তুমি আসবে বলে পর্ব ২২
নুসাইবা ইভানা
মেঘ একটু সামনে পা’বাড়াতেই কু*কু*রে*র সাথে পা আটকে ধপাস করে নিচে পরে যায়। আরহা নিচে মেঘ উপরে, মেঘের এক হাত আরহার পিঠের নিচে আরেক হাত মাথায়। বেশ আরাম করে কু*কু*র*টি ঘুমাচ্ছিল তার সাধের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় কুকুরটি ঘেউ, ঘেউ শুরু করে দিয়েছি।
আরহার অবস্থাতো ভয়ে শেষ। এতোক্ষণে মুখের উপর থেকে ওড়নাটা সরে গেছে মেঘ এক দৃষ্টিতে আরহার দিকে তাকিয়ে আছে, সেই মুখ সেই চোখ, সেই চেহারা এতোবছরে জেনো আরো রূপবতী হয়েছে মেয়েটা। মেঘ আরহার কাছে থাকায় গালের অস্পষ্ট ক্ষত গুলো বোঝা যাচ্ছে। তবে এগুলো কিসের চিহ্ন!
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরহা চিৎকারে মেঘের হুঁশ ফেরে, সেই কখন থেকে বলে যাচ্ছে আমাকে ছাড়ুন আমি ব্যাথা পাচ্ছি আরহার কথা যেনো শুনতেই পাচ্ছে না কেউ! তাই এবার জোড়ে চিৎকার করে বললো ছাড়ুন আমাকে। মেঘ আরহাকে নিয়ে উঠে বসলো। আরহা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো, নিজের শরীর থেকে ধুলো ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
আমার কোমড়টা মনে হয় ভেঙেই গেছে, আল্লাহ গো এখন আমাকে কে বিয়ে করবে! মেঘ বোকার মতো তাকিয়ে আছে,আরহা হুট করে কান্না থামিয়ে নিজেকে নিজে বললছে, কি করছিস আরহা এখন স্ট্রং হতে হবে, লাইক হায়াতের মতো, মুরাদকে এতো ভালোবাসার পরেও ভয় পায়না বরং সব সময় নাকানিচুবানি খাওয়ায়। আরহা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার সাহস হলো কি করে আমাকে টাচ্ করার!
– তুমি তো জানোই বরাবর আমার সাহস বেশি
– আপনার সাহস আপনি কু*কু*র*কে দেখান আমাকে দেখাতে আসবেন না।
– ওকে সাহস দেখানোর আগেই পালিয়ে গেলো।
এবার তোমাকে দেখাবো।
– আচ্ছা আপনি কে বলুন তো! বলা নেই কয়া নেই, হুট করেই একটা মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন!
– বিবিজান আপনাকে কোলে নিতে আমার অনুমতি নিতে হবে!
– ওই কে আপনার বিবিজান?
– আপনি
– দিনের বেলা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন, একটা সিঙ্গেল সুন্দরী মেয়ে দেখলেন আর ওমনি বউ বানিয়ে নিলেন!
– তুমি আর সুন্দরী! সেওড়া গাছের পেত্নী।
– আপনি কি হুম অসভ্য চরম অসভ্য।
– আরহা কি বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছো, তুমি তো যথেষ্ট বড় হয়েছো।
– আমার নাম নুজহাত।
এবার মেঘ আরহার একদম সামনাসামনি দাঁড়িয়ে পরলো,দুপুরের কড়া রোদ একটা বালুর মাঠে দাঁড়িয়ে আছে দুজনে আশেপাশে লোকজন নেই বলতে গেলে। মেঘ আরহার কোমড়ে একহাত রেখে নিজের কাছে টেনে আনলো, অন্য হাত আরহার গালে রাখলো, স্থির দৃষ্টিতে আরহার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, আমি জানি তুমি কে? তোমার এতো কাছে আসার পরেও যদি তোমার মুখ থেকে শুনতে হয় তুমি কে?
তাহলে তোমাকে আমি। আর বললো না। আমাকে তোমার পরিচয় দিতে হবে না। তোমার হৃদয়ের এই বেসামল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া আমাকে বলে দিচ্ছে তুমি কে? তোমার দৃষ্টির অভিমান জানান দিচ্ছে তুমি কে? আরহা বাকরুদ্ধ এই মহূর্তে তার কি বলা উচিৎ! যেই মানুষটা অনায়াসে অবহেলায় ফেলে রেখে চলে গেছে তাকে নিজের দূর্বলতা দেখানো কি আদৌও যুক্তি যোগ্য? আরহা নিজের মনকে বুঝিয়ে এক ঝটাকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
হ্যা, হ্যাঁ আমি আরহা,সেই আরহা যাকে নিজের পায়ে পিশে মে*রে ফেলেছেন।
সেই আরহা যে আপনার দেয়া ক্ষত এখনো বয়ে বেড়ায়।
আমি সেই আরহা যে বয়সের চেয়েও বেশি বাস্তবতা দেখেছে প্রতি নিয়ত বেঁচে থাকার লড়াই করেছে।
” তখন কোথায় ছিলেন? যখন রাস্তার কু*কুরের মতো দুটো মেয়েকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন কোথায় ছিলেন তখন?
একবার খোঁজ নিয়েছেন মেয়ে দু’টো কোথায় আছে কেমন আছে? কোন চিল,শকুন তাদের ছিড়ে খাচ্ছে নাকি!
তখন কোথায় ছিলেন?আজ নাম হয়েছে জস হয়েছে, আর চলে আসছেন অধিকার খাটাতে ।
যখন নিজের চোখের জল লুকানোর জন্য একটা প্রসস্থ হৃদয়ের প্রয়োজন ছিলো তখন একা ফেলে পালিয়েছেন।
আমাদের জীবনে “আপনার জায়গা নেই একদম নেই। কথা গুলো বলেই বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো আরহা।
মেঘ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহার চলে যাওয়ার পানে। তার যে কোন ভাষা জানানেই আরহাকে আটকানোর, কোন অধিকার নেই এইটুকু বলার “শুনে যাও আমার কথা আমিও তো ভালো ছিলাম না। হৃদয়ের পিড়া নিয়ে বেঁচে ছিলাম।
একবার এই শূন্য হৃদয়ে পূর্ন করে দাও! কথা গুলো দলা পাকিয়ে গলায় আটকে গেলো। শব্দ হয়ে বেড় হয়ে আসতে পারলো না। আজ যেনো সব শব্দরা নির্বাসনে। কড়া রোদে হাঁটু মুড়ে বসে আছে মেঘ! আরহার প্রতিটি কথা হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। হাত,কা*ট*লে টকটকে লাল রক্ত ঝরে তা সবার চোখে পরে সবাই সেই ক্ষত সারাতে কতকিছু করে, তবে এইে যে, মেঘের হৃদয় থেকে তাজা র*ক্ত ঝরছে কই কেউ তো তা দেখছে না। এই যে হৃদযন্ত্রে অসম্ভব অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে তা কেউ দেখছেনা।
আরহা রাস্তায় এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা সিএনজি নিয়ে চলে গেলো। মেঘকে এতোকিছু হয়তো বলার ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু এতো বছরের জমানো কথা গুলো আজ হয়তো বেরিয়ে এসে আরহাকে হালকা করলো! না হয় এতো কষ্টের ভার বহন করাতো সহজ কথা নয়! চোখের অশ্রু গুলো হয়তো আজ বাঁধ না মানার আন্দোলনে নেমেছে।
নীলু কখন থেকে অপেক্ষায় আছে আরহার। আজ ইমতিহান আসবে কাজের শেষ নেই তার উপর টেনশনে আছে কি ড্রেস পরবে!কি ভাবে সাজবে! নীলু নিজের ফোন বের করে আরহাকে কল করলো। রিং হচ্ছে তবে কেউ রিসিভ করছে না। নীলু এবার নূরকে কল করলো দু’বার রিংহতেই ওপাশ থেকে রিসিভ হলো, নীলু বললো, আরহা কোথায়?
– আরহা তো এখানেই ছিলো বললো খবার খাবে পরে নিচে গেলো আর কাউকে কিছু না বলেই চলে গেলো।
– তোদের বাসায় কেনো গিয়েছিলো সত্যি করে বল তো?
– সে তো অনেক কথা আপু
– যত কথাই হোক তুই বল!
– নুর সব কিছু বললো, নীলুকে।
ফ্লাশব্যাক….
আরহা তখন নীলুর বাসায় প্রবেশ করার আগে ভালো করে আশেপাশে দেখে নিলো মেঘ কর্নারে বসেছে!! আরহা সেই ঝুমকোটা বা পাশের কানে পরে নিলো তারপর কানের ঝুমকোটা দেখিয়ে সেখান দিয়ে হেঁটে আসলো।
মেঘ ঝুমকটা দেখতে পেল তবে মেয়েটা চেহারা ঠিক দেখা যাচ্ছে না শুধু এক পাশ।
আরহার জানা ছিলো মেঘের কাছেই ঝুমকটা রয়েছে আর কৌতূহল হয়ে মেঘ ঠিক উপরে আসবেই।
আরহার ধারনাই ঠিক হলো মেঘ বাহানা করে উপরে চলে আসলো মেঘ আরহার পিছন পিছন ভেতরে আসলো কয়েকবার অবশ্য মূদু স্বরে ডেকে বলেছে তুমি আরহা তাই তো! তবে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি
মেঘ বারকয়েক ডাকার পর সাড়া না-পেয়ে আরহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। প্রথমে হালকা করে ধরলেও তার হৃদয় যখন জানান দিলো এটা আরহা তখন আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে।
বর্তমানে……
আরহা বাসায় ফিরে আসলো নীলু আরহাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বলে তুই কেনো তার কাছে গেলি! তোকে আবার কষ্ট দেয়নি তো? বোন আমার বল তোকে কিছু করেনি তো, কোথায় আঘাত করেছে বল বনু চুপ করে থাকিস না। নীলুর চোখে পানি। আরহাকে দেখেই বোঝা যায় সে কতটা বিধ্বস্ত। এবার আরহা নীলুকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিয়ে বলে, আপুই আমি তাকে কষ্ট দিয়েছি, যার জন্য এতো অপেক্ষা করেছিলাম। যাকে এতো ভালোবাসলাম তাকেই কষ্ট দিয়েছি। সে তো আবার চলে যাবে আর ফিরবে না।
আমাকে আর বিবিজান বলে ডাকবে না।
নীলু বুঝতে পারছেনা কি বলছে আরহা এতো কিছু কখন হয়ে গেলো। আরহা আবার বললো, জানো সে বলে, তোমার এতো কাছে এসেও যদি তোমার মুখ থেকে শুনতে হয়! তুমি কে তবে তোমায় আমি। আর বললোনা সে, আমায় সে ভালোবাসে সেটাই কি বলতে চাইলো আপুই! কি চায় সে বলো?আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে একছুটে তাকে জড়িয়ে ধরে বলি আমাকে আপনার বক্ষ পিঞ্জিরায় একটু জায়গা দেবেন? মনটা এতো বেহায়া কেনো আপুই! বলো না কেনো তার কাছেই সুখ খুজতে চায়! যে দুঃখের অতলে ভাসিয়ে দিয়ে গেছে।
আরহার আকুতি ভরা কথা গুলো কাটার মতো বিঁধছে নীলুর হৃদয়ে। বনু তুই তো এতো দূর্বল না তুই এতো ভেঙে পরলে চলবে না। নিজেকে আরো শক্ত করতে হবে মনকে বশে আনতে হবে, নিজের সাথে নিজেকে লড়াই করতে হবে।সেদিনের আরহাকে আমি দেখতে চাইনা। আমি আজকের আরহাকে দেখতে চাই যে এতো সহজে ভেঙে পরে না। নিজেকে দূর্বল ভাবে না।
আরহা চোখের পানি মুছে নিলো আর কাঁদবো না।
তুমি আসবে বলে পর্ব ২১
– এই তো লক্ষী মেয়ে, যা পাঁচ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় খুব খিদে পেয়েছে দু’বোন একসাথে খাবো।
আরহা চলে আসলো নিজের রুমে উপর থেকে যতই নিজেকে স্ট্রং দেখাক ভেতরে ভেতরে আসলে ভিষণ কষ্ট পাচ্ছে। মনের মধ্যে রয়েছে হাজারো প্রশ্ন। হঠাৎ কি এমন হলো? যে মানুষটা আমাকে সহ্য করতে পারতো না সে এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে!