তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৭
নুসাইবা ইভানা
হাসি খুশি মুখটা চুপশে গেলো নীলুর, এতো ভালো একটা মুহূর্তে হিয়াকে এখানে আশা করেনি। রুখ গলায় জিজ্ঞেস করলো, এখানে কি চাই?
– আমাকে ভেতরে আসতে বলবেনা।
– আমি মনে করি আপনার ভেতরে কোন কাজ নেই।
– একবার আসতে দাও এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয়।
নীলু এবার খেয়াল করলো হিয়া আরেকজন উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সাইডে সরে দাঁড়ালো, হিয়া ভিতরে প্রবেশ করলো।
ইমতিহান বললো, কি এসেছে তোমার কলিজায় পানি। বলতে বলতে সামনে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো। সাথে সাথে চেহারায় ভয় বাসা বাঁধলো নীলুকে হারানোর ভয়।
ইমতিহানকে এখানে দেখবে মোটেই ভাবতে পারেনি হিয়া। ইমতিহানকে ধরার জন্য সামনে অগ্রসর হতেই পরে যেতে নিলে ইমতিহান হিয়াকে আগলে নেয়।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নীলু দাঁড়িয়ে দেখছে, মেজাজ তার চরমে একে তো এই মেয়েকে সে দু’চোখে সহ্য করতে পারে না তার উপর আবার তার ইমতিহানের বাহুতে। ঝড়ের গতিতে এসেই হিয়াকে নিজে ধরে বসিয়ে দিলো।
ইমতিহান কি বলবে বুঝতে পারছে না।
নীলু বললো, কি বলতে এসেছেন সেটা বলে চলে যান।
– তুমি একটু আমাদের স্পেস দিতে তাহলে আমি ইমতিহানের সাথে কিছু কথা বলতাম।
– তা আমার হ্যাসবেন্ডের সাথে আপনার কি কথা। কি গো তুমি একা একা ওনার কথা শুনবে!
ইমতিহান বোকার মতো তাকিয়ে আছে নীলুর দিকে
– এভাবে কি দেখছো তোমার বউ তুমি পরেও দেখতে পারবে, আগে কথার উত্তর দাও।
– নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, যা বলার আমার ওয়াইফের সামনে বলুন!
হিয়া চোখের কোন নোনা জলে ভরে উঠলো, আজ এই জায়গায় তার থাকার কথা ছিলো। নিজের ভুলে সব হারিয়েছে। নীলকে উদ্দেশ্য করে বললো,তোমার হ্যাসবেন্ড কে তো আর কেড়ে নিতে আসিনি একটু কথা বলবো।
নীলু ইমতিহানের পাশ ঘেসে বসে বলে আমরা হলমা দুই দেহো এক প্রাণ তাই, যা বলার আমার সামনেই বলতে হবে।
– হিয়া দেখো তোমার কিছু বলার থাকলে নীলিমার সামনেই বলো, “সি ইজ মাই ওয়াইফ” আমার সব কিছুর ব্যপারে তার জানার অধিকার আছে।
হিয়ার ভেতরে ঝড় বয়ে গেলো, ধরে আসা গলায় বললো, কবে বিয়ে করেছো ইমতিহান!
– এইতে তিনমাস আগেই।
– আপনার এই অবস্থা কি করে হলো?
– সে এক বিশাল কাহিনী অন্য কোন সময় বলবো। নীলুকে তুমি কোথায় পেলে!
– কোথায় পেলে মানে কি! কেউ যখন ধোকা দিয়ে চলে যায়। কারো৷ সরলতার সুযোগ নেয়। সাময়িক সময়ের জন্য সে ভেঙে পড়লেও বিপরীত পাশের মানুষের ধোঁকার কথার ভেবে ঠিক উঠে দাঁড়ায়। আর তার জীবনকে রঙিন করে দেওয়ার জন্য এরকম একটা মানুষও খুঁজে নেয়। এই যে আমার পাশে বসে আছে মেয়েটা। জানো সে আমার জন্য কতটা দামী! আরে দামী কেনো বলছি সে অমূল্য। এরকম মানুষ জীবনে আসলে নিজের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হয়।
– আমার কথায় কষ্ট পেয়ো না। আর আমাকে আর অভিশাপ দিওনা ! আমার ভুলের শাস্তি আমি ভোগ করছি। তোমাকে হাসিখুশী দেখে ভালো লাগছে। শুভকামনা রইলো তোমাদের আগামী জীবনের জন্য।
– নীলু কিছু বুঝতে পারলে না শুধু বোকার মতো শুনেই গেলো।
ইমতিহান নীলুর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে, এই হাত যতদিন ধরে আছি! ততদিন ভালোই থাকবো। আপনি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এই মানুষটি আমাকে ভীষণ ভাবে আগলে রেখেছে।তবে আপনাকে ধন্যবাদ।আপনি না গেলে এতো ভালো একটা মানুষের দেখা পেতাম না। আমি নীলিমার মতো একটা মেয়েকে পেয়েছি জীবনে আর কিছু চাওয়ার নেই।
– হিয়া শুধু বললো, ভালো থাকবেন আপনারা। আমি এসেছিলাম আরহার সাথে দেখা করতে।
এর মধ্যেই আরহা চলে আসলো, দরজা খোলাই ছিলো, এসেই আপুই বলে জোড়ে ডাক দিলো আরহার কন্ঠ শুনে একছুটে দৌড়ে এসে আরহাকে জড়িয়ে ধরলো।নীলু কেঁদে ফেললো, আরহা নীলুর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে কাঁদছো কেনো?এই দেখো আমি একেবারে ঠিক আছি। এটা আনন্দ অশ্রু তোকে এভাবে সুস্থ দেখে গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে।
মেঘ একটু এগিয়ে এসে হিয়াকে সোফায় বসা দেখে বলে,তুমি এখানে কি মনে করে?
– তোমাদের দেখতে আসলাম
– দেখতে এসেছেন নাকি আবার নতুন কোন মতলব আছে।
– এই অবস্থায় আর কি মতলব থাকবে।শুধু তোমাদের সবার কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে আসলাম। যদিও আমি ক্ষমার যোগ্য নই তবুও যদি পারো ক্ষমা করে দিয়ো।
– তোমার ক্ষমা তোমার কাছেই রাখো দ্বিতীয় বার তোমার ছায়া যেনো আমাদের উপর না পরে। আর অবস্থার কথা বলছো এই অবস্থা কেনো এর চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তোমার কাম্য। তিন তিনটে মানুষ তোমার জন্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একবার তাদের অবস্থার কথাটা চিন্তা করে দেখো। এবার আসতে পারো।
হিয়া মাথা নিচু করে বের হয়ে গেলো কেউ তাকে আটকালো না। নিজের কর্মফল নিজে ভোগ করছে।আজ তার জীবনটাও রঙিন থাকতো। একটা ভুল সব শেষ করে দিয়েছে। সাথে কেড়ে নিয়েছে তিনটি জীবন।
আরহা, নীলু, ইমতিহান, মেঘ একসাথে বসে কথা বলছে, এমন সময় আরহা বললো, তোমরা বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি জরুরি মিটিং আছে। মেঘ আরহার পিছু পিছু উঠে চলে আসলো। ইমতিহান আর নীলু হাসছে।
ইমতিহান নীলুকে বললো,চলো আমরা আগামীকাল বিয়েটা করে ফেলি!
– মানে কি মাথা ঠিক আছে তোমার। বাবা, মা না আসতে কিসের বিয়ে?
– বাবা, মা তো আজকে রাতেই চলে আসবে
– আগে আসুক ওনারা যদি আমাকে মেনে না নেয়!
– মেনে নেবেনা মানে দুইশবার মেনে নেবে,আমার খুশিতেই তাদের খুশি। আর এতোক্ষণ তোমার পরিচয় তাদের জানা হয়ে গেছে।
– সেটাই তো ভয় আমি সামান্য একজন কাজের মানুষের মেয়ে।
– দেখো আর কখনো নিজেকে সামান্য বলবে না। শোন আমার কাছে তুমি অসামান্য। আর তোমার বিয়ের পর একটাই পরিচয় তুমি আর সেটা হলো, মিসেস ইমতিহান।
হইছে এখনো রিং পরাতে পারোনি আসছে মিসেস ইমতিহান।
আরে এসব রিংটিং কি তোমাকে ডিরেক্ট কবুল পড়াবো।
আরহা রুমে এসে ওড়নাটা বেডে রেখে সামনে ঘুরতেই
মেঘ দেখে বলে আপনি?
– অন্যকারো আসার কথা ছিলো বুঝি। আর আমার দিকে পিঠ করে কেনো দাঁড়ালে সামনে ঘুরে দাঁড়াও
– আরহা ওরনাটা গায়ে জড়িয়ে সামনে ঘুরে বলে, কি সমস্যা আপনার।
– তুমি আমার সমস্যা। এই তুমি আমাকে আপনি আপনি করে কেনো বলছো!
– তো কি বলবো
– বলো, ওগো তুমি এখানে কেনো এসেছো।
– আমি এসব বলতে পারবো না।
– বলতে হবে, দেখো হ্যাসবেন্ড ওয়াইফের মধ্যে এমন দূরত্ব ঠিক না। তুমি ফ্রেশ হও আমি বাসর সাজানোর ব্যবস্থা করছি। তারপর উঠতে বসতে তুমি আমাকে ওগো,কিগো,হ্যাঁ গো বলে পাগল করে দিবা। ইশ ভাবতেই ভাল লাগছে।
– এগুলো শুধু আপনার ভাবনায় হবে বাস্তবে না।
তাহলে আর কি করার আমাকে বাধ্য হয়ে তোমার জন্য সতীন আনতে হবে।
আরহা মেঘের একদম কাছে এসে বলে, কি বললেন আবার বলেন!
– মেঘ আরহার কোমরে হাত রেখে আরো কাছে টেনে নিয়ে বলে, আমি কিছু বলেছিলাম? কই আমার তো মনে পরছে না।
মেঘের এতো কাছে আসায় আরহার নিশ্বাস ভারী হতে লাগলো। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কেমন দম বন্ধ কর পরিস্থিতি। মেঘ আরহার গালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলে, এইটুকু তেই এই অবস্থা বিবিজান। তৈরি থাকুন আপনাকে আর দূরে রাখবো না। একেবারে নিজের করে নিবো। একদম এতোটা কাছে রাখবো যে আমার প্রতিটি নিশ্বাস তোমার নিশ্বাসে মিশে যাবে। আরহা মেঘের টি শার্ট দু’হাতে খামচে ধরে আছে।
তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৬
এ এক অন্যরকম অনূভুতি যার ব্যাখ্যা আরহার জানা নেই।মেঘ আরহার কানের কাছে মুখ এনে বলে,এখন ছেড়ে দিচ্ছি তবে খুব তাড়াতাড়ি নিজের করে নেবো।এমনিতে তুমি তো শুধু আমার। তবে এবার একেবারে আমার হবে। আরহা জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে মেঘ আরহার কাছ থেকে সরে আসলো। রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় আরহাকে চোখ মেরে বলে ভালোবাসি বউ পাখি।