তুমি আসবে বলে পর্ব ২১
নুসাইবা ইভানা
পেছন থেকে এক হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে আরহাকে ধরে আছে মেঘ। আরহার পিট মেঘের বুকের সাথে লেপটে আছে।নিজের জালে কি নিজ ই আটকে গেলো আরহা!
মেঘের হাত আরহার কোমড়ে প্রথম কোন পুরুষের স্পর্শ আবার সেই পুরুষটি যদি হয় নিজের একান্ত প্রিয় মানুষ। আরহা দম আটকে আসছে মনে হচ্ছে এখনি মা*রা যাবে। একেমন অনূভুতি এ অনূভুতির সাথে আগে কখন পরিচয় হয়নি আরহার। এখন কি ভাবে পালাবে। মেঘ আরহার কানের কাছ থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে কাঁধে থুতনি রেখে বলে। তো বিবিজান এবার কি ভাবে পালাবেন আজতো আর রেহাই নেই।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেঘের এতটুকু কাছে আসা যেনো আরহাকে বরফের মতো জমিয়ে দিয়েছে।নিশ্বাস নিচ্ছে বারবার মনে হচ্ছে কেউ শ্বাস আটকে দিচ্ছে। গাল দুটো লাল হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে এতো সহজে তো ধরা দেবো না ছোট সাহেব। কিছু একটা করতেই হবে। এর মধ্যে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে মেঘ আরহাকে ছেড়ে দিলো সুযোগে আরহা পর্দার আড়ালে চলে গেলো। মেঘ মিটিমিটি হাসছে। মনে মনে ভাবছে বাচ্চামি গেলো না শুধু হাতে পায়ে বড় হয়েছে।
সামিরা এসে মেঘ কে বলে নিচে চল তুই একা এখানে কি করিস!
– তুই যা আমি আসছি
– না আমার সাথে যাবি আর এক্ষুনি যাবি হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।
মেঘ অনিচ্ছা সত্ত্বেও গেলো।
মেঘ চলে যেতেই আরহা বের হয়ে আসলো। এর মধ্যে নুর এসে বলে এবার বল কাহিনিটা কি?
– সে অনেক কথা বলবো তোকে তবে এখন নয়। শুধু যেনে রাখ মেঘ চৌধুরী শুধু আরহার। এখন তোকে একটা কাজ করতে হবে। খুব নিপুন ভাবে করবি আমার ড্রেসটা পরে তুই নিচে ওদের সামনে যাবি।
-তুই করতে চাইছিসটা কি?
– কনফিউজড। নিচে এই ঝুমকোটা নিয়ে যাবি আর বলবি আমার এই ঝুমকোর আরেকটা হারিয়ে গেছে তোমরা কেউ দেখেছো!
নুর কে নিচে পাঠিয়ে নিজে সিড়ি কাছে দাঁড়িয়ে রইলো
নুর মেঘের পাশে বসলো আর চোখে একবার তাকালো মেঘ ড্রেস দেখে আরো ভালো ভাবে তাকালো এবার তাকিয়েই আছে এটা তো আরহা না মানুষের চেহারা কি এতো পাল্টে যায়। চার বছরে? কিছু একটা তো গোলমাল আছেই।
নুর ইমতিহানকে বললো,ভাইয়া এক কানের দুলটা দেখছো এর একটা কাল হারিয়ে গেছে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না তোমরা কেউ দেখেছো?
মেঘ তাকিয়ে আছে একবার ঝুমকোর দিকে একবার মেয়েটার দিকে। তার মানে আজ, কাল আমি এই মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছি! এটা হতেই পারেনা। মেঘের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করছে।
নূর বললো, ছোট সাহেব আপনি দেখেছেন?
– ছোট সাহেব ডাক যেনো মেঘকে আর একটু ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিলো। এবার বেশ গম্ভীর ভাবে মেঘ বলেই ফেললো, সেই তখন থেকে কি শুরু করেছেন? নাম কি আপনার?
ইমতিহান বললো, তুই এতো রিয়েক্ট করছিস কেনো! ওর নূরাইন তবে ছোট করে নূর ডাকে।
– তাহলে ওনাকে বলতে বল কে পাঠিয়েছে এখানে আর এসব কথা কে বলতে শিখিয়ে দিয়েছে!
– একদম রাগ দেখাবেন না তাহলে কামড়ে দেবো বলেই মুখে ভেঙচি দিয়ে চলে গেলো নূর।
মেঘ ভেবে পাচ্ছে না এটাই আরহা নাকি অন্য কেউ
মেঘকে নুরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইমতিহান বলে, ভাই কাহিনি কি বলতো! যে দিকে মেয়ে দেখিস তাকিয়ে থাকিস আবার বিয়ে করতেও চাইছিস না।
– বেখায়ালী ভাবে বলে ফেললো বউ থাকতে কিসের বিয়ে?
সামিরা বললো, বউ মানে?
– তোদের জন্য বলতে চাই একটা বলে ফেলি আরেকটা।
সামিরা বললো, তখন তুই চলে গেলি উপরে এমন ভাবে গেলি মনে হয় তোকে কেউ হাতছানি দিয়ে ডেকেছে।আসল কথাটা বল তো
– কি শুরু করলি তোরা, তখন ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম এমন ভাবে প্রশ্ন করছিস মনে হচ্ছে আমি ক্রি*মি*নাল
বিরক্ত লাগছে মেঘের তখন উপরে সেই ঝুমকটা দেখেই গিয়েছিলো। মেয়েটার মুখ ঠিক দেখে নিতে পারতে সামিরা না গেলে।
আচ্ছা ইমতিহান নূর কি তোর আপন কাজিন!
– তোর মাথাটা পুরো গেছে নুর আমার একমাত্র চাচ্চুর একমাত্র মেয়ে ছোট থেকে দেখছি।
এবার মেঘ নিশ্চিত হলো নূর আর আরহা এক না। তবুও মনের মধ্যে একটা কিন্তু রয়েই যায়।
নূর উপরে আসতেই আরাহা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। নুর আরহাকে বালিশ দিয়ে মে*রে বলে এবার বল কাহিনি কি?
– শোন ওই লোকটা আমার….
– তোর কি সেটা বল!
– ঝুমকটা চুরি করেছে
– তুই সত্যিটা বলবি নাকি আমি ওই ভাইয়াকে ডেকে আনবো!
– তোর ভবিষ্যৎ দুলাভাই
– কিহহহহহহহহহহহ।কবে? কখন? কেমনে কি?
– আরে রিলাক্স আমি তাকে দেখে হালকা করে বাঁশ খেলাম আরকি।
– তোর অনেক সিনিয়র হবে।এরচেয়ে প্রান্ত ভাই বেস্ট।
– তবে তুই প্রান্তকে রাখ আমাকে মেঘের সাথে উড়ে বেড়াতে দে!
– বইন সত্যি কইরা ক’তো তোর মাথা ঠিক আছে কিনা কি সব আবল তাবল বলছিস।
– আই এম ইন লাভ নুরী ভালোবাসার নেশায় আমার মাথাটা গেছে।
– মজা করছিস, তবে ছেলেটা কিন্তু হ্যান্ডসাম আছে।
– নজর দিব না ওইটা আমার সম্পত্তি। শোন তোর ভাইকে জিজ্ঞেস করে ওই ছেলের পুরো নাম বের করে দিতে পারবি?
– ওকে জান্স চেস্টা করে দেখবো।
– এবার যা খাবার নিয়ে আয় কখন থেকে না খাইয়ে বসিয়ে রেখেছিস
– আমি এখন নিচে যেতে পারবো না। তোমার বাঁশ আমাকে লাঠি হয়ে তেড়ে আসবে।
– তোর যেতে হবে না আমি যাচ্ছি।
– যা, যা তোকে পেলে খেয়েই ফেলবে
আরহা আশেপাশে কাউকে দেখ পেলো না। ধীর পায়ে নীচে আসলো। এ বাসা নিজের বাসার মতোই মিসেস মারিয়াদের মৃত্যুর পর এখানেই ছিলো দু’বছর তাই বলতে গেলে এটা নিজের বাসার মতোই। এক গ্লাস পানি পান করে আপেলে একটা কামড় বসিয়েছে সেই মূহুর্তে মনে হলো কেউ এদিকে আসছে আরহা ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা বাসা থেকে বের হয়ে গেলো
মেঘ এদিকটায় আসছিলো কাউকে চলে যেতে দেখে মেঘও বের হয়ে গেলে আরহা। গাড়িতে বসে ড্রাইভার কে বললো দ্রুত ড্রাইভ করো।
মেঘও গাড়ি নিয়ে ফলো করছে। আরহা মনে মনে বলছে নিজেই জমকে ডেকে এনেছি।
হিয়া হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে তার এক পা, আর এক হাত কেউ কে*টে দিয়েছে। সাথে হুমকিও দিয়েছে সত্যি কথা বলার। দু’চোখ থেকে নিরব অশ্রু ঝরে পরছে, আজ ইমতিহানের বলা শেষ কথা গুলো মনে পরছে, ইমমিতান বলছিলো, আমি তোমাকে সত্যি ভালোবেসেছি,হয়তো তুমি অভিনয় করেছো!
তুমি আমাকে ঠকিয়েছো। ভাবছো ভালো থাকতে পারবে! তবে একটা কথা মনে রেখো রিভেঞ্জ অফ নেচার বলে একটা কথা আছে জানো তো! তুমি চাইলেও প্রকৃতি তোমাকে ভালো থাকতে দেবে না। তবে তোমার চেয়ে বেটার কাউকে পাঠিয়ে আমার লাইফা গুছিয়ে দেবে। যে ঝড় তুলে তুমি আমার হৃদয় তছনছ করে দিয়েছো, সে হৃদয় পরম যত্নে কেউ জোড়া লাগিয়ে দেবে। ক্ষত চিহ্ন কিন্তু থাকবেই তাদের দীর্ঘ শ্বাস তোমাকে নিঃস্ব করে দেবে।
বা হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে বলে, আমি ম*রে কেনো গেলাম না এ যন্ত্রণার থেকে তো মৃ*ত্যু ভালোছিলো।হিয়ার মা এসে হিয়ার মাথায় হাত রাখলেন। নিজের মায়ের উপস্থিতি টের পেতেই জড়িয়ে ধরেলো এক হাতে। নিজের মেয়ের এমন করুণ অবস্থা দেখে তিনিও চোখের পানি সামলে রাখতে পারলেন না। সান্তনা দেয়ার ভাষা নেই। নিজেকেই ব্যর্থ মনে হচ্ছে। হয়তো আরো শাসন করলে আজ এ পরিনতি দেখতে হতো না।
তুমি আসবে বলে পর্ব ২০
আরহা একটা ফাঁকা জায়গার ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলে, কারণ আর পারা যাচ্ছে না সেই কখন থেকে পিছু নিয়েছে আরহা গাড়ি থেকে বের হয়ে আসতেই মেঘ আরহাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করে। আরহার ড্রাইভার সামনে এগিয়ে আসতেই মেঘ বলে, আমার জিনিস আমি নিয়ে যাচ্ছি একদম মাঝখানে আসার চেস্টা করবেন না।
আরহা ভয়ে কোন কথা বের করছে না। আরহাকে নিয়ে একটু সামনে যেতেই….