তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৯
নুসাইবা ইভানা
আরহার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মেঘের উষ্ণ নিশ্বাস আরহা ঘাড়ে আছড়ে পরছে। নিজের ড্রেস শক্ত করে চেপে ধরে কাঁপা-কাঁপা গলায় বললো কি করছেন। কথাটা পুরোপুরি মুখ দিয়ে বের হলো না। মনে হয় মাঝ পথে কেউ আটকে দিয়েছে। মেঘ নিজের পকেট থেকে একটা নেকলেস বের করে, পরিয়ে দিলো আরহার গলায়।
চুলগুলো আগের মতো পিঠে ছড়িয়ে দিয়ে আরহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। থুতনিতে হাত রেখে মুখটা উপরের দিকে তুললো,এ যেনো সদ্য লজ্জায় নুয়ে পরা লজ্জাবতী পাতা। আরহার বন্ধ চোখের পাপড়ি গুলো অনবরত নড়ছে। মেঘ আরহার চোখে ফুঁ দিলো। আরহা দু’হাতে নিজের ড্রেসটা আর একটু শক্ত করে আকড়ে ধরলো। মেঘ আরহার কানের ইয়ার রিং খুলে নিজে হাতে থাকা ইয়ার রিং পরিয়ে দিলো।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেঘের স্পর্শে আরহা কেমন কেঁপে কেঁপে উঠছে। পরানো শেষ হতে মেঘ আরহার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। আরহার নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। ঠোঁট দুটো মৃদু কাঁপছে, শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত উঠা নামা করছে। মেঘ আলতে হাতে আরহার নাগের ঘাম টুকু টিস্যু দিয়ে মুছে দিলো। আরহার কপালে কপাল মিশিয়ে দিলো।দুজনের নিশ্বাস মিশে যাচ্ছে। মেঘ আরহার কপাল থেকে কপাল সরিয়ে আরহাকে জড়িয়ে ধরলে। আরহাও মেঘের সাথে মিশে রইলো। আরহার মাথায় চুমে খেয়ে বলে,তোমাকে আমি ভিষণ কষ্ট দিয়েছি তাই না? আরহার উত্তর না পেয়ে আবার কথাটা রিপিট করলো।
এবার আরহা কোমল স্বরে বললো, কিছু ব্যাথা না পেলে ভালোবাসার গভীরতা ঠিক মাপা যায় না। এই যে এতো ঝড় ঝাপটার পরেও আপনার জীবনে আমি, আমার জীবনে আপনি থেকে গেছেন।সম্পর্কের এতো তিক্ততাও আমাদের আলাদা করতে পারেনি। এতেই আমি ভিষণ খুশি। আপনার আর আমার মাঝে কেউ আসতে পারেনি।
-কি করে পারবে বলো, বছর খানেক আগেই তো কোন এক বোকারানী, আমার হৃদয় তার নামে করে নিয়েছে।
সে নাম মুছে দিয়ে আমি যে নতুন কোন নাম লিখতে পারিনি। তার সেই বোকা বোকা কথার প্রেমে পরেছিলাম। তার সেই সহজ সরল হাসির মায়ায় আটকে গিয়েছিলাম। আর সারাজীবন এভাবেই আমার বোকারানীর হয়ে থাকতে চাই। কিছু সময় দুজনেই নিরব রইলো একজন আরেকজনকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে উপলব্ধি করে নিচ্ছে। নিরবতা ভেঙে মেঘ বললো, আচ্ছা যদি তোমাকে আমি তোমার আরো একটা প্রিয় জিনিস উপহার দেই! আমার উপর ভরসা করে মেনে নেবে।
– আপনি আমার প্রিয় আমার আর কিছু চাই না।
– চাইনা বললেই হবে আমি তো দেবোই।
– না, না আমি এতো তাড়াতাড়ি চাই না।
– মেঘ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,নিরাশ কন্ঠে বললো, কেনো চাওনা!
-আরহা মেঘের থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে, আমি এখন কোন বাচ্চা চাইছি না। এখন হানিমুনে যেতে পারলাম না। মন ভরে আপনার সাথে ঘুরতে পারলাম না।
-লাইক সিরিয়াসলি! তোমার মনে হলো আমি, বেবি প্লানিং করছি। মেঘ কথাটা বলে জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগল।
আরহা বোকার মতো তাকিয়ে ভাবছে আমি কি কোন ভুল কথা বলে ফেলিছি। মেঘের হাসি দেখে রাগ হচ্ছে। তাই কাঁদো কাঁদো, স্বরে বললো, হাসবেননা তাহলে আমি যাবো না। এখনি ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলবো।
– আরে সুইট বিবিজান এখন আমি ঔসব করতে পারবো না। এখন আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে।তুমি বেবি চাইছো দেবো তোমাকে বেবি। তাই বলে এতো তারাহুরো করার কি আছে।তাছাড়া টাইমিংয়ের একটা ব্যপার আছে।
আরহা মুখ ঘুরিয়ে বলে অসভ্য লোক, মুখে কিছু আটকায় না।
– নিজে বললে সে বলায়!
– আমার ঘাট হয়েছে আর বলবো না।
– আচ্ছা তাড়াতাড়ি চলো আমার ওই বাসায় যাওয়ার আগে তোমার একজন প্রিয় আপনজনের সাথে তোমাকে দেখা করবো।
-সেই কখন থেকে বলে যাচ্ছেন আমার আপনজন আমার আপনজন বর্তমানে এই পৃথিবীতে, আপুই আর আপনি ছাড়া আমার আপনজন কেউ নেই।
শুনেন কাছের মানুষ অনেক থাকে। তবে আপনজন হাতে গোনা।
– বিবিজান আর কোন কথা শুনতে চাইনা যদি সত্যি আমাকে আপনজন মনে করে থাকো। তাহলে তুমি করে বলবে। আর না হলে কথা বলবা না।
আরহা আস্তে করে বললো দেরি হচ্ছে যাবেন না।
– কি বললে আবার বলো, আমি তোমার হ্যাসবেন্ড তুমি আমাকে ভালোবেসে ডাকবে।
আরহা নিশ্চুপ। মেঘ আবার বললো,তোমার চুপ থাকার অর্থ দাঁড়ায় তুমি মন থেকে আমাকে মেনে নিতে পারনি! ঠিক আছে তুমি থাকো আমি আসছি
মেঘ সামনের দিকে পা বাড়াতেই।
আরহা পেছন থেকে মেঘকে জড়িয়ে ধরে বলে, তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবে।একবার যেতে পেরেছো, তখন তোমাকে আটকাতে পারিনি এবার আর যেতে দিচ্ছি না। মেঘ মনে মনে হাসছে। কারণ তার ট্রিকস কাজে লেগেছে নিজের আনন্দটাকে চেপে রেখে বললো,সত্যি আগলে রাখতে চাও তো?
– এভাবে বলছো কেনো তুমি আছো মানে আমি আছি
মেঘ সামনে ঘুরে আরহাকে বলে,ভালো অভিনয় শিখেছো বিবিজান।
– আচ্ছা এবার চলো আর কথা বাড়াবা না।
-হাতে হাত রাখো এখন থেকে বাকি জীবন এই হাত এভাবে ধরে রাখবে।
দু’জনে বের হয়ে আসলো মেঘ ড্রাইভ করছে আরহা মেঘের পাশে বসে আছে।
ইশতিয়াক সাহেব আসরের নামাজ পরে বারান্দায় দাঁড়ালেন আজ তার মনে কোন বিষন্নতা নেই। মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন৷ এখন থেকে আর তাও করতে হবেনা। এবার হয়তো মরেও শান্তি পাবো।
মনে মনে বলছে,শারমিন তুমি হয়তো আমাকে ক্ষমা করবে না। আমার জন্য তোমাদের এতো কষ্ট হস্য করতে হয়েছে।পারলে ক্ষমা করে দিও শারমিন। আমি আবেগে গা ভাসিয়ে তোমাদের সাজানো জীবনটা নষ্ট করেছি। এই মুখ আমি আমার মেয়েকে দেখাতে চাইনা।
নীলু আর ইমতিহান এসেছে নূরদের বাসায়। নূর বললো, ওয়াও ভাবি তোমাকে তো পুরোই নতুন বউদের মতো লাগছে। কি ব্যপার বলোতো। নিজেরা কি একা একা বিয়েটা সেরে ফেলছো নাকি।
ইমতিহান বললো, এই তোর লজ্জা করেনা বড় ভাইয়ের হবু বউয়ের সাথে মজা করতে!
– এটা তুমি কি বললা ভাইয়া। ননদ, ভাবির মধ্যে কত কিছু হবে সেসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তারচেয়ে এটা বলো, এখনো হবু ভাবি তো নাকি ভাবি করে নিয়ে এসেছো।
ইমতিহান নুরের কান টেনে বলে তবে রে। নীলু এসে ইমতিহানের কান টেনে বলে, আমার কিউট ননদির কানটা ছেড়েদিন না হলে নিজের কানটা আর থাকবে না।
ইমতিহান নুরের কান ছেড়ে দিয়ে বলে দল ভারী করা হচ্ছে। একবার শুধু আমার কিউট শালীকাকে আসতে দাও!
– ভুলে যাচ্ছ কেনো সুইটহার্ট, সেখানে আমার দুলাভাইও আছে।
– তোমাকে বিয়েই করবো না।
– নীলু ইমতিহানের গলা টিপে ধরে বলে, তবে রে সাহস কতো বড় তোমার এই কথা বলার। যাও আমিও বিয়ে করবো না,তোমাকে।
এরমধ্যেই কারো কঠিন কন্ঠ ভেসে আসে কার এতো বড় সাহস আমার ছেলের গলা ধরে?
আরহা মেঘকে বলছে, এই আমরা কোথায় যাচ্ছি, এরাস্তা তো নূরদের বাসার রাস্তা না। না বললে আমি যাবোই না।
মেঘ আরহার কথাকে ইগনোর করে বললো, আচ্ছা তোমার বাবার ফ্যামিলি সম্পর্কে তুমি কতটুকু জানো?
– তেমন কিছুই জানিনা। শুধু জানি আমার দাদু,অনেক বড় বিজনেস ম্যান ছিলেন।
– আর কিছু জানো!
আমার চাচ্চু ছিলো একজন, কিন্তু বিপদের দিনে তারা কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। আর তারা কোনদিন আমাদের খোঁজও নেয়নি। আরহার গলা ধরে আসলো চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরার আগেই মেঘ নিজ হাতে তা মুছে দিয়ে বললো,তোমার চোখ থেকে যা অশ্রু ঝড়েছে তার মূল্যি দিতে পারবো না।
তুমি আসবে বলে পর্ব ৩৮
নতুন করে কেনো ঋণী করছো! এখন থেকে কখনো কাঁদবে না। আমি আছি তো আর কখন তোমায় ছাড়বো না। বিশ্বাস আর ভরসা করতে বলবো না। কারণ সেটা তোমার মন থেকে জন্ম নেবে। আমি বলে বলে করাতে পারবো না। আরহা কিছু বলবে, তার আগেই দ্রুত গতিতে একটা বাস তাদের দিকে ধেয়ে আসতে লাগলো…..