তুমি আসবে বলে পর্ব ২৩
নুসাইবা ইভানা
সামিরা, ইমতিহান দুজনেই বুঝতে পারছে না মেঘ কিছু না বলে কোথায় গেলো?
সামিরা বলল, আচ্ছা ইদানীং মেঘের আচরণে আমি বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করছি ও চাচ্ছে কি?
– দেখ সামিরা আমার মনে হয় মেঘ তোর সাথে ফ্রেন্ড ছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক গড়বে না।
– সেটা আমি বুঝে নেবো। তুই শুধু বল ও কোন মেয়েকে পছন্দ করে?
– সঠিক বলতে পারবোনা। এই ছেলে ফোনটা ফেলে রেখে কই লাপাত্তা হলো!
মেঘ খানিকক্ষণ বসে থেকে উঠে আসলো এলোমেলো পায়ে সামনে এগিয়ে আসলো মধ্যবয়স্ক লোকটি মেইন রোডে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি যে বড্ড বেশি অন্যায় করে ফেলেছি।এখন তার এ পাহাড় সম অভিমান আমি কি ভাবে দূর করবো।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– ভেঙে পরছো কেনো যা ভুল করেছো তার চেয়ে অধিক পরিমাণ ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দেবে। শুনো ভালোবাসার কাছে প্রতিটি মানুষ দূর্বল। ভালোবাসা এমন এক শক্তি যেখানে সব রাগ অভিমান তুচ্ছ। ভুলটা যেহেতু তোমার তাই সেটা শুধরে নেয়ার দায়িত্ব তোমার।
– আপনার জন্য সব সম্ভব হয়েছে। আপনি না বললে হয়তো এতো সহজে আমার ভূল ভাঙতো না।তবে ওই হিয়াকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না।
– তোমার কিছু করতে হবে না। সবাই সবার কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করবেই।
– কিন্তু তাই বলে এভাবে ছেড়ে দেবো
– তুমি ছেড়ে দাও কেউ না কেউ অবশ্যই শাস্তি দিবে।
– আচ্ছা চলুন আজ দু’জনে একসাথে অনেকটা সময় কাটাবো।
মধ্য বয়স্ক লোকটি হেসে দিয়ে বললো চলো তবে বাবা আজ শুধু দিনটা তোমার আমার। তবে মনে রেখো কাল থেকে কিন্তু তোমার ভালোবাসা জিতে নেয়ার লড়াই শুরু।
– তাতো অবশ্যই আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো।
রাতের খাবার খেয়ে নীলুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আরহা।নীলু আরহার মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আরহা কোমল স্বরে বলল,আপুই আজকে বলোনা ওনার পুরো নামটা কি?
– আগে বল তুই কি ছোট সাহেবের কাছে ফিরতে চাস?
– আরহা চুপ করে রইলো। কি বলবে সে! যে মানুষটা তাকে এতো কষ্ট দিলো তাকেই সে চায়! খুব করে চায়।
– কিরে বল তুই মেনে নিতে পারবি তো?
– আপুই তুমি বলো তো নামের সাথে মানা না মানার কি সম্পর্ক?
– আচ্ছা ছোট সাহেবের নাম হচ্ছে মেহের আফরোজ মেঘ।
– আরহা বেশ অবাক হলো। সত্যি মেহের আফরোজ!
– হুম সত্যি।
– আচ্ছা তুমি আমাকে এতোদিন বলোনি কেনো ছোট সাহেব আর কেউ নয় আমার হ্যাসবেন্ড যাকে এতোদিন খুঁজেছি।
– তার পেছনে কারণ আছে। তুই জানলি কি ভাবে ছোট সাহেব আর কেউ নয় বরং তোর হ্যাসবেন্ড
– এখন বলবো না অপেক্ষায় থাকো পরে বলবো।
আরহা নিজের রুমে এসে ফোন বের করে সেই মেসেজগুলো দেখলো। তার মানে সেদিন আপনি আমায় হসপিটালে নিয়ে এসেছিলেন? ইশ আমি কেনো সেন্সলেস ছিলাম।এতোদিন আমি অপেক্ষা করেছি এবার আপনার অপেক্ষার পালা। আরহার এতো আনন্দের মধ্যেও একটা কথায় বিষাদ ছেয়ে যায়। উনি কি সত্যি আমায় ভালোবাসেন? কিন্তু হুট করে কি এমন হলো যার ফলে তার ঘৃণা চলে যেয়ে ভালাবাসার উদয় হলো!
আপনি আমাকে সব সময় এক রহস্যের বেড়া জালে আটকে রাখেন। খুব বাজে আপনি ছোট সাহেব! আমার ছোট্ট হৃদয়টাকে আর কত ক্ষতবিক্ষত করবেন। তারপর এই অসুস্থ হৃদয়ের চিকিৎসা কে করবে। এ ডাক্তার যে পৃথিবীতে নেই। এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমের দেশে পারি জমালো আরহা।
মেঘ আর মধ্য বয়স্ক লোকটি বসে আছে এক সাথে মেঘ বলল,আচ্ছা আঙ্কেল এবার আমি জানতে চাই আপনি এতোদিন কোথায় ছিলেন? আপনার ফ্যামেলির থেকে দূরেই বা কেনো ছিলেন? কেনো এতো কাছে থেকেও নিজের মেয়েকে এতো দূরে রেখেছেন?
– শোন বাবা আমার একটা সময় খুব ভুল করে ফেলি। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো সেই কাজটা যে ভুল সেটা বুঝতে বুঝতে আমাদের জীবন থেকে সব কিছু হারিয়ে যায়। আমিও ঠিক সেরকম ভুল করি। যে ভুল শুধু আমার জীবন নয় ধ্বংস করে দিয়েছিলো দুটি পরিবার
– আমি শুনতে চাই সেই ভুলের গল্প যা আপনার জীবন থেকে সব কেড়ে নিয়েছে!
– আমার আর শারমিনের ছিলো প্রেমের বিয়ে। শারমিনের গ্রাম থেকে তাকে নিয়ে চলে এসেছিলাম এ শহর। মেয়াটা বড্ড ভালোছিলো। তারপর একসাথে পড়া লেখা করলাম। আমি সিনিয়র সে জুনিয়র বিয়েটা গোপন রাখলাম। অবশ্য তেমার বাবা, মা আর আমার বাবা, মা জানতো বিয়ের বিষয়ে। সুন্দর জীবন চলছিলো।
কিন্তু ভার্সিটি লাইফের শেষের দিকে আমি জড়িয়ে পরি জ*ঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে। পাল্টে যেতে থাকে আমার জীবন তবে শারমিন বা কেউ সে বিষয় অবগত ছিলোনা। বিয়ের দশ বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের কোন সন্তান আসেনি। তুমিই ছিলে আমাদের সন্তান আমারা সবাই তোমাকে খুব আদরে বড় করতে লাগলাম, তুমি বড় হতে থাকলে আমি লুকিয়ে আমার কাজ করতে থাকলাম ।
তোমার বয়স যখন দশ বছর তখন আমি বড় একটা বো*মা হা*ম*লা ঘটাই কিন্তু ভুল ক্রমে সেখানে তোমার বাবাও উপস্থিত ছিলো। তাই তোমাদের কে কৌশলে বাহিরে পাঠিয়ে দেই। কারন আমরা একে অপরকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম। তবে কথায় আছে পাপ তার বাপকেও ছাড়েনা।
আমাকেও ছাড়েনি তোমরা চলে যাওয়ার তিন বছর পর সুখবর আসে আমি বাবা হবো। এতো আনন্দ আমার জীবনে হয়তো আর আসেনি। শারমিন ও খুব খুশি হয়েছিলো তোমার বাবা, মাকে খবর জাননো হলো। তখন তোমার মা, বলেছিল ইশতিয়াক তোমার যদি মেয়ে হয় তবে সে হবে আমার মেঘের বৃষ্টি। আমি বলেছিলাম দেখা যাক কে আসে!
মেঘ মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনছে। ইশতিয়াক সাহেব বললেন, জানো আমার মেয়েটার যখন একটু একটু করে তার মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠছিলো তখন আমার সবচেয়ে বড় হা*ম*লা*র অর্ডার আসে। তাই তাদেরকে রেখে এসেছিলাম তাদের গ্রামে তার ভাইয়ের কাছে। যখন চলে আসছিলাম শারমিন আমাকে বলে ছিলো তুমি কখন আসবে? আমার কেনো মনে হচ্ছে ইশতিয়াক তোমার সাথে আমার শেষে দেখা!
আমি বলেছিলাম তুমি ভুল ভাবছো একটা বিজনেস মিটিং আছে শেষ করেই তোমাকে নিয়ে যাবো। কিন্তু সেই হা*ম*লা ঘটাতে যেয়ে আমি আটকা পরি চার বছর আমাকে ঘুম করে রেখে আমার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারপর আরো চৌদ্দ বছরের সাজা দেয়া হয়। আমার মৃ*ত্যু দন্ড হতো তবে আমার ব্যপারে পুরোপুরি সব প্রমাণ না পাওয়া শাস্তি কিছুটা কম হয়।
আমার জীবন থেকে ততদিনে সব হারিয়ে গেছে আমি জানতেও পারিনি আমার ছোট একটা পরির মতো মেয়ে হয়েছে!তাকে ছুঁয়েও দেখতে পারিনি। অভাবের কারণে শারমিনের ভাবি শারমিনের উপর বিভিন্ন অ*ত্যা*চা*র করতো।আমার একটা ভুলে আমার জীবন থেকে সব হারিয়ে গেলো। তোমার বাবা, মাকেও বলতে পারিনি শারমিনকে কোথায় রেখেছি।
আমার দিনগুলো জেলখানার অন্ধকার কুঠুরিতে কাটছিলো, মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যেতো মনে হতো কেউ আমাকে বাবা বলে ডাকছে।
জেলখানার সব নিয়ম ঠিক মতো করে পালন করায় আমার শাস্তি কমে যায়। নয় বছর জেলে থেকে বের হয়ে প্রথমেই ছুটে যাই শারমিনের কাছে, তবে আমি বেশ দেরী করে ফেলেছি, আমার শারমিন ততদিনে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। টুকরো টুকরো খবর থেকে জানতে পারি আমার মেয়েটার কথা।
তুমি আসবে বলে পর্ব ২২
তবে মেয়ের সামনে দাঁড়ানোর সাহস আমার ছিলো না। তার উপর প্রতি নিয়ত তার মামির অত্যচার, সব দেখেও চুপ করে থাকতাম। কিন্তু আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলাম না তাই তোমার বাবা, মাকে বেনামি চিঠি পাঠিয়ে আরহার বিষয়ে জানিয়ে দেই। তারা এসে আরহাকে নিয়ে যায় তোমার বউ করে। জানো সেদিন ভেবেছিলাম আজ থেকে আমার মেয়েটার সুখে থাকা শুরু।