কেয়ারিং হাসবেন্ড - Romantic Golpo

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৬

কেয়ারিং হাসবেন্ড

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৬
শহীদ উল্লাহ সবুজ

ঘুম থেকে উঠে দেখি নেহা চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নেহার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে খেয়ে নিলাম।
চা খেতে খেতে নেহাকে বললাম — বিকালে রেডি হয়ে থেকো আমরা ঘুরতে যাবো।

— ঠিক আছে।
— মাইসা কোথায়? ওঁকে তো দেখতে পারছিনা।
— মাইসা আমার তার দাদার কাছে গেছে।
— ওহ, আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
আমি ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে রেডি হলাম। তারপর সবাই মিলে এক সাথে নাস্তা করলাম।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নাস্তা খেয়ে সবুজ বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। সে তার নিজের কাজ করে বাসায় ফেরার পথে মাইসার জন্য জুস নিয়ে বাসায় চলে আসলো। সবুজ তার বাবার রুমে গিয়ে দেখে মাইসা তার সাথে খেলা করছে। মাইসা সবুজকে দেখেই তার দিকে ছুটে চলে আসলো। সবুজ মাইসাকে কোলে তুলে নিজের রুমে গিয়ে মাইসাকে জুস খাওয়াতে শুরু করে।

মাইসা একটু একটু কথা বলতে পারে। সবুজ আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নেহা আছে কিনা। দেখে নেহা কোথাও নেই। সবুজ মাইসাকে কোলে তুলে বলতে থাকে — আম্মু তোমার কি পেট ভরছে নাকি আরো কিছু খাবে?
মাইসা দাত বার করে হাসতে থাকে। ও বলাই হয়নি মাইসার দুইটা দাত উঠছে।
এমন সময় নেহা রুমে চলে আসে। এসে দেখে মাইসা সবুজের কোলে হাসাহাসি করছে। নেহা বলল — কি ব্যাপার হ্যাঁ? দুই জনেই দেখছি খুব খুশি?

— তেমন কিছুনা।
— দেখি আমার কাছে দিন। ওকে খাইয়ে দেয়।
— আমি মাত্র জুস খাওয়ালাম।
— ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার? দেখি আমার কাছে দেন মাইসাকে।
তারপর সবুজ মাইসাকে নেহার দিকে এগিয়ে দিলো। কিন্তু মাইসা যাচ্ছেনা। তখন নেহা বলল — বাবাকে পেয়ে আম্মুকে ভুলে গেলে? তোমার সাথে আড়ি।
নেহার কথা শুনে সবুজ অবাক হয়ে নেহার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। নেহার মুখে এমন কথা শুনে খুশিতে সবুজের মন ভরে গেলো।

সবুজ বলল — আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে যাও তুমি তোমার কাজ করো।
— ঠিক আছে বাবা মেয়ে থাকেন।
নেহা রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেলো। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেহা রেডি হতে শুরু করলো। আর সবুজ মাইসাকে রেডি করাতে শুরু করলো। নেহা তার ব্লাউজের হুক লাগাতে পারছেনা। অনেকবার চেষ্টা করেও যখন পারছিলনা তখন নেহা সবুজকে ডাক দিয়ে বলল — একটু এদিকে আসেন। আমার ব্লাউজের হুকটা একটু লাগিয়ে দিন। সবুজ নেহার দিকে এগিয়ে গেলো। ভয়ে সবুজের হাতপা কাঁপতে শুরু করলো। কাঁপা কাঁপা হাতে সবুজ নেহার ব্লাউজের হুক কোনো রকম ভাবে লাগিয়ে দেয়। আর নেহা এসব আয়নার মধ্যে দেখে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।

একটু পরে সবাই বের হয়ে পড়ে। সবুজ একটা রিকশা দাড় করালো। রিকশার মধ্যে উঠে তারা একটা নদীর পাড়ে চলে যায়। নদীর পাড়ে গিয়ে তারা হাটতে থাকে। মাইসা সবুজের কোলে। আর নেহা সবুজের একটা হাত ধরে নদীর পাড় দিয়ে হেটে চলছে। ফুরফুরে ঠান্ডা বাতাস তাদের শরীর শীতল হয়ে আসছে। একটা ফুচকা দোকান দেখে নেহা সবুজকে বলল — চলেন ফুচকা খাবো।

সবুজ বলল — ঠিক আছে চলো।
তারা ফুচকা দোকানের সামনে গিয়ে ফুচকা অর্ডার করে। ফুচকা খেয়ে আবার হাটতে শুরু করে। হাটতে হাটতে নেহা বলল — হঠাৎ করে এখানে আসার কারণ কি?
— আসলে তেমন কোনো কারণ নেই। বাড়িতে বসে থেকে তো বোরিং হয়ে যাচ্ছ তাই ভাবলাম একটু ঘুরতে বের হলে ভালো লাগবে।

— ওহ।
— হুম আর কাল থেকে আমার অফিস শুরু হয়ে যাবে। আর সময়ও তেমন একটা পাবো না।
— কাল থেকে তাহলে অফিসে চলে যাবেন?
— হুম।

তারা আরো কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে বাসায় চলে গেলো। রাতের খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে তারা। মধ্য রাতে সবুজের ঘুম ভেঙে যায় কারোর শব্দ শুনে। সবুজ চোখ মেলে পাশে তাকিয়ে দেখে নেহা মা মা করছে। সবুজ বুঝতে পারছেনা কি হলো নেহার? সবুজ নেহার মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে নেহার শরীর। সবুজ কি করবে বুঝতে পারছেনা। নেহার গায়ের উপরে একটা ভারী কম্বল দিয়ে দিলো।

এবার সবুজ নেহার মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। হঠাৎ করে এমন জ্বর কি ভাবে আসলো নেহার সবুজ বুঝতেই পারছেনা। সবুজ নেহার মাথায় জলপট্টি দিতে দিতে এক সময় নেহার মাথার হাত রেখেই সবুজ ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে নেহার ঘুম ভেঙে যায়। নেহা তাকিয়ে দেখে সবুজ তার মাথায় পাশে ঘুমিয়ে আছে। নেহা নিজের কপালে হাত দিয়ে দেখে তার মাথায় জলপট্টি দেওয়া। নেহার আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে সবুজ সারারাত না ঘুমিয়ে নেহার মাথায় জলপট্টি দিয়েছে। নেহা আসতে করে সবুজের হাত সরানোর চেষ্টা করতেই সবুজের ঘুম ভেঙে গেলো। সবুজ তাড়াতাড়ি উঠে নেহার কপালে হাত রেখে দেখে জ্বর এখনো কমে নাই।

সবুজ বলল — আমি ডাক্তারকে কল দিচ্ছি ডাক্তার বাসায় চলে আসবে। তুমি রেস্ট নাও।
— আমার রেস্ট করলে হবে না সবার জন্য তো রান্না করতে হবে।
— এসব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। আমি তো আছি।
— আপনি না আজকে অফিসে যাওয়ার কথা?

— একদিন না হয় বউয়ের সেবা করলাম। আজ অফিসে যাবোনা। তুমি রেস্ট নাও আমি সব কাজ শেষ করে আসছি।
সবুজের এসব দেখে নেহা মনে মনে হাসতে থাকে। আর বলতে থাকে এমন স্বামী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের বেপার।
অন্য দিকে সবুজ রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করতে শুরু কেরে দেয়। মাইসার জন্য দুধ গরম করে। সব রান্না শেষ করে সবুজ নেহা আর মাইসার জন্য খাবার নিয়ে আসে। সবুজ নিজ হাতে নেহাকে খাবার খাইয়ে দেয়।

এমন সময় মাইসা ঘুম থেকে উঠে কান্না করতে থাকে। সবুজ মাইসাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমের ভিতর নিয়ে মুখ ধুইয়ে নিয়ে আসে। তারপর মাইসাকে খাবার খাইয়ে দেয়। একটু পরে নেহাকে দেখার জন্য ডাক্তার চলে আসে। ডাক্তার নেহার জ্বর মেপে দেখল নেহার শরীরে অনেক জ্বর এসে গেছে। ডাক্তার কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে চলে গেলো।
সবুজ ডাক্তারকে বিদায় দিয়ে নেহাকে বলল — আমি ওষুধ গুলো নিয়ে আসি। আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো। আর হ্যাঁ কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিবে।

এই কথা বলে সবুজ বের হবে এমন সময় মাইসা আবার কান্না করতে শুরু করলো। মাইসার কান্না শুনে সবুজ আমার দরজা থেকে ফিরে চলে আসে। আর সে কোনো রকম ভাবে মাইসার কান্না বন্ধু করে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ওষুধের জন্য চলে যায়।

সবুজের এই অবস্থা দেখে নেহার অনেক খারাপ লাগতে শুরু করে। একা মানুষ কি ভাবে এতো কিছু সামলাবে? তাই নেহা তার আম্মুকে ফোন দিয়ে চলে আসতে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যে সবুজ নেহার জন্য ওষুধ নিয়ে চলে আসে। আর নেহাকে ওষুধ খাইয়ে দেয়। সবুজ নেহার মাথায় হাত দিয়ে দেখে নেহার শরীর এখনো অনেক গরম হয়ে আছে। সবুজ আবার নেহার মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে।

অনেক্ষন পরে সবুজ বলল — এখন কেমন লাগছে?
— ভালো। আর আমার সামান্যই জ্বর হয়েছে। এতো ফেরেসানি হওয়ার কিছু নেই। একটু পরে এমনিই আমি ঠিক হয়ে যাবো।
— চুপ থাকো। আর জ্বর কি ভাবে আসলো বুঝলাম না।
— আসলে আমার একটা সমস্যা আছে। আমি বেশি ঠান্ডা সহ্য করতে পারিনা। হয়তো এই জন্য জ্বর চলে আসছে।
— sorry নেহা।
— সরি কেন বলছেন?
— আমার জন্য তো জ্বর আসলো তোমার। আমি যদি তোমাকে কাল ওখানে নিয়ে না যেতাম তাহলে হয়তো তোমার আজ এতো কষ্ট পেতে হতো না।

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৫

— বোকা। ঠিক হয়ে যাবো একটু পরেই। আর আপনাকে এতো চিন্তা করতে হবে না। আমার আম্মু আসতাছে।
— উনি কেন আসছেন?
— আমি আসতে বলছি তাই।
— ওহ আচ্ছা।
এমন সময় নেহার আম্মু চলে আসে রুমের ভিতরে। আর নেহার আম্মুর সাথে একটা মেয়েও এসেছে। সবুজ মেয়েটাকে দেখে হতবাক হয়ে গেলো।

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.