তোমাতে করিবো বাস - golpo bazar

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ২৩

তোমাতে করিবো বাস

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ২৩
লেখনীতে-আফনান লারা

‘আপনাকে আমি শুরুতেও পছন্দ করতাম না।এখনও করিনা।যতই কেয়ার করেন না কেন আমার মন গলাতে পারবেন না কিছুতেই।আসিফ ভাইয়াকেই ভালবাসতে আমার অনেকদিন লেগেছিল জানেন?আমার চয়েসটাই অন্যরকম।আমি অসাধারণ মানুষকে বাছাই করি’

‘আর আমি অসাধারণ না তাই তো?’
‘আপনি কি আসলে বলতে পারবোনা।তবে আমার পছন্দ না আপনাকে’
‘পছন্দের হতে হলে কি করতে হবে?’
‘কখনই হবেন না।কঘা ঘুরাতে হবেনা এত।একবার যখন বললাম আপনাকে আমি পছন্দ করিনা তখন আর কোনোদিন করবোনা।’

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাপ্পি ফোন বের করে কাকে যেন কল করলো সেইসময়।ইয়ারফোন কানে গুজে তার সাথেই কথা বলা শুরু করেছে।খোঁজখবর ও নিচ্ছে।মনে হলো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছে।তটিনি ভেবেছে তাকে জেলাস ফিল করাতে বাপ্পির যত কারসাজি।কিন্তু আসলে তার ধারণা ভুল।বাপ্পি সত্যি সত্যি কেউ একজনের সাথে কথা বলছে।বলতে গেলে এখন তটিনিকে পাত্তাই দিচ্ছেনা।ওর পাশে যে ওরই ওয়াইফ বসে আছে সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ ও নেই।দিব্যি ফোনের ওপারের মানুষটার সাথে কথা বলে চলেছে সে।

তটিনি সেই ফুলগুলো পেছন থেকে তুলে এনে হাত বুলাচ্ছে আর প্লেয়ারে মিডিয়াম সাউন্ডে বাজতে থাকা সেই গানটি শুনছে।বাপ্পি শেষে ফোনে চুমুই বসিয়ে দিলো।তটিনি সব খেয়াল করেও চুপ করে আছে।ফোনে অনেকক্ষণ কথা বলা শেষ করে বাপ্পি পাশে তাকিয়ে দেখে তটিনি মুখ অন্যদিকে ফেরানো অবস্থায় ঘুমিয়ে গেছে।

চুমুটা আসলে বাপ্পি কাউকেই দেয়নি।কল কেটে দিয়েছিল অনেক আগেই।এতক্ষণ সে তার পুরোনো এক কলিগের সাথে কথা বলেছে।ইচ্ছে করে অন্যভাবে বলছিল যাতে তটিনি ভাবে সে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছে।
ফুলগুলোকে কোলে ধরে রেখেছিল তটিনি।বাপ্পি ওর হাতে ফুলগুলোকে আঁকড়ে ধরে রাখতে দেখে খুশি হলো অনেক।তটিনি যতই মুখে বলুক সে বাপ্পিকে অপছন্দ করে,আসলে কিন্তু সেও বাপ্পির মতই কেয়ারটা ভাল জানে।
বাপ্পি নিজের গায়ের শালটা খুলে তটিনির গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আবারও ড্রাইভে মন দেয়।

তটিনির যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন সে নিজের গায়ে বাপ্পির শালটা দেখে হকচকিয়ে মাথা তুলে বসে পড়ে।ওকে এভাবে চমকাতে দেখে বাপ্পি গাড়ী থামিয়ে ফেললো।
‘কি হয়েছে?খারাপ স্বপ্ন দেখলে নাকি?’
‘আপনার শাল আমার গায়ে কেন?আমার কি শীত করছিল?’
‘করছিল কিনা জানিনা।তবে এটা আমার কর্তব্য ছিল’

তটিনি শালটাকে বাপ্পির কাছে রেখে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বললো,’যাকে চুমু দিছিলেন তাকেই পরাইয়া দেন”
‘দিব,তাকে নতুন একটা কিনে দিব।বউয়ের জন্য তো পুরান ই যথেষ্ট ‘
বাপ্পির কথায় তটিনির রাগ হলো।তাই চিৎকার করে গাড়ী থামাতে বললো সে।বাপ্পি গাড়ী থামাতেই তটিনি দরজা খুলে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেছে।বাপ্পি ভাবেনি এতটা রাগ করবে ও।
বাপ্পি ও ওর পিছু পিছু চললো এবার।

‘তটিনি থামো, আচ্ছা সরি।আর এভাবে বলবোনা।’
তটিনি ও নাছড়বান্দা। সে কোনো কথাই শুনবেনা।সামনে যেদিকে দুচোখ যাচ্ছে সেইদিকেই চলছে সে।
বাপ্পি দ্রুত হেঁটে তটিনির কাছে পৌঁছে ওর হাত ধরে আটকালো।তটিনির চোখে পানি ছিল।বাপ্পি ওর চোখে পানি দেখতেই হাত ছেড়ে দেয়।পাশের একটা দোকানের আলোয় ওর চোখের পানি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।

‘তুমি কাঁদছো কেন? ‘
‘আপনার কথায় খুব ভাল লেগেছে, তাই কাঁদছি’
‘মাফ করে দাও।আর কোনোদিন এভাবে বলবোনা।ওটা আমার একটা কলিগের কল ছিল।চুমুটাও ফেক!তাও সরি!আর এমন ফান করবোনা’
‘এতবার সরি কেন বলছেন?’
‘আচ্ছা সরি আর বলবোনা’
‘আবার?’
‘ওকে আর বলবোনা কিছু।চলো এখন।এমনিতেও আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

আসিফ অনেক কষ্টে রিনিকে নিয়ে তটিনিদের বাড়ি পৌঁছালো।এমনিতেও ওনাদের বাসায় আসিফ থাকার সময় তার ভীষণ লজ্জা হতো।এখন আবার সাথে করে রিনিকে নিয়ে থাকবে, তাতে ওর আরও বেশি লজ্জা হচ্ছে।
এদিকে চাকরি পাওয়া তো মুখের কথা না।

তটিনির বাবা বাসায় ফিরেছেন।আসিফকে দেখে খুশিই হলেন ভীষণ।তিনি জানেন সেদিন আসিফ তার বিয়ের কথা তুলেছে যাতে তটিনি বাপ্পিকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় আর তাই আসিফের উপর তিনি অনেক সন্তুষ্ট ।
আসিফকে দেখে একেবারে গলা জড়িয়েই ধরে ফেললেন।

রিনি আজ তটিনির রুমে ঢুকেছিল।তটিনির রুমটা তার ভীষণ ভাল লেগেছিল ঐদিন,কিন্তু লজ্জায় ভালভাবে দেখতে পারেনি।আজ ফাঁকা পেয়ে ঢুকে পড়েছে সে।তটিনি খুব সুন্দরভাবে রুমটাকে সাজিয়ে রেখেছে।সবকটা কোণা সুন্দর।রিনি সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিল।হঠাৎ তার হাতের সাথে লেগে গুছিয়ে রাখা বইয়ের একটা তাক মেঝেতে পড়ে যায়।রিনি জিভ কামড়ে নিচে বসে বইগুলো এক এক করে আগের জায়গায় রাখছিল,তখনই একটা বই ধরে তার মনে হলো এর ভেতর কিছু আছে।বইটা খুলে আসছিল।

রিনি বইটা খুলে দেখে ভেতরে কতগুলো গোলাপ,যেগুলা শুকিয়ে আছে।গোলাপের ডাঁটায় আবার টেপ মারা।টেপে তারিখ লেখা আছে যে তারিখে ফুলগুলো কেনা হয়েছিল।
রিনি গালে হাত দিয়ে বললো,’মাগো মা!! এত গভীর প্রেম আছিলো এতাগো!!না জানি কিচ্চে কিচ্চে।আঁই তো কিছু জানতাম ও না!হোড়া কপাল আঁর🙂🤒’
[এত গভীর প্রেম ছিল এদের?না জানি কি কি করেছে। আমি তো কিছু জানতাম ও না।পোড়া কপাল আমার]

গাড়ীতে তটিনি ফুলগুলো দেখতে দেখতে অনেক কিছু ভাবছিল।তারপর হঠাৎ করে সে বাপ্পির মুখের দিকে তাকিয়ে বসে।বাপ্পি অবশ্য সেটা খেয়াল করেনি।হাইওয়ে তে ছিল বলে সামনের দিকে মন দিয়ে গাড়ী চালাচ্ছিল। তটিনি অনেকক্ষণ বাপ্পির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছিল আসলেই কি বাপ্পি তাকে ভালবাসে বলেই কেয়ার করে নাকি এর পেছনে অন্য কারণ!নাহ!
‘স্বামীর কেয়ারে আবার কিসের অন্য কারণ থাকবে!হয়ত সত্যি কেয়ার করে!আমায় পেতে চায় বলে কেয়ার করে?’

‘আচ্ছা একটা কথা বলবেন?’
‘ কি?’
‘আমায় ঠিক কি কারণে আপনার পছন্দ হইছিল?’
‘কোনো কারণ নেই দেখেই মনে হলো তুমি আমার ওয়াইফ হবার যোগ্য আর তাই বিয়েতে হ্যাঁ বলে দিয়েছি’
‘তার ও তো কিছু কারণ থাকে’
‘কারণ নেই।বলতে গেলে আবার রাত শেষ হয়ে যাবে।এইবার ভাবো!’
‘আপনি ভালবাসেন তো আমাকে তাই না?’

‘হ্যাঁ।অনেক।হঠাৎ এই ভুলসময়ে সঠিক প্রশ্ন করার মানে কি তটিনি?’
‘আমার ইচ্ছে হলো জানার।জেনে খুশি হলাম যে আমাকে কেউ ভালবাসে’
‘কলেজ লাইফে কেউ ভালবাসেনি?’
‘ফুল দিয়ে হাঁটু গেড়ে অনেকেই লাভ ইউ বলছিল কিন্তু আমি তো তখন আসিফ ভাইয়ার প্রেমে মত্ত ছিলাম তাই ওরা কেউই পাত্তা পায়নি’

‘আর আমি পেলাম কেন?আসিফ চলে গেছে বলে?’
‘আপনি আমার জীবনে না আসলে সেদিন আসিফ ভাইয়ার বিয়ের খবর জানার পরেও আমি আজ সিঙ্গেল থাকতাম।সেদিন আপনার সাথে আমার বিয়ে হবার কথা হয়েছিল বলেই বিয়েটা হলো।’
‘আমি যে তোমায় ভালবাসি সেটা তো তাহলে বুঝতে পেরেছো।তাহলে আমায় মেনে নিতে সময় কেন পোহাচ্ছো?’

‘আমাকে ভালবাসলে আমারও ভালবাসতে হবে?এত সোজা না একজনকে ভুলে গিয়ে আরেকজনের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া’
‘তুমি অলরেডি প্রেমে পড়ে গেছো।নাহলে কথায় কথায় এত গা জ্বলতো না তোমার’
‘আমি একবারও জেলাস হইনি।বানোয়াট কথা বলবেনা না একদম’
‘ঠিক আছে।আমি আজ হোটেলে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে থাকবো।আর তুমি আরেকটা রুমে থাকবে।ডিল!!’

এই বলে বাপ্পি চুপ হয়ে গেলো।তটিনি এতটাও সিরিয়াসলি নেয়নি।সে ভেবেছে বাপ্পি মজা করে বলেছে।কিন্তু তার ধারণা আবারও ভুল করে দিয়ে হোটেলে এসে সবার সামনে ম্যানেজারকে বাপ্পি বললো,’আপনার কাছে এমন কোনো মেয়ের সন্ধান আছে যে কিনা অবিবাহিত, রাত কাটানোর জন্য?’

বাপ্পির এরকম কথায় তটিনি যেন আকাশ থেকে পড়লো।সে কল্পনাও করেনি বাপ্পি এতটা সিরিয়াস হয়ে যাবে।সে হা করে তাকিয়েই ছিল।এদিকে ম্যনেজার ফিসফিস করে বলে দিছে টাকা দিলে সব পাওয়া যাবে।
তটিনি ধমকে বললো,’চুপ করেন আপনারা’
বাপ্পি তটিনির কথার তোয়াক্কা না করে ম্যানেজার কে আবার বললো,’টাকা বাড়িয়ে দিব, আজ সারারাত আমার সাথে থাকতে হবে তাকে’

তটিনি দেরি না করে তখনই ঠাস করে থাপ্পড় মেরে দিলো বাপ্পির গালে।এটা দেখে বাকিরা সবাই অবাক হলেও বাপ্পি বিন্দুপরিমাণ অবাক হয়নি।বরং সে গালে হাত দিয়ে অনবরত হেসে চলেছে।তটিনি রাগে ক্ষোভে হনহনিয়ে বুক করা রুমের দিকে চলে গেলো।ম্যানেজার পানির গ্লাস এগিয়ে ধরলো বাপ্পির দিকে।বাপ্পি পানি খেয়ে বললো,’এই চড়টার জন্য এতক্ষণ সেই অফার করেছি আপনার কাছে যে অফারটা আমার বাপ দাদার ১৪গুষ্টির কেউ আজ অবধি করে নাই।মূলত এই চড়টা খাওয়ার জন্যই আমার এত কিছু করা।আপনি ভাই আমার একটা কাজ করে দেন,আমি পে করতেছি।কাজটা সুন্দরভাবে হলেই হলো’

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ২২

এই বলে বাপ্পি কিছু টাকা দিয়ে অনেক কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে দিলো ম্যানেজারকে। এরপর চলে গেলো ওখান থেকে

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.