পদ্মফুল - Golpo bazar

পদ্মফুল পর্ব ২৬

পদ্মফুল

পদ্মফুল পর্ব ২৬
লেখিকা জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা

চলন্ত গাড়ি’টা ব্রেক কষলো। ড্রাইভার আড়চোখে তার পাশের লোকটার দিকে চেয়ে বললো,
‘এহন কী করমু, স্যার?’
লোকটি ভারি গলায় বললো,
‘জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে?’

‘না, রি*স্ক হইয়া যাইব। রাস্তা ভীষণ খারাপ আর তার উপর অন্ধকার। গাড়ি উল্টাই যাইতে পারে।’
‘তাহলে স্পিড দে। একটানে এই জায়গা পাড় হবি। সামনে কেউ আসলে ডিরেক্ট উড়িয়ে ফেলবি। বুঝতে পেরেছিস?’
ড্রাইভার লোকটা ভয়ে ভয়ে বললো,
‘কিন্ত, ওরা তো পুলিশ। আমি পারমু না স্যার।’
আরাফাত দাঁত খিঁচে বললো,

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘তুই বোধ হয় ভুলে গেছিস যে, তোর মেয়েও আমাদের কাছে আছে। মেয়ের ভালো চেয়ে থাকলে, যা বলেছি তাই কর।’
লোকটা কাঁদতে লাগল। বললো,
‘আমাগো মাফ কইরা দেন না। আর আমার মাইয়ারে কষ্ট দিয়েন না।’
আরাফাত ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। বললো,

‘আগে আমার কথা শোন। সোজা যেতে থাক। গাড়ি যদি থামিয়েছিস তবে আজ খবর আছে তোর।’
ভয়ে ভয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঢোক গিলল সে। এক্সিলেটরে চাপ দিয়ে ফুল স্পিডে চালাতে থাকল। কিছুটা সামনেই পুলিশের গাড়ি। সামনে থেকে ট্রাক আসতে দেখে সতর্ক হয় তারা। আগে থেকেই বেরিকেট দিয়ে প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রাস্তায় বেরিকেট দেখে ড্রাইভার লোকটি আরো বেশি ঘাবড়ে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

‘স্যার, বেরিকেট দিয়া দিছে, এহন কী করমু?’
‘শা*লা, বেরিকেট ভাঙ্গ।’
‘সম্ভব না স্যার। এক্সিডেন্ট হইবো।’
‘যা খুশি হোক, গাড়ি থামাতে পারবি না। স্পিড দে আরো…’
লোকটি আরো স্পিড দিল। গাড়ির স্পিড দেখে পুলিশ’রা আরো সতর্ক হয়ে দাঁড়াল। অফিসার বললো,
‘গাড়ির স্পিড বেড়েছে মনে হয়। এভ্রিওয়ান, বি কেয়ারফুল।’

গাড়িটা কাছাকাছি আসতেই সেখানের পুলিশ’রা সিগনাল দিতে লাগল, গাড়ি থামানোর জন্য। কিন্ত গাড়ি কি আর থামবে? থামার বদলে উল্টো আরো স্পিড বাড়িয়ে গাড়ি সামনের দিকে এগুতে লাগল। অফিসার তাড়া দিয়ে বললো,
‘গাড়ি থামবে না মনে হচ্ছে, ঐদিকটাও বেরিকেট দিন। আর আপনারা সবাই, প্রস্তুত থাকুন। গাড়ি না থামলে ডিরেক্ট শু*ট করবেন।’
‘ওকে স্যার।’

গাড়িটা থামল না। বেরিকেটে জোরে আঘাত করতেই একটা ছিটকে সেগুলো দূরে গিয়ে পরে। আর সঙ্গে সঙ্গেই সবাই একসঙ্গে ফায়ারিং শুরু করলো। গাড়ির স্পিড তাতেও কমেনি। সবটুকু দিয়ে ছুটে যায় সামনের দিকে। আর কিছু করার নেই দেখে উপস্থিত পুলিশ’রা এক নাগাড়ে শুট করতে থাকে। আর তখনই হয়তো একটা বুলেট গিয়ে গাড়ির চাকায় লাগে যার ফলে গাড়ি ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে। এতকিছুর পরও আরাফাত চেঁচিয়ে বলছে,

‘গাড়ি থামাবি না। চালিয়ে যা।’
ড্রাইভার ভীত সন্ত্রস্ত কন্ঠে বললো,
‘স্যার, গাড়ি এহন না থামাইলে এক্সিডেন্ট করবো। পেছনের চাকার হাওয়া বাইর হইয়া গেছে। আমিও আর ব্যালেন্স পাইতেছি না।’
আরাফাত রাগে নিজের চুল ঘামছে ধরে।

‘শা*লা, তোর জন্য আমার এতদিনের পরিশ্রম সব জলে যাবে। থামা গাড়ি।’
গাড়িটা থামল ঠিকই। তবে রাস্তা থেকে অর্ধেক নেমে গেল জঙ্গলে। আরাফাত আর ডানে বামে না দেখে গাড়ি থেকে নেমেই দিল জঙ্গলের দিকে দৌঁড়। একে তো রাত। তার উপর জঙ্গলের ভেতর পুরো অন্ধকার। সে কোন দিকে যাচ্ছে সে নিজেও জানে না। তাও ছুটে যাচ্ছে নাক মুখ বুঁজে।

গাড়ি থামতে দেখে পুলিশ’রা ছুটে এলো। গাড়ি থেকে বেরিয়ে যে কেউ জঙ্গলের দিকে ছুটে গিয়েছে সেটা আর অন্ধকারের ভেতর কারোর চোখে পড়লো না। গাড়ির দরজা খুলেই মধ্যবয়স্ক লোকটা-কে একটা চ*ড় মেরে গাড়ি থেকে নামাল তারা। অফিসার ক্ষেপে গিয়ে বললো,

‘বেরিকেট দেখেও গাড়ি থামাসনি কেন? কী নিয়ে যাচ্ছিলি গাড়ি দিয়ে? পেছনের শাটার খোল।’
লোকটি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। বলতে লাগল,
‘আমি কিছু করি নাই স্যার। এইসব করছে ঐ লোকটা। মাত্র এই জঙ্গলের দিকে গেছে। আমার কোনো দোষ নাই। ওরা আমার মাইয়ারে আটকাই রাইখা আমারে দিয়া এসব করাইছে। আর গাড়ির পেছনে আরো অনেক মাইয়া আছে। ওরা নারী পা*চা*রকারী, স্যার।’

অফিসার তার দু’জন লোককে জঙ্গলের দিকে যেতে বললো। যে করেই হোক ঐ লোকটাকে খুঁজে বের করতে হবে। ওকে বের করতে পারলেই এই চক্রের আসল মাথাকেও পাওয়া যাবে।

গাড়ির পেছনের শাটার খুলে দেখল সেখানে দশ থেকে বারো’টা মেয়ে। সবারই হাত, পা, মুখ সব বাঁধা। তারা তাড়াতাড়ি করে উপরে উঠে ওদের সবাই হাত, পা, মুখ খুলে দিল। চোখের সামনে পুলিশ দেখে সবাই যেন প্রাণ ফিরে পেল। কেউ কেউ কেঁদে উঠল। অফিসার দেখল সবার মাঝে একজন নিচে পড়ে আছে। কোনোরকম নড়া চড়াও করছে না।

অফিসার গিয়ে তার বাঁধন সব খুলে দিল। নাকের কাছে দুই আঙ্গুল রেখে দেখল শ্বাস প্রশ্বাস চলছে কিনা। না, বেঁচে আছে। জ্ঞান নেই হয়তো। অফিসার কনস্টেবল ডেকে পানি আনতে বললো। পানি আনার পর তিনি হাতে খানিকটা পানি নিয়ে মেয়েটাকে পানির ঝাপটা দিতে লাগলো। গাড়ি এত নড়া চড়া করায় মাথার এক পাশে আ*ঘাত লেগেছে তার। চামড়া’টা হালকা ছি*লে গিয়েছে। অফিসার কোনোরকমে তাকে ধরে বসালো। সাথের মহিলা কনস্টেবল কে বললো,

‘উনাকে ধরে গাড়িতে নিয়ে বসান। আর বাকি সবাইকেও নিয়ে যান।’
সবাই একে একে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
আশপাশ থেকে অনেক গমগম শব্দ কর্ণকুহুরে ঢুকছে। কে যেন বলছে, “মেয়েগুলোকে আগে হসপিটালে নিতে হবে। তারপর ওদের পরিবারের লোকদেরও খবর দিতে হবে।” আবার কেউ একজন বলছে, “স্যার, এই মেয়েটার জ্ঞান তো এখনও ফেরেনি, কী করবো?”

শরীরে এত বেশি যন্ত্র*ণা করছে যে মনে হচ্ছে হয়তো সে মা*রা পরছে। চোখ মেলে যে তাকাবে সে শক্তিও পাচ্ছে না। সে বুঝতে পারছে তার আশেপাশে কিছু হচ্ছে। তাকে নিয়েই কিছু হচ্ছে। সে চেষ্টা চালাচ্ছে। তাকাতে হবে। দেখতে হবে, তার পাশে কে আছে। এক চোখে হালকা তাকাল। অপর চোখটা এখনও বন্ধ।

এক চোখে দেখে কি কিছু বোঝা যায়? এবার দু চোখ কষ্ট করে খুলল সে। প্রথমে ঝাপসা দেখলেও কিছুটা সময় পর সবকিছু পরিষ্কার হলো। চারদিক অন্ধকার। টিমটিমে লাইটের আলোয় অনেকগুলো মুখ। যে মুখগুলোতে ছেয়ে আছে আতংক আর ভয়। আরো দেখল কিছু পোশাকধারী মানুষ। যাদেরকে দেখে এবার তার মনে হলো সে বেঁচে আছে। সে অস্পষ্ট স্বরে বলতে লাগল,

‘পা-পানি খাবো।’
মহিলা কনস্টেবল’টি তাকে ধরে পানি খাইয়ে দিল। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
‘এখন সুস্থ লাগছে কিছুটা?’
পদ্ম বললো,
‘আ-আমি ক-কোথায়?’

‘ভয় পাবেন না। আপনি এখন এখানে নিরাপদেই আছেন। আমরা আপনাদের সবাইকে উদ্ধার করতে পেরেছি।’
তারপর সে অফিসারকে ডেকে বললো,
‘স্যার, উনার জ্ঞান ফিরেছে।’
অফিসার সামনে এসে বললো,
‘আপনি ঠিক আছেন?’
মেয়েটি জড়ানো গলায় বললো,
‘জ্বি।’

অফিসার হঠাৎ কী মনে করে জিজ্ঞেস করলো,
‘নাম কী আপনার?’
‘প-পদ্ম।’

পদ্মফুল পর্ব ২৫

অফিসার চমকে বললো,
‘আপনিই পদ্ম? ..এবার তো তাহলে আসল অপ*রাধী ধরা পড়বেই।’

পদ্মফুল পর্ব ২৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.