তুমি আসবে বলে পর্ব ১৫
নুসাইবা ইভানা
মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। মেয়টির কয়েকটি চুল আটকে দিয়েছে মেঘকে। নিজের শার্টের বাটন থেকে তা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। যার ফলে মেঘ আরহার অনেকটা কাছে। আরহার নিশ্বাস এসে মেঘের মুখে পরছে। মেঘ কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আরহার কপালের উপর কিছু ছোট ছোট চুল ছড়িয়ে আছে। ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে চুলহগুলো সরিয়ে দিতে। শার্টের বাটন থেকে চুল ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত প্রস্থান করলো। বাহিরে এসে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। বুঝতে পারছেনা এই মেয়েটাকে দেখে এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেনো হচ্ছে?
মনে হচ্ছে শত জন্মের পরিচয়! খুব আপন কেউ!
নিজের মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। ইমতিহানের কল,রিসিভ করতেই ব্যস্ত কন্ঠে ইমতিহান বললো, কোথায় আছিস তুই! এদিকে নীলিমার বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
কি বলছিস ছোট বাচ্চা নাকি খুঁজে পাওয়া যাবেনা। দেখ আছে কোথাও? আমিও পরেছি এক ঝামেলায় পার্কে একটি মেয়ে অসুস্থ হয়ে পরে তাকে নিয়ে নিকটতম ক্লিনিকে এসেছি।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রান্ত আরহার গান শুনছে তো শুনছেই কানে ইয়ার ফোন গুজে গান শুনেই যাচ্ছে। এমন সময় সশব্দে প্রান্তর ফোনটা বেজে উঠলো বিরক্তি ভাব মুখে ফুটে উঠলো, মনে হচ্ছে কেউ তার ইম্পরট্যান্টেন কোন কাজে বাঁধা দিয়েছে। তবে ফোনের স্কিনে নীলিমা নামটা দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। দ্রুত কল রিসিভ করলো।
নীলু কোনমতে আরহার কথা প্রান্তকে বলতেই প্রান্ত নীলুর কল কেটে দিয়ে তার এসিস্ট্যান্টকে কল করে।
নাহিদ কলটা রিসিভ করে বলে স্যার আপনার কথা মতো ম্যামের প্রতি নজর রাখছি।
– আরহা এখন কোথায়?
– ক্লিনিকে একজন সুদর্শন যুবক তাকে কোলে করে নিয়ে এসেছে।
– তুই এই কথা আমাকে এখন বলছিস?
– স্যার আপনিতো বলেছিলেন নজর রাখতে। আপনাকে বলতে তো বলেন নি!
রাগে ফোন কেটে দিলো প্রান্ত। নাহিদ ছেলেটা একটু সহজ সরল। আবার কল করে ক্লিনিকের ঠিকানা নিয়ে নিলো। এবার নীলুকেও ঠিকানা টেক্সট করে দিলো।
আরহার চিকিৎসা শেষে ডাক্তার মেঘকে বললো, একবার আমার কেবিনে আসুন।
মেঘ কেবিনে ঢুকে বসতেই, ডাক্তার বললো,দেখুন আমি জানিনা আপনার আর আপনার ওয়াইফের মধ্যে সম্পর্ক কি রকম। তবে আপনার স্ত্রী ডিপ্রেশনে আছে। আবার তার গালেও ক্ষত চিহ্ন দেখলাম।
মেঘ ডক্টরকে থামিয়ে দিয়ে বললো,আপনি ভুল ভাবছেন ডক্টর উনি আমার ওয়াইফ নন। আমিতো চিনিওনা তাকে। পার্কে অজ্ঞান অবস্থায় ছিলো মানবতার খাতিরে তাকে এখানে নিয়ে আসা।
– সরি আমি ভাবলাম হয়তো হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ
– ইটস ওকে ডক্টর। আচ্ছা ওনার জ্ঞান ফিরবে কখন!
– সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা লাগবে।
-তাহলে পেমেন্ট করে দিয়ে আমি চলে যেতে পারি। ধন্যবাদ ডক্টর।
– ধন্যবাদ তো আমার আপনাকে দেয়া উচিৎ এতো ভালো একটা কাজ করেছেন।
– এটাতো মানুষ হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিলো।
মেঘ ক্লিনিক থেকে বের হয়ে সোজা চলে আসলো নিজের বাসায়। ডক্টরের কথাটা কানে বাছজে আপনার ওয়াইফ। সব অভিমান ভুলে এ মূহুর্তে মেঘের ইচ্ছে করছে একবার আরহাকে দেখতে! পিচ্চিটা এখন আর হয়তো পিচ্চি নেই!দেখতে নিশ্চয়ই খুব সুন্দর হয়েছে। আজ হঠাৎ করে মেঘের মনে হচ্ছে সে হয়তো আরহার সাথে ভুল করেছে। গ্যাস ব্লাস্ট হওয়ার সাথে সত্যি হয়তো আরহার হাত ছিলো না।
এই চার বছর মেয়েটা কোথায় ছিলো কি করেছে খুব জানতে ইচ্ছে করছে। সব ভুলে অপ্রকাশিত ভালোবাসা প্রকাশ করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সব কিছু এই কিন্তুতেই আটকে যায়। সেদিনটা যদি জীবনে না আসতো তবে জীবনটা অন্য রকম হতো। কে বলবে বাহির থেকে এতো কঠিন মানুষটাও ভেতর থেকে এতোটা দুর্বল। কতশত মেয়েকে ইগনোর করেও এক মেয়ের মায়ায় আটকে আছে। কোথায় যেনো মনে হয় অদৃশ্য এক বাঁধনে আটকে আছে মেঘ।
এ বাধঁন থেকে দূরে সরে ও কাছে আছে। আজকে আর পিছু না ফিরে বাসায় প্রবেশ করলো তখন প্রায় রাতের এগারোটা বাজে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ফোনের ফ্লাশ লাইটের আধো আলোতে এগিয়ে যাচ্ছে মেঘ চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেদিনের দৃশ্য খুব করে মনে আছে সেদিন আরহা সবার শেষে কিচেন থেকে বের হয়েছে তারপর কি এমন করে আসলো মেয়েটা যে ঘন্টার ব্যবধ্যানে সব শেষ হয়ে গেলো?
হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ফিরে এসে মম।তোমাদের ছাড়া ভালো নেই।মেঘ উঠে বাহিরে চলে আসলো ঢুকার সময় দারোয়ান ছিলো না এখন দারোয়ান বসে আছে। যদিও প্রতি মাসে মেঘ দারোয়ানকে ঠিক মতো টাকা পাঠিয়ে দিতো কিন্তু কখন কেউ কাউকে দেখেনি। নিচে বসে থাকার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ধুলো লেগে আছে। দারোয়ান মেঘ কে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো এই বাসায় কেনো ঢুকছো এখানে প্রবেশ নিষেধ লেখা দোখো না।
– আমি মেঘ চৌধুরী আঙ্কেল।
– বাবা তুমি কবে আসছো আমারে কইলা না কেন?
– এইতো দু’দিন হলো আসছি। আচ্ছা আঙ্কেল আমি ছাড়া এখানে আর কেউ আসে?
– হ আহে দুইটা মাইয়া। তয় তাগোরে আমি চিনিনা। মাঝে মাঝে আহে আবার কানতে কানতে যায়। একদিন জিঙাইলাম তোমাগো কি লাগে এই বাড়ির মানুষ।
– একটা মাইয়া কইলো বাবা,মা।
– আর কিছু জিজ্ঞেস করেননি কই থাকে কি করে মেয়ে দু’টো?
– না বাবা এতো কথা তো জিঙাই নাই।
দারোয়ানের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বলে এবার আসলে তাদের ঠিকানা জিজ্ঞেস করবেন। আমার কথা তাদের বলার দরকার নেই। তাহলে আজ আসি পরে দেখা হবে। নাম্বার দিয়ে গেলাম তাদের ঠিকানা জানতে পারলে কল করে বলবেন!
মেঘ বের হয়ে ইমতিহানকে কল করলো। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই ইমতিহান বললো, কই তুই?
– আমি চলে আসছি এখন তোদের বাসায় যাবো প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে খেয়ে ঘুমাবো।
– শোন তুই আর বলতে পারলো না তার আগেই মেঘ কল কেটে দিয়েছে।
ইমতিহান নীলুকে বললো,এখনতো তোমার বোন কিছুটা সুস্থ বাসায় চলে যাই কি বলো, হুম চলো। আরহা দিকে একবার তাকালো ইমতিহান তারপর আস্তে করে নীলুকে বললো, তোমার বোনের গালে কিসের দাগ!
– সে অনেক কথা তোমাকে সময় করে বলবো এখন দেরি হচ্ছে। তুমি গাড়ি বের করো আমি আরহুকে নিয়ে আসছি।
প্রান্ত বললো,ছেলেটা কে নীলু?
– আমার উডবি
– ওহ আচ্ছা তবে আমিও তোমাদের সাথে আসি কি বলো!
– অনেক করেছেন প্রান্ত ভাই এবার আপনিও বাসায় ফিরুন। আমরা ঠিক চলে যেতে পারবো।
আরহা আর নীলু ভাবছে প্রান্ত আরহাকে ক্লিনিকে নিয়ে এসেছে।
নীলু আরহাকে বসিয়ে রেখে ডক্টরের সাথে কথা বলতে গেলো,
ডক্টর বললো, আপনি পেশেন্টের কি হন!
– বড় বোন
– আপনার বোন কোন বিষয় নিয়ে ডিপ্রেশনে আছে। হয়তো তার চেহারায় ক্ষত সে নিজে করেছে। চেষ্টা করবেন এসব থেকে তাকে বের করে আনতে। নয়তো যে কোন সময় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ঔষধ গুলো ঠিক মতো খাওয়াবেন। আর অবশ্যই ভালো কোন সাইক্রেটিস দেখান।
নীলু ডক্টর থেকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলো। কি করা উচিৎ সেই চিন্তায় বিভোর। আরহার কাছে এসে আরহাকে নিয়ে গাড়িতে বসলো। এখান থেকে বাসায় ফিরতে তিন ঘন্টার মতো সময় লাগবে। মানে রাত একটার বেশি বাজবে।
মেঘ বাসায় এসে খেয়ে শুয়ে পরলো তবে ঘুম আসছে না।
তুমি আসবে বলে পর্ব ১৪
ফোন ঘেটে আদিয়াত নুজহাত আরহা গান বের করলো। কয়েকটা গান শুনলো মনে মনে বলছে নিসন্দেহে সুন্দর কন্ঠ। যার কন্ঠ এতো সুন্দর তাকে তো একবার দেখতেই হয়।আরহার প্রোফাইল বের করলো। প্রত্যেক পিক মাক্স পরা প্রায় সব পিকের ক্যাপশন দেয়া# তুমি আসবে বলে। খানিন ক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে একটা মেসেজ সেন্ট করে দিলো। সেই তুমিটা কি এসেছে?মিস মাক্স সুন্দরী!