তুমি আসবে বলে পর্ব ৩০
নুসাইবা ইভানা
মেঘের বুকে গুটিশুটি হয়ে বাচ্চাদের মতো মেঘের সাথে মিশে ঘুমিয়ে আছে আরহা।
আগমন ঘটেছে এক নতুন প্রভাতের, আগামীকাল রাতে যে বৃষ্টি হয়েছে তা বুঝা দায়। জানালার পর্দার ফাঁক ফোকর দিয়ে প্রভাতের সোনালী আলো চোখে পরতেই পিটপিট করে চোখ খুললো আরহা, পাশে তাকিয়ে মেঘকে দেখেই হৃদযন্ত্রে তবলা বাজতে শুরু করলো। আরহা ধীরে ধীরে সরে আসলো, উঠে জানালার পর্দা ঠিক করে দিলো যাতে মেঘের চোখে আলো না পরে।
ফ্রেশ হয়ে নিজের শাড়ী পরে বের হলো। মেঘ তখনো গভীর ঘুমে। পা টিপে টিপে মেঘের কাছে এসে কিছু সময় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, আলতো করে মেঘের কপালে চুমু খেলো, মেঘের ওয়ালেট থেকে কিছু টাকা বের করে নিলো। দরজা খুলে বের হওয়ার আগে এবার মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার থেকে দূরে আমি নিজেই থাকতে পারবো না! তবে আর একটু দৌড়ে ঝাপ করো, আর একটু ব্যাকুলতা অনুভব করো, আর একটু খুঁজে ফেরো আমাকে।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একটা ফ্লাইংকিস দিয়ে দরজা আস্তে করে বন্ধ করে চলে গেলো। নিচে এসে মনে পরলো এভাবে বেড় হলে তো সবাই তাকে ঘিরে ধরবে। আগামীকাল তো এই ড্রেসে কনসার্ট করেছে। কি করা যায়! নিজের ফেনটাও তো ফেলে এসেছি, আসেপাশে তাকিয়ে তেমন কিছুই চোখে পরলো না। গুটিগুটি পায়ে আবার চলে আসলো উপরে এবার আর মেঘের রুমে যাওয়ার সাহস করলো না। তার পাশের রুমে যেয়ে খুঁজতে লাগলো নাহ মেয়েলি কোন ড্রেস নেই।
হতাশ হয়ে যখন বের হয়ে আসবে তখন চোখ পরলো একটা শপিং ব্যাগের দিকে হাত বাড়িয়ে সেটা তুলে নিতেই খুশি হয়ে গেলো। ওয়াও একটা গাউন খুব সুন্দর। আরহা কাল বিলম্ব না করে দ্রুত ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে পরলো। একটা রিকশা ডেকে উঠে বসলো, সকালের ঢাকা শহর ভালোই লাগে আরহার, ঘুম থেকে উঠেই কর্ম ব্যস্ত মানুষ গুলো নিজেদের কাজে লেগে পরে। গ্রামের মতো মোটেই ঢাকা শহরের সকালটা নীরব হয়না এখানে আলো ফোটার আগেই গাড়ীর হর্ণ, মানুষের কোলাহল শুরু হতে থাকে।
কাল রাতের কথা মনে পরতেই খিলখিল করে হেসে উঠলো আরহা। মনে মনে কাল রাতের কথা ভাবতে লাগলো….
মেঘ আরহাকে পাস্তা খাওয়ানোর ট্রাই করছে, আরহা নাক কুঁচকে বলে, আমি খাবো না এটা
– তাহলে কি ভাবে বেবিডল
– বিরিয়ানিহহহহহহহহহহহ
– আস্তে বললেও আমি শুনবো, তবে এই মধ্য রাতে বিরিয়ানি কোথায় পাবো?
– আরহা ইচ্ছে করে মেঘকে বিরক্ত করার জন্য হাত পা ছুড়ে কান্না জুড়ে দিলো, আমি বিরিয়ানি খাবো আমার বিরিয়ানি চাই।
– আচ্ছা আমাকে একটু সময় দাও দেখি ম্যানেজ করতে পারি কি না।
– আরহাকে বেডে শুয়ে দিয়ে নিচে নেমে আসলো একবার ভাবলো অর্ডার করবে আবার ভাবলো নিজেই রান্না করি। কি করবে না করবে এটা নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে ফুড পান্ড্যার মিড নাইট সার্ভিসের কথা মনে পরে গেলো, সাথে সাথে অর্ডার দিলো। যাক আজকে ফুডপান্ডা বাঁচিয়ে দিলো। ৩০ মিনিটে বিরিয়ানি নিয়ে রুমে এসে দেখে আরহা ঘুমিয়ে আছে আরহাকে দেখতেএকদম কিউট পরীর মতো লাগছে, মেঘ মনে মনে ভাবছে আচ্ছা ওকি সবার থেকে একটু বেশি সুন্দর?
আর একটু কাছে এসে খাবারের প্লেটটা রেখে দিয়ে আরহার পাশে আধ শোয়া হয়ে বসে তাকিয়ে আছে আরহার দিকে, মনে মনে বলছে, তোমার নাম তো বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিলো, তবে আরহা নামটাও বেশ মানিয়েছে। আরহার কপালে চুমু দিয়ে আরহার মাথা নিজের বুকে নিয়ে আরহাকে দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পরলো নিজেরো জানানেই।
আরহা সজাগ ছিলো,মেঘের আওয়াজ পেয়ে ঘুমের ভান ধরে। তবে বেশি ক্ষন ঘুমকে আটকে রাখতে পারেনি! ঘুমের অভিনয় করতে করতে সত্যি ঘুমিয়ে পরে।
আরহা বাসায় আসতে আসতে প্রায় চল্লিশ মিনিট সময় লেগেছে। বাসায় এসে কলিং বলে বাজাতেই সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলো দিলো। আরহা বাসায় ডুকেই দেখলো নীলু আর ইমিতান সোফায় একসাথে
বোঝাই যাচ্ছে দু’জনেই অপ্রস্তুত হয়ে পরেছে।
আরে রিলাক্স, এতো লজ্জা পেতে হবে না। আমিই তো জিজু, তোমার এক মাত্র শালিকা সো লজ্জা পাওয়ার কোন কারণ নেই।
– আরে লজ্জা আমরা কেনো পাবো কিউটিপাই লজ্জা তো পাওয়ার কথা… নীলু ইমতিহানের মুখ চেপে রেখে বললো হচ্ছেটা কি হুম! লাগামহীন কথা বললে মরিচ খাইয়ে দেবো।
হঠাৎ ইমতিহান আরহার পরণের ড্রেসটার দিকে খেয়াল করলো, এই ড্রেসটাতো লন্ডন থাকতে মেঘ কিনেছিলো! তুমি এই ড্রেস কোথায় পেলে সুইটি?
– আপনার রুম থেকে চুরি করেছি।
– তবে ড্রেসটা কিনেছে তোমার উনি।
– কেনো কিনেছে?কার জন্য কিনেছে?ওনার কি অন্যকোন চক্কর আছে নাকি?
– ব্রেক নাও এক সাথে এতো উল্টো পাল্টা কথা কেমনে বলো! আগে শুনে তো নাও পুরো কথা। একদিন আমি আর মেঘ নিজেদের জন্য শপিং করতে যাই, সেখানে আমি নীলুর জন্য দুটো’ ড্রেস কিনি। তখন মেঘ এই ড্রেসটা পছন্দ করে আর নিজের টাকা দিয়ে কিনে নেয়। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম এটা কার জন্য নিয়েছিস! তখন ড্রেসটা আমার হাতে দিয়ে বলে পছন্দ হলো তাই নিলাম! আমারতো দেয়ার মতো কেউ নেই! বরং তুই তোর প্রিয় মানুষটাকে দিয়ে দিস!
– আগে বলবেন তো।
– বলার সময় দিলে তো বলবো।
– বাইদা রাস্তা আপনি বিয়ে না করেই সারারাত শশুর বাড়িতে কেনো ছিলেন?
– বাইদা মেইন রোড কিউটি, তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে রাত হয়ে গিয়েছিলো তাই আশ্রয় নিয়েছিলাম এই বাসায়। দেখো না একটু রুম পর্যন্ত যেতে দেয়নি! পুরো রাত এখানে বসিয়ে রেখেছে।
– একদম ঠিক কাজ করেছে। বিয়ের আগে শশুর বাড়িতে কোন জামাই আদর চলবে না।
নীলু দু’কাপ কফি এনে দু’জনের হাতে দিয়ে বলে কফি খেতে খেতে গল্প কর!
ইমতিহান উঠে বলে নীলু এখন আমি কফি খাবোনা বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর।
– খাবে না মানে খেতেই হবে। না খেলে এক পা নড়তে দেবো না।
– বাচ্চাদের মতো জেদ করছো কেনো
– কোন কথা নেই খেতে বলছি মানে খেতেই হবে।
আরহা হাসতে হাসতে বলে, জিজু না খেয়ে উপায় নেই
ইমতিহান কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলে, আমার জীবন তেজপাতা বানানোর জন্য স্বাগতম মহারানী
নীলু মুখ ভেঙচি কেটে বলে,তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি দেখে আসমানে উড়ছো। একবার যদি বিয়েতে অমত করি তখন বুঝবে।
– আরে পাগলি রাগ কর কেনো মজা বুঝো না। আচ্ছা এবার তাহলে আসি। ইমতিহান চলে যেতেই। নীলু আরহার দিকে ফিরে তাকালো, মনে মনে ভাবছে আচ্ছা কোন ভাবে আরহা কি ভুলে গেছে আজকের দিনটাকে!
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? কিছু বলবে?
– না। কি বলবো তুই যা ফ্রেশ হয়ে আয় এক সাথে ব্রেকফাস্ট করি।
আরহা মনে মনে ভাবছে, আমি জানি তুমি কি ভাবছো তবে তোমাকে বুঝতে দিতে চাইছি না। আজ আমি সিলেট যাবো, একা যাবো। যা কিছু হোক আমার সাথে হোক তোমাকে বিপদে ফেলতে চাইনা।
– কিরে তুই এতো কি ভাবছিস?
– কিছু না’তো আচ্ছা ড্রেস চেঞ্জ করে আসছি
হিয়া একটা চেয়ারে বসে আছে, নিজের পাপে আজ তার এই অবস্থা। এর চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো,তিন তিনটে তাজা প্রাণ তার ভুলে ঝড়ে গেছে। এখন প্রতি মূহুর্তে সে সেই ম*র*ণ যন্ত্রণা ভোগ করছে অথচ মৃ*ত্যু তাকে ধরা দিচ্ছে না। হিয়ার আজ খুব মনে পরছে ইমতিহানের বলা শেষ কথাটুকু, কোন মানুষের সত্যিকারের ইমোশন নিয়ে খেললে তার বিচার উপরওয়ালা ঠিক করবেই।
আজ তুমি আমার ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে দিচ্ছ! এমন একদিন আসবে, তুমি ভালোবাসার জন্য ব্যাকুল হবে! তবে কেউ তোমাকে বিন্দুমাত্র ভালোবাসবে না। কারো সহজ সরল সুন্দর মনটাকে তুমি যে আঘাতে জড়জড়িত করেছো! তা’ সুধে আসলে তুমি ফেরত পাবে। কথা গুলো ভাবতেই চোখের কোন ভিজে উঠলো। এই চোখের পানিটুকু এখন হিয়ার নিত্যদিনের সঙ্গী।
তুমি আসবে বলে পর্ব ২৯
মেঘের ঘুম ভাঙলো বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠে আরহাকে খুঁজতে লাগলো। নাহ কোথাও নেই, জ্বর নিয়ে একাএকা কোথায় গেলো? নিজের ফোনটা বের করতেই একটা মেসেজের কিছু অংশ দেখে মেঘের হাত থেকে ফোনটা নিচে পরে গেলো।