তুমি আসবে বলে পর্ব ৬
নুসাইবা ইভানা
মিসেস মারিয়া মোর্শেদ আফরোজের হাত ধরে বলে, মোর্শেদ আমি কি ভুল করে ফেলেছি মেঘের সাথে আরহার বিয়েটা দিয়ে! দেখো তোমার আমার মাঝেও তো বারো বছরের ডিফারেন্স তাও তো আমরা একে অপরকে ভালোবেসে এক সাথে আছি।সুখে দুঃখে একে অপরের ছায়া হয়ে। আমি ভেবেছি মেঘ ঠিক তোমার মতো আরহার ছায়া হবে।আমার ভাবনাটা কি তবে ভুল ছিলো! আর তাছাড়াও তুমিই বলো ওই মূহুর্তে আমাদের আর কি করার ছিলো! মেঘ ছাড়া আর কার সাথে আরহার বিয়েটা দিতাম! ওই পাহাড়ি মানুষদের হাত থেকে আরহাকে বাঁচানোর এই একমাত্র পথ ছিলো।
– শান্ত হও মারিয়া। এতো টেনশন করো না দেখবে আমাদের আরহার জন্য আমরা মেঘের চেয়ে বেটার কাউকে খুঁজে নেবো।
– মেঘ নয় কেনো মোর্শেদ?
– দেখো আমার মনে হচ্ছে মেঘ আরহাকে মেনে নেবে না।
– কেনো নেবে না বলো!আরহা বড় হলো অনেক রূপবতী হবে। তাহলে সমস্যা কোথায়?
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– দেখো মারিয়া জোড় করে সম্পর্ক তৈরী করা যায় না তার জন্য মনের টান থাকতে হয়। আমি বলছি না ভবিষ্যতে ওদের ডিভোর্স হবেই। হতেও তো পারে ততদিনে সব কিছু মেনে নেবে মেঘ। আর যদি না মানে তাহলে আরহার জন্য জীবনসঙ্গী আমরা ঠিক করবো। অথবা আরহা নিজেও কাউকে পছন্দ করতে পারে।
– তুমি বলতে চাইছি মেঘ যা বলছে তা মেনে নেবো! আমাদের কোন দায়িত্ব নেই। বড় হয়ে আরহা যখন প্রশ্ন করবে তখন আমরা উত্তর কি দেবো?
– দেখো মারিয়া বড় হবে তারপর তো এখন চিন্তা করো না।
– তুমি বুঝতে পারছোনা মোর্শেদ, একটা মেয়ের জন্য বিয়েটা কত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাছাড়া আরহাকে কি বলবো যখন নিজের হ্যাসবেন্ডের কথা জানতে চাইবে?
– যদি জানতে চায় তবে মিথ্যে বলা ছাড়া উপায় নেই।
-শেষ পর্যন্ত মিথ্যে। তাও বাচ্চা মেয়েটার সাথে
– তুমি শান্ত হও তো মারিয়া, পরিস্থিতি বলে দেবে কখন কি করতে হবে। এবার চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করো।
হয়দার মিয়া বাড়ি ফিরলেন মধ্য রাতের দিকে, বিধ্বস্ত মন,ক্লান্ত শরীর নিয়ে। সোনিয়া বেগম তখনো বসে ছিলেন দুয়ারে। অপেক্ষা করছিলেন হায়দার মিয়ার ফেরার।
হায়দার মিয়াকে আসতে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো, হায়দার মিয়া সোনিয়া বেগমকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ডুকে পরলো। সোনিয়া বেগম কিছু বলতে যেয়েও বললেন না। হায়দার মিয়া সেভাবেই শুয়ে পরলেন হারিসের পাশে। সোনিয়া বেগম হায়দার মিয়ার পাশে যেয়ে বললেন, সারাদিনে তো দানাপানি কিছুই মুখে তুলো নাই, কইছিলাম কি রাগ ছাইড়া চারটা খাইয়া লও।
সোনিয়া বেগমের কথার কোন প্রতিত্তোর এলো না।
মেঘ বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে পাশে ফিরে বললো,সমস্যা কি আপনার?
– আরে জনাব সমস্যা হতে যাবে কেনো! ভালোলাগা বলুন।
– দেখুন এসব বেহায়াপনা অন্য কোথাও করবেন। এখন নামুন রিক্সা থেকে।
– আরে রাগ করছেন কেনো! আমার নাম হিয়া। আর শুনেন ওই যে একটা গান আছে না চুমকি চলেছে একা পথে.. সেটা ঘুরিয়ে বললে কি হবে বলুন, সাহেব চলেছে একা পথে সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে!
– এই মামা রিক্সা থামান আমি নামবো।
– আরে এই বৃষ্টির মধ্যে নেমে পরবেন? শুনেন আমি সামনের মোড়েই নেমে যাবো। আপনি তো ওদিকেই যাচ্ছেন।
– আমি যেদিকেই যাই আপনার মতো থার্ড ক্লাস মেয়েরেস সাথে এক সাথে যাবো না।
– সম্মান দিচ্ছি তাই গায়ে মাখছেন না। মানুষ জড়ো করে গনো ধোলাই খাওয়ালে বুঝবেন এই হিয়া কি জিনিস।
– মেঘ কথা না বাড়িয়ে পকেট থেকে হাজার টাকার নোট বের করে রিক্সা চলকের হাতে গুঁছে দিলো।
– আমার কাছে তো ভাঙতি নাই বাজান।
– ভাঙতি লাগবে না পুরোটাই রেখেদিন।
মেঘঝুম বৃষ্টির মধ্যে হাঁটা ধরবে তখন হিয়া বললো বাপের টাকা থাকলে এরকম ফুটানি সবাই করতে পারে! পারলে নিজের টাকায় ফুটানি করবেন।
আর হ্যঁ একো রাতে রিক্সা পাচ্ছিলাম না তাই আপনার মতো মানুষের সাহায্য নিতে হলো। নইলে এই হিয়া আপনার দিকে ফিরেও তাকাতো না।
মেঘ মনে মনে ভাবছে কি গায়ে পরা মেয়েরে বাবা। লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই। বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফিরলো মেঘ।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আরহা ঘরে আলো জ্বলছে । আকশে তারা খুঁজতে ব্যস্ত আরহা। যদিও আজ রাতে তারার দেখা মিলবে না। বার কয়েক হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি ছুয়ে দিলো। বৃষ্টির পানি স্পর্শ করতেই মনে পরে গেলও তারা মায়ের কথা। এমনি বৃষ্টির দিনে ভিজছিলো আরহা, তখন তার “মা” তাকে কত রাগারাগি করছিলো আজ মা নেই শাসন করার কেউ নেই। ডান হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো।
হঠাৎ আরহার চোখ গেলো নিচের দিকে হালকা আলোতে একটা পুরুষ অবায়ব দেখতে পেলো। আরহা ভাবলো হয়তো চোর এসেছে। রুম থেকে বের হয়ে চোর চোর বলে চেচাচ্ছে। ততখনে মেঘ বাসায় প্রবেশ করেছে ড্রিম লাইটের হলদে আলো সব কিছু স্পষ্ট দেখা না গেলেও আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। মেঘের কানে আরহার কন্ঠ পৌঁছালো।
মেঘ ভাবলো সত্যি হয়তো চোর এসেছে। দৌড়ে উপরে এসে বলে কোথায় চোর?আরহা মেঘকে স্পষ্ট দেখতে পেলো না তাই আরো জোড়ে জোড়ে বলতে লাগলো চোর চোর। মেঘ রেগে পিছন থেকে আরহার মুখ চেপে ধরে বলে এই পিচ্চি একদম চুপ বলো চোর কোথায়! আরহা ভাবলো চোর তাকে মেরে ফেলবে তাই তার মুখ আটকে রেখেছে। সর্বশক্তি দিয়ে কামড় বসিয়ে দিলো মেঘের হাতে। হঠাৎ আক্রমণে মেঘ আউচ শব্দ করলো। মেঘের হাত কিছুটা আলগা হতেই আরহা ছুটে নিচে চলে এসে টেবিলের নিচে লুকিয়ে পরল।
মেঘ বুঝতেই পারলোনা কি থেকে কি হয়ে গেলো।
ততক্ষণে নীলু আর নীলুর মা বাহিরে এসেছে। নীলুর মা লাইট অন করতেই উপরে মেঘকে দেখতে পায়। মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীলুর মা জিজ্ঞেস করলো কি হইছে বাবা?
– কিছু না বাড়িতে জঙ্গলি বিল্লিড় আবাদ হয়েছে। বলেই হন হন করে চলে গেলো নিজের রুমে।হাতে প্রচন্ড ব্যথা করছে। মনে মনে বলছে এই মেয়ে মানুষ তো নাকি কোন জঙ্গলী জা*নো*য়ার উফ কি দাঁত রক্ত বের করে ফেলেছে। ফাস্টএইড বক্স থেকে এন্টি সেফটিক নিয়ে হাতে লাগিয়ে নিলো। মেঘের মনে হচ্ছে কোন মানুষ নয় বিষাক্ত কোন পষু তাকে কামড়ে দিয়েছে। কাভার্ড থেকে টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো ওয়াশরুমে।
আলো দেখে আস্তে আস্তে মাথা বের করে চারদিকে নজর বুলিয়ে নিচ্ছে আরহা। চোর কোথায় গেলো সেটাই দেখার চেষ্টা করছে। নীলু টেবিলের নিচে আরহাকে দেখে হাসতে হাসতে বললো, কি গো সই তুমি টেবিলের নিচে কি করো?
– চোর কি চলে গেছে?
– চোর আসলো কোথা থেকে। তুমি বেরিয়ে আসো।
– আরহা বেরিয়ে আসলো। আবার বললো, বলোনা চোর কি চলে গেছে!
– আরে বোকা মেয়ে চোর আসবে কোথা থেকে।
– একটু আগেই চোর ছিলো ওই সিঁড়ির উপরে আমাকে পেছন থেকে এভাবে মুখ চেপে ধরেছিলো। ভাগ্যিস আমি কামড়ে পালিয়েছি নয়তো নির্ঘাত মা*রা পরতাম।
– আরহার কত শুনে নীলু হেসে কুটি কুটি হচ্ছে। নীলুর যা বোঝার বুঝে গেছে।
নীলুকে হাসতে দেখে আরহা বোকার মতো তাকিয়ে থেকে বলে, তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না চোর এসেছিলো!
– আরে বোকা মেয়ে ওটা চোর না, ওটা তো তোর… আর বলতে পারলোনা নীলুর মা এসে নীলুকে এক ধমক দিলেন। নীলু মূহুর্তেই চুপসে গেলো।
নীলুর মা খাবার ট্রে হাতে নিয়ে আরহাকে বললো, বউ মা চলে এসো আমার সাথে। এই বাসায় সিকিউরিটি আছে কোন চোর আসতে পারবে না। আসো আমার সাথে
– আসছি তবে আমি এখন কিছু খেতে পারবো না।রাতে কয়বার খায় মানুষ!
– তুমি আসোতো এ খাবার তোমার জন্য নয়। ছোটো সাহেবের জন্য।
আরহা যাওয়ায় আগে একবার নীলুর দিকে তাকালো,তখন নীলু কি বলতে চাইল!
আর ছোট সাহেবটাই বা কে?
তুমি আসবে বলে পর্ব ৫
নীলুর মা আরহাকে রুমে পৌঁছে দিয়ে বললো, তুমি শুয়ে পরো আমি ছোট সাহেবকে খাবার দিয়ে আসছি।
আরহা ভদ্র মেয়ের মতো শুয়ে পরলো।
মেঘ ড্রেস চেঞ্জ করার সময় তার পকেটে একটা চুড়ি পেলো ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মাথা মুছতে মুছতে গভীর চিন্তা মগ্ন হলো চুড়িটা নিয়ে। এটা কার হতে পারে?