তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৫

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৫
নুসাইবা ইভানা

আরহা দরজা খুলেই দেখতে পেলে দরজা থেকে মেইন গেট পর্যন্ত লাল,আর হলুদ গোলাপের পাপড়ি বেছানো
আর একটু একটু দূরত্বে বেলুন দিয়ে সরি লিখা। পায়ের কাছেই একটা কার্ড পরে আছে। হাত বাড়িয়ে কার্ড টা উঠিয়ে পড়তে লাগলো, বিবিজান আপনার অভিমান যদি পাহাড় সম হয়! তবে আমার ভালোবাসা সমুদ্র সম।

আপনার সব অভিমান ধুয়ে মুছে নেবো আমার ভালোবাসার জোয়ারে। ভালোবাসি বউ পাখি। দূরে দাঁড়িয়ে আরহার দিকে তাকিয়ে ছিলো মেঘ আরহার এক্সপ্রেশন বোঝার জন্য। তবে আশা হত হলো মেঘ। আরহাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না সে রেগে আছে নাকি আনন্দিত হয়েছে। কোন রিয়াকশন ছাড়াই দরজা বন্ধ করে আবার সোফায় বসে পরলো।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিছু একটা মনে পরতেই একটা সেফটিপিন নিয়ে বাহিরে আসলো, সেফটিপিন দিয়ে সব বেলুন গুলোকে আঘাত করতে ঠুস ঠাস শব্দে একের পর এক বেলুন ফাটাচ্ছে, বেলুনগুলোর মতো মেঘের মুখটাও চুপসে গেলো। কি ভেবে ছিলো আর কি হলো।

আরহা পিছন ফিরতেই নীলুকে দেখতে পেলো। দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। আর একটু সামনে এগোতেই আরহা শুনতে পেলো,এটা কি ঠিক হলো বিবিজান।

– কে আপনার বিবিজান?
– তুমি মিসেস মেঘ চৌধুরী জানোনা
– না জানিনা। আমি পিউর সিঙ্গেল
– আয়হায় এইটা কোন কথা নিজের জলজ্যান্ত স্বামী চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও নিজেকে সিঙ্গেল দাবি করছো? নট ফেয়ার।

– আমার বাড়ির সামনে মাঝে মাঝে এমন দু’একজন পাগল দেখা যায়।
– এই তুমি আমাকে পাগল বললে!
– হুম বললাম তো!
-তাহলে পাগলামি করতে হয়
– একদম উল্টো পাল্টা কিছু করবেন না
– উল্টো পাল্টা মিন!
– মানে কেউ দেখে ফেললে আমার নাম খারাপ হবে।

-দেখুন মহারানী আপনার নামের সাথে আমার নাম যুক্ত তাই নিশ্চিত থাকুন দু’টোই হেফাজত থাকবে।
-আরহা সামনে পা বাড়াতেই মেঘ আরহার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে দু’হাত প্রসারিত করে বলে,একবার কি এখানটায় আপনার উপস্থিত দেয়া যায় না!
– আরহা নিশ্চুপ

– একবারের জন্য কি সুযোগ দেয়া যায় না। মানছি আমার অন্যায় ক্ষমার অযোগ্য তবুও যদি একটা সুযোগ দিতে তবে তোমাকে দ্বিতীয় বার অভিযোগ করার সুযোগ দিতাম না।
– কি শুরু করেছেন একবার আপনি, একবার তুমি, আগে ঠিক করুন কোনটা বলবেন। পরেরটা পরে ভেবে দেখা যাবে। বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
মেঘ সে দিকে তাকিয়ে থেকে বলে অন্যায় যখন করেছিস তখন একটু খাটা খাটনি করেতই হবে। মনে হচ্ছে এমনে মেঘের বৃষ্টি নামাতে বেগ পেতে হবে। ব্যাপার না আমি দেখে ছাড়বো জানু তোমার মনে আমার প্রেমের মেঘ বৃষ্টি হয়ে কি ভাবে না ঝড়ে!

মেঘ চলে যাওয়ার আগে নীলুকে বললো, নীলু আমি অন্যায় করেছি সেটা মানছি, তবে তোমার কি মনে হয় আমি ওকে নতুন ভালোবাসি! চার বছর আগেই ওর প্রেমের বিজ আমার হৃদয়ে বপন করেছি!সেই বিজ থেকে চারা গজিয়ে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে । আমিও ভালো থাকতে পারিনি। মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। তোমরা নিজেদেরটা চিন্তা করলে একবারও আমার কথা ভেবে দেখেছিলে! নিজের চেখের সামনে নিজের বাবা, মাকে জ্বলে পুড়ে শেষ হতে দেখেছি। ওই সময় আমার মাথা ঠিক ছিলো না। বার বার মনে হচ্ছিল ওই মেয়েই আমাদের সাজানো সংসার তছনছ করে দিয়েছে। আমার জায়গায় তোমরা থাকলে কি করতে?

নীলু কিছু বলবে তার আগেই, মেঘ বলে কিছু বলতে হবে না। তবে মনে রেখো আরহা শুধু আমার। মেঘ চলে গেলো।
এতো ক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে সামিরা মেঘকে দেখছিলো একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে মেঘ চলে যেতেই মেয়ের চেহারাটা স্পষ্ট দেখতে পেলো। যদিও বিরিয়ানির বদলে খিচুড়ি দেখলো সামিরা। আর ভুল করে খিচুড়িকেই বিরিয়ানি ভেবে নিলো। সেখান থেকে সোজা চলে আসলো ইমতিহানের বাসায়।

ইমতিহান সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠে নিজের জন্য এক কাপ কফি তৈরি করে আরাম করে সোফায় বসে প্রথম চুমক দিয়েছে ওমনি সমিরা এসে সেটা ইমতিহানের হাত থেকে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে ইমতিহানের পাশে বসে বলে, আমার সংসার ভেঙে যাচ্ছে আর তুই আরাম করে কফি খাচ্ছিস

– ইমতিহান হাসতে হাসতে বলে কোন জন্মের সংসার! আর তুই বিয়ে করলি কবে?
– দেখ আজকে নিজের চোখে দেখলাম একটা মেয়ের সাথে মেঘ কথা বলছে।
– তোরা মেয়ে মানুষরা পারিসও বটে কথা বলতেই পারে।
– চুপ থাক হাদারাম শুধু কথা না ওই মেয়ের বাসার সামনে ফুল বেছানো। আর আমার মনে হয় এটা মেঘ করিয়েছে।
– এবার ইমতিহান বেশ জোড়েই হাসতে লাগলো। সামিরা এসে ইমতিহানের গলা চেপে ধরে বললো হাসি থামা বলছি, আমি কি জোক্স বলছি তুই এমন মেন্টালের মতো হাসছিস।

ইমতিহান হাসি থামিয়ে বললো, হতে পারে ওই বাসায় আগের দিন কোন অনুষ্ঠান ছিলো! আর মেয়েটা কোন ভাবে মেঘের পরিচিত তাই কথা বলেছে!এই তোদের সমস্যা কি বলবি,সন্দেহ করা কি তোদের রক্তে মিশে আছে!
– তোরা যে ভালো মানুষ তাই সন্দেহ করি। আর তাছাড়া যেখানে ভালোবাসা আছে সেখানে তাকে হারানোর ভয়ে একটু আধটু সন্দেহ থাকা স্বাভাবিক। তোদের মতো মাথা মোটা ছেলেরা বোঝেনা। তারা শুধু আমাদের সন্দেহ দেখে ভালোবাসা না।

– সারাদিন প্যারায় রেখেও তোদের স্বাদ মেটে না। তাও বলবি এটা করলা কেনো ওটা করলা কেনো ।
– ওলে বাবুরে আর তোমরা কি করো নিজেদের মেয়ে ফ্রেন্ড থাকলে ইট’স ওকে, আর গার্লফ্রেন্ডের ছেলে ফ্রেন্ড থাকলে তোর কয়জন লা*গে।

– হুদাই বাজে বকছিস, ছেলে মানুষের মন অনেক উদার থাকে এসব ছোট খাটো বিষয় নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না।
– তাই আচ্ছা আমার জায়গায় যদি তুই দেখতি তোর গার্লফ্রেন্ড কোন ছেলের খুব ক্লোজ হয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে।
– থাপড়ে ওর দাঁত ফেলে দেবো। প্রয়োজন হলে দুরত্ব রেখে কথা বলবে!
সামিরা হাসতে হাসতে বলে এই হচ্ছে তোদের উদারতার নমুনা।

– মাজা নিচ্ছিস
– মোটেই না।আচ্ছা তুই কোন ভাবে মেঘকে বলে দেখনা আমার ব্যপারটা
– আমার মনে হয় তুই নিজেই একবার কথা বলে দেখতে পারিস!
এর মধ্যে মেঘ এসে পরলো,ইমতিহানের পাশে বসতে বসতে বললো কি দেখার কথা হচ্ছে?
ইমতিহান বলল, তোর বউ

– আগে আমি নিজে ভালো করে দেখি। জানিস না বউ না যেনো নাগা মরিচ।
ইমতিহান মেঘের কাঁধে হাত রেখে বলে আজকে তোর নাগা মরিচকে দেখতে চাই! সামিরাও ইমতিহানের সাথে তাল মেলাচ্ছে, উভয়ের ধারনার বাহিরে ছিলো মেঘের উত্তর।

আরহা বসে বসে চিন্তা করছে ছোট সাহেব জানলো কি ভাবে আমার স্বপ্নের কথা? আপুই বলেছে? ভাবতে ভাবতে নিজের ফোন নিয়ে শুয়ে পরলো। এতোক্ষণে অনেক গুলো নোটিফিকেশন এসেছে মোবাইলে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো মেঘের টেক্সট সব টেক্সট একি রকম, বউ কথা কও, ও বউ কথা কও। ডাকে পাখি খোল আঁখি বউ পাখি। আরহা বিরক্ত হয়ে। বলে আসছে ঢং দেখাতে। কোন রিপ্লাই দিলো না।

মনে মনে ভাবছে সিমটা চেঞ্জ করতে হবে নয়তো জ্বালিয়ে মারবে। সেদিন তো ঠিকি বলেছিরো আপনি আমার বউ নাকি গার্লফ্রেন্ড যে আপনার সাথে মজা করবো! আরহা এফবিতে ডুকতেই চোখ কপালে উঠে গেলে। কারণ কয়েকদিনে আগে যে , আইডির নাম ছিলো মেঘ জমেছে মনের আকাশে, সে আইডির নাম চেঞ্জ করে দিয়েছে, মেঘের আরহা। নাম দেখে আর বুঝতে বাকি নেই এটাকে।

আরহা একটা টেক্সট করলো, পুরানো পাগল ভাত পায় না, নতুন পাগলের আমদানি। টেক্সট সেন্ট করে। নিজের আইডির নাম চেঞ্জ করে দিলো, তোমার আসার দরকার নেই।
নীলু আরহার রুমে এসে বলে এসব আবার কি নাম দিয়েছিস! কেউ এসব নাম দেয়।তোর ফ্রেন্ডরা সবাই তোকে জেকে ধরবে।

– ধরলে ধরকু আমার আইডি আমার ইচ্ছে যা খুশি তা নাম দেবো। তাতে কার জামাইয়ের কি!
– তাই বলে এই নাম, তোমার আসার দরকার নেই সো ফানি।
– এতো সিরিয়াস বিষয়কে তুমি ফানি বলছো! এটা মোটেই ঠিক না। আসছে এখন ভালোবাসতে,তখন কই ছিলো।
– আচ্ছা শোন আমি বলছিলাম কি

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৪

– তোমার কিছু বলতে হবে বরং তুমি প্রান্তকে আমাদের বাসায় ডেকো জিজু যেদিন আসবে।
– প্রান্তকে কেনো ডাকবো!তোর জিজুর বন্ধু কি প্রান্ত!
– না ওই অস্যভ লোকটা জিজুর ফ্রেন্ড, আর কোন ছেলে খুঁজে পেলে না।
– কি বলছিস তুই আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না
– তোমার বুঝতে হবে না চলো তো দুপুর শেষ হয়ে এসেছে খাবার খাবো। আজতো কনসার্ট আছে খেয়ে দেয়ে রেস্ট নিয়ে রেডি হতে হবে তো!

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.