তোমাতে করিবো বাস - golpo bazar

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ২৬

তোমাতে করিবো বাস

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ২৬
লেখনীতে-আফনান লারা

তটিনি রুমের পাশের চিপা বারান্দাটায় এসে চেয়ারে বসে আছে,হাতে ফোন নিয়ে।বাপ্পি রাতের খাবার আনতে গেছে বাইরে।তটিনি সেই সময়ে আসিফকে কল করলো।
আসিফ সবেমাত্র ভাত খাওয়ার জন্য পাতে হাত ঢুবিয়েছিল।রিনি ভেতর থেকে ওর ফোন নিয়ে এসে বলে,’আন্নের ফোন আইছে’

আসিফ তটিনির এই নাম্বারটা চেনেনা।তাই হাত ধুয়ে ফোন কানে ধরলো।
‘হ্যালো,কে বলছেন?’
‘আমি’
তটিনির গলা শুনেই আসিফ রিনির মুখের দিকে তাকায়।রিনি স্বাভাবিক ভাবেই চেয়ে ছিল।আসিফ ওমনি ফোন কানে ধরে উঠানে চলে আসে।
‘হঠাৎ এখন ফোন করলি?কি হয়েছে?তুই ঠিক আছিস তো?’
‘একটা জিনিস চাইবো,দেবে?’
‘কি?’

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘রিনিকে আপন করে নাও।ওর কোনো দোষ নেই।তুমি ওর সাথে বাজে ব্যবহার করোনা’
‘কই করলাম!শুরুতেই তো একটা মেয়েকে নিজের স্ত্রীর সব অধিকার দিয়ে দিতে পারিনা।আমার সময় লাগবে।তুই কি পেরেছিস বাপ্পিকে আপন করতে?বলা যত সহজ করা ততটাই কঠিন।আমি নিজেকে সময় দিচ্ছি,একদিন না একদিন ওকে মেনে নিতেই হবে!তাই বলে তাড়াহুড়ার কিছু নাই’
‘আছে!রিনি এতগুলো বছর কষ্ট পেয়েছে।আমি চাই না তুমি আমার কারণে ওকে কষ্ট দাও!’
‘তোর কারণে নয়।আমার মন ও তো সাঁই দিতে হবে!’

আসিফ কথার মাঝে চেয়ে দেখে রিনি ওর একদম কাছে দাঁড়িয়ে লজ্জায় লাল হয়ে মিটমিট করে হেসে চলেছে।আসিফ চট করে ফোন কান থেকে সরিয়ে বললো,’কারোর কথা লুকিয়ে শোনা বাজে অভ্যাস’
‘আঁই তো ভালা না।এইডা কি নতুন নি?😏🐸😇’
‘থাপড়িয়ে এই সব বাঁদরামি বন্ধ করে দিবো।যা বাসায়!আমি জরুরি কথা বলতেছি’
‘আঁরে লই কইতাছেন।সব হুইনছি।তটিনি বুবু আরও বকো এই বেডারে।আঁরে এক্কানাও আদর করেনা,সোহাগ করেনা’
আসিফ দূরে চলে আসলো ওখান থেকে।তটিনি বললো,’বাচ্চা স্বভাবের মেয়েদের মন অনেক ভাল হয়।ওকে আর কষ্ট দিওও না।’

বাপ্পি শুনছিল।তাও তটিনি যাতে না ভাবে সে ওর কথা শুনে ফেলেছে তাই সে কোনো আওয়াজ না করেই খাবারগুলো টেবিলে রেখে দূরে গিয়ে তারপর তটিনিকে ডাক দেয়।তটিনি ফোন রেখে চলে আসে সেখানে।বাপ্পির সামনে খেতে বসে মাথা নিচু করে ছিল সে।বাপ্পি খাচ্ছেনা,শুধু ভাত নাড়ছে।তটিনির চোখ ওর পাতেই ছিল।সে মাথা তুলে জানতে চাইলো বাপ্পি কেন খাচ্ছেনা।
‘খিধে নেই’
‘আমি খাইয়ে দেবো?’

এ কথা শুনে বাপ্পি চমকে যায়।তটিনি এ কথা বলেছে তা সে কল্পনাও করতে পারেনা।আসলেই কি এটা তটিনি বলেছে?
বাপ্পিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তটিনি নিজেই ওর প্লেট টা টেনে লোকমা একটা ওর মুখে পুরে দেয়।
বাপ্পি আশ্চর্য হয়ে শুধু খেয়েই চলেছে।খাওয়ানো শেষ করে সে যখন হাত ধুতে গেলো,বাপ্পি টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে গিয়ে ফোন নিয়ে চুপিসারে বকুল আপুকে ফোন দেয়।
‘কিরে বল!হানিমুন কেমন কাটছে!’

‘আপু তুমি তো জানো তটিনি কেমন।কিন্তু আজ অন্য একটা ঘটনা ঘটলো।তটিনি আমায় নিজ হাতে খাইয়ে দিলো’
বকুল আপু হাসতে হাসতপ বললেন,’এ তো ভাল লক্ষণ। অনেকসময় জায়গা বদলালে মানুষের মন ও বদলে যায়’
বকুল আপুর কথায় বাপ্পির শান্তি লাগেনি।তটিনিকে অন্যরকম লাগে।সে তো এমন না।প্রতি কথায় ছ্যাঁত করে উঠতো।সে তো এত মিষ্টি ছিল না!’
তটিনি হাত মুখ ধুয়ে এসে বিছানায় বসে গোলাপের পাপড়ি গুলো সরিয়ে এক পাশে শুতেই দেখে বাপ্পি চোরের মতন এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।
‘আসুন,ঘুমাবেন।আজ অনেক দখল গেছে’
‘কোথায়?’

‘কোথায় আবার?আমার পাশে।এই যে কত জায়গা’
বাপ্পি আরও অবাক হলো।এত চেঞ্জ!
তটিনি উঠে বসে বাপ্পির পাশের গোলাপের পাপড়ি গুলো ঝেড়ে ফেলে ওর জায়গাটা ঠিক করে নিলো।বাপ্পি ভয়ে ভয়ে বিছানয় বসে তটিনির কপালে হাত দিয়ে চেক করলো জ্বর- টর হলো কিনা।কিন্তু তাপমাত্রা তো ঠিকই আছে
তাহলে?

তটিনি হাসলো বাপ্পির এই কাজে।এরপর আবার আগের মতন শুয়েও পড়ে।
বাপ্পির চোখে ঘুম নেই। সারা রুমের গোলাপের গন্ধ আর তার সঙ্গে তটিনির উদ্ভট আচরণ ওকে ভাবাচ্ছে।কোনো কিছু ভাবতে গেলে আবার চোখে ঘুম আসেনা।কি একটা অবস্থা।
তটিনি চুপচাপ,মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে।বাপ্পি চট করে উঠে বসলো।তটিনির পিঠে আলতো করে আঙুল রেখে চেক করে নিলো সে জেগে আছে কিনা।আঙুলের স্পর্শ পেয়েও তটিনি টু শব্দ ও করেনি বলে সে বুঝে যায় তটিনি ঘুমিয়ে আছে।তাই ওর ফোন নিয়ে বাপ্পি কেটে পড়ে।সে এখন আসিফকে ফোন করবে।তটিনির এমন বদলে যাবার কারণ তার জানার প্রয়োজন আছে।

সে তো লুকিয়ে তখন ওদের পুরো কথা শেনেনি।তাছাড়া তটিনি আজ সকাল থেকেই বদলে গেছে।তখন আসিফের সাথে কথা বলে বদলায়নি।
আসিফ টিভিতে খবর দেখছিল।রিনি তেল গরম করে আসিফের পেছনে দাঁড়িয়ে ওর মাথার চুলে মালিশ করছে,আসিফ কিছু বলছেনা কারণ তটিনি তাকে রিনির প্রতি নরম হতে বলেছে।এদিকে রিনি পেয়ে গেলো মোক্ষম সুযোগ।আম্মা বলতো স্বামীকে আদর করলে স্বামী দিগুণ আদর করে।তাই এই শীতের রাতে,মশার কামড় উপেক্ষা করে সে আসিফের চুলে তেল মালিশ করে দিচ্ছে।

‘হ্যালো,কে বলছেন?’
‘আমি বাপ্পি’
আসিফ আবারও উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।রিনি হাতে তেল নিয়ে হা করে চেয়ে থেকে বলে,’আবারও তটিনি বুবু ফোন কইচ্ছে?’
‘না।’
এই বলে আসিফ বেরিয়ে গেলো বাইরে।
‘বলো কি বলবে’

‘তটিনির সাথে কি কথা হয়েছিল তোমার?আসলে তটিনি কেমন যেন করছে।ওর এমন ব্যবহারের সাথে আমি পরিচিত না’
‘ভাল ব্যবহার করছে, তাই তো?’
‘তুমি কিভাবে জানলে?সে আমাকেও একই উপদেশ দিয়েছে।রিনির সাথে যেন ভাল ব্যবহার করি’
‘কিন্তু কেন?’
‘সেটাই তো আমিও জানিনা।’
‘তুমি কি করছো?’
‘আমি ও রিনিকে প্রশ্রয় দেয়া শুরু করেছি’

‘আর রিনি সেটাতে কেমন রিয়েকশান দেখাচ্ছে?’
রিনি এবারও এসে আসিফের ফোনের সাথে কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করছিল বাপ্পি কি বলে।এখন বাপ্পির এ কথা শুনে সে বলে উঠলো,’আঁর হেব্বি লাগতাছে বাপ্পি ভাই।আঁর জামাই আঁর আতে মাতাত তেল লাগায়, এইডার তন ভালা আর কিছু আছেনি!’
আসিফ রিনির মুখ চেপে ধরে বাপ্পিকে বললো কিছু যাতে মনে না করে।
‘আরেহ সমস্যা নাই।আমি তো আরও একটু সাপোর্ট পেলাম।
যাক, তার মানে তটিনির এই ব্যবহারে আমায় পজিটিভ থাকতে হবে।থ্যাংকস রিনি’

বাপ্পি ফোন রেখে পেছনে ফিরে তটিনির দিকে তাকায়।তটিনি যেভাবে শুয়েছিল,এখনও ঐভাবেই শুয়ে আছে।
সে পা টিপে টিপে কাছে এসে ওর পাশে শুয়ে পড়ে আগেরমতন।
পরেরদিন সকাল হয়,বাপ্পির ঘুম দেরিতে ভাঙ্গবে সেটাই স্বাভাবিক। তটিনি ফ্রেশ হয়ে রুমে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করেও সময় কাটছেনা দেখে দরজা খুলে বাহিরের দিকে গেলো।হোটেলের সামনেই সমুদ্র।অল্প কিছু হাঁটলেই সেখানে পৌঁছে যাওয়া যায়।তটিনি হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের কাছে চলেআসে।

একটা মানুষকে ভালবেসে,তার সাথে সারাটাজীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখে শেষ মূহুর্তে এসে অন্য একটা ছেলের ঘরণী হয়ে গেলে কি এতই সোজা তাকে আবার ঐ মানুষটার মতন করে ভালবাসা?
রীতি এরকম কেন!যার সাথে যার মিলবেনা সবসময় তার সাথে তার মনের মিল এতটা হয় কেন?মনের মিল যদি হয়েই থাকে তবে তার সাথে নিয়তি যোগ হলোনা কেন!
তটিনির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।হয়ত সে আসিফকে বলে দিয়েছে রিনিকে ভালবাসতে,সেও ঠিক করেছে বাপ্পিকে ভালবাসবে,কিন্তু আদৌ কি এটা এতটাই সহজ!

তটিনি জানে কাজটা কত কঠিন।অপরিচিত মানুষটাকে ভালবাসতে অনেক কষ্ট হয়!
হঠাৎ ওর মাথায় সবুজ লতার ক্রাউন পরিয়ে দেয় বাপ্পি।তার চোখে তখনও ঘুম।তাও সে ওর পিছু নিয়ে এখানে চলে এসেছিল।তটিনি মাথায় হাত রেখে ক্রাউনটা ছুঁয়ে দেখছিল।বাপ্পি বললো,’এত কষ্টের প্রয়োজন নেই তটিনি।আমি কোথাও চলে যাচ্ছিনা কিংবা তুমিও যাচ্ছো না।তাহলে এত তাড়াহুড়োর কি আছে?আমরা আগে একজন আরেকজনকে বুঝি তারপর নাহয়!!’

এই বলে বাপ্পি পানির দিকে যেতে যেতে বলে,’চলো পানিতে নামি’
তটিনির সামনে বাপ্পি পানিতে ঝাঁপ দিলো।সাঁতরাচ্ছে সে এবার।তটিনি মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে ওকে আনন্দ করতে দেখছে কেবল।

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ২৫

এরপর কি যেন ভেবে সেও পানির দিকে গেলো।পানিতে নেমে চিৎকার করে বললো’সাঁতার জানিনা’
ওমনি বাপ্পির সব আনন্দ পানি হয়ে গেলো।সে নিজের সাঁতরানো বাদ দিয়ে কাছে এসে তটিনিকে শক্ত করে ধরে রাখলো।তটিনি জানতো এটাই ঘটবে।তাই সে খিলখিল করে হেসে ওঠে।ওর হাসি দেখে বাপ্পির ভয়টা কেটে যায় মূহুর্তেই।

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ২৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.