কেয়ারিং হাসবেন্ড - Romantic Golpo

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ১৫

কেয়ারিং হাসবেন্ড

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ১৫
শহীদ উল্লাহ সবুজ

হঠাৎই নেহার কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সবুজের। সবুজ চোখ খুলে তাকাতেই দেখে নেহা পেটে হাত দিয়ে ব্যাথায় ছটফট করছে। সবুজ তাড়াতাড়ি করে নেহার দিকে তাকিয়ে বলল — কি হইছে তোমার নেহা? এমন করছো কেন? তোমার কাছে কি খারাপ লাগছে নাকি?

নেহা কোনো কথা না বলে নিজের ঠোঁট কামড়ে এক হাতে পেট ধরে অন্য হাতে বিছানার ছাদুর খামছে ধরে নিজের ব্যাথা কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা করে।
সবুজ বুঝতে পারছেনা নেহা কেন এমন করছে? হঠাৎ করে নেহা এমন করছে কেন? তখন বুঝতে পারে নেহার হয়তো ডেলিভারির সময় হয়ে এসেছে। কিন্তু ওর তো ডেলিভারির সময় আরো ১০ দিন বাকি আছে। তাহলে এতো তাড়াতাড়ি ব্যাথা শুরু হওয়ার কারণ কি?

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সবুজ নেহার হাত শক্ত করে ধরে বলল — নেহা কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার? আমাকে বলো প্লিজ। আমি তো আছি।
— আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি আর ব্যাথা সহ্য করতে পারছিনা। কিছু একটা করুন প্লিজ। আমি মরে যাচ্ছি।
নেহার কথা শুনে সবুজ চিৎকার করে তার বাবাকে ডাকতে থাকে। সবুজের চিৎকারের শব্দে মাইসা ঘুম থেকে উঠে কান্না করতে শুরু করে। সবুজ কি করবে বুঝতে পারছেনা।

একদিকে নেহা অন্যদিকে মাইসা। সবুজ আসফাকেও ডাকতে থাকে। সবুজের চিৎকার শুনে সবুজের বাবা আর আসফা তাড়াতাড়ি করে সবুজের রুমে চলে আসে। সবাই এসে দেখে নেহা ব্যাথায় ছটফট করছে। আসফা এসে মাইসাকে কোলে নিয়ে ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করে। আর সবুজের বাবা নেহার পাশে বসে নেহার মাথায় হাত ভোলাতে ভোলাতে সবুজকে বলল — তাড়াতাড়ি একটা হাসপাতালে ফোন দিয়ে বল এম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য তাড়াতাড়ি।

সবুজ তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে ফোন দিয়ে একটা এম্বুল্যান্স পাঠাতে বলে। সবুজ ফোন নিজের পকেটে রেখে নেহার হাত শক্ত করে ধরে বলে — একটু অপেক্ষা করো এক্ষনি এম্বুল্যান্স চলে আসবে। তোমার কিছু হবে না। আমি আছি তোমার পাশে।

সবুজ এবার নেহার বাসায় ফোন দেয়ে বলে নেহার অবস্থার কথা। সবুজ পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে। সবুজ আবার ফোন দেয় হাসপাতালে। সবুজ আবার নেহার পাশে গিয়ে বসে। কিছুক্ষণের মধ্যে এম্বুল্যান্স এর শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি করে নেহাকে কোলে তুলে সবুজ নিচে নেমে যেতে থাকে। তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে সবুজের পা স্লিপ করে। আর সে নেহাকে নিয়ে পড়ে যায় ফ্লোরের উপরে। ভাগ্য ভালো যে নিচে এসে পা স্লিপ করে।

সিঁড়ি থেকে পা স্লিপ করে সবুজ গিয়ে একটা বাড়ি খায় একটা কাঠের টেবিলের সাথে। আর তার কপাল পেটে কপাল থেকে র*ক্ত বের হতে শুরু করে দেয়। সবুজ পড়ে গিয়েও নেহাকে ছাড়েনি। আবার নেহাকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে গাড়ির দিকে চলে যেতে থাকে। আর সবুজের কপাল দিয়ে র*ক্ত পড়তে থাকে। সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। একটু পরেই নেহাকে এম্বুল্যান্স এর মধ্যে শুইয়ে দেয় সবুজ। আসফা আর সবুজের বাবা ও গাড়িতে উঠে বসে। সবুজের এই অবস্থা দেখে তার বাবা বলল — কিরে তোর মাথা থেকে তো র*ক্ত পড়ছে।

— আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা গাড়ি ছাড়তে বলুন তাড়াতাড়ি। আগে নেহাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি ছেড়ে দেয়। নেহা প্রসবের যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। সবুজ নেহার এক হাত শক্ত করে ধরে রাখে আরেক হাত দিয়ে নেহার মাথায় হাত ভোলাতে থাকে। নেহা মাগো বাবা গো বলে চিৎকার দিতে থাকে। নেহার এমন অবস্থা দেখে সবুজের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। এই দিকে মাইসাও কান্না করছে। আসফা মাইসার কান্না থামাতে পারছেনা। সবুজ মাইসাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল — আম্মু এই ভাবে কান্না করোনা। তোমার আম্মু অসুস্থ তুমি একটু আন্টির কাছে থাকো।

এটা বলে সবুজ মাইসাকে আসফার কাছে দিয়ে দেয়। সবুজ আবার নেহার পাশে বসে আর বলতে থাকে — আরেকটু প্লিজ আমরা হাসাপাতালের খুব কাছাকাছি চলে আসছি। দেখো আমি আছি তোমার সাথে।
নেহা নিজের ব্যাথা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণের মধ্যে হাসপাতালের সামনে চলে যায় তারা। সবুজ সবার আগে গাড়ি থেকে নেমে ডাক্তার আর নার্স বলে চিৎকার দিতে থাকে।

সবুজের চিৎকারের শব্দ শুনে কয়েক জন নার্স বেরিয়ে চলে আসে। নেহাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটা সিটের উপর শুইয়ে দিয়ে হাসাপাতালের ভিতরে নিয়ে যেতে থাকে। ডাক্তার প্রথমে নেহাকে একটা কেবিনে শিপ্ট করে দেয়। ডাক্তার কেবিনের ভিতরে গিয়ে নেহাকে দেখে আবার বাহিরে চলে আসে। সবুজ ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলল — ডাক্তার আমার স্ত্রীর কি অবস্থা দেখলেন?

— রোগীর অবস্থা খুব একটা ভালো না। খুব তাড়াতাড়ি অপারেশন করাতে হবে। আর যা করার ইমিডিয়েটলি করতে হবে সময় বেশি নেই। পরে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে।
— যা যা করতে হয় করুন প্লিজ আমার নেহার যেনো কিছু না হয় প্লিজ ডাক্তার। নেহাকে আপনি বাঁচিয়ে দিন।
— আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করবো। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে। তবে রোগীর যে অবস্থা এখন আমি শিউর দিয়ে কোনো কথা বলতে পারছিনা। দোয়া করুন। আর আমি অপারেশন এর জন্য সব রেডি করে আসি। আর আপনার কপাল থেকেও তো রক্ত বের হচ্ছে? আপনার কপালে ব্যান্ডেজ করা দরকার।

— আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা। আপনি আগে অপারেশন এর কাজ শুরু করুন প্লিজ।
— ঠিক আছে।
এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলো। সবুজ দরজার মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখে নেহা এখনো ব্যাথায় কান্না করছে। নেহার এমন অবস্থা দেখে সবুজ যেনো পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে।
সবুজের বাবা সবুজের দিকে এগিয়ে এসে বলল — সবুজ তুই একটু শক্ত হ বাবা। তুই এমন করছিস কেন?

— বাবা দেখো নেহা কতটা কষ্ট পাচ্ছে। আমি এসব নিতে পারছিনা।
কিছুক্ষণের মধ্যে হাসপাতালের মধ্যে চলে আসে নেহার মা-বাবা। নেহার বাবা সবুজের কাছে এসে বলল — বাবা নেহার এখন কি অবস্থা?
— বাবা নেহার অপারেশন হবে একটু পরে। ডাক্তার দেখছে ওঁকে।
নেহার কেবিন থেকে একজন নার্স বেরিয়ে এসে বলল — এখানে সবুজ কে?
সবুজ নার্সের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — আমি সবুজ কি হয়েছে?

— রোগী আপনার সাথে দেখা করতে চায়। আপনি একা ভিতরে আসুন।
তারপর সবুজ ভিতরে চলে যায়। নার্স ও বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে। সবুজ কেবিনের ভিতরে গিয়ে দেখে নেহার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে। সবুজ নেহার দিকে এগিয়ে গিয়ে নেহার চোখের পানি মুছে দিয়ে নেহার পাশে বসে বলল — আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলছি। একটু পরেই অপারেশন শুরু হয়ে যাবে চিন্তা করোনা। সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার সব কষ্ট কিছুক্ষণের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে।

— আপনাকে আমার কিছু কথা বলার ছিলো!
— বলো।
— আমাকে একটা কথা দিতে হবে আপনাকে।
— কি কথা?
— আমার যদি কিছু হয়ে যায়। অপারেশন এর সময় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যায়। তখন কিন্তু আপনি আর কখনো বিয়ে করতে পারবে না। আপনি আমার বাচ্চাদের ভালো ভাবে মানুষ করবেন। আপনি হবেন ওদের মা-বাবা। আর হে আমি আপনাকে আর কারোর হতে দেবোনা। আপনি এ পাড়েও আমার ওই পাড়েও আমারি থাকবেন।

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ১৪

— নেহা তোমার কোনো কিছুই হবে না। এসব কথা বলোনা প্লিজ। আমি তো আছি। তোমার কিছু হলে আমি কি নিয়ে থাকবো? তোমার কিছুই হতে পারেনা। আল্লাহ আমাদের সাথে কোনো খারাপ কিছু করবেনা।
এই কথা বলে সবুজ নেহাকে জড়িয়ে ধরে আর দুজনেই কান্না করতে থাকে।

কেয়ারিং হাসবেন্ড শেষ পর্ব 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.