তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৫

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৫
নুসাইবা ইভানা

দেখো আর যাই বলো, লুঙ্গী আমি পরতে পারবো না। আর লুঙ্গী কি ভাবে পরে আমি তো তাও জানি না।
আহা আপনি এতো টেনশন কেনো করছেন আমি আছি কি করতে! আজকে নায়কদের মতো আপানকে শাড়ি পরিয়ে দেবো।
-কিহহহহহহহ মাথা ঠিক আছে তোমার এসব কি আবোলতাবোল বলছো।

– আরে তুক্কু, আপনাকে আজ আমি নায়িকাদের মতো লুঙ্গী পরিয়ে দেবো।
– ওয়াট? কোন মুভিতে তুমি এসব দেখেছো।
– দেখেছি বললাম তো
– আগে মুভির নাম বলো
– আরে বাচ্চাদের মতো জেদ করছেন কেনো বললাম তো এমন মু়ভি আছে, আর মুভির নাম #তুমি_আসবে_বলে। বিশ্বাস না হলে সার্চ দিয়ে দেখুন

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– সে যাইহোক আমি তোমার হাতে পরতে পারবো না। আর তারচেয়ে বড় কথা আমি লুঙ্গী পরবোই না।
– বললেই হলো পরবো না। পরতে হবে, মানে হবেই সেদিন রাতের ড্রেস এখনো পরে আছেন ছি।
-চল শহরে যেয়ে ড্রেস কিনে নিয়ে আসি
– হু এটা তো ঢাকা আপনি বের হবেন আর ড্রেস নিয়ে চলে আসবেন। এখান থেকে শহরে যেতে কম করে হলে চার থেকে পাঁচ ঘন্টার রাস্তা।

– হলে হোক তাও যাবো,
– যাবো তবে আগে গোসল করবেন, খাবেন তারপর যাবো। ততক্ষনে এগুলো ধুয়ে দেবো।
– না তোমার কিছুই করতে হবে না। আমি হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে শহরে যাবো।
– এটা পরবেন না!
– না পরবো না।

– তাহলে আপনার সাথে কথা নেই। বলেই লুঙ্গি আর গামছা রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আরে কোথায় যাচ্ছ? আর রাগ করছো কেনো এসব আমি পরতে পারিনা। কে শোনে কার কথা মেঘ ডাকছে আরহা পিছু না ফিরে বের হয়ে আসলো।
আরহা অদ্ভুত দৃষ্টিতে সামনের ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে ঠিক চিনতে পারছে না তবে আপন মনে হচ্ছে। আরহা ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো, কি নাম তোমার?

-হারিছ
– নাম শুনেই আরহার হৃদয়ে ধক করে উঠলো, ছোট বেলায় কত আদর যত্ন করতো হারিসেকে। আজ সেই ছোট হারিছ কত বড় হয়ে গেছে, চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে, হারিছকে জড়িয়ে ধরে বলে আমাকে চিনতে পেরেছিস ভাই!
হারিছের চিনতে পারার কথা না, কারন হারিছের তখন ৬/৭ বছর বয়স ছিলো। আরহা হারিছকে ছেড়ে দিয়ে বলে দেখ আমি তোর বোন আরহা। এবার চিনতে পেরেছিস।
হারিছ অবাক হয়ে বলে, তুমি শারমিন ফুপির মেয়ে?

– হুম
– তাহলে আমাদের বাড়ি গেলেনা কেনো?
– যাইনি তাই কি হয়েছে এখন যাবো।
হারিছ কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। মেঘ পেছন থেকে বললো এটা তোমার মামার ছেলে! সিরিয়াসলি তুমি তাদের সাথে দেখা করতে যাবে?

– যাবো কারণ মামি তার পাপের শাস্তি পাচ্ছে, আর মায়ের পরে একমাত্র মামাই ছিলো যার কাছে ভালোবাসা পেয়েছি।
– ভুলে যাচ্ছো তারা তোমার সাথে কি করেছিলো?
– হুম ভুলে যেতে চাই! কারণ ক্ষমা করা মহত গুন
– সেটা আমার বেলায় মনে ছিলো না
– ছিলো তবে আপনার আর তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। কথা বলতে বলতে আরহা খিলখিল করে হেসে উঠলো,
– কি হলো এভাবে হাসছো কেনো?

– তো হাসবো না। আপনি লুঙ্গি গামছা দিয়ে বেঁধে রেখেছেন, এভাবে কেউ লুঙ্গী পরে।
– আমি যে ভাবে পরার পরেছি
– এদিকে তাকান আমি দেখিয়ে দিচ্ছি আপনি সেভাবে পরেনিন।
– এবার হয়েছে
– হুম পার্ফেক্ট এবার টি শার্ট খুলে দিন আর গলায় গামছাটা ঝুলিয়ে নিন।
– এই তুমি দিন দুপুরে আমার ইজ্জতের ফালুদা বানাতে চাইছো!

– আহা শখ কতো আপনি কি রানবির কাপুর নাকি! যে আপনার বডি দেখার জন্য মরে যাচ্ছি। এটাও ধুয়ে দেবো তাড়াতাড়ি খুলে দিন।
– না তোমার কিছু করতে হবে না।
– ঢং বাদ দিন আর এটা তাড়াতাড়ি খুলে দিন

– মেঘ ঘরে প্রবেশ করো শার্ট খুলে দরজা হালকা ফাঁকা করে শার্ট দিলো আরহার হাতে
আরহা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বলে, এতো কিসের লজ্জা আপনার হুম! যেখান থেকে এসেছেন সেখানে তো অ*র্ধ*ন*গ্ন মানুষ বেশি। আর তার উপর আপনি তো ছেলে।
মেঘ কিছু বলবে তার আগেই আরহা সেখান থেকে চলে যায়।
ইশতিয়াক সাহেব বসে আছেন পুলিশ স্টেশনে আরহার বিরুদ্ধে কেস ফাইল হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। তিনি সেটাই মিটমাট করে দিলেন।

আরহা মেঘের ড্রেস ধুয়ে দিয়ে মেঘের জন্য নাস্তা নিয়ে রুমে এসে মেঘে দেখেই সামনে দিকে ঘুরে গেলো।
– এখন দৃষ্টি ফিরিয়ে কেনো নিচ্ছ। আরে ছেলে মানুষ এমন থাকা তো স্বাভাবিক।
– শুনুন গামছাটা গলায় ঝুলিয়ে নিন আর নাস্তা রেখে যাচ্ছি খেয়ে নিন।
– তুমি কোথায় যাচ্ছ?
– বাহিরে

– এখন আমার সাথে বস এক সাথে নাস্তা করবো।
-আরহা চলে যেতে চাইলে মেঘ আরহার হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়। আরহার চোখ বন্ধ করে রাখে।
চোখ বন্ধ রাখার মতো কিছু হয়নি বিবিজান। চোখ খুলুন। আর আমি তো আর রানবির কাপুর না। আমাকে দেখে আপনার দিল ফিসলে যাবে!
– মোটেই না! আই লাভ রনবির কাপুর
– তা ঠিক বলেছো মেয়েরা ভালোবাসবে রনবীর কাপুরের মতো ছেলেদের। আর বিয়ের সময় চাইবে দেবদাস টাইপ ছেলেদের।

– কি বোঝাতে চাইছেন হুম!আমার রনবিরকে নিয়ে একটাও ভুলভাল কথা বলবেনা বলে দিলাম। আর তাছাড়া ছেলে মানুষের বিয়ের আগে দু’চারটা গার্লফ্রেন্ড থাকতেই পারে।
-তারমানে তোমাকে বিয়ে করার আগে দু’চারটা গার্লফ্রেন্ড রাখতে পারবো।
– আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আরো চার থেকে পাঁচ বছর আগেই আপনি বিয়ে করেছেন। তারমানে আপনি প্রেমের বয়সে বিবাহিত ছিলেন। সো প্রেম করবেন কিভাবে!

– সিরিয়ালি আমি বিবাহিত? কই আমার তো মনে হচ্ছে না।
– এই যে চোখের সামনে আপনার বউ বসে আছে, আর এমনিতে সারাদিন নিজেই তো বলেন বিবিজান বিবিজান। বিয়ে না করলে বিবিজান কোথা থেকে আসলো?

– না একবার বিয়ে করেছিলাম হয়তো? ঠিক মনে নেই তাই নতুন করে করতে চাইছি।
– তো করেন কে মানা করছে, বলেই আরহা উঠে যেতে চাইলে মেঘ আরহার হাত ধরে বলে, একবার বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করেছিলাম! যে কিনা বাসর রাতে বরের কোলে হাসপাতালে হাসপাতালে দৌড়েছে। এখন চিন্তা করছি কোন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবতীকে বিয়ে করবো। যার সাথে বাসর রাতে চন্দ্র বিলাশ করা যাবে।
– দূর বিয়ে তো একবার হয়েই গেছে আর বিয়ে করতে হবে না।

– না করতেই হবে বাচ্চা বউ বড় হয়েছে এবার তাকে বউয়ের দ্বায়িত্ব বুঝে নিতে হবে।
– সে যখন বড় হয়েছে দায়িত্ব সে ঠিক বুঝে নেবে, তাকে শুধু একটু সময় দিতে হবে।
-আগে ঢাকা যাই তারপর দিচ্ছি সময়। এবার বসো।নাস্তা করি। দু’জনে এক সাথে নাস্তা করে নিলো। খাবার খেয়ে। মেঘ আরহাকে বললো, তুমি সত্যি আমাকে মন থেকে মেনে নিয়েছো!আচ্ছা তুমি আমাকে কবে থেকে ভালোবাসো।
– বিয়ের পর থেকে। জানেন আমি আপনাকে কত খুঁজেছি। বারবার মনে হতো, ছোট সাহেবের কারণে আপনি আমাকে ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন। পরে জানতে পারলাম আপনি আমার….

– কি বলো
– আচ্ছা আপনি আমাকে কেনো বললেন নি?
– আমি যাওয়ার আগে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিস্থিতি আর বলতে দেয়নি। সে সব কথা বাদ আগে বলো তুমি আমাকে দেখলে কোথায়?
-নুরদের বাসায় আপনাকে জড়িয়ে ধরার পরে যখন আমি সুযোগ বুঝে সরে আসলাম তখন আপনি আমাকে খুঁজছিলেন আর আমি আড়াল থেকে আপনাকে দেখছিলাম।

– তুমি আমার সামনে কেনো আসলে না।
– কারণটা আপনার অজানা নয়।
– সত্যি আমি দুঃখিত জানিনা কি ভাবে তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো! আমার জন্য তোমাকে অনেক সাফার করতে হয়েছে।
আরহা মেঘের ঠোঁট আঙুল রেখে বলে আর কিছু শুনতে চাইনা। যা হয়েছে সেসব ভুলে যেতে চাই। আপনি ছাড়া আমার আর আপন কেউ নেই, আমি আপনাকে…..

– প্লিজ বলো আজকে চুপ করে থেকো না তোমার মুখ থেকে একবার শুনতে চাই!
আরহা একটু সরে এসে বলে,এই কথাটা আগে ছেলেরা বলে,
– ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি আমার বিবিজানকে।এবার তুমি বলো,
– এভাবে কেউ প্রপোজ করে! তার উপর আদিয়াত নুজহাত আরহা কে। তাকে তো গ্রান্ট প্রপোজ করতে হবে।যদি পছন্দ হয় রিপ্লাই পেয়ে যাবেন।

– আচ্ছা তবে তাই হবে। তার আগে একবার তোমার মুখ থেকে তুমি ডাক শুনতে চাই! এটা না করতে পারবে না।
– ইশ আমি পারবো না।
– কেনো পারবেনা। নিজের একান্ত প্রিয় মানুষকে একটু ভালোবেসে তুমি করে বলতে পারবে না!
আরহা কিছু বলবে এর আগেই হায়দার মিয়ার গলার আওয়াজ শোনা গেলো, আরহা “মা” আমার কই তুই একবার এই হতভাগ্য মামার সামনে আয়।

– আরহা দ্রুত দরজা খুলে বাহিরে এসে তার মামাকে জড়িয়ে ধরলো। দু’জনেই কাঁদছে কারো মুখে কোন কথা নেই।
হারিছ বললো, খালি কি কাঁদবা বাসায় নিয়ে যাইবা না হেগোরে?
হায়দার মিয়া আরহাকে ছেড়ে দিয়ে বলে, চল আমার বাসায়, জানি মেলা কষ্ট জমা অইছে তবে এহন আর কষ্ট থাকবো না। সব কিছু বদলাইয়া গেছে।

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৪

মেঘ দাঁড়িয়ে দেখছিলো। হায়দার মিয়া মেঘ দেখে বলে, এইটা কি আমাগো জমাই বাবাজি?
আরহা মাথা নাড়িয়া সম্মতি জানালো।
মেঘ, হায়দার মিয়াকে সালাম জানলো। হয়দার মিয়া বললেন, তোমার বাবা মা কেমন আছে বাজান?
মূহূতেই মেঘের চেহারা রঙ পাল্টে গেলো।

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.