কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস - Romantic Golpo

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৫

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৫
Rawnaf Anan Tahiyat

খাবার মুখে তুলছিল রাওনাফ, সেই মুহূর্তে মামার কথা শুনে হাত থেকে খাবার নিচে পড়ে গেল।
‘ মানে,এসব তুমি কি বলছো মামা? শ্রেয়ার জন্য প্রিয়া কষ্ট পেয়েছে কি করে? আমাকে সবকিছু ঠিক করে বলো মামা।’
‘ তোকে বলেছিলাম না যে সেদিন প্রিয়ার একটা ডাক্তারের সাথে বিয়ে হচ্ছিল,সে আর কেউ নয় ড. তামিমুল ইসলাম মাহিন,তোর মেডিকেল কলেজের টিচার, আমার বন্ধুর ছেলে।

সেদিন সবার সামনে আমার বন্ধু আর তার ছেলে আমার মুখ পু/ড়ি/য়ে দিয়েছে, আমার মেয়েটাকে কাঁদিয়েছে।আর এতে কে সবচেয়ে বেশি দায়ী জানিস? হুমায়ূন। হুমায়ূন আমাদের এই অবস্থার জন্য সবথেকে বেশি দায়ী কারণ সেদিন ওর মেয়ের জন্যই তামিম প্রিয়াকে আংটি পড়ায়নি। যেখানে আমার মেয়ের এংগেজমেন্ট হওয়ার কথা ছিল সেখানে হুমায়ূনের মেয়ের এংগেজমেন্ট হয়।আর তাই আমার মেয়ে ওই বাড়িতে যাবে না আর না তুই।’

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এটুকু বলেই নাজিম সাহেব চোখের কোণে জমে থাকা পানি টা মুছে হাত ধুয়ে উঠে গেলেন। খাবার আর খাওয়া হলো না কারোর।রাওনাফ একেবারে চুপ হয়ে গেছে নাজিম সাহেবের কথা শুনে। চোখ কেন জানি পানিতে ডুবে গেল তার। এমনটা তো আশা করেনি সে ।হাত ধুয়ে চুপচাপ উঠে রুমে চলে গেল।প্রিয়া পিছন থেকে ডাকলো বারবার কিন্তু রাওনাফ কোনো রেসপন্স দিলো না।

স্কুল ড্রেস পরে স্কুলের জন্য রেডি হয়ে গেল প্রিয়া। কয়েকদিন ধরে এতো ঝামেলার মধ্যে রয়েছে, স্কুল মিস গেছে অনেক দিন।আর মিস দেওয়া উচিত হবে না কিছুতেই,তাই আজকে সবকিছু ভুলে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে নিলো।ব্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো প্রিয়া,গেটের কাছে আসতেই মালিয়া পিছন থেকে ডাকতে শুরু করলো।

‘ আফা,গাড়ি দিয়া যাইবেন না আজকা?’
‘হ্যা যাবো।ড্রাইভার আঙ্কেল কোথায়? উনাকে গাড়ি নিয়ে আসতে বলো।’
‘আইচ্ছা।’
কিছুক্ষণ পর ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে বের হল।প্রিয়া গাড়িতে উঠতে যাবে ঠিক তখনই আরেকটা গাড়ি ওর সামনে এসে দাড়ালো।প্রিয়া সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে গাড়িতে উঠতে যাবে,,,

‘ প্রিয়া, আমি তোমাকে স্কুলে পৌঁছে দিবো। তুমি আমার সাথে চলো।’
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে তামিম দাঁড়িয়ে আছে। শরীরের মধ্যে সমস্ত রাগ যেন শিরশির করে উঠলো তার তামিম কে দেখে। এই লোকটি তার সামনে কোন মুখে এসে দাড়ালো?

‘ লজ্জা করে না আপনার ওই ম্যাচিউর মুখে আমার নাম উচ্চারণ করতে?’
তামিম কিছু না বলে প্রিয়ার গাড়ির ড্রাইভার কে ইশারায় চলে যেতে বললো।ড্রাইভার তামিমের ইশারা পেয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসায় ফিরে গেল।প্রিয়া আরো রে/গে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন তামিম কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
‘ প্রিয়া তুমি যা বলার গাড়িতে উঠে স্কুলে যেতে যেতে বলো। নাহলে তোমার স্কুলের দেরি হয়ে যাবে আর ক্লাস মিস করবে।’

‘আমি ক্লাস মিস করলে আপনার তাতে কি আসে যায় ড. তামিম? আপনি প্লিজ আমার সামনে থেকে যান। আমি একটা ইমম্যাচিউর মেয়ে প্লাস কু/ৎ/সি/ত দেখতে তো বটেই। সেখানে যদি কেউ দেখে ফেলে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন আবার আমাকে লিফট দিতে চাচ্ছেন তাহলে তো আপনার মান সম্মান কিছুই থাকবে না তাই না?’
‘ প্রিয়া, আসলে ব্যাপারটা তেমন………..’

‘ থাক, আমি আর কিছু জানতে চাই না। কি ভেবেছেন, আমি একটা বাচ্চা মেয়ে বলে কি সাধারণ জ্ঞান টুকু ও আমার থাকবে না। আমি বাচ্চা হলেও ঠিক ততোটা বাচ্চা নই, আশপাশের পরিবেশ বুঝার জন্য যথেষ্ট বড় হয়েছি।’
কথাগুলো অকপটে বলে প্রিয়া হনহন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। এই লোকটাকে তার আর সহ্য হচ্ছে না। বাবার কাছে যখন উনার সম্পর্কে শুনেছিল তখন অবচেতন মন কেন জানি উনার দিকে ঝুঁকে পড়েছিল, খুব করে কাছে টানছিল।

কিন্তু সেদিন কমিউনিটি সেন্টারে যা হলো তার পর উনার প্রতি আর কোনো আকর্ষণ কাজ করতে পারে না প্রিয়ার, এখন শুধুই রা/গ আর একরাশ ঘৃ/ণা। তামিম পিছন থেকে ডাকতে গিয়ে ও ডাকতে পারলো না,বিবেক বাধা দিলো তাকে। প্রিয়ার প্রতি যদিও তার কোন ফিলিংস নেই, ওকে ভালোবাসে না তারপরও প্রিয়ার ওমন রু/ড বিহেভিয়ার তামিম মেনে নিতে পারলো না।

বুকের বাম সাইডে চিনচিনে একটা ব্যথা অনুভূত হতে লাগলো হঠাৎ করেই। কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে তামিম গাড়ি নিয়ে প্রিয়ার পিছনে পিছনে গেল।প্রিয়া বেশ জোরে জোরেই হাঁটছে,ওই লোকটা ড্রাইভার আঙ্কেল কে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়ায় এখন ওর হয়েছে যত জ্বা/লা । হেঁটে হেঁটে এতো দূর পর্যন্ত যেতে হবে ভাবতেই কান্না পাচ্ছে এখন, আর ক্লাস ও ধরতে পারবে না হয়ত।

‘ প্রিয়া,মানছি আমি তোমাকে অপমান করেছি কিন্তু তার জন্য এখন ক্ষমা চাইছি আমি। তুমি প্লিজ গাড়িতে উঠে বসো। বাচ্চা মেয়েরা এতো জেদি হয় না সেটা বুঝতে পারো না কেন?’
প্রিয়ার সামনে গাড়ি থামলো। তামিম ভিতরে থেকে আরেকবার ইশারা দিয়ে বললো গাড়িতে উঠে বসতে।আর কোনো উপায় না পেয়ে প্রিয়া বাধ্য মেয়ের মতো চুপ করে উঠে বসলো গাড়িতে। ফার্স্ট ড্রাইভ করছে তামিম,যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রিয়া কে স্কুলে পৌঁছে দিতে হবে।

‘ স্যার?’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালের গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল তামিম। পুরো দিন খুব ভালো গেলেও দিন শেষে শ্রেয়ার কথা মনে হলেই মনটা বিষিয়ে উঠে তার, সবকিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছে হয়।প্রিয়া কে স্কুলে পৌঁছে দিতে দিতে কম করে হলেও হাজার বার সরি বলেছে তাকে তারপরও প্রিয়ার কোনো হেলদোল নেই। স্কুলে নামিয়ে দিয়ে হসপিটালে চলে এসেছিল, সারাদিন এই সেই কাজ করতে করতেই গেছে।

সন্ধ্যায় একটু ফ্রি হয়ে গ্রাউন্ডে এসে দাঁড়িয়েছে তখন শ্রেয়ার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনের মধ্যে ভেসে উঠলো।মুড টাই নষ্ট হয়ে গেল তার। এমনিতে সিগারেট খায় না কিন্তু আজকে কি মনে করে সিগারেট ধরালো তামিম। সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে মনের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট গুলো উড়তে লাগলো মুক্ত হয়ে।শ্রেয়া ওকে ঠকিয়েছে ভাবতেই অবাক লাগে।এতো ভালোবাসার পরেও শ্রেয়া কি করে পারলো এটা করতে ভেবে অবাক হয় তামিম।

ওর কথা ভাবতে ভাবতেই আনমনা হয়ে গেল ঠিক তখনি কেউ স্যার বলে ডেকে ওঠে। তাকিয়ে দেখে রাওনাফ এসেছে। ওকে দেখে তাড়াতাড়ি করে সিগারেট টা লুকাতে চাইলেও পারলো না, ততক্ষণে রাওনাফের দৃষ্টি তামিমের হাতে থাকা আধপোড়া সিগারেট টার উপর পড়েছে।বাম হাত টা পিছনে নিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে হাসলো তারপর বললো,,
‘ রাওনাফ, তুমি এইসময় এখানে?’

‘ হ্যা আমি। দেখতে এলাম প্রিয়া কে অপমান করে,শ্রেয়ার থেকে আঘাত পেয়ে আমার স্যারের ঠিক কতটা অধঃপতন হয়েছে। এখন দেখছি বেশ ভালোই অধঃপতন হয়েছে এই ব্যক্তির।তা স্যার, কেমন লাগছে এখন?’
তামিম রাওনাফের কথা শুনে রীতিমতো চমকে উঠলো।রাওনাফ প্রিয়া আর শ্রেয়ার ব্যাপারে জেনে গেছে কিভাবে?
‘ এতো অবাক হবেন না স্যার।প্রিয়া আর শ্রেয়া দু’জনেই আমার কাজিন, মামার মেয়ে।

আর আমি আপনাকে বিশেষ কিছু বলবো না আগের ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য কজ আপনি তার শাস্তি পেয়ে গেছেন। আপনি প্রিয়া কে সবার সামনে অপমান করেছিলেন শ্রেয়ার জন্য কিন্তু এরপর আপনি ওর থেকেই ঠকে গেছেন।সবার সামনে আপনার চরিত্র ক/লু/ষি/ত হয়েছে। এরপর আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই স্যার তবে একটাই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে। আপনি কি করে একটা বাচ্চা মেয়ে কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন যেখানে আপনি আগে থেকেই শ্রেয়া কে ভালোবাসেন?’

‘ বাবার জোরাজুরিতে রাজি হয়েছিলাম।’
রাওনাফ আর কিছু বললো না। তামিমের দিকে তাকাতেও তার কেমন যেন কষ্ট হচ্ছে, চেহারার একি হাল করেছে এই কয়দিনে। তামিমের প্রতি রাওনাফের মনে আগে থেকেই একটা সফট কর্ণার ছিল।ওর হাসির প্রতি বারবারই ঘায়েল হয়েছে সে। প্রথম থেকেই তামিম কে মনে মনে প্রচন্ড ভালোবাসে রাওনাফ কিন্তু সেটা কখনোই প্রকাশ করেনি কজ রাওনাফ সহ পুরো কলেজের সবাই জানে তামিম স্যারের গার্লফ্রেন্ড আছে।

ল্যাবরেটরীতে যখন ক্লাস নিতো তামিম, কোনো এক্সপেরিমেন্ট বুঝিয়ে দিতে যেতো তখন এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকা রাওনাফের ছিল নিত্যদিনের অভ্যাস। ৫.১১” ইঞ্চির মানুষ টি যখন গ্রাউন্ডে স্টুডেন্টদের সাথে ভলিবল খেলতো তখন আর সবাই বিপক্ষে অবস্থান করলেও রাওনাফ সবসময় তামিমের সাপোর্টে।ওর সাথে দেখা বলতে গেলেই লজ্জায় কুঁকড়ে যেতো,

কথা বের হতো না মুখ দিয়ে সেজন্য সবসময় ওর সামনে চুপ করে থাকতো।ক্লাসে স্বাভাবিক কথাটুকু ও বলতে পারতো না লজ্জায়।কালো শার্টের উপর সাদা এপ্রোন, উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের তামিম সবসময় রাওনাফের মনের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে।আর আজ সেই তামিম স্যার কে এই ছন্নছাড়া অবস্থায় দেখে রাওনাফের অবিশ্বাস্য রকমের কষ্ট হচ্ছে। ভালোবাসা কেন এতো কষ্ট দেয়?

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৪

স্যার যাকে ভালোবাসতো সে স্যার কে কষ্ট দিয়েছে আর স্যার তার ভালোবাসাকে।তার কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাসের রচয়িতা যে শুধুমাত্র তামিম স্যার সেটা স্যার কখনো বুঝতে চায়নি,বুঝেও নি।প্রেমে এতো জ্বালা সেটা আগে যদি জানতো রাওনাফ……

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.