কেয়ারিং হাসবেন্ড - Romantic Golpo

কেয়ারিং হাসবেন্ড শেষ পর্ব 

কেয়ারিং হাসবেন্ড

কেয়ারিং হাসবেন্ড শেষ পর্ব 
শহীদ উল্লাহ সবুজ

দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। সবুজ নেহার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল — নেহা তোমার কোনো কিছুই হবেনা। আল্লাহর উপর ভর্ষা রাখো। আল্লাহ আমাদের সাথে খারাপ কিছু করবেনা।

— আমার খুব ভয় করছে।
— ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি তো তোমার সাথে আছি। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা। তুমি ভয় পাবেনা একদম।
— হুম।
— লক্ষি বউ আমার।
একটা নার্স এসে বলল — আপনি একটু বাহিরে আসুন ডাক্তার আপনাকে ডাকছে।
— আচ্ছা আপনি যান আমি আসতেছি একটু অপেক্ষা করতে বলুন।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সবুজ নেহাকে বলল — চিন্তা করবেনা একদম আমি আছি ঠিক আছে? আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি। ভয় পাবেনা কেমন?
নেহা মাথা নাড়াল। তারপর সবুজ নেহার কপালে আরেকটা চুমু খেয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে চলে গেলো ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার সবুজের দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল — এখানে একটা সিগনেচার করে দিন।

— কিসের কাগজ এটা?
— আসলে অপারেশনের সময় আল্লাহ না করুক যদি খারাপ কিছু হয়ে যায় তখন এর দায় বার কে নিবে? তার জন্য এখানে একটা সিগনেচার করতে হবে যাতে আমাদের কোনো সমস্যা না হয়। আপনি সিগনেচার না করলে আমরা অপারেশন শুরু করতে পারবোনা।
— ঠিক আছে আমি সিগনেচার করে দিচ্ছি।

সবুজ ডাক্তারের হাত থেকে কাগজ নিয়ে সিগনেচার করে আবার সেই কাগজ ডাক্তারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল — ডাক্তার প্লিজ দেখবেন আমার স্ত্রীর যেনো কিছু না হয় প্লিজ।
— দেখুন ভেঙে পড়বেন না, জন্ম আর মৃত্যু এটা আল্লাহর হাতে। আমি আমার মতো চেষ্টা করবো।
— ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব।
তারপর ডাক্তার চলে গেলো। একটু পরে নেহাকে অপারেশন রুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। নেহা সবুজের দিকে তাকিয়ে রইলো। সবুজ ও নেহার দিকে এগিয়ে চলে গেলো। আর সবুজ নেহার মাথায় হাত রেখে বলল — ভয় পাবেনা। সব ঠিক হয়ে যাবে।

এবার নেহাকে ভিতরে নিয়ে যাবে এমন সময় নেহা সবুজের হাত ধরে পেলে। সবুজ নেহার হাতে হাত রেখে বলল — নেহা যাও তুমি চিন্তা করবেনা।
তারপর নেহাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে অপারেশন রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। সবুজ এতোক্ষণ নেহার সামনে নিজেকে শক্ত করে রাখার চেষ্টা করতে পেরেও নেহার চোখের আড়াল হতেই সবুজ কান্না করতে শুরু করে। নেহার বাবা সবুজের দিকে এগিয়ে এসে তার কাধে হাত রাখতেই সবুজ চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে নেহার বাবা।

নেহার বাবা সবুজকে বলল — বাবা এই ভাবে ভেঙে পড়লে হবেনা। নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। তুমি এই ভাবে ভেঙে পড়লে কি করে হবে?
— বাবা আমি আর পারছিনা। নেহা কতটা কষ্ট পাচ্ছে। আমি আর নিজেকে শক্ত করে রাখতে পারছিনা।
এবার যে ডাক্তার অপারেশন করবে সে চলে আসে। আর সে অপারেশন রুমে ঢুকবে এমন সময় সবুজ বলল — ডাক্তার একটা রিকুয়েষ্ট করবক রাখবেন প্লিজ?

— কি রিকুয়েষ্ট?
— ডাক্তার আমি অপারেশন রুমে থাকতে চাই। প্লজি না করবেন না। আমি থাকলে আমার স্ত্রী সাহস পাবে। ও অনেক ভয় পাচ্ছে। প্লিজ আমাকে ভিতরে যেতে দিন।
— সরি আমাদের এখানে এটা এলাও না। রোগী আর ডাক্তার ছাড়া আমরা আর কাওকে এলাও করিনা।
— প্লিজ ডাক্তার।
— সরি।

নেহার বাবা ডাক্তারের কাছে এসে বলল — ডাক্তার সাহেব আপনি হয়তো ওর অনুভূতি আপনি বুঝতে পারছেন না। দেখুন মেয়েটা খুব ভয় পাচ্ছে। ওর হাসবেন্ড যদি ওর সামনে থাকে তাহলে মেয়েটার ভয় একটু হলেও কমে যাবে।
ডাক্তার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল — আচ্ছা ঠিক আছে। শুধু রোগীর ভয় কাটানোর জন্য ওনাকে ভিতরে নেবো। কিন্তু অপারেশন এর ঠিক আগ মুহুর্তে ওনাকে বাহিরে চলে আসতে হবে।
সবুজ বলল — ঠিক আছে ডাক্তার। আমি বের হয়ে যাবো।

তারপর ডাক্তার সবুজকে নিয়ে অপারেশন রুমের ভিতরে চলে যায়। নেহা সবুজের দিকে তাকাতেই সবুজ নেহার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল সে আছে।
নেহার মুখেও হাসির রেখা ফুটে উঠে। এবার ডাক্তার নেহাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে দেয়। আর সবুজকে বের হয়ে যেতে বলে। সবুজ ইচ্ছের বিরুদ্ধে অপারেশন রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসে।
সবুজ অপারেশন রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসার সাথে সাথে নেহার অপারেশন শুরু করা হয়।

আর বাকি সবাই অপারেশন রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। নেহার আম্মু নামাজের বিছানায় বসে নেহার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে থাকে। মাইসাকে কোলে নিয়ে একটা চেয়ারের উপরে চুপচাপ বসে আছে আসফা। সবুজের বাবা আর নেহার বাবাও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

সবুজ দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে অপারেশন রুমের সেই লাল লাইটের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। সবাই নিস্তব্ধ। সবুজের চোখের সামনে ভাসছে নেহার সাথে কাটানো সেই সময় গুলি। নেহার কথা ভাবতেই সবুজের চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। অনেক্ষন হয়ে গেলো এখনো অপারেশন শেষ হলোনা। সবুজের চিন্তা আরো বেড়ে যেতে থাকে। সবুজ তার বাবার কাছে গিয়ে বলল — বাবা এতো সময় লাগছে কেন? আমি তো আর সহ্য করতে পারছিনা।

— আরেকটু অপেক্ষা কর। চিন্তা করিস না বউমার কিছু হবেনা।
— তাই যেনো হয়। নাহলে আমিও মরে যাবো বাবা। আমি নেহাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।
— তুই কি পাগল হয়ে যাচ্ছিস? তুই তো এমন চিলি না? যখন তোর মা আমাকে রেখে চলে যায় তখন তুই তো আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে চিলি কিন্তু আজ তুই এমন করছিস কেন?

–বাবা আমি জানিনা আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার নেহার যেনো কিছু না হয়।
— কিছু হবেনা চিন্তা করিস না বাবা।
আরো কিছু সময় পার হয়ে যায়। আর অপারেশন রুমের লাইট ও অফ হয়ে যায়। সবাই তাড়াতাড়ি করে অপারেশন রুমের দরজার সামনে চলে আসে।কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার বেরিয়ে আসে।
সবুজ ডাক্তারকে দেখে বলল — ডাক্তার আমার স্ত্রী ঠিক আছে তো?
ডাক্তার কোনো কথা না বলে চোখ থেকে চশমা খুলে দাঁড়িয়ে থাকে।
সবুজ আবার বলল — কি হলো ডাক্তার কথা বলছেন না কেন?

— আরে এতো ভয় পাওয়ার কিছু হয়নি। আপনার স্ত্রী সম্পন্ন সুস্থ আছে। আর আপনার একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান হইছে। মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছে। একটু পরেই তাদের কেবিনে শিপ্ট করা হবে তখন দেখা করতে পারবেন।
ডাক্তারের কথা শুনে সবুজ খুশি হয়ে ডাক্তারকে জড়িয়ে ধরে বলল — আলহামদুলিল্লাহ। ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি আবার আমার স্ত্রীকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিলেন।

— আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। আল্লাহকে দিন। আর আল্লাহ আপনাদের আলাদা করতে চায়নি। আমি আমার এতো দিনের অপারেশন ক্যারিয়ারে আপনার মতো হাসবেন্ড কাওকে দেখিনি। যে একটা হাসবেন্ড কতটা কেয়ারিং হতে পারে। এমন হাসবেন্ড সব মেয়েদের কপালে থাকলে হয়তো আর কোনো মেয়েকে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মরতে হতোনা। প্রতিটি হাসবেন্ড যদি তার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট এর সময় পাশে থাকে, আর তাকে এই ভাবে সাপোর্ট দেয় তাহলে হয়তো আর কোনো মেয়েকে অকালে প্রান হারাতো না। আপনাদের জন্য দোয়া রইলো আসি।
এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলো। সবুজ অনেক খুশি হয়ে গেলো। সবুজ তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে দেয়।

— কিরে এখন আবার কান্না করিস কেন?
— এটা দুঃক্ষের কান্না না বাবা। এটা তো সুখের কান্না।
সবার মুখেই হাসির রেখা ফুটে উঠে। সবাই অনেক খুশি। নেহাকে কিছুক্ষণ পরে কেবিনে শিপ্ট করা হলো। একে একে সবাই নেহার সাথে দেখা করে বেরিয়ে চলে আসে। এবার সবুজ মাইসাকে কোলে নিয়ে নেহার কেবিনে চলে গেলো। সবুজ নেহার কেবিনে গিয়ে দেখে নেহা শুয়ে আছে। নেহা সবুজকে দেখে একটা মুচকি হাসি দেয়ে উঠতে যাবে এমন সময় সবুজ তাড়াতাড়ি করে নেহার পাশে গিয়ে নেহাকে ধরে একটু উপরে উঠিয়ে পিঠের নিচে একটা বালিশ দিয়ে দেয়।
সবুজ মাইসাকে এক পাশে বসিয়ে দিয়ে নেহাকে বলল — এখন কেমন আছো তুমি?

— ভালো আছি।
— কই আমার ছেলেকে আমার কাছে দাও। আমি একটু কোলে তুলে নেই।
— ওটা আপনার ছেলেনা ওটা আমার ছেলে। আমি এতো কষ্ট করলাম আর আপনি নিজের ছেলে বলছেন৷
— আচ্ছা সরি তোমার ছেলেকে একটু আমার কাছে দাও।
এবার নেহা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে নেহার বাচ্চাকে সবুজের কোলে তুলে দিলো। সবুজ তার ছেলেকে কোলে তুলে আদর করতে থাকে। আবার নেহার কাছে ফিরিয়ে দেয়।
সবুজ বলল — এতক্ষণ বাচ্চাদের তো আদর করলাম এবার তোমাকে একটু করি।

— বাচ্চাদের সামনে? লজ্জা নাই আপনার?
সবুজ এবার এক হাত মাইসার চোখে সামনে আরেক হাত ছেলের চোখে সামনে রেখে বলল — এবার ওরা আর দেখতে পাবেনা।
— আপনিও না।
— কি আমি হুম?
— কিছু না।
— তাহলে আদর করি।
এই কথা বলে সবুজ নেহার ঠোঁটে একটা চুমু খায়। তারপর থেকে তাদের জীবন সুন্দর ভাবে চলতে থাকে। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তাদের সুখী পরিবার হয়ে উঠে আরো আনন্দময়।

সমাপ্ত

আসসালামু আলাইকুম। প্রথমেই সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে এই ভাবে সাপোর্ট করার জন্য। আসলে এই গল্পটা আমি লেখার আগে ভেবেছিলাম আমি গল্পটা বেশি বড় করবোনা।কিন্তু আপনাদের এতো সাপোর্ট পেলাম যে গল্পটা কন্টিনিউ করতে শুরু করলাম।

শেষ তো করতেই হবে তাইনা? যাইহোক পুরো গল্পটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। গল্পের মধ্যে ভুল থাকলে ক্ষমা করবেন। ইনশাআল্লাহ আবার নতুন গল্প নিয়ে ফিরবো আপনাদের মাঝে। আপনাদের অনুপ্রেরণা পেলেই নতুন গল্প লেখার উতসাহ পাই। সবাই সবার মুল্যবান মন্তব্য জানাবেন কমেন্ট করে। ধন্যবাদ সবাইকে হ্যাপি রিডিং।

কেয়ারিং হাসবেন্ড পর্ব ১৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.