তুমি আসবে বলে পর্ব ৮
নুসাইবা ইভানা
ইমতিহান টেনশনে পায়চারি করছে। দুই রাগী মানুষ এক সাথে হলে কে যানে কি হয়? সামিরা ইমতিহানকে দেখে হেসে বলে বিসিএস পরীক্ষার সময়ও মনে হয়না কেউ এতো পেরেশানিতে থাকে। রিলাক্স। মেঘ সামলে নেবে।
– তুই হিয়াকে জানিস না প্রচন্ড বদ মেজাজী মেয়ে। আর মেঘের রাগ সম্পর্কে তো ভালোই ধারণা আছে।
– হিয়াকে তো জানিনা তবে মেঘ যা মানুষ। মনে আছে গতবার ওর বার্থডেতে ইরা ওকে কিস করেছিল বলে কি কান্ডটাই না করলো।
– এরজন্যই টেনশন হচ্ছে।
– তুই বরং হিয়াকে টেক্সট করে বলে দে, দেখো এখানে আমার সম্মান জড়িত তুমি কিন্তু আমার ফ্রেন্ডের সাথে ভালো ব্যবহার করবে।
সামিরার কথামতো টেক্সট করে দিলো ইমতিহান।
টেক্সটা পড়ে মুচকি হেসে হিয়া বললো, তুমি কি আমাকে এতোটাই বোকা ভাবো! তোমার সাথে যা ইচ্ছে ব্যবহার করি তারমানে সবার সাথে তাই করবো।
পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেঘ কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে এসে দেখতে পেলো সাদা ড্রেস পরা একটি মেয়ে বসে আছে। যদিও চেহারা দেখা যাচ্ছে না। মেঘ পেছন থেকে ডেকে বললো “এই যে মিস”
হিয়া ঘুরে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে আপনি?
– মেঘও বলে আপনি?
মেঘ ফোন বের করে নাম্বার ডায়াল করার আগে মনে মনে বলছে, আল্লাহ এই মেয়ে যেনো না হয়! তারপর ডায়াল করলো।
সশব্দে হিয়ার ফোন বেজে উঠলো, হিয়া ফোন কেটে দিয়ে বলে তার মানে আপনি ইমতিহানের বন্ধু?পুরো দুনিয়াতে মানুষের অভাব পরেছিলো ইমতিহানের জন্য! আপনাকেই বন্ধু হতে হলো।
মেঘ একটু সাইডে এসে ইমতিহানকে কল করে বললো, আর কোন মেয়ে পেলি না শেষ পর্যন্ত এই থার্ড ক্লাস মেয়ের সাথেই প্রেম করতে হলো! আমি কোন হেল্প করতে পারবো না। আমি চলে যাচ্ছি।
– প্লিজ বন্ধু আমার ওই মেয়ের কথা বাদ দে তুই আমার জন্য সাহায্য কর!
– না করবো না বিয়ে হয়ে যাক এই মেয়ের তারপর তোকে আমি এর চেয়ে ভালো, ভদ্র,সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করিয়ে দেবো।
– দেখ আমি কিন্তু হিয়াকে নিয়ে সিরিয়াস ওর কিছু হলো নিজেকে শেষ করে দিতে দু’বার ভাববোনা এবার তোর যা ইচ্ছে কর!
– মেঘ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, শুনুন ব্যক্তিগত শত্রুতা সাইডে রেখে এখন যে কাজ করতে এসেছি তার সমাধান বের করতে হবে।
– শুনুন এখন আপনি আর আমি কাজী অফিসে যাবো।
– মেঘ সরে যেয়ে বলে আমি বিবাহিত। আমার বউকে অনেক ভালোবাসি দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবো না।
আমার বউ অনেক সুন্দরী, অনেক সুইট,অনেক কিউট,রুপবতী রাজকন্যা তাকে রেখে আপনার মতো পেত্নীকে বিয়ে অসম্ভব।
হিয়া বোকার মতো মেঘের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, আরে কাজী অফিসে যাওয়ার সাথে আপনার বিবাহিত হওয়ার সাথে কি সম্পর্ক! দেখুন বলেছেন সাহায্য করবেন এবার চলুন।
মিসেস মারিয়া আধ শোয়া অবস্থায় থেকে আরহাকে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে বলে, আরহা কাল তোকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হবে। পড়া লেখা করতে ভালো লাগে তো?
– আরহা খুশি হয়ে বলল সত্যি আমি আবার পড়া লেখা করবো!
– হুম পড়া লেখা করে অনেক বড় হও। মনে মনে বললেন আমার ছেলে যেনে তখন তোমাকে দেখে আপসোস করে।
নীলুর মা এসে মিসেস মারিয়াকে ঔষধ খাইয়ে দিলেন। মিসেস মারিয়া বললো, শোন নীলুর মা, তোমার আর নীলুর সাথে আমার কথা আছো তুমি নীলুকে নিয়ে আসো তো। নীলুর মা চলে আসলো।
মিসেস মারিয়া আরহাকে বললো, যাও ফ্রেশ হও আরহা বিকেলে তোমার আঙ্কেলের সাথে বাহিরে যাবে কিছু কেনাকাটা করতে। আরহা চলে আসলে আসার সময়ে একবার উঁকি দিলো ছোট সাহেবের রুমের দিকে, এই ছোট সাহেব কই থাকে, একবারো দেখলাম না। মনে মনে বলছে আর বেখেয়ালে হাঁটছে হুট করেই শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে যেই চিৎকার করবে, তখন মনে হলো কেউ তার মুখ আটকে দিয়েছে, ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে আরহা। কারো গম্ভীর কণ্ঠ কর্ণগোচর হতেই চোখ মেলে তাকালো আরহা।
এমনিতেই মেঘ রেগে ছিলে তারউপর আরহা এসে তার সাথে ধাক্কা খাওয়াতে আরো রেগে গেলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো, চোখ কি কপালে রেখে হাঁটো! চোখে দেখতে পাওনা নাকি!
আরহা বোকাবোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে, ফর্সা শরীর কালো টি শার্ট, দারুণ মানিয়েছে মেঘকে। আরহাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ ধমকের সুরে বলে, কি হচ্ছেটা কি এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আরহাকে ধরে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে, এই মেয়ে শুনে রাখো আমার সামনে ভুলেও আসবে না। আমার থেকে দূরে দূরে থাকবে।
কথটা বলে সামনে পা বাড়াতেই মেঘের মনে হলো কেউ তার হাত ধরে আছে, পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে আরহা হাত ধরেছে,
– তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার হাত ধরেছো কোন সাহসে!
– আরহা কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,আপনি ছোট সাহেব তাইতো! আমাতে ক্ষমা করে দিন সত্যি বলছি আপনার সামনে আসবো না।
– রাগে চোয়াল শক্ত করে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, যাও এখান থেকে আর একটাও কথা বললে, আর কিছু বলার আগেই আরহা হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলে ক্ষমা করে দিলে কি হবে। ক্ষমা করে দিন। আমাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিলে কোথায় থাকবো! ঠিকমতো কথা বের হচ্ছে না আরহার হেঁচকির কারণে। তবুও থেমে থেমে বললো এখনো বরটাও একবার দেখিনি।
– মেঘ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে এই মেয়ে কান্না থামাও, একটু ধমক দিয়ে বললো, আর চুপচাপ নিজের রুমে যাও সময় হলে ক্ষমা করে দেবো। এখন চোখের সামনে থেকে বিদায় হও।বাচ্চা একটা মেয়ে বলে কিনা এখনো বরকে দেখিনি।
নীলু আর নীলুর মা শেষের দিকের কিছু কথা শুনতে পেলেন।
আরহা চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে আসলো।
মেঘ রুমে এসে নিজের শার্ট খুলে বেডে ছুড়ে মেরে বসে পরলো, মেজাজ তার প্রচন্ড লেভেলের খারাপ। একেই তো হিয়ার যতসব আজগুবি আইডিয়া, তার উপর বাসায় এসেই আরহার সাথে সাক্ষাৎ। নিজের সেল ফোন বের করে ইমতিহানের নাম্বার ডায়াল করলো,
ইমতিহান সাথে সাথে রিসিভ করলো,
মেঘ বললো তুই এই পাগলের সাথে কোন রকম রিলেশন রাখবি না।
– দেখ এভাবে বলিস না ও একটু রাগী তবে আমাকে সত্যি ভালোবাসে।
– ভালোবাসা! ওই তুই কি স্বপ্নে বাস করিস! ও তোকে ভালোবাসলে আমাকে এসব বললো কেনো?
– আরে কি বলেছে সেটা তো বলবি না বললে বুঝবো কি করে।
– আমাকে বলে কাজী অফিসে চলুন, আমি কত কিছু বললাম আমি বিবাহিত আমার বউ আছে। তাও একি কথা বলে তাই চলে আসছি।
– সত্যি তোকে এ কথা বলেছে হিয়া!
– সত্যি মানে সত্যির বাবা। এই মেয়েকে তুই ভুলে যা। যে অন্য একটা ছেল কে এক/ দুবার দেখেই কাজী অফিসে নিয়ে যেতে চায়। তার ক্যরেক্টার আর কত ভালো হবে বল!
ইমতিহান ছেলেটা বড্ড ইমোশনাল, কান্না ভেজা কন্ঠে বলে, আমি ওকে সত্যি ভালোবাসি! কি ভাবে ভুলে যাবো বল! ওকে ছাড়া তো চিন্তাও করতে পারিনা। দেখ মেঘ আমার মনে হচ্ছে তোর কোথাও ভুল হচ্ছে হয়তো হিয়া তোকে অন্য কিছু বলতে চেয়েছে তুই অন্য কিছু শুনেছিস।
– মেঘ ধমক দিয়ে বলে,এরকম মেয়েদের মতো কাঁদবি না। ওই মেয়ে ছেড়ে গেলে কি? দুনিয়াতে আর মেয়ে থাকবে না। শোন এভাবে ফেছ ফেছ করে না কেঁদে রাগী ভাবে ওই হিয়া না টিয়ার সাথে কথা বল।
এরকম ভাবে কথা বললে কোন মেয়েই থাকবে না। ফোন কাট আর ওই টিয়াকে ফোন করে ঝাড়ি মা*র
হিয়া বাসায় ফিরে রাগে গজগজ করছে কি ছেলেরে বাবা, আমার পুরো কথা না শুনেই ভুলভাল বকে চলে গেলো আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না। এটা হতে পারে না হিয়া কারো কাছে হেরে যাবে কিছুতেই না। নিজের রাগ কমাতে বক্সে নাগিন গান ছেড়ে উড়াধুড়া নাচছে।
তুমি আসবে বলে পর্ব ৭
হিয়ার মা বলছে আজকে আবার কার সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে এসে বাসায় তান্ডব করছিস, বলি শশুর বাড়ি গেলে ঝাটার বাড়ি একটাও নিচে পরবে না।
হিয়া গান বন্ধ করে দিয়ে তার আম্মুকে এসে বলে, বিয়ে করবো তবেই না শশুড় বাড়ি!
– বাজে কথা বন্ধ করো আগামীকাল তোমার কাবিন।
হিয়া জোড়ে চিৎকার করে বলে, কিহহহহহহহ