কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস - Romantic Golpo

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস শেষ পর্ব 

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস শেষ পর্ব 
Rawnaf Anan Tahiyat

‘ রাওনাফ, একটু শুনবে?’
ক্লাস শেষে সবাই ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে গেছে।রাওনাফ ওর নোটবুক গুলো সব গুছিয়ে বের হতে একটু দেরি হয়ে গেল, বেরোনোর সময় হঠাৎ করে তামিম অনুরোধের সুরে ডাকলো।রাওনাফের বুকটা যেন ধক করে উঠল এমন ডাক শুনে ।হার্ট বিট খুব দ্রুত কাজ করতে শুরু করলো,বার কয়েক ঢোক গিলে রাওনাফ নিজেকে সামলে নিয়ে ঘুরে তাকিয়ে বললো,,,

‘ হ্যা স্যার।কি বলবেন বলুন।’
তামিম একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।কি বলবে নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না সে।বাম হাত দিয়ে ঘাড় চুলকে অপ্রস্তুত হাসি হাসলো।
‘বলবো?’
‘ হ্যা এএএ। আপনি কিছু বলতে চাইলে বলুন, আমি মানা করবো না স্যার।’
‘ একচুয়ালি হয়েছে কি রাওনাফ? আমি না, আমি না বোধ করি ভালোবেসে ফেলেছি……..’
‘কাকে?’

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ আমি প্রিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি মনে হয় রাওনাফ।যদিও বা ও একটা বাচ্চা মেয়ে কিন্তু কেন জানি না ওর মায়ায় আটকে গেছি আমি। সেদিন ওকে পছন্দ করি নি ঠিকই,শ্রেয়া কে ভালোবেসে ওকে রিজেক্ট করেছিলাম কিন্তু আমি এখন ওকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেও পারছি না।ওর আমাকে অবহেলা করাটা আমি মেনে নিতে পারছি না আজকাল। এতো দিন হয়ে গেল তবুও ও আমার প্রতি এখনও রেগে আছে।

আমার কি হয়েছে আমি কিছু বুঝতে পারছি না। তুমি একটু আমার হয়ে প্রিয়ার কাছে শেষ বারের মত সরি বলে দেবে? আমি এর আগে অনেক বার সরি বলেছি কিন্তু ও শোনে নি। এইটুকু বয়সেই আত্মসম্মানবোধ খুব বেশি ওর ।প্লিজ রাওনাফ,করে দেবে আমার এই কাজটা?’

রাওনাফ দু চোখে যেন অন্ধকার দেখলো। তামিমের মুখে এইরকম কিছু একটা ও স্বপ্নেও আশা করেনি। তামিম তো প্রিয়ার প্রতি দুর্বল ছিল না, ওকে তো ভাবতো ও না পর্যন্ত তাহলে আজ? তামিম এতো দিনে ওর প্রতি নয় প্রিয়ার প্রতি দুর্বল হয়েছে। এটা কেন হলো ওর সাথে?ও তো চেয়েছিল এই কলঙ্কিত অধ্যায়ে তামিম ওর সহযোগী হতে। তামিমের কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাসে সে প্রবেশ করে তাতে নিষ্কলঙ্কিত করে দিতে তাহলে প্রিয়াই কেন?

‘ কি হলো রাওনাফ? তুমি পারবে না?’
অতি কষ্টে নিজেকে সামলে নিলো রাওনাফ। মুচকি হেসে বলল ‘ পারবো স্যার। আপনি কোন চিন্তা করবেন না, আমি প্রিয়া কে আপনার বিষয়ে সব কিছু বলবো। ওকে রাজি করাবো আপনার বিষয়ে। আমি আসছি স্যার ‘ এটুকু বলেই রাওনাফ প্রায় দৌড়ে ল্যাব থেকে বেরিয়ে এলো ।দু চোখ দিয়ে ততক্ষণে শ্রাবণের ধারা বইতে শুরু করেছে তার।এ ধারা বইতে থাকুক, বাধা দেওয়ার কোনো অধিকার নেই রাওনাফের।এযে হৃদয় ভেঙ্গে যাওয়ার ধারা, প্রেমের অধ্যায়ের সূচনা হওয়ার আগেই যার সমাপ্তি ঘটে গেল তার ধারা আটকে দেওয়ার নয় কখনই।

আজ শেষ এক্সাম থাকায় প্রিয়ার স্কুল থেকে বের হতে দেরী হয়ে গেল।ক্লাস নাইনের ফাইনাল এক্সামের শেষ দিন আজ। কিছুদিন আগে তাদের স্কুল এন্ড কলেজ এ এইচএসসি পরীক্ষা হয়ে গেল আর এখন তাদের হলো। স্কুল গেটের সামনে বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে রইল প্রিয়া,ড্রাইভার আঙ্কেল গাড়ি সহ বেপাত্তা হয়ে গেছে। অতিরিক্ত বিরক্তি নিয়ে যেই কল করতে যাবে তখনই একটা গাড়ি এসে থামলো ওর সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর মুখের উপর একটা হাত কিছু একটা স্প্রে করে দিলো। একবার নিঃশ্বাস নিতে না নিতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো প্রিয়া।

‘ ওস্তাদ,এটা কি করেছি আমরা? এটাতো স্যারের মেয়ে প্রিয়া।’
কামালের কথা শুনে চমকে উঠলো জাহাঙ্গীর। প্রিয়ার সামনে বসে বসে কিভাবে মা’র’বে সেটা ঠিক করছিল তখন ওর সহকারী কামাল প্রিয়ার স্কুল ব্যাগ চেক করে প্যারেন্টস আইডেন্টিটি দেখে উক্ত কথাগুলো বলে উঠলো।
‘ কিহ? নাজিম স্যারের মেয়ে এটা? এবার কি করবো আমি, নাজিম স্যার একবার যদি জানতে পারে যে তার মেয়ে কে আমি…… উনি তো আমাকেই প্রাণে মে’রে দেবেন।’

‘ ওস্তাদ আমি বলি কি, তুমি একে ছেড়ে দাও।একে মা’রা’র কোন দরকার নাই আমাদের, আপনি বাঁচলে বাপের নাম ওস্তাদ।চল একে ওর বাসার সামনে ছেড়ে দিয়ে আমরা এখান থেকে কেটে পড়ি।’
‘ কিন্তু আমি যে অর্ডার নিয়ে নিয়েছি স্যারের থেকে আর তুই তো জানিস জাহাঙ্গীর কখনো কথার খেলাপ করে না।’
‘ রাখো তোমার কথা ওস্তাদ। তোমার বেঁচে থাকার ইচ্ছা নাই থাকতে পারে কিন্তু আমার তো আছে। আমি চললাম, তুমি কি করবে এখন একা একাই করো।’

কামালের কথা শুনে জাহাঙ্গীর চিন্তায় পড়ে গেল।কি করবে বুঝতে পারছে না।বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে কামালের কথাই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হচ্ছে।এখান থেকে গা ঢাকা দিলে ওই লোকটা ও তাকে খুঁজে পাবে না। আপাতত প্রিয়া কে ছেড়ে দিয়ে এই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে জাহাঙ্গীরের। কামাল কে ইশারায় প্রিয়াকে গাড়ি তে তুলতে বললো।

প্রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রাওনাফ। পাশেই মালিয়া মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে, কিছুক্ষণ আগে গেটের সামনে প্রিয়া কে পড়ে থাকতে দেখে রাওনাফ কে নিয়ে ওকে বাসায় নিয়ে এসেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে নাজিম সাহেব চলে এলেন বাসায়,যখনই শুনেছেন প্রিয়ার এই অবস্থা আর এক মুহূর্তও দেরি না করে সোজা বাসায় এলেন।
‘ কি হয়েছে মামণির?’
বলতে বলতে রুমে ঢুকলেন তিনি। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

‘ কিছু না বাবা। মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম, সকালে খেয়ে যাইনি তো তাই। তুমি চিন্তা করো না, আমার কিছু হয়নি।’
বেড থেকে উঠে বেলকনিতে চলে এলো প্রিয়া। ফুরফুরে মেজাজে সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, সেখানে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করছে।যারা ওকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তাদের কে প্রিয়া চিনে এবং তাদের সব কথাই ও শুনেছে।

মজা লাগছিল যখন শুনলো যে ওর কোন কিছু করলে ওর বাবা ওদের কে ছাড়বে না। শুধু জ্ঞান হারানোর নাটক করে গেল কিছুক্ষণ ধরে। বাসায় কারো সাথে কিচ্ছুটি বললো না,কারণ ও জানে কেউ যদি একবার জানে তাহলে ব্যাপারটা অনেক বড় হয়ে যাবে, অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে।
মিনিট পাঁচেক পড়েই রাওনাফ ও তার পাশে এসে দাঁড়াল,প্রিয়ার দিকে তাকালো সে।কি সুন্দর একটা মায়াবী মুখ সামনের দিকে তাকিয়ে, নিজের অজান্তেই বলে উঠলো রাওনাফ,,,

‘ তামিমের কাছে যাবি প্রিয়া? উনি তোকে ভালোবেসে ফেলেছেন।শ্রেয়া কে ভালোবেসে উনি উনার প্রেমের উপন্যাস কলঙ্কিত করেছিলেন,আর এখন তিনি তোকে ভালোবেসে সেটাকে শুধরাতে চান।’
প্রিয়া আলতো ভাবে মাথা নেড়ে না বলল। ভালোবাসা নামক করুণার তার কোনো দরকার নেই আর। জীবনের অনেক অধ্যায় পড়ে আছে তার জন্য, সেখানে তামিমের কাছে যাওয়াটা নিছক বোকামি।

নেহাৎই মা চলে যাওয়ার সময় মা’কে আর বাবাকে দেওয়া কথা রাখার জন্য ওদের বিয়ে টা হচ্ছিল বলে ও বিয়েটা করতে যাচ্ছিল কিন্তু আবার সেই ভুল টা করবে না।রাওনাফ সামনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর মনে মনে বললো,

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৭

‘ কেউ ভালোবাসা চেয়ে চেয়ে ফিরে আর কেউ পেয়েও হারায়।কেউ ভালোবেসে জীবন রাঙাতে চায় আর কেউবা জীবন কে নিকষ কালো অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়।’

সমাপ্ত

(আসসালামুয়ালাইকুম।কেউ এন্ডিং নিয়ে মন খারাপ করবেন না। কারণ এটা একটা ছোট গল্প ছিল। আপনাদের মনমতো গল্প টা না হলে আমি দুঃখিত, সবিনয়ে ক্ষমাপ্রার্থী)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.