পদ্মফুল - Golpo bazar

পদ্মফুল পর্ব ৫৩

পদ্মফুল

পদ্মফুল পর্ব ৫৩
লেখিকা জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা

পদ্ম বসে কী যেন ভাবছিল। আদিদ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বললো,
‘ফ্রেশ হয়ে নিন।’

সে উঠে একটা সুতি থ্রি পিস নিয়ে ধীর পায়ে ওয়াশরুমে ঢুকল ফ্রেশ হতে। আদিদ তখন বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল, চাঁদ উঠেছে। বৃত্তাকার এক চাঁদ। তার গা ছুঁয়ে চলছে জলধর রাশি রাশি।
আদিদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চাঁদ দেখল। তারপর সে ভেতরে গিয়ে বসলো। রুম’টা তে চোখ বুলালো। কখনো সে ভাবেনি আজকের এই রাত টা সে অন্য কারোর সঙ্গে কাটাবে। ভাগ্য কত অদ্ভুত, কত ভয়নাক!

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আদিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইল। পদ্ম বেরিয়ে এলো। আদিদ কে এক পলক দেখে সে তার শাড়ি টা বারান্দায় নেড়ে এলো। তারপর কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে সে আদিদের কাছ থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রইল। আদিদ মাথা তুলে পদ্ম’র দিকে দৃষ্টিপাত করে বললো,
‘কী ব্যাপার, দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন।’

পদ্ম বেড়াল পায়ে এগিয়ে গিয়ে আদিদের পাশে বসলো, তবে কিছুটা দূরত্ব রেখে। অনেকক্ষণ দুজন ওভাবে চুপচাপ বসে রইল। দুজনের মনে কী চলছে সেটা কেবল তারা দুজনেই জানে। বেশ কিছুটা সময় পর নিরবতা কাটিয়ে আদিদ বললো,
‘খুব অস্বস্তি হচ্ছে তাই না?’
পদ্ম ফ্যালফ্যাল চোখে তাকাল। কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আদিদ আবার বললো,

‘আমারও হচ্ছে। অনেক বেশি অস্বস্তি হচ্ছে। এইভাবে হুট করেই এতকিছু হয়ে গেল, আরেকটু সময় নিলে হয়তো ভালো হতো। অন্তত, এতটা অস্বস্তি হতো না।’
আদিদের কথার পদ্ম কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। আদিদ চুপ হয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ। পদ্মও বসে রইল। যদিও পদ্ম’র মন তখন অনেক কিছু বলতে চাইছিল। কিন্ত কিছু একটা যেন তাকে আটকে দিচ্ছিল বার বার। পদ্ম জিভ দিয়ে তার শুষ্ক ওষ্ঠ্য জোড়া ভিজিয়ে অনেক কষ্টে বললো,

‘আপনি চাইলে এইরুমে একা থাকতে পারেন। আমি রান্নাঘরের সাথে একটা ছোট্ট রুম আছে, সেখানে থাকতে পারবো।’
আদিদ সঙ্গে সঙ্গেই ব্রু কুঁচকাল। বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো,
‘আমি কি বলেছি, আমি আপনার সাথে এক রুমে থাকতে পারবো না?’
পদ্ম ইতস্তত কন্ঠে বললো,

‘না মানে, আপনার অস্বস্তি হচ্ছিল বলে বলছিলাম।’
আদিদ গম্ভীর গলায় বললো,
‘এতটাও অস্বস্তি হচ্ছে না যে আপনার সাথে এক রুমে থাকতে পারবো না।’
পদ্ম চুপ হয়ে যায়। আদিদও আর কিছু বলে না। কিছুক্ষণ পর পদ্ম বললো,
‘শুবেন না?’

আদিদ ওর দিকে তাকাতেই পদ্ম লজ্জামাখা কন্ঠে বললো,
‘না মানে, সারাদিন তো অনেক ধকল গিয়েছে; ক্লান্ত নিশ্চয়ই তাই শুয়ে পড়ার কথা বলছিলাম।’
আদিদ অন্যদিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,
‘তো আমি কি অন্যকিছু ভেবেছি নাকি?’
পদ্ম বুঝলো না তার কথা। জিজ্ঞেস করলো,

‘কিছু বললেন?’
আদিদ মাথা নাড়িয়ে না করলো। বললো,
‘আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি লাইট অফ করে আসি।’
পদ্ম উঠে দাঁড়াল। অস্থির গলায় বললো,
‘না না, আমি লাইট অফ করছি। আপনি শুয়ে পড়ুন।’

আদিদ বিছানায় উঠে একপাশে গিয়ে বসলো। পদ্ম লাইট অফ করে আস্তে আস্তে বিছানার কাছে এলো। হঠাৎ তখন তার মনে পড়ল, দুধের কথা। সে তাড়াহুড়ো করে যেতে গিয়ে টেবিলের সাথে ঠাস করে বারি খেল। শব্দ শুনে আদিদ ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে বললো,
‘কী হয়েছে?’

পদ্ম তার হাঁটু ঘষতে ঘষতে আদিদের দিকে তাকাল। বোকা বোকা হেসে বললো,
‘তেমন কিছু না, শুধু একটু বারি খেয়েছি।’
পদ্ম’র মুখটা দেখে আদিদের খুব হাসি পাচ্ছিল। কিন্তু হাসা যাবে না। কোনো ছেলের সামনে কোনো মেয়ে আঘাত প্রাপ্ত হলে সেই ছেলে কোনোভাবেই হাসতে পারবে না, এটা মারাত্মক অন্যায়। আর সেই ছেলে যদি হয় সেই মেয়ের স্বামী, তাহলে তো আরো আগে না। আদিদ তাই সহানুভূতির সুরে বললো,

‘বেশি লেগেছে?’
পদ্ম সোজা হয়ে দাঁড়াল। মুখের হাসি বজায় রেখে বললো,
‘না।’
কথাটা বলে সে গিয়ে রুমের লাইট টা আবার জ্বালালো। তারপর দুধের গ্লাস টা নিয়ে দেখল, দুধ ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। পদ্ম তাই আদিদ কে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘দুধ টা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে, আমি গরম করে আনছি।’
‘কার জন্য?’

পদ্ম জবাবে বললো,
‘আপনার জন্য।’
‘আমি এখন কিছু খাবো না। আপনি খেতে চাইলে খেতে পারেন।’
‘আসলে রাণী দিয়ে গিয়েছিল। আপনি না খেতে চাইলে রেখে আসছি।’
আদিদ বললো,
‘গরম করে নিজে খেয়ে নিন। আপনার শরীরে শক্তি কম, ঠাস ঠুস শুধু বারি খান। আপনার শক্তি প্রয়োজন।’
পদ্ম চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
‘লাগবে না আমার শক্তি। আমার গায়ে যথেষ্ঠ শক্তি আছে।’

এই বলে পদ্ম দুধের গ্লাস টা নিয়ে রান্নাঘরে গেল। বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। হঠাৎ মনে হলো, কফি বানালে কেমন হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। ঐ দুধের সাথে আরো এক কাপ দুধ দিয়ে পদ্ম দু কাপ কফি বানালো। কফির কাপ দুটো নিয়ে পেছনে ঘুরতেই পদ্ম দেখল, আদিদ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পদ্ম হালকা হেসে বললো,
‘আপনি এখানে?’

‘আপনার কোনো খোঁজ নেই বলে দেখতে এলাম, আবার হাত টাত পুড়িয়ে ফেললেন কিনা?’
পদ্ম এক কাপ কফি আদিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বিরক্ত গলায় বললো,
‘কফি বানাচ্ছিলাম।’
আদিদ কফির কাপ টা হাতে নিয়ে বললো,
‘চলুন ছাদে যাই।’
পদ্ম চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল। বললো,

‘সত্যি! ছাদে যাবেন?’
‘হ্যাঁ, কফি যখন বানিয়েছেন তখন ছাদে গিয়েই না হয় কফি টা এনজয় করি।’
পদ্ম’র মন খুশিতে নেচে উঠে যেন। সে লকের চাবি টা নিয়ে এসে বললো,
‘চলুন, দরজা টা বাইরে দিয়ে লক করে যাবো।’

‘আজকে কি পূর্ণিমা?’
‘না।’
পদ্ম ভালো ভাবে চাঁদ টা দেখল। বললো,
‘চাঁদ টা দেখে মনে হচ্ছে, আজ যেনো পূর্ণিমা।’
আদিদ কফির কাপে চুমুক দিয়ে চাঁদের দিকে তাকাল। মৃদু সুরে বললো,
‘আপনি কফি খুব ভালো বানান।’

পদ্ম আদিদের দিকে তাকাল। চাঁদের আলো না রাস্তার সাদা আলো আদিদের মুখে পড়ছে। এই মুখটা এতো সুন্দর কেন? পদ্ম’র কাছে কেন এই মুখ টা এত ভালো লাগে, এত নিষ্পাপ লাগে? পদ্ম কী মনে করে তার হাত টা আদিদের গাল পর্যন্ত নেয়, কিন্তু স্পর্শ করার আগেই হাত আবার নামিয়ে ফেলে। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে তাকায় সে। আদিদ টের পায়। সে তখন পদ্ম’র হাতটা নিয়ে তার গালে রাখে, আর বলে,

‘আপনার হাসবেন্ড, স্পর্শ করতেই পারেন।’
পদ্ম চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে যেন। আদিদ আলতো হেসে বললো,
‘কী হলো?’
পদ্ম অস্বস্তি নিয়ে বললো,
‘না, কিছু হয়নি।’

পদ্ম হাত টা সরিয়ে নেয়। আদিদ ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে বসে। তার পূর্ণ দৃষ্টি এখন পদ্ম’র দিকে নিবেশিত। পদ্ম’র ভীষণ অস্বস্তি লাগছে। তার কফি টা ঠান্ডা হচ্ছে। আদিদ মিহি কন্ঠে বললো,
‘কফি টা ঠান্ডা হচ্ছে তো।’
পদ্ম তাকাল তার দিকে। ইতস্তত কন্ঠে বললো,
‘সমস্যা নেই।’
আদিদ তখন বললো,

‘আপনি নাকি খুব সুন্দর গান গাইতে পারেন?’
পদ্ম কিছুটা অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো,
‘আপনাকে কে বললো?’

‘অভি আজকে বলেছে। ও নিশ্চয়ই আপনার গান শুনেছে, তাই বলেছে। এখন আমাকে একটা গান শুনাতে হবে।’
পদ্ম মুচকি হেসে আদিদের পাশে রেলিং এ হেলান দিয়ে বসলো। তারপর ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে সুর ধরলো,

পদ্মফুল পর্ব ৫২

ওহে কী করিলে বলো, পাইব তোমারে
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে
ওহে কী করিলে বলো, পাইব তোমারে
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে,,,,
ওহে এত প্রেম আমি কোথাও পাব না
এত প্রেম আমি কোথাও পাব না
তোমারে হৃদয়ে রাখিতে
আমার সাধ্য কিবা তোমারে
দয়া না করিলে কে পারে
তুমি আপনি না এলে কে পারে
হৃদয়ে রাখিতে….

পদ্মফুল পর্ব ৫৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.