তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ২

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ২
নুসাইবা ইভানা

মেঘ তার মমকে বললো এভাবে মুখ দেখে যদি সমস্যার সমাধান করতে পারো তবে তাকিয়ে থাকো আর নয়তো বলো সমস্যা কোথায় বসে একটা সমাধান বের করি!
মিসেস মারিয়া বললেন, গ্রামের মোরোলরা বলছেন, শুধু বিয়ে হলেই হবে না।তোদের দুজনকে একসাথে এক রুমে এক রাতের জন্য থাকতে হবে।

মেঘ হেসে বললো ব্যস এটুকু কোন সমস্যা নেই তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো বাকিটা আমি সামলে নেবো।
শর্ত মেনেই বিয়ে হয়ে যায়। আরহা ছিল নিরব দর্শক তার কোন কিছুই বলার ছিলোনা একে তো মাত্র কয়েকদিন আগেই মাকে হারিয়েছে তার উপর মামির অত্যাচার এই বয়সেই তার জীবনটা বিষাক্ত হয়ে উঠেছে

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিসেস মারিয়া আর গ্রামের কিছু মহিলা মিলে আরহাকে হালকা সাজিয়ে একটা রুমে বসিয়ে রেখে আসলো।সবাই বেরিয়ে গেলে মিসেস মারিয়া আরহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন মা একটু ধৈর্য ধর সব ঠিক হয়ে যাবে আমি তোকে কথা দিচ্ছি তোর জীবনের সব আধার দূর করে এক নতুন ভোর এনে দেবো। কথাটা বলে আরহার কপালে চুমু খেয়ে চলে গেলেন। আরহা ফ্যলফ্যল করে তাকিয়ে রইল। তার মা তাকে মিসেস মারিয়া অনেক গল্প শুনিয়েছিল কিন্তু কোনদিন মিসেস মারিয়াকে দেখেনি আরহা।

আরহা খুব করে ইচ্ছে করছে কাউকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে আমার মাকে এনে দাও মা গান না শোনালে আমার ঘুম আসেনা। কিন্তু আপসোস আরহার আপন বলতে কেউ নেই এসব ভেবে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে আরহা।
মেঘ রুমে ডুকতেই দেখতে পায় একটা নিষ্পাপ চেহারা তবে এই মিষ্টি চেহারাটা কেমন মলিন হয়ে আছে। খাটের মাঝে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে পরনের শাড়ি কিছুটা এলেমেলো হয়ে আছে আরহা

মেঘ নিঃশব্দে বাচ্চা মেয়েটির(আরহা)পাশে বসে মেয়েটির গায়ে সুন্দর করে কাঁথা জড়িয়ে দেয়
আরহার নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে ভাবে তোমার জীবনে কত বড় ঝড় আসলো তুমি হয়তো তা বুঝতে ও পারছো না। তবে চিন্তা করো না তুমি আমার ওয়াইফ না আমার মায়ের মেয়ের পরিচয়ে বড় হবে।
বিছানা থেকে একটা কাঁথা আর বালিশ নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে মেঘ ভাবে কেনো যে বাংলাদেশ আসতে গেলাম
না আমি বাংলাদেশ আসতাম না এসব সাফার করতে হতো!

মাঝ রাতে কারো কান্নার শব্দে মেঘের ঘুম ভেঙ্গে যায়। এমনিতেই ফ্লোরে শোয়ার দরুন তার ঘুম আসছিলো না। যেই না চোখটা লেগে এসেছে ওমনি কান্নার শব্দ ভেসে আসে মেঘের কানে। বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে। বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে আরহা। মেঘ বিছানার পাশে আসতেই শুনতে পায় মেয়েটি বলছে আমাকে মে*রো না, আমাকে মে’রো না

মেঘ নিজেরর ফোনটা বের করে। মিসেস মমতা চৌধুরীকে কল করে। দু তিন বার রিং হওয়ার পরে রিসিভ হয়।
মেঘ অস্থির কন্ঠে বলে মম তাড়াতাড়ি এদিকটাতে আসো
মিসেস মমতা চৌধুরী আসতেই মেঘ বলে, দেখোতো মেয়েটার শরিরে বোধহয় জ্বর এসেছে!

– তুমি একটা বাটিতে করে পানি নিয়ে এসো আমি দেখছি। সিসেস মমতা চৌধুরী আরহার মাথা তার কোলে নিয়ে, পরম যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে এই যে চোখ খুলে দেখো “মা” আমি এসে পরেছি কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোর? আমাকে বল?
– মম পানি। মেঘের হাত থেকে পানির বাটিটা নিয়ে নিজের ওড়নার এক কোনা ভিজিয়ে আরহার মাথায় জল পট্টি দিচ্ছে। এতোটা যত্নে তিনি কাজটি করছেন মনে হচ্ছে তার মেয়ে।
মেঘকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে, মিসেস মমতা বেগম বললেন, মেঘ,তোমার শারমিন আন্টির কথা মনে আছে?

– যতদিন বেঁচে আছি ততদিন মামনিকে ভুলবো না মম
তবে মামুনি কোথায় হারিয়ে গেলেন!
– মিসেস মারিয়া কিছু বলবেন তার আগেই আরহা জ্ঞান হারলো। মিসেস মারিয়া বিচলিত কন্ঠে বললেন,মেঘ দ্রুত আরহাকে হসপিটালে নিতে হবে তুমি আরহাকে কোলে তুলি নিয়ে এসো। আমি তোমার বাবাকে ডেকে আনছি।

“মেঘ দাঁড়িয়ে আছে জীবনে প্রথম কোন মেয়েকে স্পর্শ করতে হবে! ভাবতেই বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটা করছে। একবার হাত বাড়াচ্ছে তো আবার ফিরিয়ে আনছে। বার কয়েক এভাবেই করলো ধরছে তো ধরছেনা। নিজের প্রতি নিজে বিরক্ত হচ্ছে। শেষ বারের মতো চোখ বন্ধ করো লম্বা শ্বাস টেনে কোলে তুলেই নিলো। মেঘের চেহারায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট যেনো কেউ থাকে বেঁধে পেটাচ্ছে। একবারের জন্য তাকালো না আরহার দিকে। মনে মনে শুধু ভাবলো আসলেই এই মেয়ের তের বছর বয়স তো নাকি এটাও মিথ্যে কথা।এতো হালকা, যেনো মনে হচ্ছে পাট কাঠি।

গাড়ির পেছনের সিটে মিসেস মারিয়ার সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে আরহাকে। নিজে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভিং করছে লোকেশন ট্র্যাকিং করে যাচ্ছে হসপিটালে।পাহাড়ি এলাকা রাস্তা গুলো আঁকা বাঁকা তবু যথেষ্ট দ্রুত ড্রাইভিং করছে। যদিও কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে তবুও সামলে নিচ্ছে।
মিসেস মারিয়ার চেহার চিন্তার ছাপ স্পষ্ট, চোখের কোনেও জল জমা হয়েছে যে কোন সময় বৃষ্টির ধারার মতো গাল বেয়ে পড়বে।

হসপিটালে আসতেই মেঘ আর কিছু না ভেবে আরহাকে কোলে তুলে নিলো। দ্রুত পায়ে ইমারজেন্সি বিভাগে যেয়ে কথা বলে আরহাকে ভর্তি করালো এতো রাতে ডাক্তার পাওয়াটা কঠিন নাইট সিফটে যারা আছেন দু’ একজন ছাড়া বাকিরা হয়তো ঘুমোচ্ছে

একজন ডক্টর আরহা কে দেখছে সারা শরীরে কালশিটে দাগ গুলো দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এসব কিসের দাগ? দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে আঘাত করেছে, এতোটুকু মেয়েকে কেউ এভাবে মা*রে?
মেঘ নরম স্বরে বললো সেই বিষয়ে পরেও কথা বলা যাবে আগে চিকিৎসা করা জরুরি।

– তুমি বললেই হবে এতোটুকু মেয়ে এমন বউ সাজে কেনো? আপনারা কি মেয়েটিকে জোড় করে বিয়ে দিচ্ছেন?
– মেঘ রেগে ডক্টরের কলার ধরে বললো,তোকে বলেছি চিকিৎসা করতে গোয়েন্দা হতে বলিনি তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু কর! নাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।

মিসেস মারিয়া এসে মেঘকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন, আস্তে করে বললেন এটা লন্ডন না বাংলাদেশ বুঝতে পারছো তোমার এমন ব্যাবহারের ফল কত খারাপ হতে পারে! চুপচাপ ডাক্তারকে সরি বলে বাহিরে অপেক্ষা করো।
সরি বলার মতো ছেলে “মেঘ” না তবুই একপলক আরহার দিকে তাকিয়ে কোনমতে ডাক্তারকে সরি বলে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।

মোর্শেস আফরোজ ডাক্তারকে এসে সরি বললেন, ডাক্তার আরহাকে দেখে নার্সকে বললেন ইনজেকশন পুশ করতে কিছু ঔষধ লিখে দিলেন আর বললেন,মেয়েটির যত্ন নিতে হবে। আমি ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছে সকালের মধ্যে জ্বর ভালো হয়ে যাবে।
ডাক্তার চলে যেতেই মিসেস মারিয়া আরহার পাশে বসে আরহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। চোখের অবাধ্য অশ্রু কণাগুলো গড়িয়ে পরছে।

এমন সময় মেঘ কেবিনে প্রবেশ করলো কোন কথা না বলে আরহাকে কোলে তুলে নিলো। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলল, যদি তোমরা যেতে চাও আসতে পারো? আর থাকার ইচ্ছে হলে থাকতেও পারো। তবে আমি আর এ অনঞ্চলে এক মূহুর্তের জন্যও থাকবো না। কথা শেষ করেই লম্বা লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে গেলো।

মেঘের বাবা, মা দুজনেই মেঘের পিছু পিছু আসলো। মোর্শেদ আফরোজ হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে বেরিয়ে আসলেন। বরাবরই তার ছেলেটা একটু রগচটা স্বাভাবের।
আরহাকে পিছনের সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং করছে, মিররে বার কয়েক নিজের মমের সাথে চোখাচোখি হয়েছে।
যদিও কেউ কোন কথা বলেনি পিন ড্রপ নিরবতা।

ঢাকা আসতে আসতে ভোর হয়ে গেছে। আরহা তখনো গভীর ঘুমে, মেঘ তাকে কোলে তুলে নিতেই কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো। মেঘ খেয়াল করলো শরীরে এখন জ্বর নেই। মেঘ কোনমতে আরহাকে সোফায় রেখে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
অনেক বছর পর নিজের বাড়িতে এসে চোখের জল আটকাতে পারছেন না মিসেস মারিয়া।কতশত স্মৃতি ভেসে উঠছে চোখের সামনে।

তুমি আসবে বলে পর্ব ১

এতো বছর এ বাসা খালি ছিলো সার্ভেন্ট আর কেয়ার টেকারা দেখা শুনো করছে।
মিসেস মারিয়া সোফায় বসে আরহার মাথাটা তার কোলে নিয়ে নিলেন। অপেক্ষা করছেন আরহার জাগ্রত হওয়ার।

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.