তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৩

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৩
নুসাইবা ইভানা

ইমতিহান ঝড়ের গতিতে এসে নীলুকে জড়িয়ে ধরলো নীলু মাথায় চুমু খেয়ে বলে, মেঘ সত্যি বলেছিলো আরহা বেঁচে আছে। কথাটা কানে যেতে নীলু যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো, কি রিয়েক্ট করবে ভুলে গেছে, নুর ও বোকারমতো ইমতিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, ইমতিহান নীলুকে বললো,যেই রিংটা মেঘ আরহাকে পড়িয়েছে ওটা কোন সাধারণ রিং নয়। সেটাতে একটা চিপ বসানো আছে, যার মাধ্যমে আরহার অবস্থান সম্পর্কে জানা যাবে। সেম এরকম একটা আমিও কিনেছে তোমার জন্য। নীলুর চেহারায় চমক দেখা গেলো।ইমতিহান নূরকে বললো তুই এক কাজ কর ওর জন্য খাবার নিয়ে আয়। নূর কাল বিলম্ব না করে খাবার আনতে চলে গেলো।
নীলু নিজেকে একটু শান্ত করে বললো, তুমি সত্যি বলছো, আমার আরহা বেঁচে আছে? তবে ওই মেয়ের শরীরে তো আরহার মত ড্রেস ছিলো। তুমি আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য মিথ্যে বলছো না তো?

– না আমি বিন্দু পরিমাণ মিথ্যে বলছি না এটাই সত্যি, যে আমাদের আরহা বেঁচে আছে।
-আমাকে একটু ওর সাথে কথা বলিয়ে দাওনা।
– দেখো এখন তুমি কিছু খাবে ফ্রেশ হবে, তারপর কথা বলিয়ে দেবো।
– আমি তোমার সব কথা শুনবো তুমি শুধু একবার ওর আওয়াজটা শুনিয়ে দাও।
– দেখো মেঘ গেছে আরহাকে আনতে তারমানে আরহাকে নিয়েই ফিরবে।
-তুমি এতো শিউর কি ভাবে হচ্ছো হতেই পারে আংটিটা কেউ রাস্তায় পেয়েছে।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইমতিহান নিজেও এখন কনফিউজড হয়ে গেলো, নীলুর কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। তবুও নীলুকে বললো, আমি বলছি তো আরহা বেঁচে আছে, তাহলে বিশ্বাস করছো না কেনো?
– বিশ্বাস করতে তো আমারো ইচ্ছে করে তবে একবার
ওর আওয়াজ শুনতে পেলে হৃদয়ে শান্তি পেতাম। না হয় মনটা বড্ড অস্থির হয়ে বলে, তোকে মিথ্যে বলছে।
ইমতিহান নীলুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,দেখো আমাদের আরহা ঠিক আমাদের কাছে ফিরে আসবে, তুমি কিছু খেয়ে রেস্ট নাও।

প্রান্তর অবস্থা পাগল প্রায়, বেচারা সবচেয়ে বেশি ট্রাজেডির মধ্যে আছে, প্রথমে তো আরহার মৃত্যু শোক, তার উপরে হসপিটালে যেয়ে যখন জানতে পারে আরহার হ্যাসবেন্ড আছে মূহুর্তে প্রান্তর দুনিয়া উল্টে যায়। প্রান্ত ছেলেটা মিডিয়া পার্সন হয়েও খুব ভালো। স্ট্রং পার্সোনালিটির একজন মানুষ, প্রয়োজন ছাড়া কোন মডেল বা মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলে না। আরহাকে প্রথম দেখায় ভালো লাগে, সেই ভালো লাগা ধীরো ধীরে ভালোবাসায় কনভার্ট হয়। আরহা রিসেন্টলি তোলা একটা ছবির দিকে তাকিয়ে আছে, হাত দিয়ে ছবির উপর আলতো করে ছুয়ে দিলো, ছবিটিতে বার কয়েক চুমু খেলো,বিরবির করে বললো,

তুমি আমার নও যেনেও আমি তোমার হই!
তোমাকে হৃদয়ের গহীনে ধারণ করে পাহাড় সমান বিরহ সই!
তবে কেনো এভাবে ছেড়ে গেলে? তুমি না হয় অন্য কারো হয়ে থাকতে!
আমি না হয় দূর থেকে তোমার ভালো থাকাটুকু দেখে
নিজের চক্ষু শীতল করতাম, হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করতাম।
কেনো এভাবে হারিয়ে গেলে না ফেরার দেশে!

প্রান্ত হাতের উল্টো পিট দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে বলে, তোমাকে ভালো না বাসতে পারতাম, নিজের চোখে তোমার ভালো থাকাটা দেখতে তো পারতাম। এখন তো তাও হবে না। প্রান্তর মা এসে হাত রাখলেন ছেলের কাঁধে, মৃদৃ স্বরে বললেন, যে চলে গেছে সে আর ফিরে আসবে না বাবা। তবে যে বেঁচে আছে তাকে এসব মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলতে হবে। আমি বলছি না তুমি আরহাকে ভুলে যাও শুধু বলছি নিজেকে সামলে নাও। চাইলেই কাউকে ভুলা যায় না।তবে চাইলেই নতুন করে শুরু করা যায়।

প্রান্ত নিজের মা’কে জড়িয়ে ধরে বলে, পারছিনা আম্মু কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছি না। আমার আরহা আর নেই। সেই মধুর কন্ঠে আর শোনা হবে না। এটা কি ভাবে মেনে নেবো। আমি তো জোড় করে ওকে নিজের করে রাখতে চাইনা। আমি চাই, আমার ভালোবাসার মানুষটা ভালো থাক! কেনো এভাবে অবেলায় চলে গেলো। নিজেকে একটু সামলে নে বাবা যা হয়েছে তাতো আর ফিরিয়ে আনতে পারবো না। তোকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে পারছি না।

পারছিনা রিজেকে ঠিক রাকতে, বারবার সেই হাসি মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমি মানতেই পারছি না ওই হাসি মুখটা আর দেখতে পারবো না। আর কখনো আমাকে বলবে না আপনি আমার দিকে এভাবে তাকাবেন না আমার অস্বস্তি লাগে।

রাতের প্রায় শেষ প্রহর সামিরা অপেক্ষায় আছে মেঘ আসবে,সম্পূর্ণ তার হয়ে আর কোন পিছুটান থাকবে না। একটু সময় হবে মেঘকে সামলে নিতে তবে ভালোবাসার জন্য এতোটুকু করা যেতেই পারে। হালকা বাতাসে জানালার গোলাপি রঙের পর্দা গুলো উড়ছে, সামিরার কোলা চুলগুলো সাথে উড়উড়ি করছে, একদিকে আনন্দিত হচ্ছে অন্যদিকে কিছুটা মন খারাপ আরহার জন্য। আকাশের মিটিমিটি জ্বলতে থাকা তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে, কথায় আছে না, যা হয় ভালোর জন্যই হয়।

এতো জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কানোর শব্দে ইউসুফের ঘুমও ভেঙে যায়। দরজার সামনে, আরহা,শিউলি আর ইউসুফ তিনজনে উপস্থিত হয়েছে, তবে সাহস করে কেউ দরজা খুলছে না। ইউসুফ বললো, কে দরজার ওপাশে
কেউ একজন বললো দরজাটা খুলুন প্লিজ, না হলে দরজা ভেঙ্গে ফেলতে বাধ্য হবো!

দরজার বাহিরের মানুষটির কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই আরহার হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠল, মনে মনে বলছে আমি কি ভুল শুনছি, নাকি সত্যি সে এসেছে। দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে আরহা দ্রুত যেয়ে দরজা খুলে দিলো, হারিকেন হাতে পাশেই শিউলি দাঁড়িয়ে আছে। যার ফলে আরহার চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সবাই কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেঘ আরহার গালে ঠাসসসসসসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আরহা গালে হাত দিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে আছে, এই মূহুর্তে কি রিয়েক্ট করবে সেটাই হয়তো ভুলেগেছে।

ইউসুফ রাগ দেখিয়ে বললো,আপনার সাহস কি করে হয় আমার বাসার অতিথির গায়ে হাত তোলার।
মেঘ কোন কথার উত্তর না দিয়ে একটানে আরহাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। এতোক্ষণে মেঘের অশান্ত হৃদয় কিছুটা হলেও শান্ত হয়েছে।
ইউসুফ সামনে এগোতেই শিউলি ইউসুফের হাত ধরে বলে, মনে হয় এটা ওর স্বামী।

– তুমি কি করে বুঝলে?
– ছয় বছর ধরে তোমার সাথে সংসার করি আর এতোটুকু বুঝবো না। দেখো ছেলেটার চোখে নিজের মানুষকে হারানোর ভয়, আর ভালোবাসা দু’টোই আছে।
– ইউসুফ শিউলির কানের কাছে মুখ এনে বলে আগে কহনো তো কইলা না তুমি চোহের ভাষা এতো ভালা বুঝো! দেহো তো আমার চক্ষুতে তোমার জন্য ভালোবাসা আছে নি।
– এখন কি এইসব বলার সময়! রাতবিরেত মেহমান আইছে হের থাহার ব্যবস্থা করতে অইবো। কিছু নাস্তা পানির ব্যবস্থা করবার অইবো।

শিউলি কাশি দিয়ে বলে, এহন কি দাঁড়াইয়া থাকবেন দুলাভাই নাকি একটু গরিবের ঘরে বইবেন।
শিউলির কথা শুনে মেঘ আরহাকে ছেড়ে দিলো। আরহা বুঝতেই পারছে না কি হচ্ছে। এদিকে বাম গালটা ভিষন জ্বলছে, আরহা রাগী দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকালো।
আরহার দৃষ্টি উপেক্ষা করে মেঘ শিউলি কে বললো,কেনো আসবো,না যেখানে আমার বিবিজান সেখানেই আমি।তবে আপনাকে কি বলে সম্মোধন করবো?
– আরে দুলাভাই আপনার বিবিজান আমার ছোট বেলার সই। আমারে নাম ধইরা ডাকবেন,আমার নাম শিউলি,খর ইনি আমার স্বামী।

মেঘ শিউলি আর ইউসুফের সাথে কুশল বিনিময় করে।
শিউলি আরহাকে তাদের শোবার ঘর দেখিয়ে দিয়ে বলে, আমি আপনার জন্য একটু গুড় মুড়ি নিয়ে আসি।
– না সেসবের এখন দরকার নেই আমি খুব ক্লান্ত একটু বিশ্রাম নেবো।
শিউলি চলে যেতেই মেঘ দরজা বন্ধ করে আরহার পাশে এসে দাঁড়ালো, আরহা কিছু বলবে তার আগেই মেঘ আরহার কোমড়ে এক হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিলো, অপর হাতের এক আঙ্গুল আরহার ঠোঁটের উপর রেখে,আরহার চোখে চোখ রেখে শীতল কন্ঠে বললো……

অনেকটা কষ্টের পর তোমার কাছে আমি সান্ত্বনার বানী শুনতে চাই না!
শুধু তোমার কাছে একটু শান্তি চাই।
পেছনের ভুলগুলোকে ভুলে যেয়ে। নতুন ধারায় শুরু করতে চাই! যেখানে সম্পর্কের মূলভিত্তি হবে,বিশ্বাস, ভরসা,ভালোবাসা।

আমি চাই তুমি আমার মানসিক শান্তির কারণ হও!
তুমি কি হবে আমার বুড়ো বয়সের শান্তির কারণ। তবে মনে রেখে এ সম্পর্কে ছেড়ে যাওয়া বারণ।
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহা মেঘের দিকে
অপেক্ষার ফল যে, এতো মিষ্টি হবে তা হয়তো জানা ছিলো না। আরহার।

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩২

এরকম একজন জীবন সঙ্গী সবাই চায়!
আরহা এখন মেঘকে কি উপহার দেবে অপেক্ষা নাকি উপেক্ষা? নাকি ভালোবাসা?

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.