কেয়ারিং হাসবেন্ড - Romantic Golpo

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৭

কেয়ারিং হাসবেন্ড

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৭
শহীদ উল্লাহ সবুজ

সবুজ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে।
নেহার আম্মু এবার রুমের দিকে এগিয়ে আসে। সাথে মেয়ে টাও এগিয়ে আসে।
নেহার আম্মু নেহার কাছে এসে বলল — কিরে এখন কি অবস্থা তোর? এখন কেমন লাগছে?

— এই তো এখন একটু ভালো আছি। কিরে আসফা কি অবস্থা কবে আসলি তুই?
মেয়েটার নাম আসফা। আর সবুজ অবাক কেনো হলো তার কারণ টা না হয় একটু পরেই বলছি।
আসফা বলল — এইতো আপু আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আর কালকেই আসলাম। খালাকে বলছিলাম তোর শ্বশুর বাড়ি যাবো আর তুই ও ফোন দিলি আসার জন্য। তোর বিয়েতে আসতে পারিনি পরিক্ষার জন্য।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— ঠিক আছে সমস্যা নাই। তোর পরিক্ষা কেমন হয়েছে?
— ভালো আপু।
এবার আসফা সবুজকে দেখিয়ে দিয়ে বলল — আপু উনি কি আমার দুলাভাই?
— হুম।
এবার আসফা সবুজের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — দুলাভাই কেমন আছেন?

— আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
— দুলাভাই আমি আপনার শালি। আমাকে তুমি করেই বলুন। আপনি করে বললে বুড়ী বুড়ী মনে হয়।
— ঠিক আছে সমস্যা নাই। কিন্তু তোমাকে তো আমি চিনতে পারলাম না। আর আগেও কখনো দেখি নাই।
— ওহ আচ্ছা! আমার পরিচয় দিয়ে দেয় আগে। আমি আসফা। নেহা আপু মানে আপনার বউয়ের খালাতো বোন। আর আমিই এক মাত্র শালি আপনার।

— ওহ আচ্ছা।
— জ্বী। আর সরি ভাইয়া আমি আপনাদের বিয়েতে আসতে পারিনি পরিক্ষার জন্য।
— ওহ।
— দুলাভাই আপনি কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম। আপনাকে আমার খুব ভালো লাগছে।
নেহা বলে উঠলো — আবার শুরু হইছে তোর ফাজলামি?

— আপু তুই বলতে চাস ভাইয়া কি হ্যান্ডসাম না?
— সেটা বলতে চাইনি।
— দেখছেন ভাইয়া।
— এই তুই এবার চুপ থাক।
— হিহিহি।
সবুজের অবাক হওয়ার কারণ হচ্ছে। সবুজ জানে ওনা যে তার একটা এমন কিউট শালি আছে। আসফা দেখতে খুব সুন্দরী। তবে বয়স কম। বয়স ১৭/১৮ হবে।

সবুজ বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো বাজারে। এই দিকে নেহা আর আসফা বসে বসে কথা বলছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে সবুজ বাজার নিয়ে চলে আসে। নেহার আম্মু সবার জন্য রান্না করে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই বাসায় চলে গেলো। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। নেহার জ্বর অনেক টাই কমে গেছে।
সবুজ নেহার কাছে গিয়ে বলল — তোমার যে একটা বোন আছে আমাকে তো বললে না আগে।

— আপনিও তো জিজ্ঞেস করেননাই। আর ও কিন্তু অনেক দুষ্ট। ওর থেকে দূরে থাকবেন।
— হুম দেখেই বুঝতে পারছি। ছেলে ফোটানোর মাস্টার। কি ভাবে ছেলে ফোটাতে হয় সব জানে।
— আপনি কি করে জানেন?
— ওকে দেখেই বুঝতে পেরেছি আরকি।
— এবার আসেন ঘুমাতে হবে। অনেক রাত হচ্ছে।
— এক রাত না ঘুমালে কিছু হবে না। আজকে রাত না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেই।

— তো কি সারারাত জেগে থাকবো নাকি?
— হুম থাকবে সমস্যা কি?
— কোনো মতলব আছে নাকি হুম?
— আরেনা একটু গল্প করতাম আর কি।
— হইছে বুঝতে পারছি আমি।
— কি বুঝতে পারছো তুমি?
— যেটা বোঝার সেটা বুঝতে পারছি। আর কোনো ফাজলামো না করে ঘুমিয়ে পড়ুন।

সবুজ আর কোনো কথা না বলে নেহার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। সবুজের ঠোঁট নেহার ঠোঁটের সামনে নিয়ে গেলো। নেহার ঠোঁট সবুজের ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই নেহার নিশ্বাস ধিরে ধিরে ভারী হয়ে যেতে থাকে। নেহার নিশ্বাসের শব্দ সবুজ স্পষ্ট ভাবে শুনতে পারছে। নেহার নিশ্বাসের শব্দে সবুজ আরো মাতাল হয়ে যাচ্ছে। দুজনেই হারিয়ে যেতে থাকে অন্য এক জগতে। ভালোবাসার সুখের সাগরে ভাসতে থাকে তারা।

হারিয়ে গেলো দুজন দুজনের মাঝে। অনেক্ষন পরে তারা নিজেদের মধ্যে ফিরে আসে। নেহা সবুজের বুকের উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। সবুজ নেহাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়। সকালে নেহা ঘুম থেকে উঠে দেখে সবুজ এখনো ঘুমিয়ে আছে। নেহা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে সবুজকে ডেকে দিলো। সবুজ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে গেলো। সবুজ অফিসে গিয়ে কাজে মন দিতে পারছেনা। নেহা আর মাইসাকে মিস করছে। বার বার তাদের কথা মনে পড়ছে। সবুজ ফোন বের করে নেহাকে কল দিয়ে বলল — কি করছ তুমি?

— বসে আছি। আপনি কাজ করছেন না?
— কাজে মন দিতে পারছিনা।
— অনেক দিন পরে কাজে গেছেন তাই এমন লাগছে।
— মাইসা কি করছে?
— খেলছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে রাখলাম। দুপুরে কল দেবো লান্স টাইমে।

— আচ্ছা ঠিক আছে এখন কাজ করেন।
— ওই শুনো না!
— কি?
— একটা দিবে?
— মাইর খাবেন নাকি? হিহিহি।
— না ওইজে।
— উফফ কাজ করেন তো রাখলাম।

এই কথা বলে নেহা ফোন কেটে দিলো। সবুজ আবার কাজে হাত দিলো। কিন্তু তার কাজ করতে ভালো লাগছেনা। সবুজের এই অবস্থা দেখে সবুজের একজন সহকারী তার দিকে এগিয়ে এসে বলল — কি অবস্থা সবুজ ভাই। অনেক দিন পরে অফিসে আসলেন আবার দেখে মনে হয় মন খারাপ?

— আরে তেমন কিছুই না ভাই।
— নতুন বিয়ে করে বউ রেখে অফিসে আসতে সবারি একটু খারাপ লাগে। আমি জানি ভাই। যাইহোক ভাবি কেমন আছে ভাই?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।
— আচ্ছা কাজ করেন। আসি আমি আমার কাজ আছে অনেক।
— ঠিক আছে ভাই।
এবার সবুজ কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করলো। দেখতে লান্স টাইম হয়ে গেলো। সবুজ নেহার নাম্বারে কল দিলো। কল দিতেই নেহা সাথে সাথে ফোন রিসিভ করলো।

— কেমন আছো? শরীর ঠিক আছে তো?
— ভালো আছি। খাবার খেয়েছেন আপনি?
— না এখন খাবো। মাইসা কি করছে?
— ও ঘুমচ্ছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে টাইম মতো খাবার খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিবা মনে করে।
— ঠিক আছে।
— মনে থাকে জেনো।
— মনে থাকবে। এতো চিন্তা করার কিছু নেই। আচ্ছা খাবার খেয়ে নিন রাখলাম।
— ওকে বায়।

ফোন কেটে দিয়ে খাবার খেয়ে নেয় সবুজ। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার কাজ শুরু করলো। অফিসের কাজ শেষ করে সবুজ বাসার দিকে রওনা দিলো। বাসায় যাওয়ার পথে সবুজ ফুচকা দোকান দেখে নেহার জন্য ফুচকা নিয়ে বাসায় চলে গেলো। সবুজ বাসায় গিয়ে নিজের রুমে ঢুকে নেহার দিকে ফুচকার পেকেট এগিয়ে দিতেই নেহা অনেক খুশি হয়ে গেলো। নেহার খুব পছন্দের ফুচকা। সেটা সবুজ নদীর পাড়েই বুঝতে পেরেছে।

তারপর অনেক দিন কেটে গেলো। নেহা আর সবুজের মধ্যে সম্পর্কটা আরো অটুট হয়ে যাচ্ছে। সবুজ নেহাকে অনেক বেশি ভালো বেসে ফেলছে।
সবুজ আর নেহা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
হঠাৎ করে নেহা সবুজকে ঘুম থেকে উঠিয়ে সবুজের দিকে একটা কাগজের খাম এগিয়ে দিলো।
সবুজ বলল — এটা কিসের খাম? কি আছে এটার মধ্যে?

— খুলে দেখলেই বুঝতে পারবেন কি আছে এটায়।
সবুজ খাম খুলে কাগজটা হাতে নিয়েই অবাক হয়ে গেলো। সবুজের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হলো। সবুজ একবার কাগজের দিকে তাকাচ্ছে একবার নেহার দিকে তাকাচ্ছে। সবুজের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু হলো।
সবুজ কান্না মাখা গলায় বলল — এসব কি নেহা?

— দেখতে তো পারছেন। আবার প্রশ্ন করার মানে কি?
– কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা আমার দোষ কি? কেনো আমাকে ছেড়ে চলে যাইতে চাইছ নেহা?
— আমি আর আপনার সাথে সংসার করতে চাইনা। আমি সিগনেচার করে দিয়েছি আপনিও করে দিন। আমি মুক্তি চাই।
সবুজ নেহার দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক চোখে। আসলে ওই খামের ভিতরে ছিলো ডিভোর্স পেপার। আর ডিভোর্স পেপারে নেহা সিগনেচার করে দিয়েছে।

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৬

নেহা ও রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। সবুজ বুঝতে পারছেনা তার সাথে এটা কি হচ্ছে? কোন অপরাধে নেহা সবুজকে ডিভোর্স দিতে চাইছে?

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.