তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩১

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩১
নুসাইবা ইভানা

হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারের বাইরে পায়চারি করছে এক যুবক, চোখমুখে ফুটে উঠেছে প্রিয়জনকে হারানোর আতংক। মেঘের ইচ্ছে করছে এই মূহুর্তে চিৎকার করে কাঁদতে মাত্র কয়েক ঘন্টায় ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেলো। সারা দেশের টিভি নিউজে একটাই খবর প্রচার হচ্ছে।জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আদিয়াত নুজহাত আরহা এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত।
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন তিনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে আজ সকাল এগারোটায় তিনি সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার গাড়ীটি নিয়ন্ত্রণ হাড়িয়ে অপর গাড়ির সাথে সংঘর্ষ হয়।

এতে গুরুত্ব আহত হন তিনি। হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন এখনও তার ব্যাপারে সঠিক কিছুই বলা যাচ্ছে না।
নীলু বুঝতেই পারছেনা কি থেকে কি হয়ে গেলো, এই তো সবকিছু ঠিক ছিলো সমান্য কিছু সময়ের ব্যবধ্যানে সবকিছু উল্টপাল্ট হয়ে গেলো! আরহার বাবাও এসেছেন তিনি আজ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে সেই দৃষ্টি হয়তো মেঘকে বলছে, আমিতো আমার মেয়েটাকে দেখে রাখতে বলেছিলাম! এতোদিন দূর থেকে নিজেই দেখে রেখেছি তাহলে তুমি কেন আমারর মেয়েটার খেয়াল রাখতে পারলে না।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এতোদিন পর ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়েও হারানোর ভয় কাবু করে ফেলেছে মেঘকে। রাতের পরা কুঁচকানো টি শার্ট আর এলোমেলো চুল, আতংকিত চেহারা বলে দিচ্ছে কতটা কষ্টে আছে মেঘ
অপারেশন থিয়েটারে থেকে ডক্টর বেরিয়ে আসলেন সবাই অধির আগ্রহে ডক্টরের মুখ পানে তাকিয়ে আছে, ডক্টর মাথা নিচু করে বললো, “সি ইজ নো মোর।

কথাটা মেঘের কানে পৌঁছাতেই মেঘ ডক্টরের কলার চেপে ধরে বলে তোর সাহস হলো কি করে এসব কথা বলার। আমার আরহা নেই এটা তুই কেনো বলবি ও বেঁচে আছে! বেঁচে আছে ও। কয়েকজন মিলে ডক্টরকে ছড়িয়ে নিলো। কিছুসময় পর কয়েকজন নার্স আরহার বডিটা নিয়ে বের হলো সাদা কাপড়ে মুখটা ঢাকা। মেঘ সাথে সাথে নিচে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।ইমতিহান মেঘের কাঁধে হাত রেখে বললো,এখন তোর অনেক দ্বায়িত্ব নিজেকে সামলে নে।

ইমিতানের কথা শুনে মেঘ ইমতিহানকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে, এটা আমার আরহা হতেই পারে না। কিছুতেই না। আমার মন বলছে আমার আরহা আছে আছে সে আমার খুব কাছাকাছি আছে। কারো সাহস হচ্ছে না মুখটা দেখার কারণ এক্সিডেন্টে মুখটা থেতলে গেছে। চেহারা বোঝার উপায় নেই। মেঘ বসা থেকে দৌড়ে উঠে আসলো সাদা কাপড়ে মোড়ানো লাশটার আঙুল চেক করতে লাগলো, কাল রাতেই সে আরহার হাতে একটা ডায়মন্ড রিং পরিয়ে দিয়েছিলো। না নেই কোন হাতে নেই। মেঘ জোড়ে জোড়ে হাসছে। মেঘের হাসি দেখে সবাই ভাবছে মেঘ হয়তো মেন্টালী সিক হয়ে পরেছে। হাসি থামিয়ে আরহার বাবার সামনে এসে বলে, আঙ্কেল এটা আমাদের আরহা নয়! আমাদের আরহা বেঁচে আছে এটাতো অন্যকেউ।

– শান্ত হও বাবা নিজেকে সামলে নাও সত্যিটা মেনে নাও!
– আপনি বুঝতে পারছেন না আমি সত্যি বলছি এই দেখুন এই হাতে আমার দেয়া রিংটা নেই। আর দেখেন এই পায়ে একটা পায়েল থাকতো তাও নেই। আমার আরহা আর একটু চিকন ছিলো আর এই মেয়েটা মোটা।
– তুমি ভুল ভাবছো বাবা মোটা দেখাচ্ছে কারন এক্সিডেন্টের কারণে শরীর ফুলে উঠেছে।

এবার নীলু ছুটে আসলো শরীর থেকে সাদা কাপড় সরিয়ে দিয়ে পেটের দিকের কাপড় সরিয়ে চিৎকার দিয়ে সরে আসে। ইমতিহান নীলুকে আগলে নেয়। ততক্ষণে নীলু সেন্সলেস হয়ে পরে।
ইশতিয়াক সাহেব মেঘের মাথায় হাত রেখে বলে, তোমাদের ভাগ্য হয়তো এ পর্যন্ত ছিল! মন খারাপ না করে ওকে সুন্দর মতো শেষ বিদায় দাও।
মেঘ মূর্তির মতো বসে আছে মনে হচ্ছে সে পাথরে গড়া মূর্তি কোন হেলদোল নেই। ইশতিয়াক সাহেব বললেন, ওঠো বাবা এখন আমারা ছাড়া আমাদের সান্ত্বনা দেয়ার কেউ নেই। আমার মেয়েটার কষ্ট হচ্ছে তাড়াতাড়ি শেষ বিদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

মেঘ গর্জে উঠে বলে, কখন থেকে বলছি আরহা বেঁচে আছে, বেঁচে আছে। ও আমকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারেনা। মেঘের চিৎকার শুনে হসপিটালে মানুষ জড়ো হয়ে গেলো।
হিয়া টিভিতে নিউজটা দেখার পর থেকে মনের মধ্যে কেমন অস্থিরতা অনুভব করছে ইচ্ছে করছে একছুটে যেয়ে একনজর মেয়েটাকে দেখে আসুক। কিন্তু নিজের শারীরিক অবস্থার জন্য যেতে পারছে না।

সামিরা হাসপাতালে এসে মেঘের কাছে গেলো,কোমল কন্ঠে বললো, আচ্ছা তোর কথা মেনে নিলাম এটা আরহা না। ঠিক আছে, এবার চল এর দাফন সম্পন্ন করে আরহাকে খুঁজতে বের হই। আরহাকে নিয়ে আসলে তো সবাই বিশ্বাস করবে, না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।
মেঘ সামিরার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো, তুই বিশ্বাস করেছিস এই মেয়েটা আরহা নয়!

– বিশ্বাস করব না কেনো তুই যখন এতো কনফিডেন্স নিয়ে বলছিস তারমানে সত্যি হবে।
– বিশ্বাস কর আমার কথা এটা আমার আরহা হতেই পারে না। কাল রাতেই আমি ওকে ওই ডায়মন্ড রিংটা পরিয়ে দিয়েছি কিন্তু এই মেয়ের হাতে সেটা নেই। আমার আরহার এক পায়ে পায়েল ছিলো এই মেয়ের তাও নেই। তার মানে আমার আরহা বেঁচে আছে বল?

মেঘের পাগলামি দেখে সামিরা কেঁদে ফেললো, তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল, শোন এটা শুধু তোর আর আমার মধ্যে সিক্রেট থাক, এটা এখন কাউকে বলতে হবে না। আগে এই মেয়েটাকে বিদায়ের ব্যবস্থা করি!
মেঘ উঠে দাঁড়ালো স্বাভাবিক ভাবেই তার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না এই মেয়েটাই আরহা। বরং বারবার মনে হচ্ছে আরহা আছে খুব কাছেই আছে।

হায়দার মিয়া কিছু এতিম বাচ্চাদের খাবার খাইয়েছেন
মসজিদের ইমাম সাহেবকে নিয়ে কবর জিয়ারত করে এসেছেন। এখন একা একা দাঁড়িয়ে আছে কবরের পাশে, মৃদু স্বরে বললো, বোন তোর মেয়েটাকে আর খুঁজে পেলাম না কোথায় আছে কেমন আছে? জানা নেই তবে আশা করি যেখানেই আছে ভালো আছে। জানিস ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে, বড় হয়ে কেমন হয়েছে দেখতে?

তোর ভাবি তার কৃতকর্মের শাস্তি পেয়েছে দেখ আজ সেও ক্যা*ন্সা*রে আক্রান্ত যে যন্ত্রণা তুই সহ্য করেচিস আজ সেও সহ্য করছে। কথায় আছে না পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। এখন চোখে দেখছি। আমার মেয়েটা আজ আমার চোখের সামনে থাকতো শুধু ওর ভুলের জন্য নেই।তবে জানিস এমন নিষ্ঠুর মানুষটা এখন কোমল স্বাভাবের হয়ে গেছে। এখন সেও আরহাকে এক পলক দেখতে চায়! একটিবার তার কাছে অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা চাইতে মরিয়া হয়ে আছে।হায়দার মিয়া নিজের বোনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মনের কথাগুলো বলছেন। এমন সময় বারো বছরের একটি ছেলে আব্বাজান বলে ডেকে উঠলো, হায়দার মিয়া পিছু ফিরতেই নিজের ছেলেকে দেখতে পেলো।

– আর কত কাঁদবে আব্বাজান বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে চলো বাসায় যাবো।
– আচ্ছা চল বাসায় যাই বিকেলের দিকে আবার আসবো, তুই কি আসবি আমার সাথে হারিছ?
-আচ্ছা আসবো

হসপিটাল থেকে লা*শ বাসায় নিয়ে এসে গোসল করিয়ে, জানাজা নামাজ পড়ে, লা*শ নিয়ে এসেছো কবরস্থানে। মেঘ নিজে কাঁধে করে নিয়ে এসেছে তার মনে প্রবল আস্থা আছে এটা আরহা নয়।
দাফন কার্য সমাপ্তি করে মেঘ কারো সাথে কোন কথা না বলে চলে গেলো কোথাও একটা। ইমতিহান সাথে যেতে চাইলেও তাকে নেয়নি সাথে। শুধু বলে গেছে, আমাকে একটু একা থাকতে দাও!

আরহার বাবা কবরের পাশেই বসে আছে, নিজের মেয়েটাকে একবার ছুয়ে দেখা হয়েছিল,আর কখন ছুঁতেওে পারেনি,কেঁদে কেঁদে বলছে, আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে অসহায় বাবা, যে নিজের মেয়ের কাছে থেকেও দূরে থেকেছে, বারবার বলতে চেয়েও বলতে পারিনি আমি তোর বাবা। একবার আমায় বাবা বলে ডাকবি? শেষ আশা টুকুনও আজ দাফন করে দিলাম মাঠিতে, পারলে এই অসহায় বাবা টাকে ক্ষমা করে দিস!

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩০

মেঘ পুলিশ স্টেশনে যেয়ে প্রতিটি রাস্তার মোড়ের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে। এক জায়গায় চোখ আটকে গেলো, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরতে লাগলো অশ্রু, আচ্ছা এটা কি আনন্দ অশ্রু? নাকি বিরহের অশ্রু?

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.