তোমাতে করিবো বাস - golpo bazar

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ২০

তোমাতে করিবো বাস

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ২০
লেখনীতে-আফনান লারা

আসিফ রিনিকে সাথে নিয়ে তার নিজের বাড়িতে চলে এসেছে।রিনিদের বাড়ি থেকে আসিফের বাড়ি বেশ একটা দূরে না।পায়ে হেঁটে আসা যায়।
আসিফের বাড়ির উঠানে পাটি বিছিয়ে বসে ছিল ওর দাদু।বসে বসে পান বানিয়ে খাচ্ছিলেন।চশমার যত পাওয়ারই থাকুক ইদানিং সব ঝাপসা মনে হয় তার কাছে।

লিচু গাছে কতটা লিচু ধরেছে তা নিজের চোখে দেখতে পারেননা।দূর থেকে মনে হয় গোলাপি রঙের শাড়ী বিছানো পুরা গাছে।এখন দূর থেকে আসিফ আর রিনিকে আসতে দেখে তার বিশ্বাস হলোনা।কারণ এর আগে ওদের দুজনকে একসাথে তিনি দেখেননি।এখন দেখে নিজের ঝাপসা চোখের দোষ দিয়ে চুপ করে রইলেন।ভেতর থেকে সেসময় আসিফের বাবা বের হয় আর তখনই ওদের একসাথে দেখে এক গাল হাসি নিয়ে এগিয়ে গেলেন।রিনি সালাম দিলো তাকে।উনি আসিফের মাথায় হাত রেখে বললেন,’যাক!বউয়ের কদর বুঝলি তাহলে!’

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আসিফ কিছু বললোনা।দাদুকে দেখে তার কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে পাটিতে ধপ করে বসে গেলো।আসিফ এসেছে শুনে ওর মা রান্নাঘর থেকে ছুটে আসলেন।এতগুলা মাস পর ছেলেকে দেখে তিনি আবেগী হয়ে পড়েছেন।রিনি আসিফকে অন্যমনস্ক দেখে আসিফের বাবার সামনে ভ্যাঁত করে কেঁদে দিলো।উনি ওকে কাঁদতে দেখে বিচলিত হয়ে জানতে চাইলেন কান্নার কারণ কি।রিনি কান্নার কারণে কথাই বলতে পারছেনা।বাবা ওকে শান্ত করে বললেন বিষয়টা খুলে বলতে।

‘আন্নের হোলা আঁরে থুই ঢাকা চলি যাইবো কইছে।আঁই এতদিন হত্তে হত্তে থাইকছি আর হাইত্তাম ন।আন্নের হোলা বুঝতোই চা না’
[আপনার ছেলে আমাকে রেখে ঢাকা চলে যাবে বলেছে।আমি এতদিন একা একা থেকেছি আর পারবোনা।আপনার ছেলে বুঝতেই চায়না]
আসিফের বাবা এবার ওর মুখের দিকে তাকালেন।আসিফ এখনও এইসব কিছু শুনে নাই।সে তার দাদুর সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।

‘কিরে আসিফ?’
‘কি বাবা?কিছু বলবা?’
‘তুই নাকি রিনিরে ঢাকা নিতি চাস না?’
‘হ্যাঁ।ওখানে গিয়ে কি করবে?আমি থাকি আরেকজনের বাসায়,তার মধ্যে ওকে নিয়ে থাকলে ওনারা কি ভাববে?আর আমি কি চাকরি পেয়েছি এখনও?কথা কি এটা ছিল?’
‘সে যাই হোক!শর্ত দেওয়াই হয় ভাঙ্গার জন্য।মেয়েটা অনেক তো অপেক্ষা করেছে।আর কত কষ্ট পাবে?’
‘না বাবা আমি ওরে নিতে পারবোনা। ‘

বাপ্পি শীতের মধ্যে গোসল করে কাঁপতে কাঁপতে আবার খেতে আসলো।তটিনি খেয়ে দেয়ে বাগানে ঘুরঘুর করছিল।বাপ্পি একা একা নাস্তা করছে সেসময় বকুল আপু তটিনিকে বাগান থেকে ডেকে এনে বললেন,’স্বামী ভাত খাওয়ার সময় তার পাশে বসে থাকলে দুজনের ভালবাসা বৃদ্ধি পায়’
তটিনি মাথা নাড়িয়ে চেয়ার টেনে বসে থাকলো।আপু চলে যাবার পর বাপ্পি ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’তুমি ইচ্ছে করে আমাকে দিয়ে গোসল করাইছো তাই না?নিজে করসিলা গোসল?’

‘করসি তো।এই দেখেন চুল ভিজা’
‘আমাকে ফাঁসানোর কি দরকার ছিল?কি ক্ষতি করেছিলাম তোমার?’
‘কিছুই করেন নাই তবে আপনাকে একটু ফাঁসাতে মন চাইলো।কি করবো,বোর হচ্ছিলাম’
‘এটার শাস্তি তুমি পাইবা! ‘

তটিনি যেন একটুও ভয় পেলোনা।মুখ বাঁকিয়ে চেয়ারে বসে পা দুলাতে থাকলো।বকুল আপু সব গুছিয়ে নিয়েছে
এরপর তৃষাকে নিয়ে দুলাভাইয়ের সাথে চলে গেছে সবাইকে বলে।
বাসাটা মূহুর্তেই কেমন শীতল হয়ে গেল।তৃষা আর বকুল আপু মিলে বাসাটাকে মাথায় তুলে রাখতো। এখন তারা চলে যাওয়ায় সব নিরব হয়ে গেছে।

তটিনি কোমড়ে হাত রেখে সবাইকে চলে যেতে দেখেছে বেশ অনেকক্ষণ ধরে।এরপর দেখা শেষে পেছনে ফিরতেই দেখলো বাপ্পি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
‘কি?’

‘কি?কি দেখো এতো?বকুল আপুকে মিস করতেছো?তোমাকে না সকালবিকাল ঝাড়ি দিতো?’
‘তাও অনেক আদর করতো।ঝাড়ি দেয়া মানুষ অপছন্দের হবে কেন?ঝাড়ি দেয়া মানুষরা সে পরিমাণ আদর ও করে’
‘আচ্ছা চলো ঘুরে আসি’
তটিনি ব্রু কুঁচকে বলে,’কেন?আমরা কি প্রেম করে বিয়ে করছিলাম?’
‘ওমা!এরেঞ্জড হলে ঘুরতে যাওয়া যায়না?’

‘যায়,কিন্তু আমি যাব না কারণ আপনাকে আমি পছন্দ করিনা।আই হেট ইউ’
এই বলে তটিনি মহাআনন্দে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া ধরতেই বাপ্পির বাবার সামনে পড়লো।তটিনির বলা এর আগের কিছু না শুনলেও আই হেট ইউ ক্লিয়ারলি শুনেছেন।
তটিনি ওনাকে দেখে মাথার ঘোমটা টেনে নিলো।

‘তুমি আমার ছেলেকে ঘৃনা করো?’
‘ননননা তো।’
‘আমি মাত্র শুনলাম আই হেট ইউ বলছো’
‘নাহ নাহ।আমি বলছি আই লাভ ইউ।সত্যি বিশ্বাস করেন’
‘তুমি তো বাপ্পিকে পছন্দ করতেনা তাহলে বিয়ের দুইদিনেই আই লাভ ইউ?আমি নিশ্চিত তুমি হেট ইউ বলছো’
তটিনির কপালে ঘাম উঠে গেছে।এটা শ্বশুর নাকি অন্য কিছু।এমন জোঁকের মতন ধরছে কেন।সে কোনো কিছু বলেই পার পাচ্ছেনা।

শেষে বাপ্পি এসে বললো,’আরেহ বাবা তটিনি আমায় আই লাভ ইউ বলছিল।’
‘ওহ!তাহলে ঠিক আছে’
এই বলে বাবা চলে গেলেন।তটিনি ফিসফিস করে বললো,’আবারও আই হেট ইউ হুহ!’
এটা বলে সে চলে গেছে।

আসিফ শীতের ভাপা পিঠা খেয়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রওনা হয়ে গেছে।রিনিকে বাই বলেনি কারণ বলতে গেলেই সে আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিবে।
সে চুপিচুপি বাসস্টপে এসে বাস একটাতে উঠেও গেছে।
একটা সিট পেলো ৩য় নাম্বারে সেখানে একটা মেয়ে বসা ছিল।

আসিফ ওখানে বসতে যাবে তখনই পেছন থেকে ব্যাগ নিয়ে রিনি এসে বললো,’এই আন্টি হরেন তো।হরেন!!একুলে আঁই বইয়াম।আন্নে আঁর আন্টি অইলে আঁর জামাই আন্নের মাইয়ার জামাই।বুইজ্জেন্নি😌🐸?’
[এই আন্টি সরেন তো সরেন!এখানে আমি বসবো।আপনি আমার আন্টি হলে আমার জামাই আপনার মেয়ের জামাই।বুঝছেন?]

রিনির কথা শুনে আসিফ চোখ কপালে তুলে তাকালো।
‘তুই এখানে কি করিস?কি করে আসলি!’
ঐদিকে সিটে বসা মেয়েটা আন্টি ডাক শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে।
‘কি বললে তুমি!আমাকে তোমার আন্টি মনে হয়?’
‘থুক্কু জেডির মতন লাগে।জেডিরে মাইনসে তো আন্টিই কয়’
‘আবার জেডি বলতেছো!বেয়াদব!’

‘কিহ!আঁই বেয়াদব? ?তুই বেয়াদব!তোর চৌদ্দ গুষ্টি বেয়াদব।’
আসিফ রিনির মুখ চেপে ধরে ঐ মেয়েকে সরি বলতে বলতে পাশের সিটে নিয়ে আসলো।তারপর জানতে চাইলো সে এখানে কিভাবে আসছে।রিনি দাঁত কেলিয়ে বললো,’আঁই কইছিনা আঁই আন্নেরে ছাড়া থাইকতাম হাইরতাম ন।আঁরে কারিমে আনি দিছে একুলে।’
আসিফ রিনিকে নামিয়ে দিতে যাবে তখনই বাস ছেড়ে দিলো।

বাপ্পি হাতে টিকেট নিয়ে রুমে ফিরছিল।টিকেট গুলা বাবা দিয়েছে।কক্সবাজারের টিকেট।
তটিনি সেসময় বাপ্পির আলমারি থেকে পাওয়া ওর ছোটবেলার কিছু ছবি দেখছিল।বাপ্পি টিকেট ওর সামনে ধরে বললো,’জলদি প্রস্তুতি নাও।কাল রাতে রওনা হবো’
‘হোটেলে দুটো বেড নিবেন ‘

‘বাবা যে হোটেল বুক করেছে তাতে দুটো বেড নেই।সব একটা একটা’
‘আপনার এত হাসি আসছে কেন?আপনার বাবা এক খাট ওয়ালা রুম বুক করেছে তো কি হয়েছে?আমরা সেখানে গিয়ে দুই খাটের রুম বুক করবো’
‘আচ্ছা ফাইন!’

বাপ্পি নিজের ব্যাগটা বের করে জামাকাপড় গোছানো শুরু করে দিছে।তটিনি ভেতরে ভেতরে কক্সবাজারের পাগলা, ভক্ত এখন সেখানে যাবার কথা শুনে ইচ্ছা থাকার সত্ত্বেও লাফাতে পারছেনা।বাপ্পি ভাববে ও হানিমুন নিয়ে এক্সাইটেড। তাকে বুঝতে দেয়া যাবেনা।সে তো আর জানেনা ওর খুশি সব ঘুরাঘুরি নিয়ে।

রিনি বাসের জানালা দিয়ে বাহিরের গাছপালা দেখছে আর গাপুসগুপুস করে চিপস খাচ্ছে।আসিফ বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে তার সাথে বিরক্ত হয়ে আছে পাশের সিটে বসা সেই মেয়েটি।এরকম অসভ্য মেয়ে সে তার জীবনে দেখেনি,তার তো আফসোস হয় এই মেয়েটির হাসবেন্ড নিয়ে।ছেলেটার জীবন শেষ একেবারে।
রিনি চিপস চাবাতে চাবাতে বললো,’খাইবেন্নি আন্টি?’

‘শাট আপ!আমি তোমার আন্টি না’
‘ওকে খালাম্মা’
মেয়েটা দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আসিফ আবারও সরি বলে তাকে থামিয়ে দিলো এরপর রিনিকে ধমকে বললো যেন চুপ করে থাকে।
‘আরেক বেডির সামনে নিজের বউরে ধমকান,কেমন বেডা আন্নে!’
‘তো তুই কি ভাল বিহেভ করতেছস!!বাসে ওঠার পর থেকে ঐ মেয়ের পিছনে লাগছস’
‘আঁই কিত্তাম।আই আন্টি কইলেই বেডি ইগা চ্যাঁত করি উডে।এডা কি আঁর দোষ!’

তটিনি খাটে বসে কলা খেয়ে কলার খোসা সবসময় নিচে ফেলে দেয়।এটা তার ছোটকালের বাজে অভ্যাস।এখনও তাই করেছে।বাপ্পি জামাকাপড় গুছাতে গুছাতে ছোটাছুটি করছিল।তখনই কলার খোসায় পা রাখতেই পিছলে সে গিয়ে পড়লো তটিনির গায়ের উপর।

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ১৯

তটিনি যদি এটা আগে থেকে জানতো তাহলে তার বহু পুরোনো এই অভ্যাস ঠিক করে নিতো।
বাপ্পির মতন ভাল স্বাস্থ্য দেহের অধিকারি একটা পুরুষ এভাবে পড়লো গায়ে।তটিনির সেটা সমস্যা ছিল না কিন্তু তার সমস্যা টাই হলো বাপ্পিকে নিয়ে।সে রাগের চোটে কিছু বলতেও পারছেনা। এ বাড়িতে বাপ্পির খেলাপে কিছু বলা যাবেনা,করা যাবেনা।এদিকে বাপ্পির পা খাটের স্ট্যান্ডের সাথে লেগে আটকে গেছে।সে পা ঘুরিয়ে নিজ থেকে উঠার শক্তি উপায় কিছুই পাচ্ছেনা।

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.