তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৮

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৮
নুসাইবা ইভানা

রাতের নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে কানে ভেসে আসছে দু’একটা দূরপাল্লার বাসের আওয়াজ দু’একটা নিশাচর পাখির কোলাহল। আরাহা প্রচন্ড মন খারাপ হলে এই চৌধুরী বাড়ির বাগানে এসে সময় কাটায়। যদিও শহরের মধ্যে এটা একটা ভূতের বাড়ির মতো গাছগুলো বেশ বড় বড় হয়ে জঙ্গলে পরিনত হয়েছে।

ভাঙাচোরা পোড়া বাড়ি সাথে পোকামাকড়ের আওয়াজ পরিবেশটাকে আরো বেশি ভুতের করে তুলেছে। সেদিকে কোন খেয়াল নেই। নিজের মতো কেঁদেই যাচ্ছে। খুব করে নিজেকে তৈরি করেছিলো যার জন্য সেই মানুষটাই আসলো না। তার মানে আমার প্রতি তার কোন গুরুত্ব নেই!

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভালোবাসা তো দূরে থাক। চোখের কাজল লেপটে এখন তাকেই এই ভূত নগরীর ভূত মনে হচ্ছে। বিড়বিড় করে বলছে, কেনো আসলেনা আপনি?এই ভালোবাসেন আমায়! মেঘলা আকাশ যে কোন সময় ঝুম বৃষ্টি নামমে। দারোয়ান এসে বলে গেলো, ম্যাম আপনি বাসায় চলে যান, মনে হচ্ছে প্রচুর বৃষ্টি নামবে।

– আপনি নিজের কাজ করুন কাকা আমাকে একটু একা থাকতে দিন।
মেঘ বের হয়ে কখন থেকে আরহাকে কল করেই যাচ্ছে, প্রতিবার রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে রিসিভ হচ্ছে না। অনেক গুলো টেক্সট করলো কোন কাজ হলো না। সেগুলোর কোন রিপ্লাই আসলো না। মেঘের রাগ হচ্ছে প্রচুর আরে একবার আমার কথাটা তো শুনবে। না কথা বললে বোঝাবো কি ভাবে আসলে কি হয়েছে!

মেঘের সেদিনের কথা মনে পরে গেলো যখন আরহা বারবার করে বলছিলো আমার কথাটা একবার শুনুন, একবার আমাকে বলতে দিন। কই সেদিন তো আমি তার কোন কথাই শুনিনি। আমি কি ভাবে এতো নিষ্ঠুর হতে পারলাম! নিজের ফোন বের করে ইমতিহানের কাছ থেকে নীলুর নাম্বার নিলো, নীলুকে কল করলো
রিং হচ্ছে।

নীলু আরহাকে খুঁজছে কন্সার্ট থেকে এসে কোথায় গেলো মেয়েটা ফোনটাও সাথে নেয়নি!কনসার্ট থেকে ফিরে নীলু ফ্রেশ হতে যায় সব কিছু স্বাভাবিক ছিলো, কিন্তু ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আরহা নেই। পুরো বাড়ি খুঁজেও কোথাও পেলো না। নিজের ফোনের টন শুনে সাথে সাথে রিসিভ করলো কোন ভুমিকা ছাড়াই মেঘ বললো, নীলু আমি মেঘ, আরহা কোথায়?

আজ আর নীলু নিজের রাগ সংযত করতে পারলো না
সেটা যেনে আপনার কি দরকার! কেনো ফিরে এসেছেন আমাদের জীবনে? আবার নতুন করে কি চাই আপনার! একবার কষ্ট দিয়ে মন ভরেনি তাই না আবার নতুন করে কষ্ট দিতে এসেছেন, প্লিজ প্লিজ দয়া করে আমাদের বাঁচতে দিন চলে যান আমাদের জীবন থেকে।

– কি হয়েছে এভাবে কেনো বলছো।
– তো কিভাবে বললে চলে যাবেন? আপনার পায়ে পরতে হবে। যা বলবেন তাই করবো তাও চলে যান নতুন করে বাচ্চা মেয়েটার জীবনে কোন ঝড় বয়ে আনবেন না। বলেই নীলু ফোনটা কেটে দিলো।
ততক্ষণে ঝুম বৃষ্টি নেমে গেছে আরহা এখনো একি ভাবে বসে আছে। কোন হেলদোল নেই।
মেঘের হৃদয়ে এই মূহুর্তে কি অবস্থা তা হয়তো কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়। মেঘের ফোনটা সশব্দে বেজে উঠলো মেঘ রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশের কথা শুনে শুধু বললো আসছি!

আরহা বৃষ্টিতে ভিজে একাকার তবু একি ভাবে বসে আছে দৃষ্টি তার মাটির দিকে। হয়তো বলতে চাইছে আমাকে তোমার নিচে নিয়ে নাও এখানে আমার দম আটকে আসছে। আর পারছি না। আগামীকাল আরহার মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী কি এক কপাল আমার চাইলেো মায়ের কবর দেখতে পারবো না। এবার চিৎকার করে বললো,আমাকে কেনো নিয়ে গেলেনা আম্মু। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে নিজের পাশে কারো ছায়া দেখতে পেলো।

এই মূহুর্তে ভয় বলতে আরহার কিছু নেই, অন্য সময় হলে হয়তো ভূত, ভূত বলে, চিৎকার করতো। বসা অবস্থায় পেছন ফিরে দেখলো বৃষ্টি কারনে ঠিক ভাবে তাকাতে পারছেনা।হালকা আলো আসছে গেটের কাছের লাইট থেকে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে মানুষটাকে। আধো আলোতেও সমানে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে চিন্তে অসুবিধা হয়নি। আরহা কোনমতে উঠে হাঁটা শুরু করলো, ভেজা শাড়ী লেপ্টে আছে শরীরে।

দু’কদম হাঁটতেই মেঘ আরহাকে একটানে নিজের বুকের উপর নিয়ে আসলো, এক হাত আরহার কোমরে আরহা মৃদু কেঁপে উঠলো। মেঘ কাতর স্বরে বললো, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? আরহা উত্তর না দিয়ে মেঘের কাছ থেকে সরে আসতে চাইলো। তবে মেঘের শক্তির কাছে পেরে উঠলো না।

মেঘ হাত দিয়ে আরহার কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে নিজের সাথে আর একটু মিশিয়ে নিয়ে বললো বলো, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? আরহা চুপ। মেঘ আরহাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো বাড়ির দিকে। আরহা অস্পষ্ট স্বরে বললো, কোথায় যাচ্ছেন। মেঘ কোন কথার উত্তর না দিয়ে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে। দু’জনের মাঝেই পিনপতন নীরবতা। গাড়ি থামিয়ে আবার কোলে তুলে নিলো আরহাকে।

– কি হচ্ছেটা কি! ছাড়ুন আমাকে আমি বাসায় যাবো
– এখন থেকে এটাই তোমার বাসা যত রাগ, অভিমান, অভিযোগ আছে এখানে থেকেই করবে।
আরহাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে ড্রয়ারে থেকে একটা ট্রাউজার আর টিশার্ট দিয়ে বললো, যাও চেঞ্জ করে আসো!

আরহা ওঠে এসে মেঘের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, আমি কিছুতেই আপানার সাথে থাকবোনা,আমি এক্ষুনি চলে যাবো।
মেঘ আরহা গালে হাত রেখে বলে, তুমি চাইলে আজ আমাকে মে*রে ফেলতে পারো, বা অন্য যে কোন শাস্তি দিতে পারো তবুও তোমাকে ছাড়বো না। কথাটা শেষ করেই জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। দুজনেই ভেজা। আরহার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বেড়ে গেছে কয়েকগুন। সেভাবেই ধরে রাখলো খানিকক্ষণ।আলতো করে কপালে চুমু দিয়ে বলে, তুমি নিজে চেঞ্জ না করলে আমি করিয়ে দেই বিবিজান। মেঘের কথা শুনে এক ঝটকায় মেঘের থেকে দূরে সরে আসলো।
আরহা ভেবে পায়না কে বলবে এই ভদ্র চেহারার আড়ালে এমন একটা অভদ্র মানুষ রয়েছে।

– এভাবে তাকিয়ে না থেকে চেঞ্জ করে আসো। আর না হলে….
আরহা কোন কথা না বলে ট্রাউজার আর টিশার্ট নিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
মেঘ দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে কাবার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে নিজেও চেঞ্জ করে নিলো। কিচেনে যেয়ে পাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসলো। সাথে দু’টো ব্লাক কফি। রুমে এসে আরহাকে কোথাও দেখছেনা।

খাবারের ট্রে টেবিলে রেখে, আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো, ওয়াশরুমের দরজাও তো খোলা, খুঁজতে খুঁজতে চোখ গেলো জানালার পর্দার দিকে, মনে হচ্ছে পর্দার পেছনে কেউ আছে। মেঘ একটু রসিকতা করে বললো, তোমাকে না মানে আপনাকে কি একটু বেশি হট লাগছে! ভাবছেন আপনাকে দেখে যদি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারি?

মেঘের লাগামহীন কথা শুনে আরহা লজ্জাবতী পাতার ন্যায় নুয়ে গেলো।
মেঘ ধীরে ধীরে আরহার সামনে যেয়ে দাঁড়ালো, দুজনের মাঝে পার্থক্য শুধু পর্দা। মেঘ হাত বাড়াতেই আরহা সরে আসতে চাইলো তবে পারলো না। দু’পাশে হাত রেখে মেঘ বললো,ম্যাডাম সাতাশ বছর ধরে নিজেকে কন্ট্রোল করছি লন্ডনের মতো একটা দেশে থেকেও। আর তোমার মতো চড়ুই পাখিকে দেখে কন্ট্রোল লেস হয়ে যাবো!

আরহার মেজাজটাই হট হয়ে গেলো। পর্দার আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে বলে, কি কখন থেকে কন্ট্রোল কন্ট্রোল করছেন! মাথায় আর কিছু আসে না নাকি। হাতির মতো শরীর বানিয়েছেন আমার এইটুকু শরীরে হাতির পোশাকে কেমন বিদঘুটে দেখাচ্ছে।
মেঘ আরহার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো ভাবে দেখে হাসতে হাসতে বলে, দারুণ লাগছে তো আমার বউটাকে। মনে হচ্ছে চুরি করে কারো ড্রেস পরেছে।

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৭

আরহা কথার উত্তর না দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।
মেঘ আরহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, আপনাকে আমি আপনি বলবো নাকি তুমি!
আরহা বললো, আপনার কি মনে হয় এতোকিছুর পরেও আমি আপনার সাথে থাকবো?
মেঘ আরহাকে ছেড়ে দিয়ে বলে, তুমি আমার কাছ থেকে এখনো মুক্তি চাও?

তুমি আসবে বলে পর্ব ২৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.