কেয়ারিং হাসবেন্ড - Romantic Golpo

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৪

কেয়ারিং হাসবেন্ড

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৪
শহীদ উল্লাহ সবুজ

সবুজ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো নেহার দিকে। নেহা সবুজের দেওয়া সেই বেলি ফুলের মালা চুলে লাগিয়ে আসছে। নেহা সবুজকে এই ভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — এই ভাবে কি দেখছেন?
–তোমাকে।
— হাহাহা এই ভাবে দেখার কি আছে হুম? আগে মনে হয় আর দেখেন নাই! আজ প্রথম দেখছেন নাকি?
— তা-না আসলে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আজকে।
— সত্যি?
— হুম।

নেহা এবার একটা দীর্ঘ নিশ্বাস পেলে সবুজের পাশে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। সবুজ নেহাকে বলল — তোমার নাকি কি কথা আছে বললে?
— ওহ হ্যাঁ। আসলে একটা প্রশ্ন করার ছিল ঠিকঠাক উত্তর দিতে হবে।
— হুম দেবো, কি প্রশ্ন?
— আপনার আগে বিয়ে হইছে সেটা আপনি আমাকে বলেন নাই কেন?
— তুমি তো আমাকে জিজ্ঞেস করোনি। আর তোমার ফ্যামিলিকে তো বলা হইছে। তোমাকে কি তারা বলে নাই কিছু?
— বিয়ের আগে তো বলে নাই।
— ওহ আচ্ছা কোনো সমস্যা বিয়ে করছি বলে?

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— না তেমন কোনো সমস্যা নাই। আমি ভাবছি আপনার মতো হাসবেন্ডকে কেউ কি ভাবে ছেড়ে দেয়? আপনি তো অন্যদের মতো না। আপনার মতো হাসবেন্ড তো লাখে একটা মিলে। যে স্ত্রীর প্রতি এতো কেয়ারিং করতে পারে তার কি ভাবে ডিভোর্স হয়ে যায় এটাই বুঝতে পারছিনা।
নেহা কথা শুনে সবুজের মন খারাপ হয়ে গেলো। সবুজ আর কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
নেহা আবার বলল — আচ্ছা আপনাদের মধ্যে কি এমন হয়েছে যার জন্য আপনাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে? আমাকে কি সব কিছু বলা যাবে?

— হুম তুমি আমার স্ত্রী। তোমার কাছে আমি সব বলতে পারি। আসলে নেহা আমার একটা প্রবলেম আছে।
— কি প্রবলেম আপনার?
— আসলে আমি কোন দিন বাবা হতে পারবো না। আমি বাবা হতে অক্ষম। তাই আমাদের ডিভোর্স হয়েছে। কারণ আমার স্ত্রী চাইত সে মা হবে। কিন্তু আমার জন্য সে মা হতে পারবেনা। তাই আমিও চাইনি আমার জন্য ও মা হওয়া থেকে বঞ্চিত হোক।

— এতে তো আপনার দোষ নেই। আল্লাহ তো সবাইকে সব কিছু দেয়না। তাহলে তখন আপনার মনখারাপের কারণ এটা ছিল? আমি বুঝতে পারিনি। I’m sorry.
— সমস্যা নাই।
— আচ্ছা আমাকে কি সব কিছু খুলে বলবেন? আসলে আমার সব কিছু জানতে ইচ্ছে করছে। আপনাদের মধ্যে সম্পর্কটা কেমন ছিলো আমাকে সব বলবেন প্লিজ?
— ঠিক আছে বলছি, তাহলে শোনো,,,
ফ্ল্যাশব্যাক

আমাদের পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছে। আমি আমার বাবার পছন্দেই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে কোনো কিছুই ভালো ভাবে চলছিলোনা । আমাদের বিয়ের প্রথম রাতেই আমি বাসর ঘরে গিয়ে দেখি আমার স্ত্রী নীলা কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে। নীলা আমাকে দেখেই ফোন কেটে দিয়। আমি কোনো কিছু মনে করিনি। আমি খাটের উপরে চলে গেলাম। তারপর নীলার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ঘুমিয়ে যায়। আসলে নীলার নাকি খুব ঘুম পাচ্ছিলো। তাই আমিও আর কিছু না বলেই ঘুমিয়ে পড়ি।

খুব সকালে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি নীলা আমার পাশে নেই। আমি উঠে বেলকনিতে তাকাতেই দেখি নীলা ফোনে কথা বলছে। আমি নীলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম — কখন উঠলে ঘুম থেকে?
নীলা আমার কথা শুনে চমকে উঠে তাড়াতাড়ি করে ফোন কান থেকে সরিয়ে বলল — এইতো মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।

— কার সাথে কথা বলছেন?
— আম্মু ফোন দিছে আম্মুর সাথে কথা বলছি।
— ওহ আচ্ছা। আমি ফ্রেশ হয়ে আশি।
— ঠিক আছে।

তারপর আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। দেখতে দেখতে অনেক দিন পার হয়ে গেলো। নীলার সাথে আমার অনেকবার মেলামেশা হয়েছে। কিন্তু আমি একটা জিনিস খেয়াল করতে পারছি নীলা খুব বেশি ফোনে কথা বলে। যেটা আমার কাছে ভালো লাগেনা। আমি জিজ্ঞেস করলেই বলে বাইয়া কোল দিছে না হলে বলে মা-বাবা। আমিও ওঁকে বিশ্বাস করে আর কোনো প্রশ্ন করতাম না। আমি নীলার খুব খেয়াল রাখতাম। অফিসে গেলেও সব সময় ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতাম খাইছে কিনা। আমার মনে হতো নীলা আমার ফোন পেলে বিরক্ত হয়ে যায়।

একদিন দুপুরে লান্স টাইমে আমি নীলাকে ফোন দিলাম। অনেকবার কল দিলাম কল বার বার ব্যাস্ত দেখাচ্ছে। আমার খুব খারাপ লাগছিলো তখন। আমি বার বার ফোন দিচ্ছিলাম এবার নীলার ফোনে কল ঢুকলো। নীলা ফোন ধরেই বলল — কি হয়েছে?

— ফোন বিজি ছিলো কেন? কার সাথে কথা বলছিলে তুমি?
— আমার চাচাতো ভাই কল দিয়েছে তার সাথে কথা বললাম।
— তাই বলে এতো সময়?
— তুমি আমাকে সন্দেহ করছো সবুজ? তোমার কি মনে হয় আমার জন্য কারো সাথে রিলেশন আছে?
— আরে আমি তা বলতে চাইনি। আচ্ছা বাদ দাও খাবার খেয়েছো?
— না এখন খাবো রাখি আল্লাহ হাফেজ।

এই কথা বলে আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলো। আমাকে একটি বার জিজ্ঞেস করলোনা আমি খেয়েছি কিনা? খুব খারাপ লাগছিলো তখন। খাবার সামনে থেকেও না খেয়ে উঠে গেলাম। খেতে ইচ্ছে করছেনা। অফিসের কাজ শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিলাম। বাসার কাছাকাছি যেতেই দেখলাম একটা চুড়ির দোকান। দোকান টা দেখেই নেমে গেলাম। তারপর নীলার জন্য কয়েক জোরা চুড়ি নিলাম। চুড়ি নিয়ে খুশি মনে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে দেখি নীলা খাটের উপরে বসে আছে। আমি চুড়িটা লুকিয়ে রাখলাম। নীলার সামনে গিয়ে বললাম তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি।

— সত্যি? কি গিফট এনেছেন?
— আগে চোখ বন্ধ করো।
— আবার চোখ বন্ধ করতে হবে কেন?
— করতে বলছি করো।
— ঠিক আছে করলাম।

নেহার হাত ধরে নেহার হাতে চুড়ি গুলো পড়িয়ে দিলাম। আর বললাম — এবার তাকাও।
নীলা তাকিয়ে দেখে চুড়ি। মানুষ উপহার ফেলে যেমন ভাবে খুশি হয়ে তেমন খুশি আমি নীলার চোখে দেখতে পেলাম না।
নীলা বলল — বাহ খুব সুন্দর তো।

— পছন্দ হয়েছে তোমার?
— হুম খুব পছন্দ হইছে ধন্যবাদ।
নীলার মুখে এসব শুনে খুব ভালোই লেগেছিলো। একটু পরে আমি ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমের ভিতর চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে আমি ডাস্টবিনের দিকে তাকিয়ে দেখি নীলার জন্য কিনে আনা সেই চুড়ি গুলো ডাস্টবিনের ময়লার সাথে পড়ে আছে। তখন আমার চোখের পানি টলমল করতে শুরু করলো। আমি খাটের উপরে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে রইলাম। একটু পরে নীলা আমার সামনে আসতেই বললাম — কি হলো তোমার হাত খালি কেন? চুড়ি কই?

— আসলে আমি চুড়ি গুলো আলমারিতে তুলে রেখেছি।
— ওহ আচ্ছা।
আমি ইচ্ছে করলেই বলে দিতে পারতাম কিন্তু আমি কোনো কিছুই বলিনি। কারণ আমি চাইনা আমার কোনো কথায় নীলা কষ্ট পায়। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ করে ফোনের শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। দেখলাম নীলার ফোনে কল এসেছে।

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ২+৩

আমি ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ৩ টা বাজে এতো রাতে কে কল দিতে পারে? নীলার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর বাসা থেকে কল দিয়েছে কিনা কিন্তু না নাম্বার টা অপরিচিত লাগছে। কারণ নীলার বাসার সব নাম্বার আমি চিনি। নীলার দিকে তাকিয়ে দেখি নীলা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে আসলাম।

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.