তুমি হাতটা শুধু ধরো - Golpo Bazar

তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব ৪

তুমি হাতটা শুধু ধরো

তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব ৪
Jhorna Islam 

গ্রামের পরিবেশ টা শহর থেকে সবসময়ই আলাদা।বাতাসে মুক্ত ভাবে স্বাস নেওয়া যায়।শহুরে জীবনযাত্রার মতো হয়তো এতো আধুনিকতার ছোঁয়া নেই।কিন্তু মুক্ত বাতাস,,,,নিরিবিলি পরিবেশ,,, বাতাসে অন্য রকম ছোয়া রয়েছে।

সোহার বাবা পাবন মিয়া গ্রামের একজন সহজ সরল লোক।গ্রামে উনাকে তার সরলতা,ও পরোপকারী মনোভাবের জন্য সবাই পছন্দ করেন। গ্রামের অল্প শিক্ষিত লোক হলেও উনার কথা বলার ধরণ, চালচলণে একটা আভিজাত্যের ছাপ রয়েছে।খুবই রুচিসম্মত মানুষ।নিজের বাড়িটাও রুচিসম্মত ভাবে তৈরি করেছেন।মেয়ে গুলোকে শিক্ষিত করেছেন।যদিও বড় মেয়েকে বেশি পড়ানো হয়নি।মাত্র দশম শ্রেণি পর্যন্ত পরিয়েছিলেন।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বড় মেয়ে নোহাটার সে কি শখ ছিল পড়াশোনা করে কিছু একটা করার।কিন্তু পাবন মিয়া তখন কি যে হয়েছিল।নোহার শশুর ও গ্রামের কিছু মানুষের প্ররো’চনায় পড়ে জীবনের বড় ভুলটা করলেন।প্রথমে নোহার শশুর গনি মেম্বার আর স্বামী ওমি ভালো রূপ দেখিয়ে বিয়ে করে। এখন মেয়ের সাথে অশান্তি করে।মা’রধর করে। এই অত্যাচার মুখ ব’ন্ধ করে হজম করে নেয় নোহা।বাবার উপর বিয়ে দেওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই রাগ।তাই জেদ ধরে ওখানে পরে আছে।

পাবন মিয়ার সাথে কথাও বলেনা ভালো করে।অথচ দুই মেয়ে বাবা ছাড়া কিছুই বুঝতোনা।
এসবই বাড়ির পাশের বটগাছের নিচে বসে বসে ভাবতেছিলেন পাবন মিয়া।সোহার মা রমিলা সোহার বাবাকে খুজতে খুজতে এসে দেখেন,,, পাবন মিয়া সামনের দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছেন। অবশ্য রমিলার বুঝতে বাকি নেই উনি কি ভাবছেন।

” কি গো এখানে এই ভরদুপুর বেলা বসে আছো কেনো? খাওয়া দাওয়া বলে যে একটা কিছু আছে মাথায় আছে?”
মিলা পাশে একটু বসো।
সোহার মা কথা বাড়ায় না চুপচাপ পাশে বসে পাবন মিয়ার কাঁধে হাত রাখে।
মেয়েদের কথা ভাবছো?

ফোন করলেইতো পারো।সোহাটার সাথে কথা বলিয়ে দেওনা।মেয়েটা নতুন পরিবেশে গেছে মানিয়ে নিতে পেরেছে কিনা কে জানে? তাও যে চঞ্চল স্বভাবের ওরে নিয়া ব’ড্ড ভ’য়। আমার নোহাটা যেমন শান্ত শিষ্ট। সোহাটা তেমনই চঞ্চল।
“আমি কি আবারো আমার ছোটো মেয়ের সাথে একই ভুল করলাম নোহার মা?”
এসব তুমি কি বলতেছো?

এসব আজে’বা’জে ভাবনা মাথায় আইনো নাতো। বাড়ি চলো।তুমি দেইখো আমাদের দুই মেয়েই একদিন অনেক সুখি হবে।বাবা মার দোয়া বিফলে যাবে না।এখন বাড়ি চলো খাবে।পরে দুই মেয়েকেই ফোন দিয়ে কথা বলবে।মনটা হালকা লাগবে।
হুম চলো! একটা দীর্ঘস্বাস ফেলে উঠে দাড়ান দু-জনেই।

দুপুরের খাবার খেয়ে দায়ান নিজের রুমে কাজ করতেছিল।এমন টাইমে রুশের কল আসে।
হ্যা রুশ বল।বাসায় পৌঁছেছিস?
– হুম স্যার থু’রি দোস্ত!কিছুক্ষন আগেই। এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে,,, এখন তোকে কল দিলাম।
-ওহ আচ্ছা। কাল তর অফিসে আসা লাগবোনা।একদিন রেস্ট নে।

– কিন্তু অনেক কাজ জমে গেছে,,,,,,,আর কিছু বলার আগেই দায়ান বলল।
-চুপ থাক বেটা একদিন রেস্ট নে।
– আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করিস।
– হুম।আর শুন একটা কথা!
– হ্যা বল।

– ভালো একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ নিয়ে আমাকে জানা।
– তুই কি আবার পড়াশোনা করবি নাকি?বুইড়া বয়সে তর আবার পড়তে মন চাইলো দোস্ত? কোথায় এই বয়সে বা’চ্চা পয়’দা করবি।তাদের ভর্তি করবি তা না,,,,,,মজার ছলে বলে রুশ।
-শাট-আপ ইডিয়ট। মজা করবিনা একদম।আমি মজার মোডে নাই।সোহার জন্য বলছি।
– ওহ তাই বল। ভাবিকে ট্রান্সফার করবি?ভাবির সাথে মিট করতে পারলামনা। তর বাসায় দাওয়াত দে তাড়াতাড়ি। ভাবির হাতে রান্না খাবো।

– এসব বাদ দে।তুই জানিস বিয়ে টা কি পরিস্থিতি তে করতে হয়েছে আমায়। আমি চাই মেয়েটা নিজের পায়ে দাড়াক।এবং নিজের লাইফটা গুছিয়ে নেক।আমার

– নিজের লাইফ কে একটা সুযোগ তো দে।দেখবি ঠ’কবি না।আর সবাইতো এক না।লাইফে বেঁচে থাকার জন্য কেউ একজন দরকার।একা কখনো বেঁচে থাকা যায় না।লাইফটা তোকে সে সুযোগ করে দিয়েছে।হেলায় হারাস না।আর ও গ্রামের সহজ সরল মেয়ে।এতো কুটিলতা নেই।নাহয় নিজের মনের মতো গড়ে নিবি। তর চাচার প্রতি আমি কৃ’তজ্ঞ। উনি একদম ঠিক করেছেন।আর উনি অনেক বুঝদার মানুষ।হয়তো কিছু আ’চ করতে পেরেই তোকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়েছে।তর চাচি যেই কু’টিল মহিলা।আমি সিউর কিছু খিচুড়ি পাকিয়েছিলো। সাথে তার ঐ নে’কি মেয়ে তো আছেই।

অফ যা ভাই।এসব পে’রা ভালো লাগে না। তোরে যা বলছি তা কর। নয়তো পড়ে লেট হয়ে যাবে।এমনিতেই এই মেয়ে পড়া চো*র যা বোঝলাম।
আহারে ভাবির নামে এসব বলিস না দোস্ত।

ঠিকই বলছি।এই মেয়ে কি বলে জানিস? বলে কিনা ভেবেছে বিয়ে হয়ে গেছে বলে আর পড়তে হবে না।আর এতো পড়াশোনা করে কি হবে? বাচ্চা মানুষ করার জন্য যতটুকু দরকার তার আছেই।বুঝতে পারছিস কেমন পাকা?
রুশ এসব কথা শুনে হো হো করে হেসে দিল।দোস্ত ভাবিতো সুপার ফাস্ট। বসে আছিস কেনো? প্লে’নিং শুরু করে দে।আহা চাচচু ডাক শোনার জন্য মনটা আমার আকু’পাকু করছে।
দায়ান দাঁত কির’মির করে বললো ফাইজলামি করিস?
না দোস্ত মাফ চাই।আমার ভুল হয়ে গেছে।

আর আমি ভার্সিটির খোঁজ নিবো।
হুম বায়।টেক কেয়ার।
বায়।
রুশ ফোন রেখে বলল,,,,,তুমি বুঝতে পারছোনা বন্ধু একদিন এই মেয়ের মায়ার অতলে তুমি তলিয়ে যাবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা।

জানালার ধারে দাঁড়িয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নোহা।জী’বন্ত লা/শ হয়ে বেঁ’চে আছে।ভিতরটা
র/ক্তাক্ত। জীবন টা কোনো রকম ব’য়ে বেড়াচ্ছে।
নিজের আদরের ছোট বোনের বিয়েতেও উপস্থিত থাকতে পারেনি।এই ন*র’পি/শাচ দের জন্য।
আল্লাহ তুমি আর যাই করো, আমার বোনরে আমার মতো ক’পাল পু/ড়ি হত’ভা’গি করো না।ও যেনো অন্তত সুখি হয়।আমার এইটাই চাওয়া।

তখনই পিছন থেকে কারো কথা শুনে বা’স্তবে ফিরে আসে।
কিরে জমি’দাররের বে’টি। তর বাপ কি তর জন্য দা*সী নিযু’ক্ত করে দিয়ে গেছে? তুই যেনো পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকতে পারিস? সারাদিন তো বসে বসে আমার ছেলের টাকায় গি’লিস।তুই বুঝবি কি?
কি দেখে যে এই মেয়েরে বাপ ছেলে পছন্দ করে ঘরে তুলল।

না আছে রূপ,,,না আছে গুণ।আমার সা*ধের সংসারটার উট’কো ঝা’মেলা একটা।
নোহা কথা বাড়ালোনা। কোনো উত্তর ও করলোনা।এসব নিত্য দিনই চলছে অ’ভ্যাস হয়ে গেছে। এখন আর খারাপ লাগে না।৷৷ মেয়েদের আসল ভরসার জায়গা হচ্ছে তার স্বামী। সে যখন পাশে থাকে শশুর বাড়ির লোক যেমনই হোক,,যতো কথাই বলোক গায়ে লাগে না।অন্তত দিন শেষে মানুষটার বু’কে মাথা তো রাখা যায় শান্তিতে। তখন সব কষ্ট আর গায়ে লাগে না। কিন্তু নোহার তো একটাও নেই সে যে জনম দুঃখী। তাই চুপচাপ কাজ করতে চলে গেলো।

এখনতো শাশুড়ী খালি কথার বা/ণ ছুড়েছে।রাতে তার থেকেও বেশি কিছু অপেক্ষা করছে।স্বামী নামক ব্যাক্তি টা নোহার কাছে আ’তংক। এমন কোনো অ’ত্যা’চার নাই শরীরটার উপর করেনি। প্রতিদিন নতুন নতুন শা’স্তি আহা জীবন।
বাবার উপর খুব অভিমান জমে আছে নোহার।

সে তো এতো তাড়াতাড়ি সংসার জীবনে ঢুকতে চায়নি।পড়াশোনা করতে চেয়েছিল।পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিল।কিন্ত বাবা বিয়ে দিয়ে দিল।বাবার সাথে অভিমান করে ভালো করে কথাও বলে না।মা-বাবা এদের এমন সব কাজের কথা জেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।যায়নি নোহা।অভিমানের পাল্লা টা একটু বেশিই ভা’রি।

তাছাড়া বাড়িতে একটা বোন রয়েছে।তাকে তো কথা শুনাবেই।বোনটাকেও তার জন্য ভো’গতে হতো।নানান জনের নানান কথা।নিজের শরীরেতো সয়ে গেছে।বোনটার কোমল মন সইতে পারতোনা। বোনটা যে যেমন চ’ঞ্চল তেমনই নরম মনের। মানুষের কথার বি/ষ অনেক। তাই এসব সহ্য করে পড়ে আছে।দেখা যাক কতোদিন টিকতে পার

সোহা গুন গুন করে গান গাইছে,আর চুলে চিরুনি চালাচ্ছে।
উফ মা কই তুমি? দেখো তোমার মেয়ে তোমার সাধের চুলের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে এই কয়দিনে। আমি কি এসবের যত্ন নিতে জানি নাকি।অসহ্য! আহারে আমার অসহায় চুল গুলা রাগ করিস নারে।

আহারে বিয়ের আগে মা যখন বলতো চুলের যত্ন নে।এখন না হয় আমি করে দিচ্ছি বিয়ের পর কে করে দিবে? তখন আমি কতোইনা বড় মুখ করে বলতাম,,,,এখন এই চুলের দায়িত্ব তুমি নেও।বিয়ের পর তোমার মেয়ের জামাই নিবে।
এজন্যই পাশের বাসার দাদি বলতো, এতো স্বপ্ন দেখিস না’লো ছু’রি।জামাইর হাতের যখন কি’ল ঘু*সি পড়বো তহন বোঝবা’লো কি মজা!

তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব ৩

সব রঙ ঢ’ঙের পিরিত উইড়া যাইবো।এসব ভাবতেই মনটা দুঃখী হয়ে গেলো সোহার।শ*য়তান বু’ড়ি মনে হয় অভিশাপ দিছে।
এসব ভাবনার মাঝেই বিছানায় রাখা ফোনটা বেজে ওঠে। চ’মকে ফোনের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়।তখনই দেখতে পায়,,,,,,,,,,,,,,,

তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব ৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.