পদ্মফুল - Golpo bazar

পদ্মফুল পর্ব ৩৭

পদ্মফুল

পদ্মফুল পর্ব ৩৭
লেখিকা জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা

রাত এগারো’টার দিকে সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। সময় গড়িয়ে চলছে, আর যত সময় যাচ্ছে অভির বিরক্তির মাত্রাটাও ততই বাড়ছে। আর কিছুক্ষণ পর বারো’টাও বেজে যাবে। তার জন্মদিন চলে যাবে। অথচ এই মানুষগুলো এখনও তাকে সামান্য উইশ পর্যন্ত করলো না। মানছে তার বয়স হয়েছে, সে আর ছোট নেই যে বাচ্চাদের মতো সবাই তার সাথে কেক কাটবে, হাত তালি দিয়ে হ্যাপি বার্থডে বলবে কিন্তু তাই বলে কি তাকে সামান্য একটু শুভ কামনাও কেউ জানাতে পারে না? সবার কথা বাদই দিল, আদিদ…তারও কি মনে নেই?

অভি লিভিং রুমে বসে মোবাইল দেখছিল। আদিদ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে তার পাশে বসলো। অভি সরু চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘হসপিটালে যাবি না?’
আদিদ তার শার্টের দুটো বোতাম খুলে শার্টের কলার’টা একটু ঝেড়ে বললো,
‘না, ভাবছি আজকে এখানেই থাকবো।’

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিস্ময়ে যেন অভির কথা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। সে তীব্র গলায় বললো,
‘এখানে থাকবি মানে? তুই এখানে থাকতে যাবি কেন?’
‘আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।’

অভির যেন সবকিছু কেমন আজগুবি লাগছে। কতক্ষণ সে ভাবল। আশ্রমের সবার ব্যাবহারই তার কাছে সন্দেহজনক লাগছে। এইভাবে একসাথে সবাই তার বার্থডে ভুলে যাওয়ার কথা না। নিশ্চয়ই ওদের পেটে পেটে কিছু একটা চলছে। আচ্ছা ওরা সবাই মিলে আবার তাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছে না তো?
অভির মন আর মস্তিষ্ক তো তাই বলছে। অভি নিজের মন আর মস্তিষ্কের কথা বিশ্বাস করলো। সে হেলান দিয়ে সোফায় বসলো। বাঁকা চোখে আদিদের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘তাহলে আজ আমিও এখানেই থাকবো, কী বলিস?’
আদিদ পাত্তা না দিয়ে বললো,
‘থাক, আমার তো কোনো আপত্তি নেই। তোর আশ্রম তুই থাকতেই পারিস।’
অভি মনে মনে হেসে তার ফোনের উপর আবার মনোযোগ দেয়। তখন সেখানে আবার রাণী আসে। ওকে দেখে আদিদ যেন বিষম খেল। লাল টকটকে এক শাড়ি পরে এসেছে সে। রাণীকে দেখা মাত্রই অভি হেসে বললো,

‘কী রে রাণী, রাত বিরেতে এমন পেত্নী সেজেছিস কেন?’
রাণী মুখ কালো করে বললো,
‘ডাক্তার সাহেব, আমাকে বুঝি পেত্নীর মতো লাগছে?’
আদিদ ভ্যাবাচ্যাকা খেল। বললো,
‘কই না তো। সুন্দর লাগছে।’

রাণী মাথা নিচু করে মুচকি হাসল। ওর হাসি দেখে অভিও দাঁত কেলিয়ে হাসল। রাণী এবার মাথা তুলে তাকিয়ে বললো,
‘আচ্ছা ডাক্তার সাহেব, আপনার কি লাল কালার পছন্দ? নাকি অন্য কোনো কালার?’
অভি ঠোঁট কামড়ে বললো,
‘তোর এত কিছু কেন জানতে হবে শুনি?’
রাণী কপাল কুঁচকে বললো,
‘তুমি কেন এত কথা বলছো? আমি তো ডাক্তার সাহেবের সাথে কথা বলছি, উনাকে কথা বলতে দাও না। ডাক্তার সাহেব আপনি বলুন তো?’

রাণীর ব্যবহারে আদিদ বরাবরই অপ্রসন্ন। তাও সে হালকা হেসে জবাবে বললো,
‘আমার তেমন কোনো পছন্দের রং নেই।’
রাণী মন খারাপ করে বললো,
‘তাও এমন একটা রং তো আছে যেটা আপনার অন্য সবগুলো থেকে একটু বেশি ভালো লাগে?’
আদিদ ফুঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
‘না বাবা, বললাম তো নেই।’

রাণী ঠোঁট উল্টে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইল। আদিদ বিরক্ত গলায় বললো,
‘কী জ্বালায় পড়লাম, এখন যদি আমার পছন্দের রং না থাকে তাতেও তোমার মন খারাপ করতে হবে?’
রাণী জবাব দিল না। সে চলে যেতে নিলেই অভি তাকে ডাকে। বলে,
‘রাণী, এদিকে আয়।’

রাণী ধপ ধপ করে পা ফেলে তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
‘কী?’
‘বস এখানে’
রাণী তার পাশে বসলো। অভি গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘বয়স কত তোর?’
রাণী ব্রু কুঁচকে বললো,
‘কেন?’
‘এমনি, বল কত?’
‘ষোলো।’
‘আদিদের বয়স কত জানিস?’
‘ঊনত্রিশ।’

‘তোর থেকে তেরো বছরের বড়ো। ও যদি ঠিক বয়সে বিয়ে করতো তবে এতদিনে তোর বয়সী একটা মেয়েও থাকতো। আর তুই এসেছিস এই বয়সে এই বুড়োর সাথে প্রেম করতে?’
আদিদ দাঁতে দাঁত চেপে অভিকে বললো,

‘বেশি বলে ফেলছিস না? আরো দশ বছর আগে বিয়ে করলেও আমার এতদিনে ওর বয়সী কোনো মেয়ে থাকতো না।’
‘আরে মেয়ে তো থাকতো, তাই না? বয়স ডাস’ন্ট ম্যাটার। এই রাণী, বুঝেছিস কী বলছি? বাচ্চা একটা মেয়ে আর নজর পড়েছে বুড়ো এক বেটার উপর। তোর জন্য আমি আরো ভালো ছেলে নিয়ে আসবো। অযথা এই বুড়োর পিছে ঘুরে নিজের টাইম নষ্ট করিস না।’

রাণী কাঁচুমাচু করে বললো,
‘কিন্তু এই বুড়ো’টা তো অনেক ড্যাশিং।’
অভি হেসে ফেলল। আদিদ ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
‘উফফ, মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার। এই বাচ্চা, আমার মাথা খারাপ না করে নিজের রুমে যাও। কী হলো যাও’
শেষের কথাটা বেশ জোরে বলায় রাণী ভয়ে ভয়ে সেখান থেকে চলে গেল। আদিদ ক্ষুব্ধ চোখে অভির দিকে তাকিয়ে আছে। আর অভির হাসি থামছেই না। সে হাসতে হাসতেই বললো,

‘এই বুড়ো, তুই এত ড্যাশিং কেন রে?’
কথাটা বলে উচ্চস্বরে হাসতে লাগল। আদিদ রাগে দাঁত পিষছে। সে তার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কাট কাট গলায় বললো,
‘চল, বাইরে চল।’
‘কেন, ড্যাশিং বুড়ো? বাইরে গিয়ে কী করবে?’
আদিদ রেগে গিয়ে বললো,
‘মেজাজ খারাপ না করে চলতো।’

আদিদ অভিকে নিয়ে বাইরে গেল। আর তারা বাইরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চারদিকের সমস্ত লাইট অফ হয়ে গেল। অভি চমকে বললো,
‘কিরে লাইটের হঠাৎ কী হলো?’
আদিদ হেসে বললো,
‘ঐ তো লাইট।’
অভি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল, সামনে অনেক মোমবাতি রাখা। সে সেটা দেখে মুচকি হাসল। আদিদ আবার বললো,
‘চল।’

আদিদের পেছন পেছন অভি সামনে যেতে লাগল। অভির আর বুঝতে বাকি রইল না এখানে কী হতে চলছে। আদিদ অভিকে সাথে নিয়ে সামনের বাঁশের ঘরের দরজাটা খুলতেই সব মেয়েগুলো এক সাথে “হ্যাপি বার্থডে” বলে চেঁচিয়ে উঠল। অভি বড়ো বড়ো চোখে চেয়ে রইল। কত কী করেছে তারা। এত কিছু সে আশা করেনি। অভির তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। তার বার্থডে’র জন্য এত কিছু? অভি আদিদকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘শালা, অভিনয় তো ভালোই শিখেছিস।’
আদিদ হেসে বলে,
‘শুভ জন্মদিন, বন্ধু।’

তারপর সবাই তাকে একে একে উইশ করলো। উইশের পর্ব শেষে হতেই সবাই মিলে কেক কাটল। অভি সবাইকে কেক খাইয়ে দিল। তার মধ্যেই রাণী করলো আরেক কাজ, সে খুশির ঠেলায় গিয়ে আদিদের মুখে কেক মাখিয়ে দিল। আর সেটা নিয়ে আদিদ তো রেগে মেগে বোম্ব। আর যার ফলপ্রসূ সবার থেকে রাণীকে একগাদা বকা শুনতে হলো। যদিও আদিদ তাকে কিছু বলেনি কিন্তু বাকি সবার বকাবকি তে বেচারি শেষে কান্নায় করে ফেলে।

অনেকগুলো গিফ্টে অভির গাড়ি ভর্তি হয়ে যায়। অভি আর আদিদ দুজনেই এখন বেরিয়ে পড়বে। সব মেয়েরা একে একে তাদের বিদায় জানিয়ে ভেতরে চলে গেল। তবে দূরে এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল পদ্ম। অভি গাড়ি নিয়ে আগে আগে বেরিয়ে যায়। আদিদ গাড়ি বের করে সাইডে এসে দাঁড়ায়।

পদ্মফুল পর্ব ৩৬

তখনই তার চোখ পড়ে পদ্ম’র উপর। মেয়েটা শুকনো মুখে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আদিদ কিছুটা অবাক হয়ে তার কাছে গেল। জিজ্ঞেস করলো,
‘কী হয়েছে পদ্ম, আপনি এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’

পদ্মফুল পর্ব ৩৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.