প্রণয়াসক্ত - golpo bazar

প্রণয়াসক্ত পর্ব ১১

প্রণয়াসক্ত

প্রণয়াসক্ত পর্ব ১১
Sumaiya Sumu(লেখিকা)

“রাত ১২.৩০ বাজে। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ ভেসে আসলো। আমি একরাশ লজ্জা, ভয়, খুশি, আনন্দ নিয়ে নিজেকে আরও গুটিয়ে নিলাম। আরাফ এসে ধীরে ধীরে আমার পাশে বসলো”। তারপর বললো…
‘আসসালামু আলাইকুম’।
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’।

‘চলো আমরা দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে নিজেদের নতুন জীবনে পা রাখি’।
‘আমি মুচকি হেসে বললাম, ঠিক আছে’।
“তারপর আমি আর আরাফ দুজন নিজেদের বিয়ের পোশাক পাল্টে ফ্রেশ হয়ে অজু করে নিলাম। অতঃপর দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। নামাজ শেষ করে আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরাফও আমার পিছন পিছন বারান্দায় এসে আমাকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমি একটু কেঁপে উঠলাম। আরাফ আমাকে জড়িয়ে ধরেই চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো। দু’জনের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা। দু’জনেই মুহুর্ত’টা অনুভব করছি”। নিরবতা কাটিয়ে আরাফ বলে উঠলো…
‘আমার ঝ’গ’ড়ু’টে রানী কি সারারাত লজ্জা পেয়েই কা’টা’বে’?

‘কি হলো? কথা বলবেন না’?
‘আমি কিছু না বলে সামনের দিকে ঘুরে আরাফকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলাম। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি আমার ভালোবাসার মানুষ’টাকে পেয়ে গেছি’। আরাফও আমাকে খুব যত্ন করে বুকে আগলে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো…
‘এতো ভালোবাসা বিয়ের আগে কোথায় ছিলো শুনি? বিয়ের আগে তো শুধু ঝ’গ’ড়া করতেন’?
‘ইসস আমি মনে হয় একা করতাম? আর আপনি করতেন না বুঝি’?
‘আপনার সাথে কথা বলার বাহানায় তো ঝ’গ’ড়া করতাম’।

‘কি ব্যাপার ম্যাডাম? আজকে যে শুধু চুপ করে আছেন’?
‘অনুভব করছি’।
‘কি’
‘আপনাকে’।
‘উহু আর কত আপনি বলবা? এবার তো তুমি’তে আসো। আর একবার আপনি বললে কিন্তু কথাই বলবো না’।
‘আচ্ছা তুমি করেই বলবো’।
‘তাহলে বলো’?

‘কি’?
‘ওইযে ওইটা’।
‘কোনটা’?
‘আরে ওইটা তো’।
‘কোনটা বলবা তো’?
‘যেটা আমি শুনতে চাই’।
‘একটু ভেবে বললাম, কি শুনতে চাও? আমার মাথায় তো আসছে না’।
‘আরাফ আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো, ভালোবাসি’।
‘আমার সারা শরীর দিয়ে যেনো একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো। আমি আরাফকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম’।
‘কি বলবে না’?

‘জানি না’।
‘বলো বলছি’।
‘না’।
‘তাহলে কিন্তু চলে যাবো’।
‘আমি ওর বুক থেকে মাথা তুলে বললাম, কোথায়’?
‘বাসায়’।
‘ইসস আপনি এখন আমাকে ছেড়ে যেতে পারবেন বুঝি’?
‘জানি না’।
‘আপনাকে এখন থেকে আর কোথাও যেতে দিবো না। সবসময় আমার কাছে বেঁধে রাখবো’।
‘তাহলে বলো’।
‘উফ আজকে না বলা পর্যন্ত বুঝি ছাড়বা না’?
‘না। তাড়াতাড়ি বলো’।

‘আমি আবার আরাফের বুকে মাথা রেখে আস্তে করে বললাম, ভীষণ ভালোবাসি’।
‘আরাফ মুচকি হেসে বললো, আজকে যদি আমার ঝ’গ’ড়ু’টে রানী’কে ছুঁয়ে দেওয়ার মতো কোনো অপরাধ করে ফেলি তাহলে কি আমি শাস্তি পাবো’?
‘শাস্তি তো অবশ্যই পাবে’।
‘কি শাস্তি পাবো শুনি’?
‘আমি লজ্জায় লাল নীল হয়ে বললাম, শাস্তি হিসেবে রোজ এভাবেই ছুঁয়ে দিতে হবে’।

“আরাফ মুচকি হেসে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে আমার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো। আমি আরাফের গলা জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে লেপ্টে রইলাম। আরাফ আমাকে রুমে নিয়ে গিয়ে খাটে শুইয়ে দিয়ে নিজেও আমার উপর শুয়ে পড়লো। দু’জন দু’জনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। চোখে চোখে যেনো মুখে না বলা অনেক কথা হয়ে যাচ্ছে। ওর চোখে নিজের জন্য অসম্ভব ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি।

ওর চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলাম না, মনে হচ্ছে ওর চোখের মায়ায় আমি অতল সাগরে বারবার তলিয়ে যাচ্ছি আর আরাফ আমাকে বারবার টেনে তুলছে। আমি লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে পাশ ফিরে গেলাম। আরাফ আবার আমাকে ওর দিকে ফিরিয়ে আমার চোখের সামনে আসা চুলগুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে ফিসফিস করে বললো ‘আজকে আমি তোমাকে পূর্ণভাবে চাই।

আমার সব অপেক্ষার অবসান ঘটাতে চাই নাতাশা রানী’ আমি কিছু না বলে আরাফকে জড়িয়ে ধরলাম। আরাফও আমাকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে আমার কপালে আবার ভালোবাসার পরশ একে দিলো। আমি এখনো চোখ বন্ধ করে আছি। ওর এই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস আমার নেই। তারপর আমার দুই চোখের পাতায় ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। আমি ওর শার্ট খা’ম’চে ধরলাম। শুরু হলো ওদের ভালোবাসার খেলা”।
(হুস হুস আর কত ওদের বাসর দেখবে😒)

সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভে’ঙে গেলো। আশে-পাশে তাকিয়ে নিজেকে আরাফের উ’ন্মু’ক্ত বুকে আবিষ্কার করলাম। আরাফ আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। আমি আরাফের দিকে তাকালাম। কি সুন্দর বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে। কতটা স্নিগ্ধ লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না। আরাফের সিল্কি চুলগুলো কপালের একপাশে পড়ে আছে। আমি হাত দিয়ে ওর চুলগুলো আরেকটু এলোমেলো করে দিলাম। হঠাৎ কালকে রাতের কথা মনে পড়তেই আমি লজ্জায় লাল হয়ে আরাফের বুকে মুখ লুকালাম”। আরাফও আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো…

‘এতোক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার মতো অবলা শিশুর ইজ্জত লুট করছিলে তোমার লজ্জা করে না’?
‘আমি চমকে উঠে আরাফের দিকে তাকিয়ে দেখি আরাফ আমার দিকেই তাকিয়ে আছে’।
‘কি হলো? বলো’?
‘আমি মোটেও তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি নি’।
‘ইসস মি’থ্যু’ক’।
‘হুহ্’।
‘ভালোবাসি’।
‘আমিও’।

“আরাফ আর কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো। হঠাৎ আমার ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখি অনেক বেলা হয়ে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে চেষ্টা করলাম কিন্তু আরাফ বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছি না”। অনেক মো’চ’ড়া’মু’চ’ড়ি করেও যখন নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না তখন হাল ছেড়ে দিয়ে আরাফকে বললাম…
‘এই আরাফ ছাড়ো না’।
‘উহু’।
‘প্লিজ ছাড়ো। দেখো কত বেলা হয়ে গেছে। সবাই কি বলবে’?
‘কি বলবে? তুমি তোমার হাসবেন্ডের সাথে আছো’।
‘ধুররর ছাড়ো তো’।
‘তাহলে আমার মর্নিং কিস দাও’।

‘আরাফ এখন আর কোনো দুষ্টুমি করবে না’।
‘আচ্ছা করবো না। একটা দাও তাহলে ছেড়ে দিবো’।
‘আমি জানি যতক্ষণ না দিবো ততক্ষণ ও আমাকে ছাড়বে না তাই একটু ঝুঁকে আরাফের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলাম”।
‘হয়েছে এখন ছাড়ো’।
‘আরাফের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি’।
‘আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম, কি হলো’?

‘আরাফ ওর ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বললো, এখানে একটা দাও’।
“এবার ওর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে হাতে একটা চি’ম’টি দিলাম। আরাফ ‘আহ্’ বলে হালকা একটু আর্তনাদ করে নিজের হাত ডলতে লাগলো আর আমি ছাড়া পেয়ে ওকে একটা ভেং’চি কে’টে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। আরাফ পিছন থেকে বলছে ‘একবার হাতের কাছে পাই তারপর মজা বুঝাবো’। আমি তেমন পাত্তা দিলাম না। ফ্রেশ হয়ে আমি আম্মুর কাছে গেলাম আর আরাফ ফ্রেশ হতে গেলো। আমি আম্মুর কাছে গিয়ে দেখি আম্মু অনেক ব্যস্ত।

প্রণয়াসক্ত পর্ব ১০

আমি জিজ্ঞেস করায় বললো ‘দুই পরিবার মিলে আলোচনা করে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৭ দিন পর’ই আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে’। তাই এই ৭ দিন সবাই অনেক ব্যস্ত। আরাফ দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে বাসায় চলে গেলো। যাওয়ার আগে বলে গেছে কালকে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে রেডি থেকো জান। আমি ভাবতে ভাবতে থাকলাম কি সারপ্রাইজ হতে পারে?

প্রণয়াসক্ত পর্ব ১২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.