি কবীর।প্রায় আধ ঘন্টা পর আই সি ইউ থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এলো।ডাক্তার কে দেখে হুমায়ূন কবীর তাড়াতাড়ি উনার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,,,

‘ আমি কি আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে পারি এখন?’
ডাক্তার উনাকে কিছু বলতে যাবেন তখন পিছন থেকে হাত নাড়িয়ে না করতে লাগলেন সুইটি কবীর, ইশারায় বললেন অনুমতি যেন না দেন। কিন্তু ডাক্তার সেটা বুঝতে পারলো না।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হাসিমুখে হুমায়ূন কবীর কে আই সি ইউ এর ভিতর যাওয়ার অনুমতি দিলেন, এরপর নার্স কে চলে আসতে বলে নিজের কাজে চলে গেলেন। হুমায়ূন সাহেব আই সি ইউ তে ঢুকতে যাবেন তখনই সুইটি কবীর এসে উনার হাতটা ধরে ফেললেন, অনেক অনুনয় বিনয় করা সত্ত্বেও হুমায়ূন সাহেবের মন গলল না।স্ত্রী কে কড়া করে শাসিয়ে গেলেন উনি না বলা পর্যন্ত যেন ভিতরে না ঢুকে কেউ, এরপর তিনি হনহন করে ভিতরে ঢুকে গেলেন।

‘ কি ব্যাপার কোথায় আপনে ডাক্তার সাব? তাড়াতাড়ি বাড়িতে আইয়েন,ভাত খাইবেন না আপনে?’
সকাল থেকে শিশু পার্কের বেঞ্চে শুয়ে ছিল তামিম। আশপাশের কোনো কিছু ভালো লাগছে না তার। শ্রেয়ার দেওয়া ধোঁকার কারণে প্রচুর কেঁদেছে এখানে এসে, এখন চোখ থেকে আর পানি ও পড়ে না। হসপিটাল থেকে ফোন আসছিল বারবার তাই রাগ করে ফোন সুইচ অফ করে রেখেছিল।

যাকে জীবনে সবথেকে বেশি ভালোবাসলো সেই যদি তার সাথে এমন করে তাহলে আর কিইবা আছে? বেশ কিছুক্ষণ ধরে পার্কে শুয়ে থাকার পর বিকাল তিনটার দিকে ফোন অন করলো তামিম। সাথে সাথেই MCA এর মেসেজ চলে এলো, রোজিনার কল এসেছে সাতটা + রাওনাফ প্রায় পঞ্চাশ টার মতো কল দিয়েছিল দুপুর দুটো পর্যন্ত। হঠাৎ করেই এতো গুলো কল রাওনাফের,বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো তামিম।

ওর যতদুর মনে পড়ে রাওনাফ তো ওর সাথে ভালো করে কথাও বলে না।ক্লাসে গেলে সাধারণত টিচার স্টুডেন্টদের সাথে যেভাবে কথা হয় রাওনাফ সেটুকুও করেনা তাহলে আজ হঠাৎ? চিন্তিত মনে রাওনাফ কে কল করতে যাবে ঠিক তখনই রোজিনার কল এলো।কল রিসিভ করার সাথে সাথেই রোজিনা বেশ লাজুক স্বরে উক্ত কথাগুলো বলে উঠলো।ওর কথাগুলো শুনে হেঁচকি উঠে গেছে তামিমের,,,

‘ কি হয়েছে বলতো তোর রোজিনা, তুই তো আগে আমাকে ভাইজান বলে ডাকতি তাহলে এখন হঠাৎ ডাক্তার সাব বলে ডাকছিস যে? আর আমি খাবো কি খাবো না সেটা তোকে এতো ভাবতে হবে না। তুই তোর কথা ভাব।’
‘ কি যে কন না ডাক্তার সাব, আমি লজ্জা পাই তো।আর কিছুদিন পর থেকে তো আমরেই আন্নের কথা ভাবতে অইবো তাই এহন থিকাই শুরু করছি।আর জামাইরে কি কেউ কহনো ভাইজান কইয়া ডাহে?এহন প্যাচাল বাদ দিয়া আন্নে বাড়িতে আইয়েন তাড়াতাড়ি। আম্মাজান আন্নের জন্যি চিন্তা কইরা শেষ হয়া গেছে।’

রোজিনার কথাগুলো শুনে বেশ জোড়ে জোড়ে হেঁচকি উঠতে শুরু করেছে তামিমের। মাথার তাঁর ছিঁড়ে গেছে মনে হচ্ছে রোজিনার নাহলে এরকম অসম্ভব কথা ভাবছে কি করে।আর কিছু বলার আগেই তাড়াতাড়ি করে কল কেটে দিল তামিম নাহলে ওর নিজের অবস্থাই খারাপ হয়ে যাবে এই পাগল মহিলার কথা শুনে।

তামিম কল কেটে দেওয়ার পর রোজিনা ফোন টা বুকে নিয়ে মুচকি হাসলো, ইশ্ কি লজ্জার ব্যাপার এটা। অবশেষে তামিম কে সে মুখ ফুটে সব বলতে পেরেছে,তাছাড়াও তামিমের মা আইরিন খালাম্মা ও তো রাজি এই ব্যাপারে নাহলে কি আর কালকে ওভাবে বলতেন তামিম কে।

তামিম ও রাজি মনে হচ্ছে সেজন্যই হয়তো লজ্জা পেয়ে কল কেটে দিয়েছে।আগেও যখনি রোজিনা ওর সামনে গেছে তামিম ওর দিকে তাকিয়ে থাকতো, ওর কত খেয়াল ও রাখে। সেবার জ্বর হলো যখন,তামিমই তো ওকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করলো। হসপিটালে নিয়ে যাওয়া, নিজেই সব কিছু করেছে, ওষুধ ও নিজেই লিখে দিয়েছে।

‘অন্য একটা মাইয়া ডাক্তার আসছিল দেখতে কিন্তু ডাক্তার সাব তো তারে দেখতে দেয় নাই, আমারে পছন্দ না করলে কি আর এমনেই এইসব করছে ডাক্তার সাব?’।

নিজের মনে এইসব বলে দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো রোজিনা। একটু দূরে দাঁড়িয়ে বেশ অনেকক্ষণ ধরে রোজিনা কে লক্ষ্য করছিল সারাহ্।কার সাথে যেন কথা বললো আবার এখন আপন মনে কি ভেবে আবার লজ্জা ও পাচ্ছে। কারো সাথে আবার প্রণয়ে জড়িয়ে পড়লো নাকি রোজিনা আফায়? ওর দিকে এগিয়ে যেতে ধরলো তখনি ভিতর থেকে আইরিন বেগমের ডাক পড়লো।

‘প্রিয়ু, এই প্রিয়ু। কোচিং এ যাবি না আজকে?’
চারটার দিকে প্রিয়া কে টেনে ঘুম থেকে উঠালো রাওনাফ। সেই কখন থেকে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে, উঠার কোনো নাম গন্ধ নেই। সকাল থেকে দুপুর অবধি ধৈর্য নিয়ে প্রিয়াকে মোটিভেট করেছে রাওনাফ, বিয়ের শকিং টা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে রাওনাফের মোটিভেশন এ। কোমলমতি বয়সী প্রিয়া,তাই খুব সহজেই কনভার্ট হয়ে গেছে ওর দিকে। দুপুরে খাবার পরে নিশ্চিন্ত হয়ে সেই যে ঘুমাতে লেগেছে একবার ও উঠেনি।

অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরেও উঠলো না প্রিয়া, একবার চোখ খুলে বললো’ আজকে কোচিং বন্ধ’ এরপরই আবার ঘুমিয়ে গেল।ওর সাথে না পেরে বাসার পিছনের বাগানে এসে বসলো রাওনাফ। পুরো বাসায় দুটো মাত্র প্রাণি,প্রিয়া আর রাওনাফ। তন্মধ্যে প্রিয়া ঘুমাচ্ছে,বাকি আছে সে।

মালিয়া বাজারে গেছে কেনাকাটা করতে, এখনও আসেনি। সময় কাটানো টাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যার,মগজ আঁতিপাঁতি করতে একটা উপায় এলো তার মাথায়। তামিম স্যার কে আবার কল করা যাক, তিনটা অবধি তো ফোন বন্ধ ছিল উনার,এখন খুললে খুলতেও পারে। প্রিয়ার সমস্যা টা নিয়ে তামিমের সাথে কথা বলতে চাইছিল রাওনাফ তাই কতবার যে কল দিলো কিন্তু বারবার ফোন সুইচ অফ বলছে। এখন আবার চেষ্টা করলো।

কল দেওয়ার পর কলটা ঢুকলো এবার, কেমন যেন একটা ভয় ভয় লাগছে তার। যেখানে স্যার এর সাথে কখনো ভালো করে কথাই বলে না সেখানে উনার সাথে কল এ কথা………….. একটু পরেই কলটা রিসিভ হলো। খানিকটা ভয় পাওয়া গলায় বলল,,

– হ্যালো,স্যার আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন স্যার?
– ওয়ালাইকুমুস সালাম, আমি ভালো আছি আর কি। তুমি কেমন আছো?
– আমি ভালো।স্যার আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল, আপনি কি রোজ ভিলায় আসবেন একটু?
রোজ ভিলা? নাম টা শুনেই চমকে উঠলো তামিম। এটা তো প্রিয়াদের বাসা। তাহলে কি রাওনাফ প্রিয়াদের বাসায় আছে আর প্রিয়ার সাথে রাওনাফেরই বা কি সম্পর্ক? তামিম কে চুপ করে থাকতে দেখে রাওনাফ আবার জিজ্ঞেস করলো,,,

– কি হয়েছে স্যার? আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না,হ্যালো?
তামিম কলটা কেটে দিল।রাওনাফ প্রিয়ার কি হয় সেটা আগে জানতে হবে নাহলে অনেক প্রবলেম ফেস করতে হবে তাকে।

হঠাৎ করে এভাবে কল কেটে দেওয়ায় রাওনাফের মনটা খারাপ হয়ে গেল,রোজ ভিলার কথা শুনে স্যার এমন করলেন কেন মাথায় এলো না। ঠিক তখনি প্রিয়া রাওনাফের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।এক মনে তামিমের কথা ভাবছিল রাওনাফ হঠাৎ করে কেউ কোলে মাথা রেখেছে এটায় ভয়ে চি’ৎ’কা’র করে উঠল।

‘আপাই, আমি প্রিয়া। চেঁ’চা’লে কেন?’
‘ ত তুই, তুই এখানে কি করছিস? তুই না ঘুমিয়ে ছিলি?’
‘ ছিলাম কিন্তু এখন নেই। তুমি যা অ’ত্যা’চা’র করলে তখন এরপর আর ঘুমানো যায় নাকি?’
খানিকটা রাগ নিয়ে কথাটা বললো প্রিয়া।রাওনাফ পিচ্চির অভিমান দেখে মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

‘ কি করবো বল, এখানে তো কেউ নেই। এভাবে একা একা ভালো লাগে?’
‘ কিন্তু আমি তো সবসময় এরকম একাই থাকি।কই আমার তো খারাপ লাগে না।বাদ দাও,আপাই তুমি একটু আগে কার সাথে কথা বললে ফোনে?’

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ২

‘ ড. তামিমুল ইসলাম মাহিনের সাথে।’
প্রিয়া চকিত চাহনি নিয়ে রাওনাফের দিকে তাকালো।ড. তামিমুল ইসলাম মাহিন মানে…………………..

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.