তুমি আসবে বলে - Golpo Bazar

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৮

তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৮
নুসাইবা ইভানা

আরহা ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মেঘের বলা কথাগুলো ভাবছে আর মিটি মিটি হাসছে। মাঝে মাঝে লজ্জা পাচ্ছে। হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকাচ্ছে। আর গুন গুন করে গান গাইছে, তুমি আশে পাশে থাকলে আরো খুশি খুশি থাকছি। আর যাচ্ছি ভুলে আমি কে কোথায়! এরমধ্যেই আরহার ফোনটা সশব্দে বেজে উঠলো দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফোনটা হাতে তুলি নিয়ে দেখলো প্রান্ত কল করছে। আরহার মনে পরলো আজতো প্রান্তের আন্ডারে একটা কনসার্ট আছে। কলটা রিসিভ করে কানে তুলে নিলো, আরহা সালাম দিলে আসসালামু আলাইকুম।

– প্রান্ত সালামের জবাব নিলো,আরহার কথার টন বলে দিচ্ছে সে কথাটা আনন্দে আছে। প্রান্ত কোন ভণিতা ছাড়া বললো,আজকের কন্সার্টে আসবেন তো?
– প্রান্তর কথা শুনে আরহা খিলখিল করে হেসে উঠলো।
আরহার হাসির ধ্বনিতে প্রান্তর হার্ট বিট বন্ধ হওয়ার উপক্রম। নিজেকে সামলে কোনমতে বললো, মিস আরহা,আমি কি কোন জোক্স বলেছি।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরহা হাসি থামিয়ে বললো, জোক্স নয়তো কি প্রান্ত সাহেব। মানে আপনি আমাকে আপনি করে বলছেন আবার এতো অপরিচিত মানুষের মতো ট্রিট করছেন।
– আপনি আমার ক্লাইন্ট সো আপনাকে সম্মান দিয়ে কথা বলাটা আমার নৈতিক দায়িত্ব।
– আরে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন!আর তারচেয়ে বড় কথা এতোদিনে মনে হলো আমি সম্মানিত ব্যক্তি!
প্রান্ত কথা না বাড়িয়ে খট করে কল কেটে দিলো।
আরহা হাসতে হাসতে নিচে আসলো।

মেঘ বোকার মতো তাকিয়ে আছে আরহার দিকে হাসলে মানুষকে সত্যি সুন্দর লাগে। তবে ভালোবাসার মানুষের মুখের হাসি মনে হয় সবচেয়ে সুন্দর অমায়িক
আরহার শরীরে হালকা ক্রিম কালারের থ্রিপিস,যেনে এই রংটা আরহার জন্য তৈরী হয়েছে। এতো ভালো মানিয়েছে। এলেমেলো চুলগুলো হাটাঁর সাথে সাথে দুলছে। মেঘ তাকিয়ে থাকতে থাকতে আরহা কোন ফাঁকে মেঘের সামনে এসে হাত দিয়ে তুড়ি বাজিয়ে বলে, আমাদের সিঁড়িটা বুঝি দেখতে একটু বেশীই সুন্দর!

মেঘ নিজের খেয়ালে বিভোর থেকে বলে, না সিঁড়ি দিয়ে নামা মানুষটি সুন্দর।
আরহা মেঘের হাতে চিমটি কেটে বলে,ছিহহহহ আমি ভাবতেও পারিনি ওই বুড়া মহিলার দিকে আপনি এবাবে মুগ্ধ হয়ে তাকাবেন।
মেঘ জোড়ে চেচিয়ে বলে, এই আমি তো তোমাকে দেখছিলাম। এখানে বুড়ো মহিলা কোথা থেকে আসলো।
আরহা, আর ইমতিহান দু’জনেই হেসে দেয়। ইমতিহান বলে, ভাই তুইতো পাগল হয়ে যাচ্ছিস। দেখ সিড়ি দিয়ে মধ্য বয়স্ক একজন সার্ভেন্ট নামছে।

মেঘ কোন কথা না বলে আরহার হাত ধরে টেনে একপাশে নিয়ে এলো।
– এই আপনি আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে আসলেন কেনো? জিজু কি ভাববে।
– আগে চুল বাঁধো।
-চুল বাঁধো মানে?
– মানে চুল খোলা রাখতে পারবা না
– বললেই হলো!

– হুম বললেই হবে, না বললে কি ভাবে হয়, এবার ঝটপট চুল বাঁধো।
– আরে কারনটা কি? সেটা তো বলবেন।
মেঘ আহার কানের পিছনে চুলগুলো গুজে দিয়ে বলে, আমার এলোকেশী কে, এই এলোমেলো খোলা চুলে শুধু আমি দেখবো। আর কেউ না।

মেঘের শীতল কন্ঠে আরহার হৃদয়ে অনূভুতির ঢেউ খেলে গেলো। হৃদযন্ত্র কেমন অস্থির হতে লাগলো। মেঘ আরহার কপালে চুমু দিয়ে বলে, তাড়াতাড়ি চুল বেঁধে আসো,আর শুনো এই লজ্জা রাঙামুখ নিয়ে সবার সামনে এসো না। সবাই কিনা কি ভাববে! আমি তো কিছুই করলাম না। বলতে বলতে আরহার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁটটা হালকা করে ছুয়ে দিয়ে উধাও।
আরহা এখনো বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে,ঘটনার আস্কমিকতায়। কিছুই তার মাথায় ঢুকলো না। শরীরে কেমন জ্বর জ্বর অনুভব হচ্ছে। নিজের ঠোঁট হাত রেখে বলে,উনি কি লি*প কি*স করলেন!নাকি আমি ভুল ভাবছি। দূর কি হলো টা কি বুঝতেই পারলাম না।

চুলগুলো খোপা বেঁধে নিলো। কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিলো তারপর সবার সামনে গেলো।
এতোক্ষণে সবাই খবার টেবিলে খবার খেতে ব্যস্ত। আরহা একবার মেঘের দিকে দৃষ্টি দিলো। কেমন নির্লিপ্ত ভাবে খাবার খাচ্ছে মনে হয় কিছু সময় পূর্বে কিছুই হয়নি।
ইমতিহান বললো,শালী সাহেবা, আমার ফ্রেন্ড কি ডোজটা একটু বেশি দিয়েছে আপনি এখনো বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছেন না যে!

মেঘ কাশি দিয়ে বলে কি হচ্ছে কি ইমতিহান এসব কি ধরণের কথাবার্তা। খাচ্ছো খাও আর অন্যকেও খেতে দাও।
নীলু ইমতিহানের পিঠে জোড়ে নখ বসিয়ে দিলো। ইমতিহান উফ করে উঠলো।
মেঘ বললো, ডোজ কি কম পরছে এতো আস্তে আওয়াজ করছিস।
এবার চারজন এক সাথে হেসে উঠলো।

খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে, চারজন মিটিংয়ে বসলো।
প্রান্ত কল কাটার পর থেকে অপেক্ষায় আছে আরহা তাকে কল ব্যাক করবে। একটু পরপর ফোনের স্কিনের দিকে তাকাচ্ছে।
প্রান্তর এসিস্ট্যান্ট বললো, স্যার কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম।
– বলো

– কি়ছু জিনিসের জন্য আমাদের অপেক্ষা ছেড়ে দিতে হয়,যে জিনিসটার জন্য অপেক্ষা করছি তা হয়তো কখনো আমাদদের কাছে ফিরে আসবে না। সেই অপেক্ষা আমাদের হৃদয়ে শুধু ক্ষত তৈরী করবে।তারচেয়ে সেই অপেক্ষাকে উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে চলাই শ্রেয়।

প্রান্ত উঠে দাঁড়ালো, এসিস্ট্যান্টকে উদ্দেশ্য করে বললো, ভালোবাসা যত সহজ, ভুলে যাওয়া তত সহজ না। সে কোনদিন ফিরবে না জেনেও তার জন্য অপেক্ষা করটা ভালোবাসা। সে আর ফিরবে না সেটা আমি জানি তবুও অপেক্ষা করে তৃপ্তি পাই। এই অনূভুতি তুমি বুঝবে না।তবে যদি বুঝতে তবে এই অপেক্ষাকে উপেক্ষা নয়, আলিঙ্গন করতে। কারণ তার সাধ বড়ই তৃপ্তিদায়ক। যাকে ভালোবাসি তাকে ছাড়লেও ভালোবাসা ছাড়া যাবে না। তাকে আমি ভালোবাসবো অনন্তকাল। আরেকটা কথা জানো। প্রিয় মানুষটা কখন অপ্রিয় হয়না।আমাদের জীবনে অনেকেই আসবে যাবে। তবে সেই বিশেষ প্রিয় মানুষটার জায়গা কেউ নিতে পারে না। সে জীবনে না থেকেও হৃদয়ে থেকে যায়।

– সরি স্যার আমি বুঝতে পারিনি।
– সরি বলতে হবে না।শুধু মনে রেখো! “আমি তার প্রেমে পরিনি, আমি তাকে ভালোবেসেছি।
প্রেম তো ফুরিয়ে যায় কালের বিবর্তনে।
ভালোবাসা রয়ে যায় শতজনম ধরে।
প্রান্ত চলে গেলো। মনে তার বিষাদ।

ভালোবাসার গভীরতা তারাই বুঝতে পারে! যারা ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পায়নি।
আরহা আর মেঘের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে, আরহা বলছে বিয়ের ড্রেস হবে লাল খয়েরী রঙের। মেঘ বলছে সাদা। এনিয়ে দু’জনেই কথা কাটাকাটি করে যাচ্ছে।
নীলু বললো,আচ্ছা বিয়েটা আমার তাই কি রঙের ড্রেস পরবো, সেটা আমরা ঠিক করবো। তোদের বিয়ে হয়েগেছে,ভুলে যাস না।

মেঘ বলে উঠলো, তোমারা একাএকা বিয়ে করবে! এটা কেমন দেখায়, তারচেয়ে আসো মিলেমিশে বিয়ে করি।
তুই ঠিক আছিস ভাই, মিলেমিশে কিসের বিয়ে? নিজে যখন একাএকা বিয়ে করেছিস সেবেলায়।এবার আমার একা একা বিয়ে করার পালা। ইমতিহানের কথা শেষ হওয়ার আগেই নীলু বললো, না, না আমি একা বিয়ে করবো না। আগে বোনের বিয়ে তারপর আমার।

মেঘ বললো,আরে এতো চিন্তা করার কি আছে, দু’টো বিয়ে একসাথে হয়ে গেলেই তো হয়ে।
আমি আর বিয়েটিয়ে করতে পারবো না। আমি নাচবো গাইবো। আনন্দ করবো।আর বিয়ের দরকার কি?
মেঘ আরহার হাত ধরে বলে, বাচ্চা মানুষের কোন কথা নেই। তারা চুপ করে থাকবে আমরা বড়রা ডিসিশন নেবো।
– ও হ্যালো আপনি বাচ্চা বলছেন কাকে আর তিন মাস পরে ঊনিশ বছর হবে। আর আমার মতো এডাল্ট একটা মেয়েকে আপনি বাচ্চা বলছেন!সো ফানি।

– আমি তো ভুলেই গেছি আপনি তো বুড়ি হয়ে গেছেন
– আপনার সহস হয় কি করে আমাকে বুড়ি বলার।
– আমার অনেক কিছুই সাহস হয়। বুড়ি।
– বুড়ি আপনার বউ।
– হুম আমার বুড়ি বিবিজান।
কিরে শুধু শুধু আমার সুইট শালিকাকে কেনো খ্যাপাচ্ছিস!তোর মতো মেঘের লাইন পরে যাবে আমার শালীর এক ইশারাতে।

নীলু বললো, আহারে আর আমার ভাইয়ের জন্য মেয়ের তো খুব অভাব হবে। একবার হায় বললে, হাজার মেয়ে হ্যালো বলবে।
মেঘ বললো, থাক, থাক আমার হাজার লাগবে না। আমার বুড়ি বিবিজান হলেই হবে।

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৭

ইমতিহান বললো, তাহলে তোমরা রেডি হয়ে নাও সবাই মিলে নুরদের বাসায় যাই। বাবা, মা আসার সময় হয়েগেছে।
আরহা সেদিনের গাউন পরেছে যেটা মেঘ লন্ডন থেকে কিনেছিলো। সাথে মেচিং অর্নামেন্টস আর হালকা মেকাপ। ঠোঁটে বেবি পিংক কালারের লিপস্টিক।লিপিস্টিক দেয়া শেষ করে আয়নায় কারো প্রতিচ্ছবি দেখতেই আরহার হার্ট বিট বেড়ে গেলে। আরহা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। মেঘ আরহার একদম কাছে ঘেসে দাঁড়িয়ে, আরহার পিঠ থেকে চুল সরিয়ে দিতে লাগলো ….

তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.