তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৭

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৭
নুসাইবা ইভানা

আরহা গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলো চৌধুরী বাড়ির উদ্দেশ্যে ড্রাইভার ড্রাইভিং করছে আরহা মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে নিউজ ফিড চেক করছে তার সিক্রেট আইডিতে খুব কম মানুষ এই আইডির ব্যপারে জানে পরিচিত কিছু ফ্রেন্ড ছাড়া তেমন কেউ জানেনা বলতে গেলে। দু’চারটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের ভিরে এক নামে চোখ আটকে গেলো। কি অদ্ভুদ নাম মেঘ জমেছে মনের আকাশে। কিছু সময় চিন্তা ভাবনা করে রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে নিলো। প্রোফাইল ঘেটে তেমন কিছুই দেখতে পেলো না তবে একটা কবিতা দেখে ভালো লাগলো সেটা কপি করে রাখলো আরহা

কবিতাটা বার কয়েক পড়ে নিলো
পুরোনো ডায়েরিটা আজ জ্বলিয়ে দিলাম। অনলে ছাঁই গুলো ভাসিয়ে দেবো। শ্রাবণে
স্মৃতি গুলো মুচে যাক,
ভিজে যাক শহর।
তোমার আড়ালে হৃদয় জ্বলুক;
নাইবা দেখলে দহন।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ডায়রীর যে আত্মা কথা তুলে রেখেছি যতনে।
তোমার কথা মনে পরলে দেখবো তা গোপনে।
যে অনলে পুড়ছি আমি, করছি হৃদয় ভার।
তাও আজ ভাসিয়া দিলাম,
বন্ধ করলাম দাঁড়।

যত পড়ছে ভালোই লাগছে হুট করেই তাদের গাড়িটা আরেকটা গাড়ির সাথে সংঘর্ষ হলো। আরহার মাথায় হালকা আঘাত লাগলো। ড্রাইভার নেমে এসে তর্ক করতে লাগলো, এই মিয়া দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না। চোখ কি বন্ধ রেখে গাড়ি চালান। আরহাও গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো। লোকটি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে চেহারা ঠিকমতো বুঝা যাচ্ছে না। ড্রাইভার তো ননস্টপ বকবক করেই যাচ্ছে কি আশ্চর্য লোকটি কোন প্রতিত্তোর করছে না। আরহা নিজের মাথায় হাত রেখে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে। গ্রে কালারের শার্ট পরা, হাতাগুলো কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা, চুল গুলো সুন্দর করে গুছানো, হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি এক কথায় সুদর্শন যুবক। তবে নিচে তাকিয়ে কি দেখছে।

মেঘ গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরেই সামনের গাড়ির সাথে সংঘর্ষ করে ফেলে তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে লোকটির কথা শুনেই যাচ্ছে কারণ ভুলটা তার। তবে আর কত এই লোকতো থামছেই না। মেঘ মাথা সোজা করে লোকটিকে সরি বলতে চাইলো।

মেঘ মাথা উচু করতেই আরহা মেঘকে দেখতে পেলে। ছোট সাহেবকে চিনতে আরহার এক মূহুর্ত সময় লাগেনি সাথে সাথে আরহা অন্য দিকে ঘুরে গেলো। কোন রকম গাড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। ড্রাইভার কে কোন মতে ডাকলো। আরহার ডাক শুনে, ড্রাইভার কবির তাড়াতাড়ি আরহার সামনে আসলো

। আশেপাশে জ্যম লেগে গেছে । আরহা বললো তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলো। বলেই গাড়িতে বসে পরলো। ড্রাইভার ড্রাইভিং সিটে বসতেই আরহা বললো বাসায় যাবো। সেই চেহারা, সেই মানুষটা যে চার বছর আগে তার ডান হাতে ক্ষত চিহ্ন করে দিয়ে বলেছিলো আর কখনো আমার সামনে আসলে মে*রেই ফেলবো। মে*রে ফেলবে আমাকে। সেদিন যে ভাবে গরম রড দিয়ে তার হাত পু*ড়ি*য়ে দিয়েছে তার আত্ম চিৎকার আর্তনাদ সব উপেক্ষা করে ঠিক এভাবেই তাকে মে*রেও ফেলতে পারবে! ভয়ে শরীর কাঁপছে আরহার।

মেঘ বোকার মতো তাকিয়ে আছে কি হলো সরি না শুনেই চলে গেলো। এবার সে নিজেও চলে যাচ্ছে। এখন একটাই কাজ কোন ভাবে হিয়াকে খুঁজে সত্যিটা জেনে নেওয়া। মন বলছে হতেই পারে সেদিন হিয়া কিছু করছে।হিয়ার ভার্সিটিতে এসে হিয়ার খোঁজ করলো তবে বিশেষ কোন লাভ হলো না হিয়া নাকি দু বছর ধরে পড়া লেখা করছে না। মনে মনে বলছে কোথায় খুঁজবো এই মেয়েকে। পকেট থেকে ফোন বের করতে যেয়ে খেয়াল হলো ফোন বাসায় ফেলে এসেছে। এবার বাসায় ফিরে যাচ্ছে মেঘ।

আরহা বাসায় এসে কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা চলে গেলো ওয়াশরুমে। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে শাওয়ার অন করে বসে পরলো। চিৎকার করে কাঁদছে
আর বলছে সবাই নিজের কষ্ট দেখলো কেউ আমার কষ্টটা বুঝতে চাইলো না। কোন অন্যায় না করেই খু*নি ট্যাগ নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে কেনো?

নীলু দরজার ওপাশ থেকে জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর আরহাকে ডাকছে। এক পর্যায়ে নীলু দরজার পাশে বসে কেঁদে দিলো। নীলুর কান্নার শব্দ কানে যেতেই আরহা দ্রুত ওয়াশরুমের দরজা খুলে দিলো। নীলু ছুটে এসে আরহাকে জড়িয়ে ধরলো তোয়ালে নিয়ে আরহার মাথা মুছে দিচ্ছে একহাতে আরএক হাতে আরহাকে জড়িয়ে রেখেছে। সার্ভেন্টকে দিয়ে ড্রেস আনিয়ে আরহার হাতে দিয়ে বলে দু’মিনিটে চেঞ্জ করে আয় আমি দরজার এপাশেই আছি।

হিয়া বসে আছে মধ্য বয়স্ক এক লোকের সামনে হিয়ার হাত পা চেয়ারের সাথে বাঁধা মুখটাও বাঁধা ছিলো লোকটি হিয়ার মুখ খুলে দিয়ে হিয়ার সামনে বসলো।
মেঘ হন্তদন্ত হয়ে বাসায় আসলো, বাসায় প্রবেশ করতেই সামিরা এসে মেঘকে জড়িয়ে ধরতে নিলে মেঘ সরে দাঁড়ায় তুই জানিস এসব আমার পছন্দ না।
আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে শোন বাবা, মা তোদেরকে আমাদের বাসায় ইনভাইট করেছে।

– মানে আঙ্কেল আন্টিও চলে এসেছেন!
– হুম
ইমতিহান মেঘকে বললো,তুই সকালে বের হলি আর এখন আসলি ফোনটাও সাথে নিসনি।
তিনজন সোফায় বসে গল্প করছে এর মধ্যে একজন সার্ভেন্ট এসে মেঘের ফোনটা দিয়ে গেলো। মেঘ গল্প ছেড়ে ফোনে বিজি হয়ে গেলো। প্রথমেই আরহার মেসেজের রিপ্লাই দিলো। এটা আমার বাবা,মায়ের দেয়া নাম সুন্দর এবং আমার পছন্দের হতেই পারে এতো সুন্দর নাম আপনি আগে শুনেনি!

ফেসবুকে ডুকেও অবাক একসেপ্ট করছে। প্রথম মেসেজ করলো, সে কি এসেছে?
আরহা ড্রেস চেঞ্জ করে নীলুকে জড়িয়ে ধরে বললো আপুই ছোট সাহেব বাংলাদেশেই আছে আমি নিজে চোখে আজকে তাকে দেখেছি

– শান্ত হ আসতেই পারে তার জন্য তো নিজেকে তৈরী করতে হবে তার সামনে দাঁড়ানোর। যে অন্যায় তুই করিসনি সেই অন্যায়ের শাস্তি কেনো পাবি!এবার তোর জবাব দেয়ার সময় এসেছে। সেদিন ছোট ছিলি অসহায় ছিলি আজকের আরহা আর সেদিনের আরহার মধ্যে যেনো বিস্তার ফারাক দেখতে পায়। আচ্ছা আপুই ছোট সাহেবের নাম কি?
– সময় হলে জানতে পারবি এখন তুই রেস্ট কর আমিও ড্রেস চেঞ্জ করে আসি আমাকেও
ভিজিয়ে দিয়েছিস।

নীলু চলে যেতেই আরহা শুয়ে পরে। নিজের মোবাইলটা হাতে নিতেই অনেক নোটিফিকেশনের ভিরে মেঘের মেসেজও চোখে পরে। প্রথমেই রিপ্লাই করলো, রাগ করছেন কেনো আমি যাস্ট বললাম।
বাই দা ওয়ে আপনার আর কোন নাম নেই!
ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো না নেই।

– এখনো রাগ কমেনি
– আপনি কি আমার গার্লফ্রেন্ড যে আপনার সাথে রাগ করবো?
আরহা আর রিপ্লাই করলো না মনে মনে ভাবছে কি অদ্ভুত মানুষ।
মেসেঞ্জারে যেয়ে দেখে, মেঘ জমেছে মনের আকাশে, মেসেজ করেছে, আরহা রিপ্লাই দিলো সে আসলে লিখবো। তুমি এসে পরেছো।

-সাথে সাথে রিপ্লাই আসলো, ঠিকানা দাও মাক্স সুন্দরী এখনি আসছি!
-আপনাকে কে বললো আমি সুন্দরী
– ও তার মানে মিস আদিয়াত নুজহাত আরহা অসুন্দরী।
আরহা বোকা বনে গেলো জানলো কি ভাবে এটা আমার আইডি।
কে আপনি?

– মেঘ রিপ্লাই করলো মানুষ
– তা আপনি মিস্টার মানুষ নাকি মিসেস মানুষ
– হবো কোন একটা।
– তার মানে…..
– ও হ্যালো আপনি কি মিন করতে চাইছেন।
– যেটা আপনি বুঝতে পারলেন।
– বড্ড পাজি মেয়ে তো আপনি।

– হুম পাজি মেয়ে তবে কোন এক সুদর্শন যুবকের ওয়াইফ।
– হাসির ইমোজি দিয়ে লিখলো নাইস জোক্স
– আমি বিবাহিতা বিশ্বাস হচ্ছে না।
– আমি আপনার সম্পর্কে জানি সো মিথ্যে বলে লাভ নেই।
– আপনার সাথে মিথ্যে কেনো বলবো।
– মিস মাক্স সুন্দরী আপনি কি ভাবছেন আমি আপনার সাথে প্রেম করতে চাইছি? তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন।
– তো কি চাইছেন?

– আপনার মাক্সের আড়ালের চেহারাটা দেখতে চাইছি।
– আমার হ্যাসবেন্ড রাগ করবে।
– ওই পিচ্চি যেটা বলছি তাড়াতাড়ি করো

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৬

এতোক্ষণ ধরে সামিরা আর ইমতিহান এক ধ্যনে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে। এরকম হেসে হেসে কার সাথে কথা বলছে। ইমতিহান উঠে এসে ছো মেরে মেঘের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো।

তুমি আসবে বলে পর্ব ১৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.