কেয়ারিং হাসবেন্ড - Romantic Golpo

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ১০

কেয়ারিং হাসবেন্ড

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ১০
শহীদ উল্লাহ সবুজ

সবুজ রিপোর্ট হাতে নিয়ে দেখতে শুরু করে। আর সবুজ রিপোর্ট দেখে তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। রিপোর্টে সবুজের কোনো সমস্যাই দেখা যাচ্ছেনা।
সবুজ ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করলো — এই রিপোর্ট কি আমার? একটু ভালো করে দেখুন প্লিজ।
— হ্যাঁ এটা আপনার রিপোর্ট।

রিপোর্ট হাতে নিয়ে সবুজ ভাবতে থাকে তাহলে নীলা আমাকে যে রিপোর্ট দেখালো সেটা কি ছিলো? কি হচ্ছে আমার সাথে এসব? নেহার পেটে তাহলে আমার সন্তান! আর আমি মেয়েটাকে কতো কষ্ট দিলাম। তাকে আমি অকারণে সন্দেহ করলাম। আমি এখন কোন মুখে নেহার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো?

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি খুব অন্যায় করছি নেহার সাথে। এসব ভাবতে সবুজ বাসায় পৌছে গেলো। সবুজ রুমে গিয়ে দেখে নেহা মন খারাপ করে বসে আছে। সবুজ নেহার সামনে গিয়ে ফ্লোরের উপরে বসে কান্না করতে শুরু করে দেয়। সবুজ নেহার হাত ধরে বলল — নেহা আমাকে তুমি মাপ করে দিয়। আমি তোমাকে অহেতুক সন্দেহ করেছিলাম। প্লিজ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয় নেহা। নিজের কাছেই নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। তোমার গর্বে আমার সন্তান আর আমি তোমাকে সন্দেহ করছি।
নেহা সবুজের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে শুধুই চোখের পানি ফেলতে থাকে।

একটা কথা বলা হয়নি। নেহাও যেনে গেছে সে যে প্রেগন্যান্ট। নেহা বুঝতে পেরেছে সবুজ কেন নেহাকে ইগ্নোর করছে।
সবুজ নেহার সামনে অঝোরে কান্না করতে থাকে। কিন্তু নেহা কোনো কথা বলছেনা। একটু পরে নেহা উঠে সবুজের সামনে থেকে চলে গেলো। সবুজ রুমের ভিতরে বসেই অঝোরে কান্না করতে থাকে। শব্দহীন বোবা কান্না করতে থাকে। রাতের খাবার খাওয়ার জন্য সবুজ খাওয়ার টেবিলে গিয়ে বসে। নেহা নিজের খাবার নিজে খেয়ে উঠে গেলো। আর সবুজ নেহার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। নেহা খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো। সবুজ খাবার না খেয়ে হাত ধুয়ে রুমে চলে গেলো। সবুজ রুমে গিয়ে দেখে নেহা কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে।

সবুজ নেহার কাছে গিয়ে বলল — নেহা আমার ভুল হইছে প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। দেখো আমার কি করার ছিলো? আমার যায়গায় তুমি হলেও এমন করতে। আমি তো জানিনা আমার আগের রিপোর্টটা ভুল ছিলো। প্লিজ ক্ষমা করে দাও নেহা।

নেহা সবুজের কথার কোনো উত্তর দিলনা। সবুজ নেহার পাশে ঘুমিয়ে গেলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে সবুজ তার ফুপিকে কল দিয়ে বাসায় আসতে বলল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবুজের ফুপি চলে আসে সবুজের বাসায়।
ফুপি সবুজের সামনে এসে বলল — কিরে কোনো ঝামেলা হইছে নাকি?

— অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গেছে।
— কি হয়েছে? আমাকে সব খুলে বল।
সবুজ তার ফুপিকে সব ঘটনা খুলে বলল। সবুজের কথা শুনে ফুপি তো হতবাক হয়ে গেলো।
— সবুজ তোর এমনটা করা উচিৎ হয়নি। তুই এই ব্যপার নিয়ে নেহার সাথে আগে কথা বলার দরকার ছিল।
— আসলে আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। আমি মেয়েটাকে অহেতুক সন্দেহ করছি। এখন নেহা আমার সাথে কথা বলেনা। রাগ করে আছে। তুমি কিছু একটা কোরো প্লিজ।

— আচ্ছা সমস্যা নাই আমি চলে আসছি আর কোনো চিন্তা নাই তোর।
— হুম তার জন্য তো তোমাকে কল দিয়ে নিয়ে আসলাম।
— কিন্তু সবুজ নীলা যে রিপোর্ট দিছে সেটা কি জাল রিপোর্ট ছিলো?
— আমি বুঝতে পারছিনা কিছুই।
— আচ্ছা বাদ দে আগের কথা। এখন বল নেহা কোথায় আছে?
— রুমে আছে।
— আচ্ছা আমি ওর সাথে কথা বলে আসি।
— ঠিক আছে।

ফুপি সবুজের সামনে থেকে চলে গেলো রুমের দিকে। ফুপি রুমে গিয়ে দেখে নেহা মন খারাপ করে শুয়ে আছে। নেহা ফুপিকে দেখে উঠে বসে যায়। ফুপি নেহার কাছে গিয়ে নেহার মাথায় হাত রেখে বলল — কেমন আছিস মা?
— এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
— আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আসলে নেহা তোকে কিছু কথা বলতে চাই আমি। আশা করি তুই আমার কথা রাখবে।

— জ্বী বলুন।
— মা সবুজের উপরে আর রাগ করে থাকিস না। ছেলেটা অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আর ছেলেটার ও কি করার দরকার ছিলো ও সেটা বুঝতে পারেনি। তুই আর রাগ করে থাকিস না ওর সাথে।
— আমি তো ওনার উপরে রাগ করিনি । কিন্তু ফুপি আমার খুব খারাপ লাগছে উনি আমাকে সন্দেহ করলো।
— বুঝতে পারছি আমি। তুই ওকে ক্ষমা করে দে মা।সবুজ তোকে সত্যি অনেক ভালোবাসে।
— হুম। আর ওনার উপরে আমার কোনো অভিমান নেই। আমিও ওনাকে খুব ভালোবাসি।
তারা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফুপি চলে যায়।
সবুজ নেহার কাছে এসে বলল — নেহা প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমার সাথে অনেক বড় একটা অন্যায় করছি।

— ঠিক আছে ক্ষমা করে দিলাম।
সবুজ সাথে সাথে নেহাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
দেখিতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। সবুজ নিজের হাতে নেহার জন্য খাবার নিয়ে আসে। সবুজের হাতে খাবার দেখে নেহা বলল — এটা কার জন্য?

— তোমার জন্য।
— আমিতো গিয়ে খেয়ে আসতে পারতাম। আপনার নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো?
— এখন থেকে তোমার যত্ন নিতে হবে কারণ তোমার গর্বে আমার সন্তান। কাল থেকে তোমার আর কোনো কাজ করতে হবেনা। সব আমিই করে দেবো।

— আপনার অফিস কে করবে শুনি?
— অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেবো সমস্যা নাই।
— এখন দরকার নেই। এখন আপনি আপনার অফিসের কাজ করেন। ৭/৮ মাস পরে আমার পাশে থাকলেই হবে। এখন কাজ করতে আমার সমস্যা হবে না।
— আচ্ছা কাল থেকে আবার কাজের মেয়ে টাকে আসতে বলি। তোমার এখন কোনো চাপের কাজ করা যাবেনা।
— ঠিক আছে।

— আর কাল তোমাকে নিয়ে একবার ডাক্তারের কাছে যাবো। তোমার চেকআপ করাবো।
— আচ্ছা এখন অনেক রাত হইছে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমারও ঘুম পাচ্ছে খুব।
— ঠিক আছে ঘুমাও।

এই কথা বলে সবুজ নেহার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। সবুজ ও ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে নেহার ঘুম ভেঙে যায়। নেহা ঘুম থেকে উঠে দেখে সবুজ এখনো ঘুমাচ্ছে। নেহা সবুজের দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর নেহা উঠে ফ্রেশ হয়ে নেই। নেহা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে সবুজকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয়। সবুজ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে নেহাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সবুজ নেহার চেকআপ করিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছে।

এমন সময় কাকতালীয় ভাবে নীলা আর তার বোন গাড়িতে বসে আছে। নীলা সবুজকে খেয়াল না করলেও নীলার বোন সবুজকে দেখে নীলাকে বলল — আপু দেখ সবুজ ভাইয়া না এটা?
নীলা সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। নীলার বোন রিয়া বলল — দেখ আপু ও তোকে ছেড়ে দিয়ে আরেকটা বিয়ে করে কি ভাবে চলছে আর তুই? ও অনেক সুখে আছে আর তোর কি অবস্থা একটি বার ও তোর খোঁজ নিতে আসলোনা।দুলাভাই আসলেই অনেক খারাপ একটা মানুষ।

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৯

নীলা সবুজের দিকে তাকিয়ে রইলো। আর নীলা চোখ থেকে টপটপ করে পানি বের হতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলা গাড়ি ছেড়ে দেয়। নীলা বাসায় গিয়ে অঝোরে কান্না করতে থাকে।
এই দিকে সবুজ নেহাকে নিয়ে বাসায় পৌছে গেলো। সবুজ নেহাকে বাসায় রেখে অফিসে চলে যায়। অফিসে গিয়ে সবুজ নিজের কাজে বিজি হয়ে পড়ে।

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ১১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.