তুমি আসবে বলে পর্ব ১৮
নুসাইবা ইভানা
আরহা বুঝতে পারছেনা লোকটা কে তার পরিচিত কেউ হলে তো অবশ্য বুঝতে পারতো। তার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড নাকি প্রান্ত নিজেই। আরহা আবার টেক্সট করলো। এই সত্যি করে বলুন তো আপনি কে?
সাথে সাথে রিপ্লাই, তোমার উডবি।
– অসভ্য, অভদ্র এখনি ব্লক করছি।
– সরি মিস মাস্ক সুন্দরী মজা করলাম
মেঘ চেষ্টা করছে ইমতিহানের হাত থেকে ফোনটা নেওয়ার কিন্তু পেরে উঠছে না। আর সামিরা সামনে থাকাতে বেশি জোড়াজুড়িও করতে পারছে না।
ইমতিহান আরহা কে টেক্সট করলো, আপনার ভয়েস যদি এতো সুন্দর হয় না জানি আপনার চেহারা কতটা সুন্দর।
আরহা রিপ্লাই করলো না।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইমতিহান আবার লিখলো, খুব শীগ্রই দেখা হচ্ছে, মিস মাস্ক সুন্দরী। উইত লাভ ইমোজি।
ইমতিহান মেঘের হাতে ফোনটা দিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো। সামিরা বোকার মতো তাকিয়ে আছে। মেঘ বললো, আমারো সময় আসবে তখন দেখে নেবো।
সামিরা বললো কি হয়েছে আমাকে বল, মেঘের ফোনে কি এমন ছিলো। দেখা আমাকেও।
– তোর দেখে কাজ নেই এগুলো আমাদের পার্সোনাল মেটার৷
মেঘ উঠে বলল, সামি শোন কয়েকদিন পরে ইমতিহানের বিয়ে তো তাই মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে।
আরহার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবে আর কয়েকদিন পর। আজ খুব মনে পরছে ছোট সাহেব কে সে একদিন বলেছিলো খারাপ রেজাল্ট করে আমাদের বাড়ির মান সম্মান ডোবাতে চাও। মনে মনে বলছে ছোট সাহেব আমি তো ভালো রেজাল্ট করেছি আপনার পরিবারের নাম নষ্ট হতে দেইনি। তবে কেনো সে পরিবার আমার থেকে কেড়ে নিলেন! আপনার জন্য শুধু আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটা আজ সবচেয়ে দূরের মানুষ।
আরহা নীলুর রুমে আসলো নীলু তখন ওয়াশরুম আরহা দেখলো নীলুর বিছানার উপরে একটা ফটো এলবাম। হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো। নাহ এটা তো কখনো দেখিনি। দেখিতো এটা কবে কার। আরহা ফটো এলবাম খুলতেই প্রথমে, মিসেস মারিয়া আর মোর্শেদ আফরোজের কিছু পিক দেখতে পেলে তাদের দেখেই চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে শুরু করলো, পরের ছবি গুলোতো একটা ছেলের ছবি ছেলেটার বয়স বারো থেকে পনেরো হবে।
আরহা সামনের ছবি দেখবে তার আগেই নীলু আরহার হাত থেকে এলবামটা নিয়ে নিলো। শাসনের সুরে বললো, এখনো রেডি হচ্ছিস না কেনো! দেরি হচ্ছে তো নাকি! আরহা চলে আসলো নিজের রুমে। ড্রেস চেঞ্জ করে সুন্দর করে নিজেকে পরিপাটি করে নিলো আজকের পার্টির থিম কালার ছিলো রয়েল ব্লু। শাড়ির সাথে মেচিং জুয়েলারি পরে নিলো।
নিজেকে আয়নায় দেখে নিয়ে নীলুর রুমে আসলো নীলুও ব্লু রঙের শাড়ি পরেছে। চলো আপুই দেরী হচ্ছে তো আবার গিফটও নিতে হবে। হুম চল বের হবে এর আগেই নীলুর ফোনে ইমতিহানের কল আসলো ভিডিও কল নীলু রিসিভ করে চুপ করে আছে, ইমতিহান হা করে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় চুপ থেকে ইমতিহান বললো, তোমরা বার্থডে পার্টিতে যাচ্ছো নাকি নিজেদের জামাই খুঁজতে!
– মানে কি বলছো
– ডিয়ার ওয়াইফি এতো সুন্দর করে সেজেগুজে একা যেতে পারবেনা ঠিকানা দাও আমিও আসছি।
– পাগল হয়েছো আসছি মানে কি!
– তোমাকে মা*রা*ত্ম*ক সুন্দর লাগছে যদি কেউ নজর দেয়। আরহা পাশ থেকে বলে জিজু আমি থাকতে ইম্পসিবল।
– কেমন আছো পিচ্চি?
– ভালো। আপনি কেমন আছেন?
– ভালোছিলাম এখন নেই এতো সুন্দরী বউ আর শালিকা পার্টিতে গেলে কে ভালো থাকে বলো। আরহা বলে, আপনিও চলে আসুন জিজু ঠিকানা সেন্ট করে দিচ্ছি।
নীলু ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো,এমন করলে তোমার সাথে আড়ি, যাবোনা তোমার বাড়ি, যতই কিনে দাও শাড়ি।
– হইছে বিবিজান আর ভয় দেখাতে হবে না আসছিনা আমি তবে নিজেকে ছেলেদের থেকে দূরে রাখবা।
মেঘ রেডি হচ্ছে ইমতিহান রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে আজ ইমতিহানের কাজিনের বার্থডে দুজনেই সাদা শার্ট আর ব্লু কোর্ট, ব্লু প্যান্ট, ব্লু শু পরেছে।
আরহা আর নীলু গিফট নিয়ে চলে আসলো নূরদের বাসায় সবাই তে আরহাকে দেখে চোখ সরাতেই পারছে না। প্রান্ত আরহাকে দেখে বলে লুক ভেরি বিউটিফুল।
আরহা সৌজন্য হেসে বলে ধন্যবাদ।
নীলুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে এখানেও চলে এসেছে! চিপকু কোথাকার।
– বাদদে তো চল নূরকে গিফট দিয়ে আসি।
নুরকে গিফট দিতেই নূর বলে এসব না দিয়ে তুই একটা গান গেয়ে শোনালেই সবচেয়ে বড় গিফট হয়ে যেতো।
– নূরী আজকে দিনে কোন গান নয়! শুধু মাস্তি হবে।
– জানিস আমার কাজিন আর তার বন্ধু এসেছে।। ছেলে দুটো পুরাই হিরো।
– কেমন হিরো আলমের মতো!
– আরে রানবির কাপুরের মতো। এখন আম্মুর সাথে কথা বলছে,পরে দেখা করিয়ে দেবো।
কেককাটা হলো সবাই আনন্দ করছে কিন্তু দুই এলিয়েন রুম থেকে বের হয়নি।
সবাই কেক নিয়ে মাখামাখি করছে এর মধ্যে সার্ভেন্টের সাথে ধাক্কা লেগে আরহার শাড়িতে জুস পরে যায়। আরহা নূরকে জিজ্ঞেস করে ওয়াশরুম কোনদিকে।
– উপরে যে কোন একটাতে গেলেই হবে।
– আচ্ছা আমি ক্লিন করে আসছি।
ইমতিহান কিছু সময় বসে থেকে বলে, তুই এভাবে থাকলে থাক। আমি নিচ থেকে ঘুরে আসছি।
মেঘ উঠে বারান্দায় চলে গেলো দূর এসব ভালো লাগছেনা।
আরহা এক রুমে প্রবেশ করে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে ওয়াশরুমে ডুকে শাড়ি মুছতে থাকে। হুট করে লোডশেডিং হতেই আরহা জোড়ে চিৎকার দেয়।
আওয়াজ শুনে মেঘ রুমে এসে কাউকে দেখছেনা
আরহা হাত দিয়ে অনুমান করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসছে,হঠাৎ শাড়িতে পা আটকে পরে গেলো বেডের উপর। কিন্তু একি বেড তো এতো শক্ত নয় হাত দিয়ে ভালো ভাবে দেখছে এটা কি নাকের মতো আবার চুল। ভুত নয় তো জোড়ে চিৎকার করবে ভুত বলে তার আগেই কেউ মুখ চেপে ধরে বলে, একদম একটুও শব্দ করবেন না। আপনার মানসম্মান না থাকলেও আমার আছে।
এতোদিন পর এতো কাছ থেকে এই কন্ঠ চিনে নিতে আরহার সময় লাগলো না আর একটা কথাও বের করছে না মুখ দিয়ে। সরে আসার চেষ্টা করছে।
মেঘ খেয়াল করলো এই অনূভুতি তো সেদিনের অনূভুতির মতো, মনে হচ্ছে খুব কাছের কেউ! তার প্রতিটি নিশ্বাস আমার অতি পরিচিত। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মেঘ কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ইচ্ছে করছে মেয়েটিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে। হাত বাড়িয়ে নিজের হাত দিয়ে আরহার পুরো মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অদ্ভুত অনুভূতি অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে।
আরহা ভয়ে কোন আওয়াজ বের করছে না।
– মেঘ অস্ফুট স্বরে বললো কে তুমি হৃদয়হরনী।
– আরহা বুঝতে পারছে না এটা কি সত্যি ছোট সাহেব নাকি অন্য কেউ!
মেঘ এবার আরহাকে নিজের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো। একহাত দিয়ে শাড়ি ধরে রেখেছে। বলো কে তুমি? তোমাকে এতো পরিচিত কেনো মনে হচ্ছে!
মেঘের গরম নিশ্বাস আরহার কানের কাছে পরতেই আরহার শরীরে কেমন করে উঠলো। নিজের কন্ঠ একটু অন্য রকম করে বলো ছাড়ুন আমাকে। আমি আপনাকে চিনিনা।
– মিথ্যে কেনো বলছো। আমার মন বলছে তুমি আরহা। বেখেয়ালি ভাবে আরহার নামটা মুখ থেকে বের হয়ে গেলো।
– আরহা এবার আরো ভয় পেলো তার মানে এটা ছোট সাহেব হয়তো নে*শা*গ্র*স্ত তাই আবল তাবল বলছে।
আরহা সরে আসতে চাইছে কিন্তু পারছে না।
এমন সময় ইমতিহান নিজের ফোনের ফ্লাশ অন করে রুমে আসতে আসতে মেঘ মেঘ করে ডাকতে থাকে।
মেঘ নামটা আরহার কানে বজ্রপাতের ন্যায় বাজছে হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে চোখ ভরে আসছে, যে কোন সময় বর্ষন নামবে।
মেঘ আরহাকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে করে নেয়। আর ইমতিহানকে বলে ডিস্টার্ব করিস না আমি ঘুমোচ্ছি তুই যাওয়ার সময় আমাকে ডেকে নিয়ে যাস।
তুমি আসবে বলে পর্ব ১৭
মেঘ কথা বলছে এর মধ্যে মনে হলো কেউ থাকে জড়িয়ে ধরেছে।
আরহা মেঘের নাম শুনতেই মেঘকে জড়িয়ে ধরলো মনে হচ্ছে কত বছরের অপেক্ষার অবসান হলো।হঠাৎ করেই ভয় উবে গিয়ে একরাশ ভালোলাগা এসে ভর করলো।
মেঘ কিছু বলবে তার আগেই….