তুমি আসবে বলে পর্ব ২০
নুসাইবা ইভানা
ভোরের সোনালী রোদ জানালার সাদা পর্দা ভেদ করে চোখে পরতেই পিটপিট করে চোখ খুলে আরহা। রাতে যদিও দেরি করে ঘুমিয়েছে তবুও আজ তৃপ্তির ঘুম হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসে গুনগুন করতে করতে নিচে নেমে আসলো।
নীলু বুঝতে পারছেনা হঠাৎ কি এমন হলো!
যে চেহারায় হামেশাই বিষাদে ছেয়ে থাকতো। সে চেহারায়
আজ আলো ফুয়ারা। গালের নখের আঁচড়ের দাগগুলো অনেকটা চলে গেছে। নীলু আরহাকে ডেকে বললো, সত্যি করে বল তো তোর এ পরিবর্তনের পেছনের উদ্দেশ্য কি?
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– আপুই বললাম তো আমি সব ভুলে নতুন করে শুরু করতে চাই!
– আয় বোস আমার পাশে আজ তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবো।
– আজ তুমি বসো তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবো কয়েকদিন পর শশুর বাড়ি চলে যাবে।
– পাকা বুড়ি তোকে বিয়ে না দিয়ে কোথাও যাচ্ছি না।
– আমার বিয়ে তো হবে পুরো শহর জানবে আজ আদিয়াত নুজহাত আরহা বিয়ে। আমি ভাবছিলাম কি আপুই আমার শনিবারের যে প্রোগ্রাম রয়েছে সেখানে এই মুখ ঢেকে যাবো না। প্রথম বারের মতো আমার সব ভক্তরা তাদের প্রিয় সঙ্গীত শিল্পীর চেহারা দেখবে। নিজেকে কার জন্য লুকিয়ে রাখবো বলো ! এবার সময় এসেছে নিজের মতো বেঁচে থাকার।
– আচ্ছা তুই যেটা ভালো মনে করিস সেটাই হবে। জানিস আমি ভাবতেই পারছিনা তুই সত্যি সব ভুলে নতুন ভাবে শুরু করছিস। চল আজকে সারাদিন ঘুরে বেরাবো।
– জিজুকে ভুলে যাচ্ছো সে কখন আসবে জিজ্ঞেস করো। বিয়ের ডেট ফাইনাল করি।
দুজনেই গল্প করতে করতে নাস্তা শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো।
আরহার রুমে এসে নুর কে কল করলো কালকের পার্টিতে বিশেষ কে কে এসেছে সেই তালিকা চাইলো। নুর বলল, তুই এক কাজ কর আমাদের বাসায় চলে আয় দুজন মিলে খুঁজে দেখছি। আমার ফ্রেন্ডের হৃদয়টা কে চুরি করলো।
– বাজে বকিস না আমার খুব পছন্দের ঝুমকো ছিলো ওইটা।।
– আচ্ছা আয় বাসায় আয়।
আরহা নীলুকে বলে বেরিয়ে পরলো নুরের বাসার উদ্দেশ্যে।
ইমতিহান সেই কখন উঠেছে কিন্তু মেঘের উঠার কোন খবর নেই। সমারিও দশটার দিকে এসেছে কিন্তু বারটো ছাড়িয়ে গেলোও মেঘের ঘুম ভাঙার কোন হদিস না পেয়ে। সামিরা ইমতিহানকে জিজ্ঞেস করলো, সত্যি করে বলতো রাতে তোরা কই ছিলি?
-রাতে একটা বার্থডে পার্টিতে ছিলাম সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত একটা বেজেছে।
– না মানে মনে হচ্ছে মেঘ কারো প্রতি ইন্টারেস্টেট
– তোরা মেয়েরা পারিসও বটে যা ইচ্ছে ভেবে নিস
– দেখ যা ভাবি তার ৯৮%সত্যি হয়
– হইছে বুঝেছি তোরা সব জান্তা শমশের।
– চুপ থাক আর তোরা কি ছুপা রুস্তম। প্রেম করছিস অথচ একবারো নিজের মুখে স্বীকার পর্যন্ত করিস নি!
– আরে নিজেই তো শিউর হতে পারিনি তবে এবার সরাসরি দেখা করাবো।
এর মধ্যেই ইমতিহানের ফোনে মেসেজ নোটিফিকেশন আসলো। সামিরা ইমতিহানের ফোনটা নিয়ে মেসেজ দেখে হাসতে লাগলো, জোড়ে পড়ে শোনাচ্ছে। সারাদিন বউ, বউ করে পাগল করে দাও অথচ বারোটা বাজতে চললো তবুও গুড মর্নিং উইশ করতে পারলেনা। যাও আজকে সারাদিনে নো টেক্সট নো কল। কিরে তুই তো অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছিস বউ। হা হা এবার তোর বউয়ের অভিমান ভাঙা।
– মেয়েদের এই এক সমস্যা আরে গুড মর্নিং উইশ ইম্পরট্যান্ট নাকি ভালোবাসা। ভুল তো হতেই পারে?
– সব ভুল শুধু তোদের হয়। চিন্তা করে দেখ একটা মেয়ে তোকে কতটা ভালোবাসলে তোর একটা মাত্র গুড মর্নিং টেক্সট না পেয়ে রেগে যায়।
– এটাতো ভেবে দেখিনি
– মাথায় গোবর থাকলে ভাববি কি করে। তোরা তো একটা মেয়ে পটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে মাথায় তুলে রাখিস। তখন সেকেন্ডে সেকেন্ডে টেক্সট করতে পারিস। যদি একবার পটে যায় তো ব্যস এভারেস্ট জয় করে ফেলেছিস এবার তোদের টাইম কমতে থাকে টেক্সট ছোট হতে থাকে গুরুত্ব কমতে থাকে।
– এতোদিন যে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরালো। সে বেলায়!
– মেয়েটাতো তোকে বলেছিলো ইমতিহান আসো আমার পিছনে ঘুরে ঘুরে নিজের সময় নষ্ট করো!
পেছন থেকে মেঘ বলে উঠলো সকাল সকাল ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস!
– উঠেছে নবাব সিরাজুদ্দৌলা তা কি নেবেন কফি না ক্লোল ড্রিংকস
– আপাতত কড়া করে এক কাপ ব্লাক কফি হলে ই হবে।
– তা রাতে কি চুরি করায় ব্যস্ত ছিলেন!
– না বউয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। কথাটা বলেই বুঝে ফেললো ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে।
সামিরা বললো, বিয়ে করে নাও তাহলে বউ শুধু স্বপ্নে না বাস্তবেও থাকবে।
বাদ দে কি বলতে কি বলে ফেলেছি চল সবাই মিলে ঢাকা শহর ঘুরে আসি কি বলিস!
– যেখানেই যাও রাতে ডিনার আমাদের বাসয় করতে হবে।
ইমতিহান ফোনে কথা বলছে। কথা শেষ করে বললো, না রাতে হবু বউয়ের বাসায় ডিনার করবো। এটা মানা করতে পারবো না সামি।
– মানা করতে হবে না। আমি যাবো তোদের সাথে।
মেঘ বলল, আমি হয়তো যেতে পারবো না আমার একটু ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে।
– তোর আবার কি ইম্পরট্যান্ট কাজ! তবে গেলে কিন্তু তোরি লাভ হতো ভেবে দেখতে পারিস!
সামিরা বলল,তোর বউকে দেখে ওর কি লাভ?
– লাভ আছে না ওর ভবিষ্যৎ ভাবি কেমন সেটা জানতে হবে না!
মেঘের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে সত্যিটা বললাম না শতহোক ইচ্ছে করে কাউকে জ্বালাতে চাই না।
– তোরা কি এমন কথা বলছিস আমাকে শোনানো যাবে না।
ইমতিহান বললো বাদ দে তো এবার চল চাচ্চুর বাসায়।
লাঞ্চ সেখানে করবো আর নীলিমার কথাটাও বলবো। তাদের নিয়েএ বিয়ের ডেট ফিক্সড করে রাখবো, বাবা, মা আসলে বিয়ে।
আরহা নুরদের বাসায় এসে একে একে সব গেস্টদের খুঁজে বের করলো। না এখানে মেঘ নামে কোন অতিথি নেই। আরহা নুরকে বললো,মনে করে দেখ না আর কেউ বাদ পরলো নাকি যার কথা তোর মনে নেই।
– না সবার কথাই তো মনে আছে।
– তাহলে আমি আজ যাই পরে কথা হবে কেমন।
– আরহা বের হচ্ছে আর মেঘের গাড়ি প্রবেশ করছে গাড়ির লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে কারো চলে যাওয়া দেখছে মেঘ যদিও পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে।
ইমতিহান মেঘকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে, সাথে বিদেশি থাকতেও তুই দেশীর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস।
সামি বললো ইদানীং তোদের কথা আমি বুঝতে পারিনা কি বলিস!
– তোর বুঝতে হবে না নেমে পর চলে এসেছি।
তিনজন বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো ওদের দেখে নুরের মনে পরলো কাল রাতে তো এরা দুজন ছিলো এদের তো ধরাই হয়নি। নূর হেসে বললো, কেমন আছো ভাইয়া?
– এইতো ভালো তুই কেমন আছিস?আম্মি কোথায়?
– আমি ভালো আছি। আম্মু কিচেনে। তোমরা বসো।
– তুইও বস এ হলো সামিরা, আর মেঘ আমার ফ্রেন্ড
নূর অল্প সময় বসে তাড়াতাড়ি এ পাশে এসে কল করলো আরহাকে। রিসিভ করতেই নূর বললো, শোন আমার কাজিন আর তার বন্ধু এসেছিলো।
– নাম বল
-ভাইয়ার নাম তো। আরহা আর বলতে না দিয়ে বললো তোর ভাইয়ের নাম বাদ দে তার ফ্রেন্ডের নাম বল!
– তার নাম তো মেঘ
– জোড়ে চিৎকার করে বলে কিহহহহহহহ।
– এতো জোড়ে চিৎকার করছিস কেনো।
তুমি আসবে বলে পর্ব ১৯
– এখন তারা কোথায় সেটা বল।
– আমাদের বাসায়। কিন্তু কেনো।
– আমি আসছি তারপর দেখ কেনো। কল কেটে আরহা গাইতে লাগলো, লা,লা লালা,লা, লা লা।
মনে মনে বলছে আসছি ছোট সাহেব আমাকে যে ভাবে নাচিয়েছেন তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি নাচাবো আপনাকে। ড্রাইভার গাড়ি ঘুরাও।