তুমি আসবে বলে পর্ব ২৬
নুসাইবা ইভানা
কি যে এক অবস্থা সেই কখন থেকে আরহা একের পর এক ড্রেস চেঞ্জ করছে, কখন শাড়ি, কখনো গাউন, কখনো লেহেঙ্গা, কখনো স্কাট, তবে একটাও মন মতো হচ্ছে না। সূর্যি মামা পশ্চিম আকাশে পালাই পালাই করছে। হলদে রাঙা আলোতে চারপাশ আলোকিত করে নিজের বিদায়ের সংবাদ জানান দিচ্ছে। নীলু বিরক্ত হয়ে বললো তুই এখনো ড্রেস সিলেকশন করতে পারলিনা সাতটায় কন্সার্ট আজ আর যেতে হবে না তুই ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে সূর্য অস্ত যেয়ে নতুন সূর্য উদিত হবে। তুই চেঞ্জ করতে থাক আমি ঘুমিয়ে পরি। আর ফোন করে জানিয়ে দেই তুই আজকে যাচ্ছিস না।
– কোথায় আমাকে সাহায্য করবে তা না করে উল্টো মাজা নিচ্ছ বলো না কোন ড্রেসটা পরবো!
– তুই আগে বল কি পরে যাবি
– ইচ্ছে ছিলো শাড়ি পড়ার তবে শাড়ি যদি সামলে রাখতে না পারি!
– তবে শাড়িই পর ওইদিন যে রেডি শাড়ি কিনে আনলাম বেবি পিংক আর গোল্ডেন কালারের মিশ্রণে ওইটা পর, ইউনিক লাগবে৷
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– শুধু শুধু আমার এতো টাইম ওয়েস্ট করলে আগে বলে দিলেই হতো। যাই এক্ষুনি চেঞ্জ করে আসি।
আরহা ওয়াশরুমে যেতেই নীলু হেসে ফেলে বলে, পাগলি মেয়ে একটা আজকে নিশ্চয়ই ছোট সাহেব আসবে তাই নিজেকে সুন্দর করে তোলার এতো ব্যস্ততা। আসলে আমরা সব সময় নিজের প্রিয় মানুষের জন্য নিজেকে বিশেষ ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি! তখন ইচ্ছে করে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেখতে যেনো আমাকেই লাগে! নীলুর ভাবনার মাঝেই আরহা বেড় হয়ে আসলো। আরহাকে বেশ সুন্দর মানিয়েছে শাড়িটায়। নীলু বললো, বাহ মনে হচ্ছে এই শাড়ীটা শুধু তোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।
-সত্যি ভালো লাগছে তো?
– না মিথ্যে ভালো লাগছে।আমার কথা তো আর বিশ্বাস হবে না তোর আশিক যখন হা করে তাকিয়ে থাকবে তখন যদি বিশ্বাস হয়।
– হইছে এতো বেশি বেশি বলতে হবে না। যাও তুমিও রেডি হও
– আমি রেডি আছি তুই আয় আমি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলছি।
সামিরা নিজের বাসায় এসে চিৎকার করে কাদঁছে আর বলছে, তুই শুধু আমার মেঘ তোকে অন্য কারো হতে দেবো না। তুই শুধু আমার। কখন, কি ভাবে এতো কিছু হয়ে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না। আমার চোখের সামনে তুই অন্য কারো হতে পারিস না। তোকে ফিরে আসতে হবে আমার কাছে।
তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না আমি। ম*রে যাবো আমি ম*রে*ই যাবো। আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুঁজতে লাগলো সামিরা। কিছু কিছু সময় মানুষ জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। সে কি করছে সে সম্পর্কে বিন্দু মাত্র ধারনা তার থাকেনা। ড্রয়ারে থেকে একটা চকচকে ছু*ড়ি বের করে আনলো নিজের বা’হাতে ধা*র*লো ছু*ড়ি দিয়ে হাতের কবজির র*গ কে*টে৷ ফেললো, সাথে সাথে হাত থেকে লাল র*ক্ত পরে ফ্লোর ভিজে যেতে লাগলো। চোখে কেমন আধার নেমে আসছে চোখ দুটো বন্ধ করার আগেও বলল, আমি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না মেঘ
কিছু ঘন্টা পূর্বে……..
দেখা তোর বউ কে,আজকে তোকে দেখাতেই হবে কথায় কথায় বউ, বউ করিস। সামিরা আর ইমতিহান দুজনেই মেঘের সাথে মজা করছে। উভয়ের ধারনার বাহিরে ছিলো মেঘ এমন কিছু বলবে।
– আরে বলছি, বলছি, তবে রাগ করতে পারবি না।
– ইমতিহান হেসে দিয়ে বলে কিসের রাগ, তোর বউকে দেখে খুশি হবো রাগ করবো কেনো। ইমতিহান ভাবছে মেঘ মজা করছে।
সামিরা বলল, কত বছর ধরে অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি দেখা। সামিরা ভাবছে হয়তো তার কথাই বলবে, যেহেতু বাংলাদেশে মেঘের পরিচিত তেমন কেউ নেই। তাই মেঘকে জেঁকে ধরেছে।
– মেঘ নিজের মোবাইল থেকে একটা পিক বের করে ওদের সামনে ধরলো।
ইমতিহান বোকার মতো তাকিয়ে আছে, সামিরা যেনো পাথুরে মূর্তি এই মূহুর্তে ঠিক কি রিয়েক্ট করবে তা যেনো ভুলে গেছে। ছবিতে একটা মেয়ে পার্পল কালারের কূর্তি পরা।
ইমতিহান বললো, তুই আমাদের বোকা পেয়েছিস একটা পিক অনলাইন থেকে কালেক্ট করে দেখাবি আর আমি বিশ্বাস করবো!
– তুই চিনতে পারিসনি এটা কে?
– কেনো চেনার কথা ছিলো নাকি!
– হুম কথা ছিলো যাইহোক এই মেয়েটা হলো মিসেস মেঘ চৌধুরী।
– তাই তা এর পরিচয় কি!
– আমি তাকে ভালোবাসি এটাই তার পরিচয়, সে মেঘের হৃদয়ের রানী এটাই তার পরিচয়।
– ভাই তুই সিরিয়াস না মানে
– শোন এই পিচ্চি সুইট মেয়েটা আমার বউ তোদের ভাবি, এখন শুধু এতোটুকু জেনে রাখ বাকি কথা আস্তে আস্তে জেনে যাবি।
মেঘ আর ইমতিহান নিজের মধ্যে কথায় এতোটাই মগ্ন যে কখন সামিরা উঠে গেছে সেই খেয়াল নেই। মেঘ যখন দেখলো সামিরা দরজা দিয়ে বের হচ্ছে তখন ডেকে বললো, কিরো তুই কোথায় যাচ্ছিস!
সামিরা সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে, একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ করতে হবে তোরা থাক আমি আসছি। নিজের চোখের পানি কাউকে দেখানোর মতো মেয়ে সামরি নয়। তাই চোখের জল লুকিয়ে চলে গেলো।
ইমতিহান বললো, মনে হয় সামিরা বিষয়টা মানতে পারেনি! তাই চলে যাচ্ছে।
– ওকে মেনে নিতে হবে।
– তুই কি সত্যি বলছিস এই মেয়ে তোর বউ
– না মিথ্যে বলছি, আমার বউ তো তোর শালী
– কিহহহহহ তার মানে এটা আরহা!
– কেনো তুই এর আগে ওকে আর দেখিসনি
– আরে রিলেশনের প্রথমে একবার দেখেছিলাম, ভুল করে প্রশংসা বেশি করে ফেলছি এর জন্য তোর ভাবি আর দেখায়নি।
মেঘ হাসতে হাসতে বলে মেয়েদের এই জেলাসি দেখতে ভালোই লাগে। আর একটা কথা কি জানিস
আমাদের বিয়েটা ছয় বছর আগে হয়ে গেছে।
– ভাই তুই আর কিছু বলিস না কখন জানি হার্ট এটাক করি, একের পর এক অবাক করা তথ্য দিচ্ছিস। তুই আর উপর ওয়ালা জানে মিথ্যে বলছিস নাকি সত্যি।
-ওয়েট তোকে প্রমাণ দেখাচ্ছি, মেঘ নিজের মোবাইল বের করে আরহার নাম্বারে কল করলো, রিং হতে হতে কেটে গেলো রিসিভ হলো না। মেঘ টেক্সট করলো, বিবিজান ফোন রিসিভ না করলে এরপর যা হবে তাতে আমার দোষ দিতে পারবেন না।
– এবারও রিসিভ করলো না আরহা, টেক্সট করলো,আহারে আমি তো ভয় পেয়েছি আপনার কথা শুনে, ধরবো না ফোন দেখি কি করতে পারেন।
মেঘ আবার টেক্সট করলো, আমি ভালোবাসতে জানিনা, কিভাবে ভালোবাসে তাও জানানেই, তবে যেদিন তুমি প্রথম বার আমাকে কামড়ে দিয়েছিলে আই থিং সেদিন তোমার বিষাক্ত দাঁত দিয়ে আমার শরীরে ভালোবাসার ইনজেকশন পুশ করেছিলে। এখন সেই অপরাধের শাস্তি হিসেবে তোমার উচিৎ আমাকে ভালোবাসা। মিস বাঘিনী।
আরহা রিপ্লাই করলো, এক কামড়ে যার এই অবস্থা তার আমাকে ভালোবাসার ক্ষমতা নেইে,কারণ বাঘিনীর ভালোবাসা,পেতে হলে এরকম আরো অনেক সহ্য করতে হবে, মিস্টার জিরাফ।
ইমতিহান বলল, কিরে তুই প্রমান দেখানোর কথা বলে কাকে টেক্সট করছিস, দেখা তো।
– তোর দেখতে হবে না।
– দেখা তোকে দেখাতেই হবে। অনেক জোড়াজুড়ি করে মেঘের মেসেজ দেখে ইমতিহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
– এতে হাসির কি আছে! হাসি থামা বলছি।
– সিরিয়াসলি ভাই, তুই কি ভেবে এরকম প্রপোজ করলি! তোকে আমার শালী কেনো এরকম প্রপোজ দেখে যে কেউ রিজেক্ট করবে।
– কোথায় দু’টো মিষ্টি লাইন বলে প্রপোজ করবি তানা করে উল্টো রাগিয়ে দিয়েছিস। শুধু পড়া লেখা করলে হয় না মাঝে মাঝে প্রেম টেমও করতে হয়!
– আর একটাও বেশি কথা বললে ভাবিকে ফোন করে বলে দেবো কি ভাবে মেয়েদের সাথে ফ্লাটিং করতি।
– কিসের মধ্যে কি টানছিস। ওই আধ পাগল এমনিতেই ছোট একটা রিয়েক্ট নিয়ে সুনামি বাধিঁয়ে দেয় আর এসব শুনলে ভুমিকম্প ঘটাবে।
– তবে যাই বলিস এই মেয়েদের ঠিক বুঝতে পারলাম না। এরা কি চায়!আর কি করে নিজেরাও জানেনা। মাঝখান থেকে আমার মতো মাসুম ছেলেদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায়।
তুমি আসবে বলে পর্ব ২৫
ইমতিহান গান শুরু করলো নিজেকে সে ভাবে ভিক্টোরিয়া পার যায় বলো কি করিয়া। মেঘ গেয়ে উঠলো ঘোরালো নাকে দঁড়ি দিয়া পারা যায় বলো কি করিয়া। এমন সময় মেঘের ফোনটা সশব্দে বেজে উঠলো, ফোন রিসিভ করতেই কিছু সময় পর মেঘের হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো।