তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৬

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৬
নুসাইবা ইভানা

“আই ওয়ান্নাহ কিস ইউ? প্লিজ গিভমি ওয়ান কিস!
আরহা এক পা,এক পা, করে পেছনে যাচ্ছে, আর বলছে, আপনার মাথা ঠিক নেই চেনা নেই জানা নেই ছি
– প্লিজ ওয়ান কিস।

– প্লিজ দয়া করে আমাকে যেতে দিন ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন। আরহার দু’হাত আটকে দিয়েছে নিজের দু’হাত দিয়ে।লোকটির শক্তির সাথে পেরে উঠছে না আরহা।আরহা জোড়ে চিৎকার করবে তার আগেই ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বসলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সে নিজের রুমেই আছে। ও তার মানে এটা স্বপ্ন ছিলো! বেড সাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো। কিছু সময় ঝিম ধরে বসে থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সকাল দশটা ছুঁই ছুঁই বেড ছেড়ে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঠোঁট মুছছে বারবার। ছি কি বাজে স্বপ্ন।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সকালের সোনালি রোদ জানালার পর্দা ভেদ করে মেঘের মুখে এসে পরছে চোখমুখ কুঁচকে এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরে গেলো নাহ তবুও রোদ পিছু ছাড়ছে না। বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো। মোবাইল দেখে মনে পরলো কালকে রাতের মেসেজের কথা মোবাইল হাতে নিয়ে চেক করতেই খুব বড় সর একটা ধক্কা খেলো।

নিজেকেই নিজে বলছে, মেঘ শেষ পর্যন্ত ফেক আইডিতে মেসেজ দূর এতো বোকা হলাম কবে? ওই আইডির নাম হুবহু আদিয়াত নুজহাত আরহা নামে আর তার ছবি গান দিয়ে ভরপুর। উফ কি করে ভুলে গেলাম সেলিব্রিটিদের নামে এরকম হাজারটা ফেক আইডি থাকে। মেসেজ রিকোয়েস্ট দিয়ে নিজের আইডি আনলক করে রেখেছিলো। ঘুম থেকে উঠে দেখে। এক মেয়ে নিজের অনেক গুলো ছবি পাঠিয়েছে।

আর টেক্সট করে বলছে, আমি দেখতে কম সুন্দরী না আপনি চাইলে আমি আপনার সাথে রিলেশন করতে রাজি।এরকম হাবিজাবি টেক্সট। সাথে সাথে মেয়েটিকে ব্লক করে দিলো। বালিশে হেলান দিয়ে বসে আগামীকালের প্রোগ্রামের গানটা শুনতে লাগলো।

মেঘের মনে দু’টো কৌতুহল জন্মালো এক, এই মেয়েকে দেখার, কারন সব শো-তেই এই মেয়ের মুখে কাপড়ের আবরণ। দুই এটা জানতে কালকের গানটা কাকে ডেডিকেট করে গেয়েছে । মাঝে মাঝে অকারণেই অনেক কিছু জানার প্রতি আমাদের আগ্রহ তৈরি হয়। তবে তার সঠিক কারণ নিজেরাও জানিনা।
আরহা ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো নাস্তা করতে। নীলু আরহাকে দেখে বললো,ঘুম ভাঙলো শাহজাদী!

– হুম। তুমি কখন উঠলে আর জিজু কই?
– সে তো রাতেই চলে গেছে। আয় নাস্তা করি। শোন আমি ভাবছিলাম আমারা যদি কোথাও থেকে ঘুরে আসতাম।
– কোথায় যেতে চাও!
– সিলেট
-না সিলেট যাওয়া যাবে না কিছুতেই না।
– ঠিক আছে যাবো না।

আরহা নাস্তা করতে করতে ফোন ঘাটতেই নীলু আর ইমতিহানের ভিডিওটা সামনে এলো। ২৪মিলিয়ন ভিউ
নিজের ফোন থেকে প্রান্তকে কল করে ভিডিওটা সোশ্যাল সাইড থেকে ডিলিট করার ব্যবস্তা করতে বললো।
আরহার একটা কথা মনে পরলো উঠে এসে নিজের ব্যাগে কিছু খুঁজতে লাগলো। কালকে ক্লিনিক থেকে ফেরার সময় নার্স তাকে একটা চিরকুট দিয়েছিলো।

সেটাই খুঁজে বের করে পড়তে শুরু করলো, চিরকুটে লেখাছিল, মিস ছিচ কাঁদুনি ধন্যবাদ দেয়ার হলো এই নাম্বারে যোগাযোগ করবেন।
আরহা নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে দেখলো, কে লিখলো এমন ভাবে? আর ধন্যবাদ বা কেনো দেবো! একটা কল করবো? নাহ বরং টেক্সট করি, দেখুন আপনি কে আমি জানিনা।আপনাকে ধন্যবাদ কেনো দেবো তাও জনিনা। তবে ছিচ কাঁদুনি বলার জন্য আপনার আমাকে সরি বলা উচিৎ। টেক্সট সেন্ট করে দিলো।

তার এফবিতে যেয়ে মেঘ চৌধুরী লিখে সার্চ করলো। মেঘ চৌধুরীর অভাব নেই। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবে। না এভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোন ভাবে আগে জানতে হবে দেখতে কেমন।
নীলুর রুমে এসে বললো, আপুই একটা কথা বলবে,

– একটা কেনো হাজারটা বলবো।
– সার্চ লিস্ট বেড় করে বলে এখান থেকে মেঘ চৌধুরী কোনটা বলো তো
– আরহা এটা আমি বলবো না। আর এখন তত ভালো আমার মনেই নেই।
– তুমি খেয়াল করে দেখো চিনতে পারো কি না।

– বাদ দে শোন ইমতিহান তার বন্ধুকে নিয়ে রাতে আমাদের এখানে ডিনার করবে।
– আচ্ছা কিন্তু আজ তো নূরের বার্থডে পার্টি সেখানেও তো যেতে হবে।
– আমি ভুলেই বসেছি। ঠিক আছে ইমতিহানকে বলে দিচ্ছি।
আদুরে কন্ঠে নীলুকে ডাকলো আরহা, আপুই শুধু এটা বলো, উনার পুরো নামটা কি!
– আরহু এসব কথা বলতে মানা করেছি তো। আর আমি চাইছি খুব তাড়াতাড়ি তোর আর প্রান্ত ভাইয়ের বিয়েটা দিয়ে দিতে।

– এবার উঠে দাঁড়িয়ে পরল আরহা অসহায় দৃষ্টিতে নীলুর দিকে তাকিয়ে বলে,তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি অন্য কারো বউ। বলেই চলে গেলো রুম ছেড়ে।
নীলু মনে মনে বলছে তোকে ছোট সাহেব মেনে নেবে না বোন। তোর জন্য প্রান্ত ভাই ঠিক আছে।
মেঘ ইমতিহানের রুমে এসে বলে তোর মোবাইলটা দে তো।

– কেনো আমার মোবাইলে তোর কি কাজ!
– আগে দে পরে বলছি।
ইমতিহানের ফোন ঘাটাঘাটি করে আরহার আইডি পেয়ে গেলো। তবুই আইডির নাম দেখে জিজ্ঞেস করলো। এই বলতো, #তুমি আসবে বলে এই আইডিটা কার!
– তোকে কেনো বলবো।
– বল না মানে এমন নামে কে আইডি খুলে সেটাই জানতে চাইছি।
– তুই এটা বল তোর সিক্রেট আইডি মেঘ জমেছে মনের আকাশে এটা কেমন নাম।
– বলবি না তাই তো?

– ওইটা নীলিমার বোনের আইডি।মানে ওই আইডিতে শুধু নিজের মানুষ। আর তাছাড়া তো প্রফেশনাল আইডি আছেই। তুই কবে থেকে মেয়েদের সম্পর্কে কৌতূহলী হতে শুরু করলি!
– আচ্ছা এই মেয়ের মুখ সব সময় এমন কাপড়ের আবরণ দিয়ে আড়াল করে রাখে কেনো?
– সেটা তো বলতে পারবো না হয়তো ব্যক্তিগত কোন কারণ আছে। বউ কে রেখে বউয়ের বোনের ব্যাপারে
ইন্টারেস্ট দেখালে বউ ঝাড়ুর বারি দিয়ে তাড়িয়ে দিবে।

– মেঘ জোড়ে জোড়ে হেসে বলে ঠিক বলেছিস। আচ্ছা তুই দেখেছিস তোর সেলিব্রিটি শালিকাকে!
– কালকেই দেখলাম। অসুস্থ ছিলো তাই তেমন করে কথা হয়নি।
আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আয় আজকে তো সামিরাকে এয়ারপোর্ট থেকে পিক করতে হবে।
– আবার এই ঝামেলা কেনো আসছে?

– তোকে আমার শালীকার পিছনে ঘুরতে বাঁধা দিতে
– নাইস জোক্স, মেঘ চৌধুরী কারো শাসন বারণ শুনে না। সেটা ভালো করেই জানিস।
– এই মেঘ তুই কি সত্যি সামিরাকে পছন্দ করিস না!
– পছন্দ কেনো করবোনা! পছন্দ করি তবে বন্ধু হিসেবে।
– বেচারি পুরো ভার্সিটি লাইফ তোর মতো মানুষের পিছনে ব্যয় করলো।
-আমি বলেছিলাম নাকি।

– তোর কি কোন পছন্দ আছে মেঘ। থাকলে আমাকে বল।
– নেই তবে হতে কতক্ষণ।
মেঘ হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে আসলো মোবাইল হাতে নিতেই আরহার টেক্সট দেখে। মনে পরলো কালেকে এটা ওই অসুস্থ মেয়েকে দিতে বলেছিলো নার্সকে।
মেঘ রিপ্লাই করলো, হসপিটালে নিলাম, চিকিৎসার খরচ দিলাম। এরপরেও ধন্যবাদ না দিলে কোন সমস্যা নেই। ভালো থাকবেন অকৃতজ্ঞ।

আরহার ফোনে নোটিফিকেশন আসতেই আরহা চেক করলো, টেক্সট দেখে কপাল কুঁচকে চিন্তা করছে। এটা কে? আমাকে তো প্রান্ত ক্লিনিকে নিয়ে গেছে।
প্রান্তকে কল করে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো প্রান্ত না অন্য কেউ তাকে ক্লিনিক নিয়ে এসেছিলো। আরহা আবার টেক্সট করলো। সরি

– মেঘ রিপ্লাই করলো, বাট হোয়াই?
– ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য। আর সরি আমি ভুল ভেবেছিলাম এর জন্য।
– ইটস ওকে। এখন কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ। নামটা কি আপনার।
– নুজহাত

– নাইস নেইম। ওকে টেক কেয়ার।
– ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকবেন। আপনার নামটা!
– মেহের।
– ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড. আপনার নামটা কেমন মেয়েলী।
– রিপ্লাই করলো না মেঘ। ততক্ষণে মেঘ নিচে চলে এসেছে নাস্তা করতে।
মেঘ নাস্তা করতে করতে বললো, হিয়ার কোন খোঁজ আছে?
– হঠাৎ তুই ওই মেয়ের নাম নিলি!

– কেনো জানি মনে হয় ওই মেয়ে যদি জানতে পারে তোর আর নীলিমার কথা তাহলে হয়তো প্রবলেম ক্রিয়েট করবে।
– ঠিক কথা বলেছিস। মেয়ে তো নয় যেনো বিষাক্ত ছাঁয়া। যেখানে পরবে সেখানেই ধ্বংস অনিবার্য। তোর বাসায় যদি ওই মেয়েকে জায়গা না দিতি তাহলে হয়তো এরকম কিছু হতোই না।
চার বছর পর হঠাৎ ইমতিহানের কথায় মেঘের টনক নড়ল। এই কথাটা মাথায় কেনো আসলো না। খাবার ছেড়ে উঠে পরলো।

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৫

– সরি এটা বলা উচিৎ হয়নি আমার। খাবার শেষ করে যা।
– আমার খিদে নেই। বলেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। ড্রাইভ করছে এলোমেলো ভাবে। হঠাৎ সামনে থেকে আরেকটা গাড়ি ধেয়ে আসছে….

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.