তোমাতে করিবো বাস - golpo bazar

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ৩৬

তোমাতে করিবো বাস

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ৩৬
লেখনীতে-আফনান লারা

রিনি যখন নাস্তা বানানোই তটিনির মাকে হেল্প করছিল তখন তটিনির মায়ের অনুপস্থিতিতে আসিফ কয়েকবার এসে রিনিকে জ্বালিয়ে গেছে।তটিনি তা দেখেছে বহুবার।
এখন আর মন খারাপ হয়না।সময়ের সাথে সব সয়ে আসছে।এখন বুক পোড়ে বাপ্পির জন্য।
আসিফ নামের একটা ছেলের কারণে সে বাপ্পিকে এতটা দিন কষ্ট দিয়েছে।
বাপ্পি ঠিকই নিজেকে সংযত রেখেছে।তটিনির উপর জোরজবরদস্তি দূরে থাক সে এসব নিয়ে ভাবেওনা।কিন্তু তটিনি তো ভাবে!সে কেন ওকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছে।

কাল সকালে চলে যাবার কথা থাকলেও যে তটিনি বৌভাতের দিন জেদ করে বাড়ি ফিরেছিল আজ সেই তটিনি এই রাতে শ্বশুর বাড়ি ফিরতে চায়।সকলেই অবাক হয়েছিল তার এমন চাওয়া নিয়ে।কিন্তু বাপ্পি অবাক হয়নি।কটা দিনে সে তটিনিকে বাহির ভেতর সব দিক দিয়ে চিনে গেছে।এখন আর অজানা বলে কিছুই নেই।
তটিনি যেভাবে বলেছে সেভাবেই সে রাত করে ওকে নিয়ে বের হয়ে গেছে।ওকে তটিনি নিজ থেকেই গান চালু করে গাড়ীতে।বাপ্পি তখনও নিঃশ্চুপ ছিল।ওকে চুপ থাকতে দেখে তটিনি ও আর কথা বলেনি।
বেশ কিছুদূর চলে আসার পর বাপ্পি বলে ওঠে কাল থেকে তার অফিসের চাপ বেশ বেড়ে যাবে।বলতে গেলে চোখের দেখাও অসম্ভব হয়ে উঠবে।অবশ্য এটা তটিনির জন্য ভালই হলো।সে তো বাপ্পিকে পছন্দ করেনা।এই কথা বাপ্পি খোঁচা দিয়েই বলেছে।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বেজে যায় তাদের।বাড়ির সকলে তখন ঘুমে থাকলেও বকুল আপু জেগে ছিল ওদের আসার অপেক্ষায়।আপু নিজেও অবাক হলেন তটিনির এত দ্রুত মত বদলানো নিয়ে।ওরা বাড়ি ফিরতেই তিনি খাবার সাজিয়ে দিলেন ওদের সামনে।তটিনি খেলেও বাপ্পি খেলোনা।তার নাকি খিধে নেই।সে তটিনিকে বকুল আপুর কাছে রেখে চলে গেছে।

তটিনিকে আপু সহজে আসতে দেয়নি।বাপ্পি নাকি রাতে না খাওয়া মানে তার মন শরীর দুটোই খারাপ।তটিনি যেন তার মন ভাল করে দেয়।এই বলে অনেক বুদ্ধিশুদ্ধি দিয়ে অবশেষে তিনি তটিনিকে রুমে পাঠালেন। তটিনি যখন রুম আসে তখন বাপ্পি ঘুমাচ্ছিল।তটিনি আর ওকে ওঠায়নি।নিজে নিজে এসে ওর পাশে শুতেই মনে আসলো বাপ্পি ভোর তিনটা ছাড়া ঘুমায়না তবে এখন কি করে ঘুমালো?
‘আচ্ছা আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’

বাপ্পির কোনো সাড়া নেই।তটিনি নিজের মনের ভুল ভেবে চুপ করে চোখ বুজে ফেললো।তাদের এই রাতে আর কথা হলোনা।পরেরদিন চোখ খুলে তটিনি তার পাশে বাপ্পিকে দেখলোনা।বাহিরে বের হয়েও দেখলোনা।বকুল আপু বলেছেন সে নাকি অফিসে চলে গেছে।তটিনিকে ঘুম থেকে তুলে ডিস্টার্ব করতে চায়নি।
তটিনি মাথা নাড়িয়ে ফোন খুঁজে বাপ্পিকে কল দেয়।বাপ্পি রিং হবার পর কলটা কেটে দিলো।হয়ত মিটিংয়ে আছে তাই সে আর ২য় বার আর কল দেয়নি।

বকুল আপু চলে গেছেন।বুশরা স্কুলে গেছে।বাবাও অফিসে।বাসায় বাপ্পির মা,দাদি আছেন শুধু।
তটিনি তাদের সাথে আধ ঘন্টা বসে থাকলেও তার সময় যে খুব ভাল কেটেছে তা হয়নি।তারা তাদের আমলের কথা বলছে আর তটিনি গালে হাত দিয়ে কেবল শুনে গেছে।
ছেলেটা কি জাদু করে দিলো কয়েকদিনে।তাকে ছাড়া সময় কাটার নামই নিচ্ছেনা।
রুমে ফিরে সে দেখে সাড়ে এগারোটা বাজে।আবারও ফোন দিলো বাপ্পিকে।এবারও বাপ্পি ধরোনি।
তটিনি সময় কাটাতে তাই বাগানে চলে আসে।আগে ফুল দেখলে মন ভাল হতো ওর।আজ আর ভাল হয়না।কেমন যেন শূন্যতা চারিদিকে বিরাজমান।

ফুলে হাত রেখে তটিনি গেইটের দিকে তাকায়।বাগান পরিষ্কার করার লোক নিজাম তটিনিকে গেট দেখতে দেখে কপালের ঘাম মুছে বলে,’ছোট সাহেব রাত ১টা ছাড়া ফিরেন না’
তটিনি অবাক হয়ে নিজামের দিকে তাকায়।তারপর গাল ফুলিয়ে বলল,’তবে সে বিয়ে করেছে কেন?’
‘সময় দিতে চাইলে সময় বের করা যায়’
এটা বলে নিজাম চলে যায়।তটিনি ভাবছে আসলেই তাই।বাপ্পির যদি টান থাকে তবে সে নিশ্চয় সময় করে আসবে।দেরি করবেনা।

এভাবে দুপুরটাও কেটে গেলো।বাপ্পির বাবা এসেছেন লাঞ্চ করতে।তটিনি তড়িগড়ি করে তার পাশে এসে দাঁড়ায়।বাপ্পির ব্যাপারে কিছু শোনার জন্য।তিনি ভাতে হাত রেখে ফোন নিয়ে বাপ্পিকে কল দিয়ে বললেন অফিসের যে কাজটা বাকি আছে সেটা পুরো করতে।

এটা শুনে তটিনি ধরেই নিলো আজ ওর আসতে অনেক দেরি হবে।কিন্তু এরপর সে মনে করে বাপ্পি তার কল কেন ধরছেনা!
তটিনি যখন দুপুরে ঘুমালো তখন বাপ্পি কল দিলো তাকে।কিন্তু ওর ফোন ছিল ডাইনিং টেবিলের উপরে।বাসায় তখন কেউ ছিল না।সবাই বাগানে আড্ডা দিতে মত্ত।ফোন বাজতে বাজতে নিভে গেলো।
তটিনি চারটার দিকে উঠে নিজের ফোন খুঁজে দেখে বাপ্পির পাঁচটা মিসড্ কল।
তার খারাপ লাগলো কলটা ধরতে না পারায়।সে আবারও কল করে ওকে,,, এবার বাপ্পি ব্যস্ত।
এমন করে আর কথা হয়নি ওদের।রাত এগারোটা,বারোটা এমন কি ১টা অবধি জেগে থাকে তটিনি।বাপ্পির গাড়ীর আওয়াজ আর কানে আসেনা।

এভাবে জীবন কিভাবে চলবে?মনে হয় যেন জামাই বিদেশ থাকে!
১টার পর আর ঘুম আটকে রাখতে পারেনি সে।ঘুমিয়ে পড়েছে।তার ঘুমিয়ে পড়ার দশ মিনিট পর দারোয়ান গেট খুলে দিলো।বাপ্পি এসেছে।
বুশরার কাল পরীক্ষা বলে সে জেগে জেগে পড়ছিল।বাপ্পিকে দেখে টেবিলে খাবার সাজা সাজাতে সে বলে,’ভাবীর শখ মিটছে তোমায় বিয়ে করে’

বাপ্পি টাইটা ঢিল দিতে দিতে বলে,’কেন রে?কি করলাম আবার?’
‘সারাদিন চাতকপাখির মতন তোমার অপেক্ষা করছিল।তুমি যদি লাইভ দেখতে গো ভাইয়া!!আমার নিজেরই খারাপ লাগছে ভাবীর জন্য।তুমি তো এরকম দেরি করোনা!’
‘সেটার কারণ আছে।পরে বলছি।তা সেই চাতক পাখি কোথায়?’
‘তোমার আশায় ঘুমিয়ে পড়েছে।গিয়ে দেখেও আসলাম মাত্র’

বাপ্পি তটিনিকে দেখার জন্য উতলা হয়ে রুমে ঢোকে।তটিনি বাপ্পির গলা শুনে ঠিক উঠে বসে গেছে।দুজনের চোখে চোখ পড়তেই তটিনি মুখ ঘুরিয়ে চাদর টেনে শুয়ে পড়ে।বাপ্পি কিছু না বলে গায়ের শার্টটা খুলে আলমারি থেকে নিজের টিশার্ট বের করে ফ্রেশ হতে চলে যায়।এদিকে তটিনি ভেবে বসে আছে বাপ্পি তার রাগ ভাঙ্গাবে।
বাপ্পিকে চলে যেতে দেখে তটিনি অবাক হয়ে বসেই থাকলো।ও যতক্ষণ অবাক হয়ে বসে ছিল ততক্ষণে বাপ্পি ওয়াশরুম থেকে আবার বের হয়েও গেছে।
দুজনের আরও একবার চোখাচোখি হয়।তাও কেউ কিছু বলেনা।
বাপ্পি এইবারও কিছু না বলে খেতে চলে গেছে।তটিনির রাগ সীমার শেষ চূড়ায় পৌঁছে গেছে তখন।

‘ভাইয়া ভাবীর সাথে কথা বলেছিলা?’
‘সে চুপ,আমিও চুপ’
‘তোমার তো এত ইগো নাই!’
‘আরেহ তটিনিকে কায়দা করে নিজের প্রতি দূর্বল করতেই যত কারসাজি!’
বুশরা হাসলো।হাসি থামিয়ে বাপ্পির পাতে আরও এক চামচ ভাত ঢেলে বললো,’তবে কি জানো!কারসাজিতে তুমি ফেঁসে যাবে,তটিনি ভাবী নয়!’
‘কেনো কেনো?’

‘কারণ ভাবীকে দেখলাম বালিশ নিয়ে বকুল আপুর রুমের দিকে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেলেছে’
এই শুনে বাপ্পির খাওয়া গেলো বন্ধ হয়ে।চোখ বড় করে বললো,’সে কি বলছিস!’
বাপ্পি উঠে হাত ধুয়ে গেলো দেখতে।সত্যি তটিনি রুমে নাই।মাথায় হাত দিয়ে বকুল আপুর জন্য রাখা সেই রুমটার বাহিরে এসে বাপ্পি দাঁড়িয়ে আছে।কি বলবে না বলবে ভাবছিল পরে অনেক ভেবে ওখান থেকে চলেই আসলো।
তটিনি বকুল আপুর বিছানার উপর বসে গালে হাত দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।বাপ্পি নক করলেই আচ্ছা করে কতগুলো ঝাড়ি দিয়ে দিবে।কি কি ঝাড়ি দিবে সেইসব লাইন মুখস্থ করে নিচ্ছে সে।

১.আপনার কমনসেন্স নাই
২.আপনি আসলেই উজবুক
৩.আপনি স্ত্রীর অধিকার জীবনে দিতে পারবেন না,বউকে সময়ই দিবেন না!আবার অধিকার!
ভেরি ফানি!’

না না এটা বলা যাবেনা।আমি নিজেই তো ওনাকে ছুঁতে দেইনা।তাহলে অধিকারের কথা কেন বলছি!
তারপর বলবো ৪.আপনি খুব বাজে একটা লোক!আপনি!!!

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ৩৫

বারান্দায় আওয়াজ হতেই তটিনি মুখ ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায়।চাঁদের আলোয় স্পষ্ট একটা পুরুষ মানুষের ছায়া দেখা যাচ্ছে ওখানে। ভয় পেয়ে তটিনি বালিশ হাতে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দিলো এক দৌড়।সোজা দরজার দিকে কিন্তু তার আগেই বাপ্পি ওকে ধরে ফেলে ফিসফিস করে বলে,’আমি আমি!’

তোমাতে করিবো বাস পর্ব ৩৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.