তুমি আসবে বলে পর্ব ২৭
নুসাইবা ইভানা
আরহা আজ ঠিক টাইমে পৌঁছাতে পারবে না অলরেডি সাতটা পার হয়ে গেছে তবুও জ্যামে বসে আছে। সেই টেক্সটের কথা ভেবে মিটিমিটি হাসছে আরহা। রাতের ঢাকা দেখতে বেশ লাগে আলো আধারের খেলা। কেউ সফলতা নিয়ে হাসি মুখে নিজের গন্তব্যে পৌঁছে তো কেউ বিফল হয়ে ফের নতুন ভোরের অপেক্ষা করে নতুন ভাবে লড়াই করার।
কারো বিলাসী জীবন তো কারো রাস্তার ঝুপড়িতে দিন পার।অদ্ভুত এই শহরে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কারো সময় নেই অন্য কারো খোঁজ নেয়ার। এখানকার সম্পর্কগুলো বেশির ভাগ প্রয়োজনের প্রিয়জন। এই ইট পাথরের নগরীর মানুষগুলো হৃদয় কেমন ইট, পাথরের মতো। আরহার ভাবনার মাঝেই ফোনটা বেজে উঠলো রিসিভ করতে কেউ মিষ্টি কন্ঠে সুধালো, আর কতক্ষণ লাগবে? কন্ঠ শুনে বুঝতে বাকি নেই এটা প্রান্ত, আরহা উত্তর দিলো জ্যামে আটকে আছি সঠিক বলতে পারছি না।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নীলু বললো,আমি আগেই বলেছিলাম আজ তুই ঠিক টাইমে পৌঁছাতে পারবি না। হলো তো আমার কথাটা
– আপুই জিজুকে কল করো তো জিজু কখন আসবে জিজ্ঞেস করো।
– ফোন করব কেনো আসতে হলে এমনি আসবে। ডেকে আনবো কেনো! সারাদিন ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা হয়! ছোট ছোট আবদার না বলতেই পূরণ করতে পারলে তবেই না বুঝবো ভালোবাসে। দেখলিনা ছোট সাহেব কি সুন্দর এখনো মনে রেখেছে তোর হলুদ গোলাপ পছন্দ।
– মনে রেখেছে না ছাই আমি যে পোস্ট করেছিলাম, কোন এক ভোরে এক গুচ্ছ হলদে রাঙা গোলাপ হাতে তোমার আগমন হোক আমার হৃদয়ে। প্রভাতের প্রথম প্রহরে দেখা হোক তোমার সাথে। তুমি হলদে আভা মাঝে আমার হৃদয়ে ছড়িয়ে দাও। তোমার ভালোবাসায় ছড়িয়ে দাও আমার হৃদয়ে লাল হলদে আভা। সেটা দেখেই এসব করেছে।
– তবে যাই বলিস এই পোস্ট তুই একবছর আগে করেছিস!তার মানে ছোট সাহেব কত মনযোগ দিয়ে তোর প্রোফাইলের টাইমলাইন চেক করেছে।
– এতেই ইমপ্রেস হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরবো, নাচতে নাচতে বলবো ভালোবাসি।
– সেটা কখন বললাম শুধু বলতে চাইছিলাম
– কিছু বলতে হবে না। আমাকে যা কষ্ট দিয়েছে এবার বুঝুক, আমার জীবন তেজপাতা করে দিয়েছে তার জীবন আমি আম পাতা করে দেবো।
– কি যে বলিস তুই নিজেই হয়তো জানিস না।
– জানতে হবে না। আমাকে আগুনের মতো জ্বালিয়েছে এবার আমি মরিচের মতো পোড়াবো।
– তোদের কিছুই আমি বুঝিনা বাপু এই শ্রবণ মাস তো এই ভাদ্র মাস।
– এভাবে চলতে চলতেই একদিন বসন্ত আসবে।
মেঘ কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নিয়ে বলে সামরিরা সু*ই*সা*ই*ড করেছে, আমাদের এক্ষুনি যেতে হবে। সিটি হসপিটাল। অবস্থা নাকি ক্রিটিকাল। কথা না বাড়িয়ে দু’জনেই দ্রুত চলে আসলো সিটি হসপিটালে। আসতে আসতে প্রায় দু’ঘন্টা সময় লেগেছে। ততক্ষণে সামিরাকে কেবিনে সিফট করা হয়েছে। দ্রুত হসপিটালাইস করাতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি।
সামিরার মা’বললো,বাবা এমন কি হলো বলতো,হুট করে এতো বড় একটা স্টেপ নিলো! আমার একটা মাত্র মেয়ে ওর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাচঁবো?
– আন্টি আপনি নিজেকে সামলে নিন আমরা সামিরার সাথে কথা বলে দেখছি, ওরমতো শিক্ষিত সচেতন মেয়ে এরকম একটা কাজ করবে ভাবতে পারিনি। কোন সমস্যা হলে অবশ্য তার সমাধান আছে মৃ*ত্যু সব কিছুর সমাধান হতে পারে না। ইমতিহান কথা গুলো বললো,মেঘ নিশ্চুপ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, মেঘ জানতো সামিরা তাকে পছন্দ করে তবে এটা জানা ছিলো না এতোটা ভালোবাসে। মেঘর কাছে ভালোবাসার ব্যাখ্যাটা ভিন্ন,কেউ ভালোবাসলে তাকে সম্মান করতে হয়।
কারণ অনেকে হয়তো এই ভালোবাসাটাও পাচ্ছে না। আমি কাউকে ভালোবাসি তার মানে এটা নয় বিপরীত পাশের মানুষটাও আমাকে ভালোবাসবে। তবে তার ভালোবাবাসর প্রতি সম্মান থাকতে হবে। হয়তো বিনিময়ে তাকে ভালোবাসা দেয়া যাবেনা। তবে তার প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। মেঘের প্রচুর খারাপ লাগছে, মনে হচ্ছে সামিরাকে আরো আগেই তার বিয়ের ব্যপারে বলা উচিৎ ছিলো। তাহলে হয়তো আজ এইদিনটা দেখতে হতো না। আবার রাগ হচ্ছে সমািরার উপর একজন বোধসম্পন্ন মানুষ কি ভাবে সু*ই*সা*ই*ডের মতো জঘন্য কাজ করতে পারে!
বেশ খানিকক্ষণ আগেই জ্ঞান ফিরেছে সামিরার। সবাই একে,একে দেখা করে এসেছে। তবে মেঘ যায়নি দরজার বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে। ইমতিহান বললো, কিরে তুই দেখা করবি না!
– আমি দেখা তো করবো তবে নিজের রাগ সংযত করতে পারবো কিনা!এর জন্য যাচ্ছি না। ওর মতো প্রাপ্ত বয়স্ক, শিক্ষিত মেয়ের দ্বারা এরকম একটা কাজ আশা করিনি। এসব করে টিনেজাররা। যারা বাস্তবতা সম্পর্কে এখনো বুঝে না। আবেগের বশে এরকম ভুল তারা করে কিন্তু!
– যা দেখা করে আয়, আর হ্যঁ অবশ্য নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে যাবি ওর শারীরিক, মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে।
মেঘ ধীর পায়ে কেবিন প্রবেশ করলো, সামিরা মেঘকে দেখে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মেঘ একটা চেয়ার টেনে সামিরার বেডের পাশে বসলো, নিজের রাগকে সংযত করে শান্ত স্বরে বললো, এদিকে তাকা
সামিরা আলতো হাতে চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে তাকালো।
মেঘ শান্ত স্বরে বললো, ভালোবাসা নাকি বন্ধুত্ব কোন সম্পর্ক তোর কাছে বেশি ইম্পরট্যান্ট!
নাকি কোনটার মূল্য তোর কাছে নেই! চুপকরে না থেকে উত্তর দে?
সামিরা কিছুই বলছে না, সে নিজেই এখন বুঝতে পারছে কতবড় ভুল সে কি করতে যাচ্ছিলো
মেঘ বললো চুপ করে আছিস কেনো বল, জানি এই প্রশ্নের উত্তর তুই দিতে পারবি না। আচ্ছা একটা কথা
বলতো আমাকে, নিজের জীবনের কোন মূল্য নেই!
হতেই পারে যাকে আমি ভালোবাসি সেই মানুষটা আমাকে ভালোবাসেনা।
হতে পারে ভালোবাসার মানুষটার সাথে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে কোন কারনে, বা অকারণেই। তাই বলে সু*ই*সা*ই*ড করতে হবে ?
কই যখন নিজেদের বাবা,মা, একান্ত কাছের মানুষ মারা যায় তখন তো কেউ সুইসাইড করে না। পৃথিবীতে তাদের চেয়েও ভালোবাসার মানুষ আছে নাকি! তাহলে দু’দিনের পরিচয় আর ভালোবাসার জন্য নিজের জীবন শেষ করে দিতে হবে!
তবেই তুই নিজেকে প্রেমিকা বলে প্রমাণ করতে পারবি।তারচেয়ে ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসার জন্য অথবা তার ভালো থাকার জন্য তার থেকে দূরে যেয়ে তুই খুব সহজেই প্রমাণ করতে পারতি তুই সত্যি কারের একজন ভালোবাসার মানুষ।খুব ভাগ্য থাকলে না ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসার মানুষ হওয়া যায়।
আমি ভালোবাসি মানে ভালোবাসি। সে ভালোবাসলেও ভালোবাসি, না বাসলেও ভালোবাসি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তোর সাথে আমার সম্পর্কটা বন্ধুত্বের, তোর আমার প্রতি ফিলিংস থাকলেও আমার কোনদিন তোকে নিয়ে ফ্রেন্ডের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়নি। ভালোবাসাটা জোড় করে হয়না চাইলেই কাউকে ভালোবাসা যায় না।
সামিরা মৃদু স্বরে বললো, আসলে তার সাথে ভালোবাসাটানঅসাধার হয়,যাকে পাওয়াটা ভাগ্যে নেই। এই যে দেখ তোকে এতো করে চাওয়ার পরেও নিজের করে পাওয়া হলো না। অথচ কোন ভাগ্যবতী হয়তো তোকে না চাইতেও পেয়ে গেলো। আচ্ছা মেঘ আমি কেন সেই সৌভাগ্যবতী হলাম না!
– আমার তো মনে হচ্ছে এখন আমি দুর্ভাগা তোর এতো দামী ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারলাম না।
– আচ্ছা হইছে এতো তেল দিতে হবে না তেলের দাম বেড়ে গেছে তোর জন্য আরো বাড়বে। আচ্ছা সেই সৌভাগ্যবতী মেয়েটাকে দেখতে চাই।
– সুস্থ হয়ে ওঠ তাড়াতাড়ি তারপর তোকে নিয়ে যাবো তার কাছে।
– তবে মনে রাখিস আমার চেয়ে তোকে সে বেশি ভালোবাসতে পারবে না। মিলিয়ে নিস।
মেঘ মনে মনে বললো, সে হয়তো তোর যে হাজার গুন বেশি ভালোবাসে আমায়, নাহলে এতো অন্যায় করার পরেও এভাবে প্রথম অনুভবেই জড়িয়ে ধরতো না। তার চোখের পানির প্রতি ফোঁটায় তার ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।আমি হাজর জনম চেষ্টা করেও হয়তো তার মতো করে তাকে ভালোবাসতে পারবো না।
মেঘকে বেখেয়ালি দেখে সামিরা বললো, কিরে কি ভাবছিস!
– তেমন কিছু না আচ্ছা তুই রেস্ট নে আমি সকালে আবার আসবো।
– আমার প্রশ্নের উত্তর দিলিনা কিন্তু
– উত্তর দেয়ার কি আছে, সময় হলে তুই নিজেই দেখতে পারবি।
– তার মানে তোর মনে হয় আমার চেয়ে ওই মেয়ে তোকে বেশি ভালোবাসবে।
– ওই মেয়ে না, মিসেস মেঘ
– বিয়ে করলি কবে?
তুমি আসবে বলে পর্ব ২৬
– সুস্থ হয়, পরে জানতে পারবি।
মেঘ উঠে চলে যেতেই সামিরা চোখ বন্ধ করে জোড়ে নিশ্বাস নিলো।
মেঘ বাহিরে এসে ইমতিহানকে বললো, আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে বড্ড লেট হয়ে গেলো।