তুমি আসবে বলে পর্ব ১১
নুসাইবা ইভানা
খোলা আকাশের নিচে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছে আরহা আর নীলু। সামনেই বিশাল পুকুর বৃষ্টির পানি আড়াল করছে আরহার চোখ থেকে গড়িয়ে পরা অশ্রু কণাগুলো।মন খুলে কাঁদার জন্য বৃষ্টি সবচেয়ে বেশি উপযোগী আরহা চিৎকার করে কাঁদছে নীলু একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে।
তবে কোন বাঁধা দিচ্ছে না। আরহা আর নীলু এই চার বছরে কত কিছু সহ্য করচছে তা শুধু ওরা দু’জনেই জানে। নীলু মনে মনে ভাবছে, এইটুকু মেয়ের জীবনে যা ঝড় বয়ে গেছে তাতে এ কান্না কিছুই না। কাঁদলে যদি নিজের মনটাকে একটু শান্ত করতে পারে। প্রায় ঘন্টা খানেক কাঁদার পরে নীলু এসে আরহার কাঁধে হাত রাখলো আরহা নীলুকে ধরে বলে কেনো আমার সাথেই এমন হয় বলো, আমি সত্যি অপয়া, অলক্ষী, আমার জন্য সবার খারাপ হয়। আমি এতোটাই হতোভাগা যে আমার সব প্রিয় মানুষ আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আচ্ছা তুমিও চলে যাবে তাই না!
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– এসব কি বলছিস আমি কোথাও যাবো না তোকে ছেড়ে তুই আমার ছোট বোন। বোনকে কখনো একা ছেড়ে যাওয়া যায়!
– আচ্ছা আমার বর তো আর কোনদিন আমার কাছে ফিরবেই না। আমি চাইলেও তার মুখ দেখতে পারবো না তাই না আপু?
– ঠিক আসবে একদিন নিজের ভুলের জন্য ক্ষমাও চাইবে। আর না আসলেও বা কি এতো কম সময়ে জনপ্রিয় সিঙার আদিয়াত নুজহাত আরহা যার জন্য হাজার হাজার ছেলে পাগল। তাদের ভেতর থেকে একজনকে বেছে নেবো। কি বলিস আর তাছাড়া প্রান্ত বলে ছেলেটাকে আমার দারুণ লাগে।
– তাহলে তাকে তুমি রেখে দাও। আমি শুধু একবার তার মুখোমুখি হতে চাই বিয়ের পরদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমার সামনে না আসার কারণ জানতে চাই?
আমাকে আমার অধিকার থেকে কেনো বঞ্চিত করা হলো। ছোট সাহেব যা বললো তাই বিশ্বাস করলো একবারের জন্য আমার কাছে সত্যিটা জানতে চাইলো না। এসবের উত্তর তাকে দিতেই হবে।
নীলু মনে মনে ভাবছে কার কাছে যাবে তুমি সেই তো তোমাকে ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দিলো। তার ভুল কি ভাঙতে পারবে। তোমাকে যে এসম্পর্ক ত্যগ করতেই হবে। সে কোনদিন তোমার হবে না। কি করে বলবো তোমাকে। সে আর হয়তো ফিরবে না।
নীলু আরহার হাত ধরে বলে অনেক হয়েছে এবার চল
রাতে প্রোগ্রাম আছে। ভুলে গেছিস ড্রিম হলিডে পার্কে আজকের কনসার্ট। কম পক্ষে দুটো গান গাইতে হবে।
– চিন্তা করো না ঠিক পারবো।
– ঠান্ডা লেগে যাবে তো চল এক্ষুনি
আরহা বাসায় এসে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো। আয়নায় নিজেকে দেখে বলছে তোর রুপ মূল্যহীন। তোর সৌন্দর্যের কোন মর্যাদা নেই, কি হবে এই রুপ দিয়ে রাগে নিজের বড় নখ নিয়ে নিজের গালে আঘাত করে রক্তাত করে ফেললো। নীলু রুমে ডুকতেই এসব দেখে আরহাকে আটকালো। পাগল হয়ে গেছিস এসব কি করছিস।
– আমি এই রুপ,এই সৌন্দর্য চাই না এগুলো আমার অভিশাপ।
– চুপ আর একটাও বাজে কথা বলবি না। একজন সার্ভেন্ট ডেকে ফাস্টএইড বক্স আনিয়ে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে বললো, নিজেকে দোষ দেয়া বন্ধ কর!
দীর্ঘ চার বছর পর বাংলাদেশ ফিরেছে মেঘ সেদিনের পর আর এদেশের মাটিতে পা রাখেনি মেঘ। আজো আসতো না তবে ইমতিহানের গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছে। হিয়া নামক কালো অধ্যায় থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ভাবে নিজের জীবন শুরু করেছে
ইমতিহান। তার ভুলের জন্য বন্ধুর জীবন নষ্ট করবে না। তাই এসেছে। নয়তো এদেশে ফেরার ইচ্ছে চার বছর আগেই দাফন করে গেছে।
ইমতিহান বলল, তুই কি আমাদের বাসায় যাবি নাকি নিজের বাসায়?
মূহুর্তে মেঘের ভিতর হাহাকার করে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, তুই এখন বাসায় যা আমি রাতে আসছি? মানুষ অতীত থেকে যতই পালাতে চায় অতীত ততই গভীর ভাবে সামনে আসে। পুরোনো ক্ষত গুলো বারবার দগ্ধ হয়ে উঠে।
আরহা দাঁড়িয়ে আছে পুরোনো কিছু ফটো ফ্রেমের সামনে স্থীর দৃষ্টি তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরতেই গাল দুটো জ্বলে উঠলো।
তবে হৃদয়ে যে গভীর ক্ষত তার তুলনায় এ ক্ষত নিতান্তই নগন্য। মিসেস মারিয়া ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,তোমার ছেলে আমার দিকে ফিরেও তাকালো না। একটি বার আমার খোঁজ নিলোনা। কখনো জানতে চাইলো না আমি কেমন আছি! ভাবছো তোমার ছেলেকে ভালোবাসি যাকে চোখের দেখা দেখিনি তার প্রতি ভালোসা কোথা থেকে আসবে?
তবে আমার হৃদয়ে তার জন্য জায়গা ছিলো সেই জায়গাটা আছো শূন্য। হয়তো কোনদিন আর পূর্ণ হবে না। কি দোষ আমার বলো, কেনো তোমরা সবাই আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেলে? আমার যে বড্ড কষ্ট হয়, এই একাকিত্ব আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। তবে আমি খুঁজে বের করবো৷ “তাকে, বের করবোই। আমার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তাকে!
নীলু ডেকে বললো আরহা নিচে আয় তোর সাথে জরুরি কথা আছে। আলতো হাতে চোখের জলগুলো মুছে নিলো। খোলা চুলগুলো হেয়ার ব্যন দিয়ে আটকে নিয়ে নিচে চলে আসলো।কি এমন জরুরি কথা বলো,
– শোন ইমতিহান বাংলাদেশ আসছে আমার সাথে মিট করতে চাইছে দেখ কত গুলো মেসেজ করেছে,কি রিপ্লাই করবো , কেথায় আসতে বলবো বুঝতে পারছিনা।
– বাসার ঠিকানা দিয়ে দাও তাহলেই তো হয়।
– তুই বোকাই রয়ে গেলি আমরা দুজন মেয়ে থাকি বাসায়! একটা ছেলেকে বাসায় ডাকা ঠিক হবে না। তারচেয়ে আজ রাতের কনসার্টে আসতে বলি কি বলিস!
– আইডিয়া খারাপ আমরা কনসার্ট শেষে দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করবো।
– আগেই দুলা ভাই! আজকে ফাস্ট দেখা আগে দেখ দেখতে যাচ্ছি সালমান খানকে, আর যেয়ে যদি দেখি আমিতাভ বাচ্চনকে।
– দুজনেই হ্যন্ডসাম
– তার মানে কি হুম বাবাও না দাদার বয়সি।
আরহা হাসতে হাসতে বলে, তোকে কতবার বলেছি ভিডিও কল করে একবার দেখেনে।
– তবে যাই বলিস আমার কেনো যেনো মনে হয় যে কয়টা পিক পাঠিয়েছে সব রিয়েল।
– শোন তোমার মনে এখন কি বাজছে জানো?
– কি
– প্রেম কি বুঝিনি আগে তো খুঁজিনি আজ কি হল রে আমার।
তুইতো ছিলি বেশ লুকিয়ে ভিনদেশ ইচ্ছে নিয়ে পালাবার।
– চুপ থাক শিল্পী হয়েছিস তাই সব সিচুয়েশনে গান গাইতে হবে! আমি আছি টেনশনে কি ড্রেস পরবো
কি ভাবে আমাকে দেখলে ইমপ্রেস হবে!
– এবার বোকা বোকা কথা তুমি বলছো। শুনো আজকে কোন কৃত্রিম প্রসাধনী ব্যবহার করবে না একদম ন্যচরাল থাকবা। যাকে ভালোবাসো, যার সাথে পুরো জীবন কাটাতে চাও তার সামনে নিজেকে নিজের মতো তুলে ধরো। কারণ পুরো জীবন তাকে তোমার এই সিম্পল ভাবেই দেখতে হবে।
– ঠিক বলেছিস তাহলে আজ নো মেকাপ।
মেঘ দাঁড়িয়ে আছে কবরস্থানে পাশাপাশি তিনটি কবর
যাওয়ার আগে একটা কাঠ গোলাপ গাছ লাগিয়ে ছিলো কবরের পাশে সেটিতে এখন ফুলে ফুলে রঙিন কিছু ফুল কবরের উপর ছড়িয়ে আছে। হাঁটু মুড়ে বসে পরলো, দীর্ঘ চার বছর পর মেঘের চোখ থেকে অশ্রু ঝড়ছে। ঢাকা শহরের ব্যস্ত নগরিতে হাজার মানুষের কবরের ভীরে প্রিয়জনের কবরের পাশে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে এক যুবক অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কবর রক্ষী।চার বছরে এই কবরের পাশে কোন ছেলেকে আসতে দেখেনি।
তবে প্রতি মাসে অন্তত দু’বার করে দুটি মেয়ে আসে। তাকে টাকাও দেয় কবরের দেখা শুনা করতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে।
তুমি আসবে বলে পর্ব ১০
মেঘ অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলো মম কয়েকবার ডাকলো মম কথা বলো বলবে না কথা! ওই একটা মেয়ে আমার জীবন থেকে সব কেড়ে নিলো। কেনো তাকে আমার জীবনে জড়ালে মম?আমার জীবনের সব রঙ মুছে দিয়েছে সে, আমি তাকে ক্ষমা করবো না কখনো না।