কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস - Romantic Golpo

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৪

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৪
Rawnaf Anan Tahiyat

আই সি ইউ তে হাত পা কুঁকড়ে বেডে বসে আছে শ্রেয়া।গালে হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে, চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ওর। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে হুমায়ূন সাহেব গলায় সর্বোচ্চ জোড় লাগিয়ে ধমক দিলেন। কিছুক্ষণ আগে আই সি ইউ তে ঢুকে বেশ কিছুক্ষণ ব’কা’ব’কি করে কয়েকটা চ’ড় থা’প্প’ড় ও লাগিয়ে দিয়েছেন।

ফলস্বরূপ এখনও কেঁদে চলেছে।শ্রেয়ার এই ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না টা সহ্য হচ্ছে না আর হুমায়ূন সাহেবের। উনার সব জায়গায় মান সম্মান সব শেষ করে দিয়েছে এই মেয়ে,সব জায়গায় বলাবলি করছে যে হুমায়ূন কবীরের মেয়ের চরিত্র খারাপ। নাহলে কি শুধু শুধুই আর বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়?এরই মাঝে ডাক্তার চলে এলো।ডাক্তারের সাথে কিছু কথা বলে শ্রেয়া কে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলেন হুমায়ূন সাহেব।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এই মেয়েকে হসপিটাল থেকে নিয়ে গেলেই বাঁচেন তিনি।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘আপাই তুমি ড. তামিমুল ইসলাম মাহিনের সাথে কথা বলছিলে?’
‘ হ্যা রে। কিন্তু তুই এতে এতো অবাক হয়ে যাচ্ছিস কেনো, তুই আবার আমাদের মাঝে অন্য কিছু ভাবছিস নাকি পিচ্চি? ওরকম কিছু নাহ। উনি আমাদের মেডিক্যাল কলেজের টিচার আর আমি উনার সাথে একটা ইমপোর্টেন্ট বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু উনি রোজ ভিলার নাম শুনেই ফোন টা কেটে দিলেন। হঠাৎ করেই কি হলো স্যারের কে জানে, নাকি নেটওয়ার্ক এর জন্য কেটে গেল বুঝতে পারলাম না।’

রাওনাফের কথা শুনে প্রিয়া ওর কোল থেকে উঠে বসলো। তামিম কেন কল কেটে দিয়েছে সেটা সে স্পষ্ট বুঝতে পারলো, এই বাসাটা যে প্রিয়ার।যাকে সে এংগেজমেন্টের অনুষ্ঠানে ওভাবে অপমান করলো আর তার কাজিন কে বিয়ে করতে চাইলো তার বাসার নাম শুনলে সে কল কাটবে না এমনটা হতেই পারে না।

‘ এই বাসায় আসার কোনো মুখ নেই উনার তাই ওভাবে কল কেটে দিয়েছে।’
‘ কি বললি?’
মনে মনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মুখ ফসকে কথাগুলো বেরিয়ে এলো,প্রায় সাথে সাথেই দুহাতে মুখ চেপে ধরল প্রিয়া।রাওনাফ ওর দিকে তাকিয়ে আছে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে,রাওনাফ ও বুঝতে পারছে না প্রিয়া এটা কেন বললো।ফের জিজ্ঞেস করল তাকে,, ‘ কিরে বল, তুই এটা কেন বললি?’

‘ আরেহ না আপাই। আমি বললাম যে উনার হয়তো বা ফোনে নেটওয়ার্ক ছিল না তাই কল কেটে গেছে,ব্যাস।এতে এতো চিন্তা করার কি আছে বলোতো? আচ্ছা তুমি এসব বাদ দাও আপাই আর বাসায় চলো তো। আমার খিদে পেয়েছে খুব,খাবো এখন,চলো।’

রাওনাফ আর কথা না বাড়িয়ে প্রিয়ার সাথে বাসায় ফিরে এলো। কিন্তু তার মনে একটা খটকা রয়েই গেল প্রিয়ার কথা শুনে।সে স্পষ্ট শুনেছে প্রিয়া কি বলেছিল কিন্তু হঠাৎ করে এভাবে কথা ঘুরিয়ে ফেললো কেন ও?ও কি আগে থেকেই চিনতো ওকে নাকি ওদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছিল আগে? তাছাড়া ও মামার কাছ থেকে তো এংগেজমেন্টের অনুষ্ঠানে ঘটা সব কিছুই শুনেছে,প্রিয়ার হবু বর একজন কার্ডিওলজিষ্ট ছিল সেটাও বলেছে মামা।

তার জন্য মামাকে অনেক ব’কে’ছে রাওনাফ যে এতো বড় বয়সের একজনের সাথে ওর বিয়ে দিতে চাইছিল কিভাবে। কিন্তু মামা ওকে এটা বলেনি যে বরের নাম কি ছিল বা সে কে আর বর কাকে ওইদিন প্রপোজ করেছিল প্রিয়া কে রেখে। এদিকে আবার হুমায়ূন মামা ও ওকে কালকে ওদের বাসায় যেতে বলেছে ইমিডিয়েটলি। এইসব কি হচ্ছে তার আশপাশে সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না আজকাল।

‘ আম্মাজান,ও আম্মাজান আপনে কই গেছেন,তাত্তাড়ি বাইতে আইয়েন। আপনের ছেলে বাইতে আইছে মাত্তর।’
সকালের দিকে বাগান থেকে কিছু গোলাপ আর কৃষ্ণচূড়া ফুল তুলে আনতে গেছিলেন আইরিন বেগম , তখনই রোজিনার চেঁচামেচি।

কাল থেকে রোজিনার ব্যবহারে বাসার সবাই সহ তিনি ও অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছেন। আগে যাকে যা বলে ডাকতো তাদের কে সে এখন অন্য নামে ডাকা শুরু করেছে।তাকে ডাকতো খালাম্মা আর সোবহান চৌধুরী কে ডাকতো খালুজান। কিন্তু কাল থেকে উনাকে ডাকছে আম্মাজান আর সোবহান চৌধুরী কে ডাকছে আব্বা, রীতিমতো পরিবর্তন।ওর ডাকে অতিষ্ঠ হয়ে বাসায় ফিরলেন তিনি।

‘ কি হয়েছে রে তোর , এতো চেঁচাচ্ছিস কেন?’
‘ ও আম্মাজান আপনের ছেলে আইছে।দেহেন না কালথে না খাইয়া শরীলের কি অবস্থা করছে, চোখ মুখ শুকাই গেছে গা।দেহেন তো কি কান্ড?’
‘ চুপ কর আর এখান থেকে যা।’

আইরিন বেগমের ধ’ম’ক শুনে রোজিনা মুখ কালো করে সেখান থেকে চলে গেল। তামিম বসার রুমে সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে ছিল । আইরিন বেগম ছেলের পাশে এসে বসলেন, ছেলের দিকে ভালো করে তাকালেন এবার। একদিনেই কি অবস্থা হয়ে গেছে চেহারার, চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। এমনিতেই রোগা পাতলা চেহারা, তার উপর মনে হচ্ছে কালকে সারাদিন রাত না খাওয়া ছিল, কারণ তামিম কখনো বাইরের খাবার খেতে পারে না, ওর পেটে সয় না সেটা। কাঁধে হাত রেখে বললেন,,

‘ তুই এমনটা কেন করলি তামিম? একবার ও কি আমাদের সম্মানের কথা ভাবলি না তুই, কেন প্রিয়া কে বিয়ে টা করতে রাজি হলি না?’
তামিম মায়ের প্রশ্নে চোখ খুলে তাকালো মায়ের দিকে। তারপর হঠাৎ করেই মা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। কাঁদতে কাঁদতে ই বললো,,,

‘ আমি কিচ্ছু জানি না মা, আমি কিছু বুঝতে পারছি না আমার সাথে এসব কি হচ্ছে?মা আমি শ্রেয়ার সাথে কোনোরকম শারীরিক সম্পর্কে জড়াইনি তুমি বিশ্বাস করো। তুমি ই বলো আমি কি আমার রেপুটেশনের কথা একবার ও চিন্তা করবো না, আমি একজন ডক্টর হয়ে কিভাবে এটা করতে পারি তুমি ই বলো?মা আমি প্রিয়াকে বিয়ে করতে চাইনি সে আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট বলে,তার থেকেও বড় কথা আমি শ্রেয়া কে খুব ভালোবাসি মা।শ্রেয়া আমাকে এভাবে কেন ঠকালো?’

‘ তুই শুধু তোর ভালোবাসার কথা টা ভাবলি।তোর বাবা তোর নাজিম আঙ্কেল কে কথা দিয়েছিলেন যে তিনি তোর সাথে তার মেয়ের বিয়ে দেবেন। তুই সেটা রাখতে পারলি না।আর তুই যে ওরকম কিছু করবি না সেটা আমি জানি,তোর প্রতি সে বিশ্বাস আমার আছে। তুই এখন গিয়ে তোর বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নে তামিম আর প্রিয়া কে বিয়ে করতে রাজি হ।’

তামিম মা’কে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে নিলো।চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ। তামিমের মৌনতা দেখে আইরিন বেগম জিজ্ঞেস করলেন,,
‘ তামিম, তুই কি আমার কথা শুনবি না?’

‘ মা, আমি প্রিয়া কে বিয়ে করলে যদি তোমাদের সম্মান বেঁচে যায় তাহলে আমি ওকে বিয়ে করব কিন্তু মনে রেখো আমি কখনও ওকে ওয়াইফ হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।কজ সে আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট।’
আইরিন বেগমের মুখে হাসি ফুটে উঠল তামিমের কথা শুনে। মনে হলো যেন বুকের উপর থেকে বড় একটা বোঝা নেমে গেল। তামিম কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেল, আইরিন বেগম খেতে বললেন কিন্তু ও ফ্রেশ হয়ে পরে খাবে বলে চলে গেল।

‘প্রিয়া চল এক জায়গায় যাবো।’
সকালের ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসে প্রিয়া কে বললো রাওনাফ। নাজিম সাহেব,রাওনাফ, মালিয়া আর প্রিয়া একসাথে বসে সকালের নাস্তা করছিল তখন রাওনাফের হুমায়ূন মামার বাসায় যাওয়ার কথা খেয়াল হলো। মনে হতেই টুক করে কথাটা বললো। নাজিম সাহেব জিজ্ঞেস করল কোথায় যাবে, তখন রাওনাফ বললো,,,

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৩

‘ হুমায়ূন মামা আজকে তার বাসায় যেতে বলেছে মামা।একা একা যেতে ভালো লাগে না আর প্রিয়া ও তো আমি চলে গেলে বাসায় একা হয়ে যাবে।তাই ভাবলাম যে প্রিয়া কে নিয়ে হুমায়ুন মামার বাসা‌ থেকে ঘুরে আসি।’
‘ প্রিয়া ওখানে যাবে না।যার মেয়ের জন্য আমার কলিজার টুকরা মেয়েটা এতো কষ্ট পেয়েছে তার বাসায় আমি আমার মেয়েকে যেতে দেবো না।’

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.