তুমি আসবে বলে পর্ব ১৯
নুসাইবা ইভানা
সেই কখন থেকে আরহা বাসায় এসে জোড়ে জোড়ে গান গাইছে আর নেচেই যাচ্ছে। একেক গান গাইছে আর নাচছে এই রাতের বেলা আরহার ইচ্ছে করছে ডানা মেলে উড়ে যেতে,
নীলু আরহার রুমে এসে দেখে আরহা গান গাইছে,”উড়ে যা ডানা মেলে আজ রে কন্যা দক্ষিণে উতলা বাতাস। “মনটা কাড়িয়া গেলো সে চলিয়া দয়া মায়া তার নাই” নীলুকে দেখতেই নীলুকে নিয়ে ঘুরা শুরু করলো।
আরহা থাম বল কি হয়েছে এতো আনন্দের কারণ কি?
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরহা বেডে বসে পরলো এতোক্ষণ লাফালাফি করে হাপিয়ে গেছে একটু নিজেকে সময় দিয়ে নীলুর কোলে মাথা রেখে বললো, আপুই অনেক ভেবে দেখলাম যে আমাকে ছেড়ে গেছে তাকে আকড়ে ধরতে চাওয়া বোকামি। তারচেয়ে জীবনটা নতুন করে শুরু করি!আজকে থেকে প্রতিটি শো করবো মুখ খোলা রেখে।
ভাবছি একটা প্রেম করবো! তারপর সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তার বিরহে আমি পাগল হবো। দারুণ হবে।
– এসব কি বলছিস যা মুখে আসছে বলেই যাচ্ছিস। শরীর ঠিক আছে তো!আমি ডক্টরের সাথে কথা বলছি আগামীকাল সকালেই যাবো।
– আরে আমি একদম ফিট আছি তোমার আমাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে কেনো! আমি সত্যি চাইছি নিজের মতো হাসিখুশি বাঁচতে কারো বিরহে থেকে লাভ কি বলো,যাকে দেখিনি চোখে তার জন্য মায়া করে কোন লাভ নেই এটা বুঝে গেছি। তাই এখন নিজের মতো করে বাঁচবো।
– সত্যি তুই নতুন করে জীবন শুরু করবি আমি অনেক খুশি। জানিস এটাই চাই তুই ভালো থাক যে চলে গেছে সে তো ফিরে আসবে না।
– হুম এখন থেকে ভালোবাসা শুরু
– ভালোবাসা শুরু মানে?
-আহ বুঝোনা কেনো ভালো থাকা শুরু বলতে যেয়ে ভালোবাসা শুরু বলে ফেলছি।
– আজকে পার্টি থেকে আসার পর থেকেই দেখছি তোর মাথাটা গেছে। আচ্ছা সত্যি করে বলতো ভুল বাল কিছু খাসনি তো!
– কি বলো এগুলা সামনে আসো দেখো আমার মুখে কোন গন্ধ আছে। এভরিথিং ইজ ফাইন।
মেঘ আজকে রাতে আর ঘুমোতে পারবে না।চোখ বন্ধ করলেই সেই মূহুর্ত চোখের সামনে ভেসে উঠে। মনে মনে বলে আমাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেলে কি হবে! আমি ঠিক চিনতে পেরেছি তুমি আরহা। তবে তোমাকে এবার খুঁজে বের করবোই।তোমার স্পর্শ আমাকে এলোমেলো করে দেয় কেনো?
যেদিন তোমাকে প্রনয় দিতে চাইলাম সেদিন তুমি আমাকে নিঃশ্ব করলে। তুমি আমার প্রথম অনুভূতি, প্রথম ভালোবাসা, প্রথম অপেক্ষা কিন্তু তোমার একটা ভুল আমার জীবন থেকে সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। কেনো করলো এমন তুমি?নিজের একান্ত কাছের মানুষকে জড়িয়ে ধরার মতো শান্তি হয়তো পৃথিবীতে অন্য কিছুতে নেই। এই যে তোমার একটু স্পর্শ সাতাশ বছরের যুবকের হৃদয় ঝড় তুলে দিয়েছে। তোমাকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা জাগিয়ে তুলেছে।এর দায় কেবল তোমার।
মনে মনে ভাবছে মেয়েটা বড্ড বুদ্ধিমতী হয়েছে কি ভাবে আমাকে বোকা বানিয়ে চলে গেলো।
ফ্লাশব্যাক
আরহা মেঘকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ করে এমন হওয়াতে মেঘ একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায় হুট করেই মেয়েটা তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে। এদিকে ইমতিহান আসছে। মেঘ ইমতিহানকে বললো তুই নিচে যা ফ্লাশ অফ কর বিরক্ত করিস না। ইমতিহান কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। মেঘ খেয়াল করলো তার বুকের কাছের শার্ট ভেজা ভেজা অনুভব হচ্ছে। আচ্ছা মেয়েটাকি কাঁদছে। এবার মেঘ মেয়েটাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে অন্য হাতে নিজের মোবাইল খুঁজছে।
আরহার চোখের পানি নাকের পানি দিয়ে মেঘের শার্ট ভিজিয়ে ফেলছে। এতো বছর যাকে দেখার জন্য চোখ ব্যকুল ছিলো সে তার সামনে আরহার ইচ্ছে করছে মেঘের ভিতর নিজেকে লুকিয়ে নিতে। ভাবতেই পারছেনা এই মানুষটা তাকে কোন এক সময় এতো কেয়ার করেছে!হুট করেই আরহার মনে পরলো সেদিনের কথা। মেঘকে অন্যমনষ্ক দেখে সুযোগ বুঝে নিজেকে আস্তে করে সরিয়ে নিয়ে দ্রুত পা ফেলে দরজার বাহিরে চলে আসলো। বাহিরে এসে দেয়ালে পিট ঠেকিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।
কাজটা এতো দ্রুত হয়েছে যে, মেঘ বুঝে উঠার আগেই আরহা গায়েব। মেঘ বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। নিজের মোবাইল খুঁজে ফ্লাশ অন করে বাহিরে এসে এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না। তবে নিজের শার্টের সাথে একটা ঝুমকো কানের দুল ঠিক পেলো। কানের দুলটা হাতে নিয়ে বেডে বসতেই কারেন্ট চলে আসলো।
মেঘ ভালো ভাবে দুলাটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে তুমি আরহাই ছিলে তাইতো। এতোই যখন ভালোবাসো তবে সাহস করে সামনে কেনো আসছো না! নাকি নিজের ভুলের জন্য লজ্জিত তাই আসতে পারছো না। নাকি তিনটে মানুষের খু*নি তাই সাহস হচ্ছে না। এসব ভাবনার মাঝেই নিজের শার্টের দিকে তাকিয়ে ভাবে পিচ্চি আর বড় হলো না প্রথম বার কামড়ে দিয়েছে আর এবার নাকের জল চোখের জল দিয়ে শার্টের রফাদফা করে দিয়েছে।
আরহা নিচে এসেই নীলুকে না বলেই বাসায় চলে এসেছে। আরহা ভাবতেই পারছেনা ছোট সাহেব আর কেউ নয় তার একান্ত নিজের মানুষ তাকে কতটা কাছ থেকে দেখেছে। এখোনো মনে পরে প্রথম পিরিয়ডের কথা। কতটা কেয়ারিং তার বরটা। ভাবতেই ভালো লাগছে। ইশ তখন যদি জানতাম আপনি আমার বর তবে আরো দু’চারটা কামড় দিয়ে দিতাম।
ভাবা যায় আপনার মতো রাগি মানুষ আমার বর।অথচ আপনাকে দেখার জন্য আমার চোখে ছিল তৃষ্ণা, হৃদয়ে ছিলো ব্যকুলতা। এখন আমার ছোট হৃদয়ের জমানো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভালোবাসার বিষাদ সিন্ধু জুড়ে আমি আপনার ভালোবাসার রং ছড়িয়ে দেবো। এবার দেখবো কি ভাবে দৃরে রাখতে পারেন আমাকে?
বর্তমান
দুজন মানুষ দু প্রান্তে একে অপরের চিন্তায় মগ্ন উভয়ের হৃদয়ের ভালোবাসা অভিমানের চাদরে মোড়ানো। এ অভিমান ভেঙে একে অপরকে কাছে টেনে নেবে নাকি অভিমানের পাহাড় গড়ে হারিয়ে যাবে দুজনেই অতলে।
আরহা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে,আমার হৃদয়ে বিন্দু বিন্দু করে জমানো ভালোবাসা আপনাকে ঘিরে। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে ছড়িয়ে রয়েছে আপনার প্রতি অভিমান। কোনটাকে ছাড়বো আর কোনটাকে আকড়ে ধরবো বলতে পারেন?
জানেন কিছু মানুষ কাছে থেকেও হৃদয় থেকে অনেক দূরে থাকে। আর কিছু মানুষ দূরে থেকেও হৃদয়ের অনেক কাছে থাকে। আপনি আমার সেই দূরত্ব যে দূর থেকেও আমার ভিষন কাছের কেউ।ভালোবাসি আপনাকে নিজের অজান্তেই অনেকটা। এ অনূভুতি প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই। কেনো ভালোবাসি এ প্রশ্ন নিজের কাছেই রয়ে যায়। তবুও দিন শেষে আপনাকে নিয়ে বাঁচতে চাই!
কিছু সময় বিছানায় এপাশ ওপাশ করে মেঘ ওঠে আসলো বারান্দায়। আজকের মেঘহীন ঝলমলে আকাশে পূর্ণ চাঁদের আলো, মৃদু বাতাস দু’একটা নিশাচর পাখির ডাক,বারান্দায় থাকা হাসনাহেনা গাছ থেকে বিমোহিত ঘ্রাণ উপভোগ্য একটা মূহুর্ত তবে এমন রাতে প্রেয়সীর হাত ধরে রাত্রি বিলাশ করলে মন্দ হতো না। নিজের ভাবনাকে নিজেই প্রশ্ন করছে কি ভাবছো তুমি আমার প্রেয়সী কি ওই বাচ্চা মেয়েটাই? কি ভাবে তাকে আপন করবো? তাকে দেখলেই যে বুকের ভিতর দহন হয়।
দুজনের মনে একি ঝড়। দুজনেই একি চাঁদের পানে তাকিয়ে ব্যক্ত করছে মনের কথা। তবে সে কথা যদি বাতাস বয়ে আনতো দুজনের কানে! যদি চাঁদ আয়না হয়ে মুখোমুখি করতো তাদের। যদি রাত জাগা পাখি গুলো বার্তাবাহক হয়ে পৌঁছে দিতো সংবাদ! তাহলে হয়তো মিটে যেতো দূরত্ব ঘুচে যেতো হৃদয়ের ব্যাধি।
পূর্ণ হতো ভালোবাসা, সমাপ্তি পেতো অপেক্ষা। একে অপরকে জড়িয়ে নিয়ে বলতো কানে মুখে, #তুমি আসবে বলে কত রজনী করেছি একা পার #তুমি আসবে বলে, কত বিকেল কেটেছে বিষন্নতায় #তুমি আসবে বলে আজকের আকাশ নতুন রুপে সেজেছে।
তুমি আসবে বলে পর্ব ১৮
অবশেষে তুমি এসেছো আমার হৃদয়ে তোমার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে তোমার আগমন।