তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৩

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৩
নুসাইবা ইভানা

নীলু আরহাকে ধরে বলে, কি হয়েছে বনু এমন করছিস কেনো? তুই না চাইলে ইমতিহানের সাথে সব সম্পর্ক এখনি শেষ করে দিচ্ছি। বল আমাকে কি হয়েছে! আরহা চোখ বন্ধ করে রেখে ভাবছে কন্ঠ তো অনেকের একরকম হতেই পারে। আরহার চোখ থেকে টপ, টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। ডান হাতের বাহু চেপে ধরে আছে।

নীলু বুঝতে পারছে এরকম আর কিছু সময় হলেই আরহার প্যানিক এট্যাক হবে। সেই ক্ষত স্থান থেকে নীলু আরহার হাত সরিয়ে নিয়ে আরহাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমার কথা শোন আরহু তুই ছাড়া আমার কেউ নেই! তুই এমন করিস না বনু বল আমাকে কি হয়েছে। আরহা কোন কথা না বলে নীলুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আপু সে আবার ফিরে এসেছে এবার আমাকে মে*রে ফেলবে আপু তুমি আমাকে লুকিয়ে রাখো।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– শান্ত হ আরহু আমি আছি তো কেউ তোর কোন ক্ষতি করতে পারবেনা এদিকে দেখ বোন আমার। আমার দিকে তাকা কার কথা বলছিস কিছু সময় এভাবেই কেটে যায়। আরহা নিজেকে শান্ত করে বলে আপু জানো আজকে জিজুর নাম্বারে কল করার পর একজন ফোন রিসিভ করেছিলো তার কন্ঠটা একদম এতটুকু বলতেই আরহার শরীর কাঁপতে লাগলো।
নীলু আরহাকে বললো, বলতে হবে না ভুলে যা। যা ছেড়ে এসেছিস! আপু যদি সত্যি সত্যি ছোট সাহেব ফিরে আসে তবে আমাকে আর বাঁচতে দেবে না।

– আর কোনদিন ফিরবে না নিজেকে শক্ত কর সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার।
– আমি পারবো না ওই মানুষটার সম্মুখীন হতে
– প্রয়োজন পরলে পারতে হবে। নীলু আরহার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে, আর কাঁদবি না তো মানুষ যদি জানতে পারে তাদের প্রিয় সিঙ্গার এখনো বাচ্চাদের মতো এভাবে কাঁদে তবে কেমন হবে!
মেঘ বলে,কিরে এতো দেখি ভিতু কল কেটে দিলো। আরে রাখ তো তোর কন্ঠ শুনে হয়তো কেটে দিয়েছে

– কেনো আমি কি এ্যলিয়েন নাকি?
– হতেও পারিস, বলেই হেসে দিলো ইমতিহান। আচ্ছা মেঘ বিয়েটা কবে করছিস?
– মেঘ মনের আকাশ মহূর্তে কালো মেঘে ছেয়ে গেলো বিয়ের কথা মনে করতেই মেঘের মনে পরে গেলো সেই ছোট্ট আরহার কথা। শাড়ি এলোমেলো করে সদ্য ফোটা নিষ্পাপ গোলাপের কলি শুয়ে আছে।

– কিরে বল কবে বিয়ে করবি? কোথায় হারিয়ে গেলি!
-নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে বলে, আগে তোর বিয়ে হোক পরে ভেবে দেখবো,
– শোন বিয়েটা দুজন এক সাথে করে ফেলি কি বলিস!
– বাদ দে তো এসব বিয়ে করার সময় হলে করবো এখন তোর নিজেরটা নিয়ে চিন্তা কর।
– দেখ মেঘ সামিরা কিন্তু তোর জন্য ওয়েট করে আছে। একটা মেয়ে মানুষ আর কত অপেক্ষা করবে!

– আমি আগেই বলেছি এখনো বলছি আমি সামিরাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কোন দৃষ্টিতে দেখিনা সেখানে বিয়ে করার তো কোন প্রশ্নই উঠছে না। তুই বরং ওকে বুঝিয়ে বল আমার আশা ছেড়ে দিতে।
– তোর সামিরাকে অপছন্দ করার মতো কোন কারন তো দেখছি না তাহলে সমস্যা কোথায়?
_এসব কথা বন্ধ করবি নাকি আমি এখানেই নেমে পরবো তুই একা যাবি!
– ওকে এসব কথা বাদ দিলাম তোর লাইফ তুই যা ইচ্ছে কর!

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার নিজেকে পরখ করে নিচ্ছে হিয়া। নিজেকে নিজে বলছে, আমাকে অপমান করেছিলে মিস্টার মেঘ! ভেবেছো ভুলে গেছি তোমার প্রতিটি অপমান! তোমার জীবন কি ভাবে বিষিয়ে তুলতে হয় আমার জানা আছে। যাস্ট ওয়েট। এই হিয়া যদি তোমার জীবনে কাল বৈশাখি ঝড় না এনে দেয় তবে আমার নামও হিয়া না।
প্রান্ত আগেই এসে অপেক্ষায় আছে আরহার জন্য। নীলুকে বার কয়েক কল করেও রেসপন্স পায়নি। প্রান্তর এসিস্ট্যান্ট বলছে স্যার আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন?।

– আমার আরহুর জন্য তো আমি সারাজীবন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি! তবুও চাই দিন শেষে তার মুখের হাসি আমার নামে হোক! সন্ধ্যা নামার পরে তার আশ্রয় স্থান হোক আমার প্রসস্থ বুক। তার প্রতিটি অশ্রু ঝরুক আমার নামে।আর সেই অশ্রু নিজের হাতে মুছে দিয়ে তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে চাই!
আরহা আর নীলু এর মধ্যে চলে এসেছে, আরহাকে দেখেই প্রান্তের সময় সেখানেই আটকে গেলো অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহার দিকে।

আরহা নীলুর কানের কাছে মুখ এনে বললো, এই বেহায়া লোকটা এখানে কেনো কি করছে? দেখে কেমন ক্যবলা কান্তের মতো তাকিয়ে আছে বিরক্ত।
নীলু এগিয়ে এসে হেসে বললো, আরে প্রান্ত ভাইয়া আপনি এখানে!
– মিস আরহার শো তাই মিস করতে চাইছিলাম না। আর ফ্রী ছিলাম তাই চলে আসলাম। প্রান্ত হাতে থাকা হলুদ গোলাপগুলো আরহার দিকে বাড়িয়ে দিলো।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেগুলো নিয়ে নিলো আরহা। একবার সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো নীলুর দিকে, যে দৃষ্টি জিজ্ঞেস করছে তুমি বলেছ আমার হলুদ গোলাপ পছন্দ!
নীলু আরহার দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে বলে এভাবে দেখছিস কেনো হু তোর নজর লেগে যাবে তো। চল স্টেজে নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি!
আরহা নিজের মুখের সামনে একটা কালো কাপড়ের আবরণ দিয়ে নিলো, চলো। আচ্ছা একটা কথা বলো এই প্রান্ত ছেলেটা একটু বেশি গায়ে পরা টাইপের তাই না।

– বাদ দে তো চল তাড়াতাড়ি। আচ্ছা এটা বল আজকে কোন গানটা গাইবি।
– শুনলেই বুঝতে পারবা।
এখনো তিনজনের পার্ফামেন্সের পর আরহার পার্ফামেন্স।
দেখতে দেখতে আরহার স্টেজ ওঠার সময় হয়ে গেলো

উপস্থাপক বলছেন, এখন আমাদের সবাইকে নিজের সুমধুর কন্ঠে গান গেয়ে শোনাবেন এ সময়ের সবচয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আদিয়াত নুজহাত আরহা। আরহার নাম এনাউন্সমেন্ট হতেই কড়া তালিতে মুখরিত হচ্ছে চারপাশ। তরুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় নাম আদিয়াত নুজহাত আরহা।
আরহা স্টেজে উঠে প্রথমে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিলো। তারপর গান গাইতে শুরু করলো…

বলো তুমি আর কতদিন
রবে দূরে আমায় ছেড়ে
মনে মনে কল্পনাতে
আসো কেনো বারে বারে
কেনো একা ফেলে চলে গেলে
দুঃখ দিয়ে না ফেরার দেশে
এরি নাম কি ভালোবাসা
সখি ভালোবাসা কারে কয়
সখি ভালোবাসা কারে কয়
হৃদয়ের মন্দিরে আছো বসে তুমি
এব্যথা প্রাণে নাহি সয়
সখি ভালোবাসা কারে কয়
সখি ভালোবাসা কারে কয়
সবাই মুগ্ধ হয়ে আরহার গান শুনছে

ইমতিহান আর মেঘ আসতে একটু লেট করে ফেলেছে যদিও কিন্তু যেই মূহুর্তে ওরা দু’জনে স্টেজের লাস্টের দিকে এসে দাঁড়িয়েছে সেই মূহুর্তে মেঘ শুনতে পেলো মধুর কন্ঠে কেউ গাইছে…..
মন আজ পথ চেয়ে রয়
তুমি আসবে বলেছে হৃদয়
কেনো অভিমান করে চলে গেলে তুমি
এব্যথা প্রাণে নাহি সয়
সখি ভালোবাসা কারে কয়
সখি ভালোবাসা কারে কয়
হৃদয়ের মন্দিরে আছো বসে তুমি
এব্যথা প্রাণে নাহি সয়

গানটা শুনে মেঘের ভিতর কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। বুঝতে পারছে না কেনো। মনে হচ্ছে গানটা তার জন্য গাইছে মনের মাধুর্য মিশিয়ে কেউ তাকে ডাকছে! গান শেষ হতেই আবারো কড়া তালির শব্দ মেঘের কানে ভেসে আসতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে মেঘ। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করছে আমি এসব কি ভাবছি! কেউ নেই আমার কেউ নেই একা আমি একা। এর মধ্যে ইমতিহান মেঘের কাঁধে হাত রেখে বলে,ভাই কি গানের কন্ঠ আমি তো ফিদা।

– তোর বউয়ের একমাত্র আদরের বোন সো ফিদা হয়ে লাভ নেই।
– হুম বউয়ের আদরের বোন বন্ধুর আদরের বউ তো হতেই পারে! কথাটা বলেই হেসে উঠলো ইমতিহান।
– না হতে পারে না আমি সারাজীবন চিরকুমার থাকবো। নো বিয়ে নো ঝামেলা।
-সময় হলে দেখা যাবে।
ইমতিহান নীলুকে মেসেজ করলো “আর কতখন বউ” তোমাকে দেখার জন্য আমার চোখ তৃষ্ণার্ত।
নীলু রিপ্লাই করলো আর দশ মিনিট।

আরহা আরো একটা গান গেয়ে বিদায় নিলো। হাই সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও অনেকেই অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য ভীড় করলো। অনেকে আবার সেলফি তুলছে।কোনমতে সেখান থেকে বের হয়ে এসেছে আরহা চেঞ্জিং রুমে যেয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো , জিন্স আর লং কুর্তি পরে নিলো মুখ ধুয়ে মেকাপ তুলে ফেললো।এখন ভালো ভাবে লক্ষ না করলে কেউ চিনতে পারবেনা এই মেয়েটাই আদিয়াত নুজহাত আরহা। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা গালের ক্ষত চিহ্নগুলো স্পষ্ট। মাক্স দেয়ার কারণে ততটা বোঝা যাচ্ছে না

তুমি আসবে বলে পর্ব ১২

আরহা বের হতেই নীলু বলে, তাড়াতাড়ি চল কতখন ধরে অপেক্ষা করছে বেচারা।
– এমন করছো কেনো এতো উতলা হতে নিষেধ করলাম না নিজেকে শক্ত রাখতে হবে। আইসক্রিমের মতো গলে গেলে চলবে না। নারকেলের মতো হতে হবে উপর দিয়ে শক্ত ভেতরে নরম। মনে থাকবে!
– হুম দাদী আম্মা খুব মনে থাকবে এবার তাড়াতাড়ি চল। দশ কদম হাঁটার আগেই অতীতের ভয়ংকর এক অধ্যায় সামনে উপস্থিত।

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.