তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৪

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৪
নুসাইবা ইভানা

মধ্যে রাতে আরহার ঘুম ভেঙে গেলো ফেরারি লাইটের আধো আলোতে চারপাশে চোখ বুলিয়ে উঠে বসলো
নিজের মনের মধ্যে কতশত প্রশ্ন যার কোনটার উত্তর
তার জানা নেই। ক্ষুদ্র জীবনে কমতো সাফার করতে হলো না! মানুষ বয়সে বড় হয়না। বড় হয় পরিস্থিতি, আর বাস্তবতায়। আরহা ধীর পায়ে বারান্দার দোলনায় এসে বসলো উদাসী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাস্তার ল্যামপোস্টের দিকে।

কোথায় যেনো আরহা নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত যেই মানুষটা তাকে এতো অবহেলা করলো, এতোটা অবিশ্বাস করলো কেনো বেহায়া মনটা তাকেই ভালোবাসবে! কেনো তার কাছেই যেতে চাইবে? শুন্যে দৃষ্টি রেখে ভাবছে আপনি আমার জন্য ছায়া হতে পারতেন! সমস্ত ঝড়ঝাপটায় আমাকে আগলে রাখতে পারতেন!

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমার কঠিন সময় গুলোতে আমার মাথাটা আপনার বক্ষপিঞ্জরে রেখে বলতে পারতেন এতো কিসের ভয় তোমার!আমি তো আছি। আমার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলতে পারতেন তোমার জন্য আমি আর আমার ভালোবাসাই যথেষ্ট। কেনো বললেনা। আমি আপনাকে এতো সহজে জায়গা দেবো না আমার জীবনে।
মেঘ সব সময় ভাবতো তার দুটো বাবা,মা ছোট বেলায় তাদের ভালোবাসায় কোন কমতি ছিলো না আজ কেবল শুন্যতা হৃদয় জুড়ে হাহাকার।

ইশতিয়াক সাহেব বললেন, তবে কে জানতো আমার মেয়ের জীবনে সুখ শুধু মরিচীকা,আমি আড়াল থেকে সব সময় তোমাদের খেয়াল রাখতাম যেদিন ওই অগ্নিকাণ্ড ঘটে সেদিন আমি চেষ্টা করেও মোর্শেদ, আর মারিয়াকে বাঁচাতে পারিনি। আমি এটাও আশা করিনি তুমি আমার বাচ্চা মেয়েটার উপর এতো বড় আঘাত করবে। তুমি যখন গরম রড ওর হাতে চেপে রেখেছিল ওর আর্তচিৎকারে আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিলো।

ওকে যখন ওই অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রেখে চলে গেলে বিশ্বাস করো তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমি তাকে জী*বি*ত রাখতাম না। কিন্তু আরহা যেমন আমার মেয়ে তুমিও আমার ছেলে। একটা কথা মনে রেখো কিছু ক্ষত শরীরের চেয়ে হৃদয়ে ক্ষত করে বেশী। শরীরের ক্ষত সেরে গেলেও হৃদয়ের ক্ষত রয়ে যায়। শরীরে ক্ষত মলমে সেরে যায় কিন্তু হৃদয়ের ক্ষত ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছুতে সারে না।

নিষ্টুরের মতো তুমি আমার মেয়েটাকে রেখে চলে গেলে। দুটি বাচ্চা মেয়ে কোথায় থাকবে, কি করবে তা চিন্তাও করলে না। এই সমাজটা, এই যুগে মানুষ খুব কম! সব মানুষের মুখোশে প*শু। ছিড়ে খেয়ে ফেলতো মেয়ে দু’টোকে ঠিক তখন একজন ওদের আশ্রয় দেয়। তোমার প্রতি আমার রাগ নেই তবে অভিমান আছে! তুমি একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে কিভাবে ওদেরকে একা ফেলে চলে গেলে? তোমার কি একবারো মনে হয়নি এই মেয়ে দুটোর আমি ছাড়া কেউ নেই! তোমার কি মনে হয় এতো সহজে তুমি আরহাকে পেয়ে যাবে? তুমি জানো সে এখন বাংলাদেশর টপ লেভেলের সঙ্গীত শিল্পী। যার নাম যশ খ্যাতি কোন কিছুর অভাব নেই।

মেঘ যেনো বাকহারা আজ যেনো সে শব্দ শুন্য এতো এতো অন্যায় সে করেছে অথচ তার অনূভুতিতে কখনো আসেনি সে কত বড় অপরাধী। সামনের মানুষটির চোখে চোখ রাখতে পারছে না। ইশতিয়াক সাহেব উঠে এসে মেঘের পিঠে হাত রেখে বলল, নিজের ভুল বুঝতে পেরে তা সুধরে নিতে ক’জন পারে!

তুমি তো তোমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত তাহলে নিজের দৃষ্টি কেনো লুকাচ্ছো। জিতে নাও নিজের ভালোবাসর মানুষটিকে রাঙিয়ে দাও নিজের রঙে, বুঝিয়ে দাও সে তোমার হৃদয়ের রানী। হয়ত সহজ হবে নয়ত কিছুটা কঠিন তবে যে কোন বিনিময়ে ভালোবাসা জিতে নাও। জীবনে টাকা পয়সা আসবে যাবে। তবে একবার যদি ভালোবাসার মানুষটা চলে যায় আর ফিরে পাওয়া যায়না। ভালোবাসার মানুষ কে ছাড়া সুখে তো থাকা যায় তবে শান্তি পাওয়া যায় না।

সব কিছু থাকার সত্বেও কেমন একটা শূন্যতা ঘিরে থাকে সারাক্ষণ। যেন মনে হয় জীবন থেকে সব রঙ মুছে গেছে। জীবনে সুখে থাকার জন্য সবাই বলে টাকার প্রয়োজন। তবে আমি মনে করি তার চেয়েও দু’জন মানুষের মধ্যে ভালোবাসা থাকা বেশি প্রয়োজান। কুঁড়ে ঘরে থেকেও শান্তিতে থাকা যায় যদি ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকে। আবার কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও দুজন মানুষ এক ছাদের নিজে বসবাস করা সত্বেও কোন শান্তি থাকেনা।

টাকা মানুষকে সাময়িক আনন্দ দিলেও চিরস্থায়ী সুখ দিতে পারে না। একটা কথা জানো নিজের অভিজ্ঞতা দেখে বলছি অনেক এমন বড়লোক দম্পতি দেখেছি যাদের নিজেদের মধ্যে শা*রী*রি*ক মিলন ছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক নেই। সামাজিক কারনে হয়তো তারা এক ছাদের নিচে থাকে তবে দু’জনেই নিজেদের মতো বাঁচে।

সেখানে কোন ভালোবাসা নেই, নেই একে অপরের উপর অভিমান, আর না আছে আবদার, আর না আছে একজনের অপর জনের প্রতি আসক্তি।
সময় থাকতে নিজের ভালোবাসা কে আগলে নাও সব ভুল বোঝাবোঝি মিটিয়ে নিয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে আগলে রাখো। সে পাশে থাকলে কঠিন সময়টা অনায়াসে পার করতে পারবে। আর আমার বিশ্বাস তুমি পারবে।

– আমাকে পারতেই হবে আঙ্কেল, পারতেই হবে।
আরহা লাইট অন করে গিটার নিয়ে বসলো আগামীকাল কন্সার্টের জন্য গান রিহার্সালে করবে এখন কোনকিছু ভালো লাগছে না তাই গান গাওয়াটাই বেছে নিলো। গিটার হাতে টুংটাং শব্দ করে সুর তুলে গাইতে লাগলো……

Tu safa mera
hai tu hi meri manzil
tere bina guzara
Ae dil hai mushkil
junoon hai mera
Banoo main tere kabil
Tere bina guzara.
Ae dil hai mushkil
Yeh rooh bhi mari
Yeh jism bhi mera
Utna mera nahi
jitna hua tera
Tune diya hai jo
Woh dard hi sahi
Tujhse mila hai toh
lnaam hai mera
Mera aasmaan
dhoondheTeri zameen
Meri har kami ko hai
Tu laazmi
Zamee pe na sahi
Toh aasmaan mein aa mil
Tere bina guzara
Ae dil hai mushkil

এই রাতের বেলায় গিটারের শব্দ ঘুম ভেঙে যায় নীলুর আজ নীলু আর আরহা একাসাথেই ঘুমিয়ে ছিল। নীলু চুপিচুপি উঠে নিজের মোবাইল বের করে নীলুর গানের রেকর্ড করলো। আরহা গাইতে গাইতো চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। গান শেষ করে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়িয়ে গিটার রেখে দিয়ে এসে শুয়ে পরে। আরহাকে উঠে আসতে দেখে নীলু ঘুমের অভিনয় করে শুয়ে পরে।

সকালের সোনালী রোদে চোখে পরতেই ঘুম ভেঙে যায় সমিরার। কাল রাতেও ঠিক মতো ঘুম হয়নি মনের মধ্যে কেমন অস্থিরতা কাজ করছে। মনে হচ্ছে মেঘকে সে হারিয়ে ফেলেছে। কাল থেকে মেঘের সাথে কোন রকম যোগাযোগ হয়নি। মেঘ কারো নাম্বার দিয়ে ইমতিহানকে কল করে শুধু বলেছিল, আজ রাতে আমি ফিরবো না। এই যে সামিরার ইচ্ছে করছিলো মেঘকে জিজ্ঞেস করতে কোথায় তুমি। কিন্তু পারলো না কারণ যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে অধিকার মূল্যহীন।

মেঘ ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে পোস্ট করলো….
তোমার মনের রাজ্যে এক ফালি সাদা মেঘ হয়ে তোমাকে সারাজীবন ছাঁয়া দিতে চাই।
কখন কখন রংধনু হয়ে তোমায় আমার রঙে রাঙিয়ে দিতে চাই।
(হৃদয়েশ্বরী)

আরহার ঘুম ভাঙলো বেশ বেলা করে। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখলো নীলু মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আরহা নীলুর পাশে বসে বলে,কি হয়েছে আপুই তোমার চেহারায় এমন মেঘ জমেছে কেনো?

– মেঘ জমলে তোর জীবনে জমবে। আমার জীবনে তো আমাবস্যা নেমে এসেছে।
– কি হয়েছে সেটা তো বলবা নাকি!
– নিজের ফোনটা বের করে বলে দেখ, তোর জিজু আমার পিকে ব্লাক হার্ট দিয়েছে।
– তাতে কি-হয়েছে?
– কি হয়েছে মানে! আমি ওর কে?
– ভালোবাসার মানুষ, হবু বউ

– তাহলে আমাকে কি হার্ট দিবে
আরহা বোকার মতো তাকিয়ে আছে। তোর বলতে হবে না আমি বলছি, রেড হার্ট।
– একটা দিলেই হলো এতে রিয়েক্ট করার কি আছে?
– তুই জানিস সয়তানের হৃদয় কালো থাকে। কালো হার্ট দিলে ওর সত্রুকে দিবে আমাকে কেনো!
– এর জন্য কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিয়েছো নিশ্চয়ই! এটাতো বুঝিয়ে বললেই হয়।আমি বলে দিচ্ছি যাতে তোমাকে সব সময় রেড হার্ট ইমোজি দেয়।

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৩

– শোন কাল রাতে তো ওরা আসলো না আজকেও আসতে মানা করে দিয়েছি তোর কনসার্ট আছে তাই।
কাল আসবে। ওর নাকি চাচ্চু আছে বাংলাদেশ তাদের নিয়ে আসবে।
নাস্তা করে আরহা একটু বাহিরে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলতেই প্রচন্ড রকম অবাক হলো।

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.