তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩২

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩২
নুসাইবা ইভানা

নীলু বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে আরহার মৃ*ত্যু*তে সবচেয়ে বেশি কষ্টটা নীলুই পেয়েছে। সব হারিয়েও দু’জন মানুষ একে অপরের ছায়া হয়ে বেঁচে ছিলো, এতোগুলো বছর এক সাথে সুখ, দুঃখ ভাগ করে নিয়েছে নিজেদের মাঝে। আজ সেই মানুষটা পৃথিবীতে নেই এটা নীলু মেনে নিতেই পারছে না। ইমতিহান একদিকে নীলুর খেয়াল রাখছে অন্যদিকে মেঘের জন্য টেনশনে আছে, কি করছে? কোথায় গেলো?
আরহার ফ্রেন্ড নুর এসেছে, এই মূহুর্তে কোন কথা বলার সুযোগ নেই।নুরকে নীলুর পাশে বসিয়ে রেখে ইমতিহান মেঘকে খুঁজতে লাগলো।

সামিরাও ভিষণ কষ্ট পাচ্ছে অনেক কষ্টে নিজেকে বুঝিয়ে ছিলো ভালোবাসার মানুষটা যার সাথে ভালো থাকবে। তার কাছেই থাক। মেঘের ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে, আমি যে বড্ড লোভি, আমার আবার তোকে নিজের করে পাওয়ার স্বাদ জাগছে। আমি জানি এটা অন্যায়!

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তবে আমার কি দোষ বল, আমি তোকে ছেড়েই দিয়েছিলাম তবে ভাগ্য তোকে আবার একা করে দিলো। আমি কথা দিচ্ছি তোকে ভালোবাসবো অনেকটা ভালোবাসবো। এমন সময় সামিরার ফোনটা বেজে উঠলো, একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে রিসিভ করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতে ফোনটা রিং হতে হতে কেটে গেলো। সামিরা কল ব্যাক করতেই, মেঘ বললো,তুই ইমতিহান কে বলে দিস আমি আরহাকে নিয়েই ফিরবো। আমাকে নিয়ে টেনশন করতে না। সামিরা কিছু বলবে তার আগেই মেঘ কল কেটে দেয়ে।

সামিরা ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে, কেনো পাগলামি করছিস মৃ*ত মানুষকে কোথা থেকে নিয়ে আসবি!
অনেক কাঠখড়া পুড়িয়ে অবশেষে আরহা তার মায়ের কবরের সামনে পৌঁছলো। ততক্ষণে সূর্য অস্ত যেয়ে চারপাশে আধারে ছেয়ে গেছে। দূর আকাশে তারাদের মিটিমিটি আলো আর চাঁদের আধো আলোতে চারপাশ আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে।

নিজের মায়ের কবর চিন্তে একটুও সময় লাগেনি আরহার। মুখ থেকে ওড়নাটা সরিয়ে নিলো, মাটিতে বসে পরে হাত দিয়ে কবরটা ছুঁয়ে দেখছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে অশ্রু আজ কোন ডর নেই আরহার, আর না আছে কোন ভয়, মনে হচ্ছে তার মা’তার পাশেই আছে খুব কাছে হয়তো তাকে স্পর্শ করা যাচ্ছে না তবে অনুভব করা যাচ্ছে।

কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ মনে পরলো নীলু যখন তাকে খুঁজে পাবেনা তখন তো খুব টেনশন করবে। নিজের সাইড ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে অন করে কিন্তু ইমার্জেন্সি উঠে আছে নেট নেই একদম। এখন কি হবে। রাতের প্রায় আটটা বেজে গেছে এখনি কোথাও আশ্রয় নিতে হবে! তবে৷ কোথায় নেবো! এখান থেকে শহর তো ছয় ঘন্টার মতো রাস্তা। আরহার ছোট বেলার বান্ধুবী শিউলির কথা মনে পরলো, ওর বিয়ে তো এই কাছেই হয়েছিলো।

আচ্ছা এতো বছর পর আমাকে দেখে চিনতে পারবে তো! শেষবারের মতো নিজের মায়ের কবরের উপর হাত রাখলো চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে বললো, মা’তুমি বলেছিলেনা রাজকুমার আসবে! সে এসেছে মা’দেরিতে হলেও বুঝছে আমায়, তার চোখে আমি আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। তুমি দোয়া করো আমাদের জন্য। হঠাৎ চাঁদের আলোতে আরেকটা আলো চোখে লাগলো, তার হাতে থাকা ডায়মন্ড রিংটা চাঁদের আলোতে চিকচিক করছে। কবর থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা রিংটায় চুমু খেলো। অন্ধাকারে হাঁটতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে মিনিট দশেক হাঁটার পরেই শিউলিদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো। কি বলবে, কোথা থেকে শুরু করবে এসব ভাবতে ভাবতে পেছন থেকে এক পুরুষ কন্ঠে ভেসে এলো, কে এখানে?

আরহার গলা শুকিয়ে গেলো, ওড়না দিয়ে কোনমতে মুখটা ডেকে বলে, আমি শিউলির সই শিউলি কি আছে বাড়িতে!
– তা তোমার নাম কি মেয়ে, এই গ্রামের হগলরে তো আমার চেনা আছে তোমারে তো ঠিক চিনবার পারলাম না।
আপনি শিউলিকে ডেকে দিন ও আমাকে চিনতে পারবে।
– এই মাইয়া সত্যি কইরা কও কি মতলবে আইছো তোমারে তো আমাগো দিকের মনে হইতাছে না
এর মধ্যে বাড়ির বাইরে নিজের স্বামীর কথা শুনে শিউলি বেরিয়ে আসলো হারিকেন হাতে নিয়ে,নিজের স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলল, এই রাত বিরেতে কার সাথে কথা কন!

– দেহো কোন মাইয়া আইছে কয় তোমার নাকি সই লাগে। আমি কইলাম নাম কও এই তল্লাটের সবাইরে তো আমি চিনি।
শিউলি হারিকেন ধরলো আরহার সামনে। আরহা মুখের সামনে থেকে ওড়না সরিয়ে দিয়ে মৃদু স্বরে বললো কি চিনতে পেরেছিস তো!
শিউলি হারিকেন তার স্বামীর হাতে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে, চিনবা আবার মেলাদিন পরে তোর লগে দেহা অইলো, তয় তুই আগের চেয়ে মেলা সুন্দরী অইছো।

ইউসুফ বলে, এইটা আবার তোমার কোন সই আগে তো কহনো দেখলাম না।
– সে অনেক কথা আগে ঘরে চলো পরে কইতাছি।
– চলো তয়, হের নামটা কি হেইটা তো কইবার পারো।
– ওই যে শারমিন চাচি আছিলোনা হের মাইয়া। এইবার চিনবার পারছো।

– হেরে না চুরি কইরা লইয়া গেলো ঢাকা শহরের মাইষেরা।
– সব কথা কি দুয়ারে দাঁড়াইয়া কইবা। আহো ঘরে
আরহাকে নিয়ে ঘরে আসলো কিরে তোর মুখটা এতো শুকনো কেনরে। তোর স্বামী কি বেশী ভালা না।
– আরে এতো পথ আসছি তো তাই তোর একটা কাপড় দে একটু হাত, মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হই । শিউল একাটা সুতি শাড়ি এনে আরহাকে দিলো, আর ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলো।
ইউসুফ,শিউলিকে বললো, এভাবে একটা মেয়েরে বাসায় থাকতে দেয়া ঠিক হইলো?এমনেই এই গ্রামের মোরলা এই মেয়ের উপর ক্ষ্যাপা।

– ঠিক বেঠিক বুঝিনা আমার সই আমি একবার কেনো একশোবার জায়গা দিমু। আপনি খাইয়া পোলার লগে শুইয়া পরেন। আমি আর সই আজকে একসাথে ঘুমাবো।
আরহা ফ্রেশ হয়ে এসে, শিউলিকে বললো, একটা ফোন করতাম।
– কিরে তোর সোয়ামীর লগে রাগ হইয়া আইসোসনি
– না তেমন কিছুনা। আগে বল ফোন করবো কি ভাবে?
– রাইতে আর পারবি না সকালে গঞ্জে গেলেই অইবো।

আরহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে, সালমা মেয়েটা সব বুঝিয়ে বললেই হয়। না হলে সবাই টেনশন করবে।
– কিরে কি এতো চিন্তা করস!
-সে অনেক কথা আগে খেতে দে পরে সব বলছি! হ্যাঁরে সাবুর কি খবর!
– খবর বেশি ভালা না, তোর মামির তো ক্যান্সার হইছে, সাবুর ও শান্তি নাই জামাইটা ভালা পরে নাই।
– আর হারিছ!
– হারিছ ভালাই আছে তোর দুলাইভায়ের সাথে গঞ্জের দোকানে কাম করে, পোলাটা মেলা ভালা একেবারে তোর মামুর মতো।

মামার কথা মনে পরতেই আরহার চোখদিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরলো, তার মামা তাকে কত ভালোবাসতো, মামির চোখের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে চকলেক কিনে দিতো, খুব ইচ্ছে করছে এক পলক মামাকে দেখতে।
– জানিস তুই যাওয়ার পর সবাই তোর মামারে দোষ দিছে সেই নাকি তোরে বেঁচে দিছে। বিয়ের নাম করে তোকে নাকি কিনে নিয়ে গেছে।

– নারে তেমন কিছুই না। মা, যে সব সবসময় মারিয়া আন্টির কথা বলতো, তার ছেলের সাথেই আমার বিয়েটা হয়েছে। কোন পালিয়ে যাইনি ওই যে রমিজ মিয়ার সাথে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় আমি আমাকে যেই মা*র মা*র*ছে সেই করণে আমি অসুস্থ হয়ে পরি আর তারা দ্রুত আমাকে নিয়ে ঢাকা চলে যায়।
– এহন তুই মেলা সুখে আছো তাই না

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩১

– হুম তোদের দোয়ায় ভালো আছি।খাবার খেয়ে দু’জনেই নিজেদের সুখ, দুঃখের কথা ভাগ করে নিচ্ছে কতদিন পর দুই বান্ধবী এক সাথে হয়েছে, কত কথাই না জমা রয়েছে আজ রাতে আর ঘুম হবে না দু’জনের আরহার বেশ ভালোই লাগছে এতোদিন পর নিজের গ্রামে এসে। এদিকে তার মৃত্যুর শোকে সবাই পাগল প্রায় সেদিকে বিন্দু মাত্র ধারণাও ণেই তার।
শিউলি আর আরহা কথা বলছে এমন সময় কে যেনো তাদের দরজা জোড়ে জোড়ে ধাক্কা দিচ্ছে……

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.