তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৪
নুসাইবা ইভানা
আরহা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে মেঘের পানে, আচ্ছা এই চোখগুলোতে এতো আকুলতা কেনো? আরহা নিজের অভিমান ভুলে মেঘ কে জিজ্ঞেস করলো, আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? মেঘের শরীরে হাত দিয়ে বলে আপনার জামাকাপড়ের এই অবস্থা কেনো? আপনার কোন বিপদ হয়নি তো! আরে চুপ করে আছেন কেনো বলুন!
মেঘ আরহাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,আমার কি হয়েছে জানতে চাও?আর একটু দেরি হলে আমাকে হয়তো আর জীবিত দেখতে না।
আরহা মেঘকে আর একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, এসব কি ধরণের কথাবার্তা,এমন কথা কেনো বলছেন।
– আগে তুমি বলো এভাবে কেনো চলে এসেছো?তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না।
– এ প্রশ্নের উত্তর দিলে আমার ভালোবাসার অপমান হবে।
– তাহলে চলে আসলে কেনো?
– আজ মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী ছিলো তাই এসেছি
– একবার বলে তো আসতে পারতে। তুমি জানো যখন তোমার এক্সিডেন্টের খবর শুনলাম তখন আমার অবস্থা কি হয়েছিলো?
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– আরহা বোকা বনে গেলো, কিসের এক্সিডেন্ট?
– তোমার গাড়িতে কে ছিলো তোমার ড্রেস পরা
– সালমা ছিলো আমি ওর ড্রেস পরেছিলাম আর ও আমার, সালমাকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম তবে গাউছিয়া এসে চিন্তা করলাম নিজের গাড়ি নিয়ে গেলে বিপদ বেশি হতে পারে আর তাছাড়া এতোটা রাস্তা ড্রাইভিং করাও সম্ভব না। তাই ড্রাইভারকে কল করে,সালমাকে রেখে আমি বাসে চলে আসছি।
মেঘ আরহার কপালে চুমু খেয়ে বলে আর কখনো আমাকে না বলে কোথাও যাবে না।
– এটা বলুন আমার গাড়ির এক্সিডেন্ট হলো কি করে? আর সালমা মেয়েটার কি অবস্থা।
– মেঘ বেডের উপর শুয়ে পরলো শরীরটা বড্ড ক্লান্ত
আরহা মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে বলে আরে বলুন কি হলো?
মেঘ এক হাত দিয়ে আরহাকে টেনে নিজের উপর ফেলে দিয়ে বলে, চুপ করে এখানে শুয়ে থাকো, অনেক জ্বালিয়েছো এবার একটু শান্তিতে থাকতে দাও।
আরহা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বেসামাল হতে লাগলো,শ্বাস বেড়ে গেলো, কোন রকম কাঁপা কাঁপা গলায় বললো ছাড়ুন আমাকে!
মেঘ আরহাকে আরএকটু গভীর ভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো, এখন থেকে অভ্যাস করো, বিবিজান, এরপর থেকে সারাজীবন এই ভাবেই ঘুমতে হবে।
আরহা সরতে চাইছে, মেঘ নেশালো কন্ঠে বললো, তুমি চাও এর চেয়ে বেশি কিছু হোক। আমি কিন্তু এখনি সে-সব চাইছিনা। তবে তুমি চাইলে আপত্তি নেই জানেমান। এমনিতেও এতো সুন্দরী বউ কাছে থাকলে মনটা বারবার বেহায়া হতে চায়।
মেঘের কথা শুনে আরহার লজ্জায় মিইয়ে গেলো, কোন কথা না বলে মেঘের বুকের সাথে লেপ্টে শুয়ে থাকলো। মনে মনে একটাই প্রশ্ন আপনি আমাকে এতো ভালো কবে বাসলেন?আর এসব লাগামহীন কথাবার্তা কবে শিখলেন।
– এখন ঘুমাও সব প্রশ্নের উত্তর ঢাকা যেয়ে দিয়ে দেবো। আর হ্যাঁ লাগামহীন কথাবার্তা শিখতে হয় না। সুন্দরী বউ পাশে থাকলে অটোমেটিক মুখ থেকে লাগমহীন কথাবার্তা বের হয়ে যায়।
আরহা অস্ফুট স্বরে বললো, অসভ্য।
– নিজের হ্যাসবেন্ডকে অসভ্য বলছো, সমস্যা নেই বলতেই পারো কারণ তোমার সাথে অসভ্যতা না করলে কার সাথে করবো।
আরহার কান দিয়ে গরম ধোয়া বেড় হচ্ছে,চুপচাপ মেঘের সাথে লেপ্টে রইলো।কিছু সময় পর দু’জনেই ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।
মোয়াজ্জিনের মধুর কন্ঠে আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙলো হায়দার মিয়ার। ঘুম থেকে উঠে ওজু করে নামজ আদায় করতে মসজিদে গেলেন।
নামাজ শেষ করে হাঁটা দিলেন বোনের কবরের পাশে, এটা হায়দার মিয়ার নিত্যদিনের কাজ। ফজরের নামজ পরে কবর জিয়ারত করে তারপর বাসায় ফেরেন। কবর জিয়ারত শেষ করে আসার সময় হঠাৎ চোখ গেলো কবরের পাশে পরে থাকা একটা বস্তুর দিকে। হাত বাড়িয়ে সেটা উঠিয়ে নিলেন, এটা তো একটা নুপুর এটা এখানে কোথা থেকে আসলো।বেশ কিছু চিন্তা ভাবনা করতে করতে বাসায় গেলেন সোনিয়া বেগম এখন সয্যাশায়ী, সকালের নাস্তা হায়দার মিয়া নিজেই বানান। মাঝে মাঝে মেয়েটা যখন বাসায় থাকে তখন অবশ্য তার মেয়েটাই বানায়।
সোনিয়া বেগমকে উঠিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে, ভাত আর আলু সেদ্ধ করলেন, নিজে খেলেন সোনিয়া বেগম কে খাওয়ালেন। খাওয়া দাওয়া শেষ করে হায়দার মিয়া বললেন, হারিছ কোথায় ওরে তো দেখলাম না।
– কইতে পারিনা ঘুম থিকা উইঠা কই গেলো?
– তুমি তো জিঙাইবা নাকি! পোলাটা সকাল সকাল না খাইয়া লইয়া কই গেলো?
– এতো চিন্তা করোনের কিছু নাই। কই আর যাইবা আইয়া পরবো।
রোদের আলো চোখে পরতেই আরহার ঘুঘ ভেঙে গেলো রোদের তেজ দেখে বোঝাই যাচ্ছে অনেক বেলা হয়েছে। আরহা নড়াচড়া করতেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে মেঘ বললো, ডিস্টার্ব করো না ঘুমোতে দাও!
– কোন ছেলের ঘুম জড়ানো কন্ঠ যে এতো মধুর হতে পারে আরহার জানা ছিলো না। আস্তে করে বললো, এটা শহর নয় গ্রাম আর ঘুমানো যাবে না উঠতে দিন আমাকে!
– না তুমি উঠলে আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে।
– আপনি এমনিতেও জেগে আছেন ছাড়ুন আমাকে
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছেড়ে দিলো, নিজেও উঠে বসলো
রাতে তো খেয়াল করেনি আরহার দিকে এবার আরহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, বাসন্তী আর লাল খয়েরী রঙের প্রিন্টের সুতি শাড়ি গায়ে জড়ানো, চুলগুলো এলোমেলো, শাড়িটাও ঠিক নেই মেদহীন পেট’টা স্পষ্ট
আরহা মেঘকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে, এমন করে কি দেখছেন?
– আমার বউকে, আজ তাকে পিউর বাঙালী বধুদের মতো লাগছে। তবে তোমার পেটের ডান পাশের লাল তিলটার জন্য হট লাগছে।
মেঘের কথা শুনে আরহা সাথে সাথে ঘুরে দাঁড়ালো কাপড় টেনে টেনে ভালো ভাবে ঢেকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আরহাকে বের হতে দেখে শিউলি বলে, তোর মুখটা এমন লজ্জারাঙা কেনো!
– কি যে বলিস না তুই, দুলাভাই কোথায় আমার একটু শহরের দিকে যাবো।
– তোদের জন্য বাজার করতে গেলো প্রথম বার জামাই নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসলি ভালোমন্দ খাওয়াতে হবে না।
– আচ্ছা শোন তোর দুলাভাইয়ের জন্য একটা লুঙ্গী আর গামছা দে।
– তুই দাঁড়া আমি নিয়ে আসছি।
নীলু বারবার ইমতিহানকে বলছে, এখনো তো কল দিলো না। তুমি একটু খোঁজ নিয়ে দেখো না। এরমধ্যেই নীলুর ফোনটা বেজে উঠলো, ইমতিহান ফোনটা রিসিভ করলো, ওপাশ থেকে প্রান্ত বললো, নীলিমা তোমাদের গ্রামের বাড়ি সিলেট এটাতো কখনো বলোনি! আর একটা জীবিত মেয়েকে মৃ*ত বানোনার কি খুব বেশি দরকার ছিলো!
কে আপনি আর এসব কি বলছেন, ইচ্ছে করে কোন শখে এসব করবে!
– আপনি কে আর কি বলছি বুঝতে না পারলে সংবাদ দেখুন সকাল ৮থেকে একি সংবাদ প্রচার হচ্ছে।
ইমতিহান কল কেটে দিয়ে টিভি অন করলো,
আজকের ব্রেকিং নিউজ, বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী আদিয়াত নুজহাত আরহার মৃত্যুর খবরটি ভুল ছিলো,তিনি বেঁচে আছেন এবং সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। এবিষেয়ে নিশ্চিত করছেন মহানগর পুলিশ। বিস্তারিত জানতে সাথেই থাকুন!
নীলু ইমতিহানকে ধরে কেঁদে দিলো, তারমানে সত্যি সত্যি আমার আরহু বেঁচে আছে। তাহলে ওই মেয়েটা কে ছিলো?
আস্তে আস্তে সব জানতে পারবো আপাতত আরহা বেঁচে আছে আর আমি নিশ্চিত মেঘ ওর সাথেই আছে টেনশনের আর কিছুই নেই। নীলু মাথা নাড়িয়ে বললো হুম আর কোন চিন্তা নেই। তবুও ওকে এক নজর দেখতে পারলে শান্তি পেতাম।
সামিরা ফ্লাওয়ার বাস দিয়ে আঘাত করে টিভিটা ভেঙে ফেলে চিৎকার করে বলে, কেনো, কেনো বারবার আমার সাথে এমন হয়! কেনো পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা আমাকে সহ্য করতে হয়। আমি যে তোকে ভালোবাসি মেঘ বড্ড বেশি ভালোবাসি কেনো তুই আমার ভালোবাসা দেখলি না। কেনো কেনো!
তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৩
আরহা মেঘের জন্য লুঙ্গি আর গামছা নিয়ে রুমে আসলো।
মেঘ গামছা আর লুঙ্গি দেখে বলে এসব কি?