তুমি আসবে বলে পর্ব ২৯
নুসাইবা ইভানা
আরহার দু’বাহুতে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে মেঘ আকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহার উত্তরের আশায়।
আরহার আজ নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়নি সেও তাকিয়ে আছে মেঘের চোখের দিকে, কথা হচ্ছে তবে চেখে চোখে যেনো হাজার বছরের জমানো কথা। আরহার দৃষ্টির কাছে হার মানতে হচ্ছে মেঘের।
এচোখের গভীরতা অনেক, আরহা সরে আসতে চাইলে মেঘ আরহাকে নিজের আরো কাছে টেনে নেয় ঝুম বৃষ্টির পরে পরিবেশ যেমন শীতল এই মূহূর্তে মেঘের হৃদয়ে তার যেয়েও শীতলতা বয়ে গেলে।রাতের আধারে দু’জন মানব মানবীর নিশ্বাসের শব্দ, দু’জনের হৃদযন্ত্রের ধুকপুকানি স্পষ্ট শুনতে পারছে দু’জনেই নীরব নিশ্চুপ। নীরবতা ভেঙ মেঘ কাতর স্বরে বললো, আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না! শুধু একবারে জন্য এই শুন্য হৃদয়টাকে পূর্ণ করা যায় না! কথা দিচ্ছি আমি নিরাশ করবো না।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হুট করে মেঘের এতো কাছে আশা মেঘের নিশ্বাস তার নিশ্বাস মিশে যাওয়া সব মিলে আরহার হৃদয়ের অবস্থা মেসামল। তবে এতো এতো অনূকূল পরিস্থিতি পার করতে করতে আরহার হৃদয় নারকেলের মতো হয়ে গেছে।
উপরে শক্ত আবরণে ঢাকা পরে গেছে ভিতরের কোমল হৃদয়।
আরহার চোখের কোনের লুকানো জলটুকু সযত্নে মুছে দিয়ে গালে হাত রাখলো মেঘ, আরহা কিছুটা কেঁপে উঠলে এই শীতল স্পর্শে। মেঘ আবার বললো,চুপ করে থেকে না হৈমন্তিকা তোমার নীরবতা আমার হৃদয়ে বিরহের ঝড় তুলছে! এই ভঙ্গনো হৃদয়ের কথা ভেবে অন্তত কিছু বলো,
আরহা মুখ খুলে অভিমানী কন্ঠে বললো,
– ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন!
– মানছি ভুল করেছি
– অবিশ্বাস করেছিলেন!
– এজীবনে দ্বিতীয়বার আর হবে না
– আঘাত করে ছিলেন!
– ভালোবাসা দিয়ে সারিয়ে তুলবো
আপনার জন্য যতটা মুখে বলা সহজ আমার জন্য মেনে নেয়া তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি কষ্টকর
আচ্ছা তখন কোথায় ছিলেন? যখন অন্যের বাসায় আশ্রিতা ছিলাম!
যখন প্রতিনিয়ত নিজের মানুষ হারোনাোর যন্ত্রণায় দিনের পর দিন কাতরাচ্ছিলাম!
যখন ভুল বুঝে আঘাত করেছিলেন! কোন কোন ভুলের মাসুল দিবেন।
মেঘের কাছ থেকে একটু সরে এসে ডান হাতের স্লিভটা একটু উপরে তুলে বলে সব কিছু বাদ দিলাম আপনি আগে আমার এই ক্ষতচিহ্ন দূর করে দিন!
হৃদয়ের আঘাতের কথা বাদ দিলাম শুধু শরীরের এই আঘাত সারিয়ে দিন। যেটা প্রতিনিয়ত আমাকে মনে করিয়ে দেয় আপনার নির্মমতার কথা।
মেঘের দৃষ্টি নত ভাষা নেই এই প্রশ্নের উত্তরের।
আরহা আবার বললো সে সব না হয় বাদ দিলাম, আপনি শুধু আমার চোখের পানি গুলো ফেরত দিন!আমার নির্ঘুম রাত গুলোতে শান্তির ঘুম এনে দিন!
মেঘ কোন কথা না বল আরহাকে একবারে আষ্টেপৃষ্টে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো। মেঘের চোখের জল আরহার কাঁধে পরছে তবে এ মূহুর্তে আরহা অনূভুতি শুন্য।
মেঘ কাতর স্বরে বললো দয়া করে আর কিছু বলো না আমি সহ্য করতে পারছিনা। তোমার মুখের প্রতিটি শব্দ আমার হৃদয় আঘাত করছে। মেঘ কাঁদছে দীর্ঘ চার বছর পর মেঘের চোখে পানি! ছেলেরা সহজে কাঁদে না কিন্তু আরহার কথাগুলো এতোটাই তীক্ষ্ণ যে মেঘের হৃদয়কে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছে।
কেউ একজন ঠিক বলেছিলো, কথা যদিও তরবারী নয়! তবে তরবারির চেয়েও আঘাত দায়ক!
আরহা আহত কন্ঠে বললো, ছাড়ুন আমাকে যখন ঠিক এইভাবেই কাউকে জড়িয়ে ধরে কান্না করার প্রয়োজন ছিলো তখন কোথায় ছিলেন?
যখন কারো কাঁধে এই ভাবেই অশ্রু বিসর্জন দেয়ার দরাকার ছিলো তখন কোথায় ছিলেন?
আমার আর কাউকে প্রয়োজন নেইে!আমি একা বাঁচতে শিখে গেছি
– আর বলোনা একটু শান্ত হও। তুমি একবার আমাকে অনুভব করো শুধু একবার আমার হৃদয়ের আকুলতা বোঝার চেষ্টা করো শুধু এক মূহুর্তের জন্য নিজের অভিমানকে সাইডে রেখে আমার হৃদয়ে কান পেতে আহাজারি শোনো।আমি জানি তুমি ঠিক বুঝতে পারবে আমাকে।
শোন পাগলি ভুল বুঝে দূরে সরে থাকা যায়! তবে সে ভুল ভেঙ্গে গেল আর এক মূহুর্তের জন্য ভালোবাসার মানুষটিকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় না।
আরহা মেঘের কলার ধরে বলে এখন এসেছেন কাছে টেনে নিতে!
“আর কিসের ভালোবাসা? কোন ভালোবাসার কথা আপনি বলছেন! যে ভালোবাসা সামান্য হাওয়ায় উবে যায় সেটা ভালোবাসা হতেই পারে না।
-মেঘ নিম্ন স্বরে বললো, আমিও কম কষ্ট পাইনি
– মেঘের কলার আরএকটু শক্ত করে ধরে বলে কষ্ট কাকে বলে আপনি জানেন?
এই যে আমাকে দেখুন জন্মের পর থেকে নিজের বাবাকে দেখিনি, বুঝ হওয়ার পর থেকে নিজের মাকে ধুঁকে ধুঁকে ম*র*তে দেখেছি, মায়ের মৃত্যুর পর প্রতিটাদিন ছিলো আমার জন্য যন্ত্রণা দায়ক।
এই যে শরীর দেখতে পাচ্ছেন এই শরীরে প্রতিটি কোনায় কোনায় রয়েছে আঘাতের চিহ্ন মন বলতে তো কিছু ছিলোই না।
আপনার মা এসে নতুন জীবন দিয়েছিলো ভেবেছিলাম এবার হয়তো সব কষ্ট শেষ।
কিন্তু না আমার হৃদয়ে আঘাত করা বাকি ছিলো সেটাও আপনি পূর্ণ করে দিয়েছেন!
আর আমাকে কষ্টের কথা বলতে এসেছেন!
মেঘ আরহার হাতের উপর হাত রাখলো কোন শব্দে কোন ভাষায় আরহাকে সান্তনা দিবে সব ভাষাই যে অজানা। অসহায় দৃষ্টিতে আরহার দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ বুঝতে পারছে আরহার শরীরের টেম্পারেচার বেড়ে গেছে আরহার হয়তো জ্বর আসছে। মেঘ আরহার মাথায় চুমু খেয়ে আরহাকে কোলে করে নিয়ে বেডের পাশে বসলো, দু’জনের চোখে পানি, এতো কথা বলে আরহা শ্বাস বেড়ে গেছে তবুও আরহা আর কিছু বলতে চাইলো।
আরহা কিছু বলবে তার আগেই মেঘ আরহার ঠোঁট আঙুল ছুয়ে আদুরে কন্ঠে বলে, একদম চুপটি করে লক্ষী বউয়ের মতো বসে থাকো আমার কোলে, আমি নিজ হাতে তোমাকে খাইয়ে দেবো।
জ্বর আসছে মেডিসিন নিতে হবে তো নাকি! আরহা অবিশ্বাস নয়নে তাকিয়ে আছে, এমন স্বপ্ন সে কত শত বার দেখেছে। আচ্ছা এটাও স্বপ্ন নয়তো সকাল হলেই ভেঙ্গে যাবে নাতো! এতো কথা বলে আহত বাঘিনীর মতো চুপটি করে বসে আছে মেঘের কোলে।
টেবিলের ধোয়া ওটা কফিটা আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়েগেছে। ঠিক এখন যে ভাবে আরহা শান্ত হয়ে বসে আছে মেঘের কোলে।
নীলু আর ইমতিহান বসে আছে আরহাদের বাসায় এতো সময় ধরে সব কিছু খুলে বললো ইমতিহানকে
আরহাকে খুঁজতে যেয়ে ইমতিহানের সাথে দেখা হয় রাস্তায়। মেঘ কোন এক ফাঁকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলো আরহা তার সাথে আছে।
ইমতিহানের কাঁধে মাথা রেখে নীলু বললো,আচ্ছা আমি এক সমান্য কাজের লোকের মেয়ে জানার পর তোমার ফ্যামেলির মানুষ আমায় মেনে নেবে তো! ছেড়ে চলে যাবে না তুমি আমাকে?
– একদম বাজে কথা বলবে না, তুমি আমার কাছে অসামান্য। তোমার পরিচয় দেখে তোমাকে ভালোবাসিনি তোমার সুন্দর মন আর বোকামি গুলোগে ভালোবেসেছি। তাই আমার কাছে তুমি সবচেয়ে দামী। না না না তুমি আমার কাছে অমূল্য
– কিহহহহ আমার কোন মূল্য নেই! জানতাম তুমি ঠিক আমাকে ছেড়ে যাবে।
– এই এসব আবল তাবল কি বলছো। অমূল্য মানে, পৃথিবীর কোন কিছুই নেই যেটা দিয়ে তোমার মূল্য নির্ধারণ করা যায়।
– ওহ এবার বুঝতে পারছি
– আর বুঝে কি করবে আমার ফিলিংসের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো।
নীলু দু’হাত দিয়ে ইমতিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, চলো ফিলিংসের একটা বাজাই।
– এই কখনো বদলে যাবে না তো
– মানে
– না মানে সবসময় আমার ফিলিংসের বারোটা বাজিয়ে এইভাবে আবার একটা বাজবে!
– না বিয়ের পর তোমার ফিলিংসের ৩টা বাজাবো
ইমতিহান নীলুর কপালে চুমু খেয়ে বলে ভালোবাসি পাগলি!
নীলু হেসে বলে আমি তো বাসি না।
তুমি আসবে বলে পর্ব ২৮
– কিহহহহহহহহহহহ
– না মানে আমি তাজাবাসি
-এটা আবার কেমন কথা?
– এটা হলো নীলিমা কথা
ইমতিহান নীলুর নাক টেনে বললো, দুষ্ট বউ আমার
তুমুল বৃষ্টি শেষ আকাশের মেঘগুলো ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। আচ্ছা ঠিক এভাবে কি আরহার হৃদয় থেকে অভিমানের মেঘ সরে ভালোবাসার সূর্য উদিত হবে?