তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৪

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৪
নুসাইবা ইভানা

নীলু শান্ত স্বরে বললে আমাদের রাস্তা ছেড়ে দিন আমাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই তাহলে কেনো রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে আছেন!
– আহারে বেবি তোমাদের কষ্ট হচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকতে তা ফেমাস সিঙ্গার আদিয়াত নুজহাত আরহা যে বিবাহিত সেই সু খবরটা তার ভক্তবৃন্দ কি জানে?

– বাজে কথা বন্ধ করুন আর রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান
– এটাই তো সমস্যা আমার এর জন্যই তো হিয়া নামটা সবার চোক্ষশূল কারণ হিয়া সত্যি কথাটাই বলে
এবার আরহা সামনে এসে বলে অনেক বলেছেন আপনি এবার চুপ করুণ বড় বলে সম্মান করছি তবে নিজের লিমিট ক্রস করলে আমারও ভুলে যাবো আপনি আমাদের বড়।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– ওলে বেবির মুখে দেখি বুলি ফুটেছে তা বেবি এতো বড় হলে কবে শুনি? আমার তো মনে হয় এখনো নাক টিপলে দু*ধ বের হবে তার কথার কি ঝাঝ।
– আপনার মতো নিম্ন মানের মানুষের সাথে কথা বলতেও ঘৃণা হয়।
– এই তোর লজ্জা করেনা তিন তিনজন মানুষকে হত্যা করে এভাবে ঘুরছিস! আমি হলে কবেই গ*লা*য় দ*ড়ি লাগিয়ে ঝু*লে পরতাম।

এবার নীলু তেড়ে এসে বললো মুখ সামলে কথা বলুন বেহায়ার মতো অন্যের বাড়িতে থেকে সেই বাড়ির খেয়ে সেই বাড়ির বউকে অপমান করতে মুখে বাঁধে না!
– বউ সিরিয়াসলি সো ফানি। মেঘ কোনদিন এই বিয়েটাকে মানবে বলে তোমার মনে হয়?

প্রথম বার আরহার কানে পৌঁছলো মেঘ নামটা আরহা হিয়ার সামনে এসে বলে মেঘ, মেঘ কে? বলুন না আমাকে।
– অট্ট হাসি দিয়ে বলে ওলে বেবি বরের নামটাই জানো না দেখছি। আবার তার নামের ট্যগ লাগাও চৌধুরী বাড়ির বউ।
আরহা ছুটে একটু ফাঁকা জায়গায় চলে আসলো।

কানে বাজছে মেঘ ওকে কোনদিন মেনে নেবে? যাকে না দেখেই, যার কথা না শুনেই নিজের মনে যার জায়গা দিয়েছে তার নামটা প্রথম শুনে আরহার কি অনূভুতি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। দু’চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। আরহার কানে শুধু ওই একি শব্দ প্রতিধ্বনি করছে মেঘ কি কখন মেনে নেবে আরহাকে।
নীলু হিয়াকে বলে, আপনার মতো খারাপ মানুষ দুটো দেখিনি জীবনেও ভালো হবে না আপনার। নীলু কথাটা বলে ছুটে যাচ্ছে আরহার পিছু পিছু।

আরহা আর হিয়া চলে যেতেই হিয়া জোড়ে জোড়ে হেসে বলে, বাচ্চা মেয়েরা আমার খারাপ আর কি হবে। নিজেদের কি কি ক্ষতি হবে সেটা চিন্তা করো এই হিয়া নামক ঝড় তোমাদের জীবনে চলে এসেছে।

নীলু দ্রুত যাওযার সময় হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেলো নিচে পরে যাওয়ার আগেই কারো বাহুতে আবিষ্কার করলো নিজেকে রাগে লোকটির দিকে তাকাতেই সব কথা উবে গেলো নীলুর। রাগের বদলে এখন এক রাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো নীলুকে। লজ্জায় মুখ দিয়ে কথা বেড় হচ্ছে না। এদিকে ইমতিহান বলেই যাচ্ছে এই যে আপু আমাকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ান। আজকেই প্রথম প্রেমিকার সাথে দেখা করতে আসলাম এখন সে যদি এভাবে আমাকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখে তবে আমার সংসার শুরু হওয়ার আগেই শেষ। আপু শুনতে পাচ্ছেন প্লিজ ছাড়ুন।

অনেকেই তাকিয়ে আছে নীলু আর ইমতিহানের দিকে। ইমতিহানের বোকা বোকা কথা শুনে নীলু ইমতিহানকে আর একটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো
ইমতিহান কিছু বলবে তার আগেই নীলু ইমতিহানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,আমি এভাবে ধরে থাকলে আপনার প্রেম ভাঙার বদলে আরো গভীর হবে।

নীলুর কন্ঠ চিনতে একটুও দেরি হয়নি ইমতিহানের। এবার ইমতিহান নীলুকে আরো নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
নীলু আস্তে করে বললো, এটা আপনার লন্ডন না। এটা বাংলাদেশ ছেড়েদিন আমাকে।
ইমতিহান নীলুকে ছেড়ে দিলো। দুজনেই কেউ কারো দিকে তাকাতে পারছেনা। মোবাইলে এতো জান, কলিজা বলে এখন সামনা সামনি দেখে মনে হচ্ছে দুজনেই দুজনের কাছে অপরিচিত। রাজ্যের সব জড়তা এসে ভীর করছে। দুজনেই ভুলে বসেছে তাদের সাথে কেউ ছিলো। অনেকটা সময় নীরবতায় কেটে যাওয়ার পর ইমতিহান বললো, নীলিমা চলো আমারা ওই বেঞ্চটাতে বসি।

দুজনে পাশাপাশি বসে আছে। এবার নীলু বললো কেমন আছেন?
ইমতিহান রাগ দেখিয়ে বললো ভালো ছিলাম তবে এই মূহুর্তে খারাপ হয়ে গেলাম।
– কেনো কি হয়েছে আমাকে বলুন!
– এতো দূর থেকে তোমার মুখ থেকে আপনি ডাক শুনতে এসেছি! আমি এখনি চলে যাবো।
– আরে রেগে যাচ্ছেন কেনো।

– আবার আপনি!
– এই এমন করছো কেনো বসতো।
মেঘ পার্কের একটা ফাঁকা জায়গার খুঁজছিলো কোলাহল মুক্ত নিরিবিলি জায়গা পেয়েও গিয়েছিলো আরাম করে সেখানে বসে আছে। তবে তার আরামের বারোটা বাজাতে কোথা থেকে এক মেয়ে এসে তার দিকে পেছন দিয়ে বসে ফেস ফেস করে কেঁদেই যাচ্ছে।

মেঘ মনে মনে ভাবছে মেয়েদের চোখের সাথে সমুদ্রের কোন সংযোগ আছে হয়তো! না হলে কথায় কথায় এতো চোখের পানি আসে কোথা থেকে?
একবার ভাবলো উঠে চলে যাবে কি ভেবে আবার জিজ্ঞেস করেই বসলো এই যে ম্যাম এ্যনি প্রবলেম?
নাহ কোন উত্তর দিচ্ছে না এবার মেঘ নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে মেয়েটির সামনে ধরে বললো এটা নিন আপনার কাঁদতে সুবিধা হবে।

মেঘ মেয়েটির হাতে রুমাল ধরিয়ে দিয়ে যেই না সামনে পা বাড়াবে তার আগেই মেয়েটি মাঠিতে পরে গেলো। মেঘ ঘুরে এসে মেয়েটিকে ধরলো। ততক্ষণে মেয়েটি জ্ঞান হারিয়েছে। মেঘ একবার মেয়েটির দিকে হাত বাড়ায় তো একবার সরিয়ে নেয়৷ জীবনে একবার শুধু আরহাকেই কোলে তুলেছিলো। দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে কি করবে। সাত পাঁচ না ভেবে উঠিয়ে নিলো কোলে। কি আশ্চর্য মেয়েটিকে কোলে নেয়ার পর মেঘের একটুও খারপ লাগছে না বরং মনে হচ্ছে নিজের সবচেয়ে কাছের কেউ। আরহাকে কোলে নিয়ে বাহিরে এসে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।

একবার পাশ ফিরে মেয়েটিকে দেখলো তবে মুখে মাক্স থাকার কারনে ভালো দেখা গেলো না। গুগলে সার্চ করে আশেপাশের ক্লিনিক খুঁজে বের করে সেখানেই নিয়ে গেলো। তখনো মেয়েটি সেন্সলেস দ্বিতীয় বারের মতো কোলে তুলো নিলো। এবার এক অন্য রকম অনূভুতি বয়ে গেলো মনে হচ্ছে অনেক বছর পর হৃদয়ে প্রশান্তি ছেয়ে গেলো। সে সব নিয়ে চিন্তা করার সময় এখন নেই। মেঘ মেয়েটিকে নিয়ে ক্লিনিকের একটা কেবিনের বেডে শুয়ে দিলো। মেঘ যখন আরহাকে শুয়ে দিয়ে সরে আসতে চাইলো ঠিক তখন মনে হলো কেউ তাকে আকড়ে ধরেছে। মেঘ ফিরে তাকিয়ে অবাক হলো।

গল্প করতে করতে নীলু ভুলেই বসেছে আরহার কথা কথার এক পর্যায়ে ইমতিহান বললো,আমার সুইট শালিকা কোথায়! তার কন্ঠের প্রেমে পরে গেছি।
ইমতিহানের কথা কর্ণগোচর হতেই নীলুর হুশ আসলো আরহা। আরহা কোথায়! দ্রুত উঠে আরহাকে খুঁজতে লাগলো। সাথে সাথে ইমতিহান আসছে আর জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। এদিকে পার্কের অধিকাংশ মানুষ নীলু আর ইমতিহানকে দেখছে আর অদ্ভুত ভাবে হাসছে।

মূলত কিছু সময় পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা কেউ ক্যমেরা বন্ধি করে সেটা সোশ্যাল মিডিয়া দিতেই মহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। সে বিষয় বিন্দুমাত্র খবর নেই ইমতিহান আর নীলুর।

যদিও এখন অনেকেই এই অশালীন কাজটি করে থাকে। অনুমতি ছাড়া অন্যের ভিডিও, ছবি ধারণ করে সে সব সোশ্যাল সাইডে ছেড়ে দেয়। এর কারণে বিপরীত পক্ষের মানুষটার কতটা সম্মান নষ্ট হচ্ছে সে বিষয়ে তারা বড্ড উদাসীন।
নীলুর পিছন পিছন কিছুক্ষণ ছুটে।

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৩

ইমতিহান নীলুর হাত ধরে তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে, এভাবে এতো বড় পার্কে কাউকে খুঁজে পাবে বলো! তার চেয়ে স্থীর হও ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করি কি করা যায়।
নীলুর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। যদি আরহার কোন সমস্যা হয়ে যায়। নিজের প্রতি বিরক্ত হচ্ছে নীলু ওই অবস্থায় কি ভাবে আরহাকে একা ছাড়লো?

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.