প্রণয়াসক্ত - golpo bazar

প্রণয়াসক্ত পর্ব ৭

প্রণয়াসক্ত

প্রণয়াসক্ত পর্ব ৭
Sumaiya Sumu(লেখিকা)

“আজ শুক্রবার। কলেজ ছুটি, বাহিরে যাওয়া নেই, কোনো কাজ নেই তাই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি। আর ওদিকে আম্মু চি’ল্লা’চি’ল্লি করে সারা বাড়ি মাথায় করছে। হঠাৎ মুখের উপর কি যেনো একটা অনুভব করলাম তাই পিটপিট করে চোখ খুলে দেখি,ওমা মশারীর এক কোণা খুলে আমার মুখের উপর পড়ে আছে। আমি জানি এটা আমার আম্মুর কাজ। আমাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্যই এসব এপ্লাই করে। তাই আর কি! আঁড়মোড়া দিয়ে উঠে বসলাম। এখনো যেনো ঘুমে দুচোখ ভে’ঙে আসছে কিন্তু আর এক মিনিটও ঘুমালে আম্মু আমাকে আস্ত রাখবে না। কি জ্বা’লা”!

“ঘুম কাটাতে ফোনটা নিয়ে একটু ফেসবুকে ঢুকলাম। একটা পোস্ট দেখে একটু মুচকি মুচকি হাসছিলাম”। ওমা কোথা থেকে আম্মু তেড়ে এসে বলে উঠলো…
‘এইই এইই তুই হাসছিস কেন রে? কার সাথে কথা বলিস’?
‘আমি একটু চমকে উঠে বললাম, কারো সাথে না তো’।
‘তাইলে তুমি ভেটকাস ক্যান’?
‘কই’?

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘আমি দেখি নাই? আমারে তোর কানা মনে হয়’?
‘না, তুমি তো চশমা পড়ো। কানা হইবা কেন’?
‘এএ ছেরি ফাজলামো বন্ধ কইরা বল, কার লগে কথা কইয়া ভেটকাস? প্রেম করোস তুই’?
‘এসব কি কইতাছো আম্মু। আমি প্রেম করতে যামু কেন’?
‘তাও ঠিক। প্রেম করতে গুন লাগে আর তুই যেই নিরামিষ তোর সাথে কেউ প্রেমও করবে না’।
‘আম্মুওওও’।
‘চুপ থাক’।

“এই বলে আম্মু চলে গেলো। আমি এখনো আম্মুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি। আম্মু এসব কি বলে গেলো? সব মাথার উপর দিয়ে উঁড়ে চলে গেলো। প্রেম করতেও বুঝি গুন লাগে? কি সব কথাবার্তা”!🤦🏻‍♀️
“দুপুরে গোসল করে নামাজ পড়ে খাওয়া-দাওয়া করে নিলাম। আজকে যেনো সময় কাটছেই না। প্রতিদিন কলেজ যাই, অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকি সময় যে কোন দিক দিয়ে চলে যায় বুঝতেই পারি না।

সারাদিন শুয়ে-বসে থেকে শুধু বোরিং হচ্ছি। তাই একটা গল্পের বই নিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর আম্মু ডাক দিয়ে বললো ‘আম্মু আর আব্বু নাকি একটু বাহিরে যাচ্ছে। ফিরতে ফিরতে রাত হতে পারে’ আমি যেনো বাসার খেয়াল রাখি। তারা চলে গেলো। আমি একা একা কি করবো ভেবে পাচ্ছি না তাই টিভি ছেড়ে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। আমি একটু চমকে উঠলাম কারণ একটু আগেই আম্মু আব্বু বাহিরে গেলো তাহলে এখন কে আসবে?

উনারা’ই কি আবার চলে আসলো? এসব ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে একটু দিয়ে দেখি কেউ নেই। আমি একটু অবাক হলাম। ভাবলাম হয়তো কোনো বাচ্চা দুষ্টুমি করে দিয়েছি। যখনই দরজা আটকাতে যাবো তখনই নিচের দিকে আমার চোখ আটকে গেলো। একটা পার্সেল আর উপরে আমার নাম লেখা। আমাকে আবার কে পার্সেল পাঠালো? আমিও তো কিছু অর্ডার করি নি। তাহলে? পার্সেল’টা নিবো কি নিবো না এসব ভাবতে ভাবতে একটু ঝুঁকে পার্সেল’টা নিয়েই নিলাম।

পার্সেল’টা নিতে গিয়ে আরেকটা জিনিস দেখে আমি অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছি। পার্সেলের পাশে একটা ছেলেদের ব্রেসলেট পড়ে আছে। ব্রেসলেট’টা আমার ভিষণ চিনা চিনা লাগছে। কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না। আমি ব্রেসলেট’টা আর পার্সেলটা নিয়ে আমার রুমে গেলাম তারপর ব্রেসলেট নিয়ে অনেকক্ষণ উল্টে পাল্টে দেখার পর মনে পড়লো ‘এটা তো আমি আরাফের হাতে দেখেছিলাম।

হ্যা, হ্যা আরাফ তো এটা সবসময় পড়ে থাকে’। তাহলে এই পার্সেলও আরাফ দিয়ে গেছে? আর বেশি কিছু না ভেবে আমি পার্সেল’টা খুললাম। পার্সেলের ভিতর কালো আর সাদার কম্বিনেশনের একটি শাড়ি। শাড়ির উপরে আবার স্টোনের কাজ করা। সত্যি শাড়িটা অনেক সুন্দর। সাদা আর কালো দুই মোট কাঁচের চুড়ি, চারটা স্টোনের মোটা বালা, একজোড়া ঝুমকো, একটা পায়েল, একটা মেহেদী, বেলি ফুলের মালা চুলে পড়ার জন্য, একটা লাল গোলাপ, দুইটা কিটক্যাট চকোলেট আর ছোট একটা চিরকুট। আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে পার্সেল’টার দিকে তাকিয়ে থেকে চিরকুট’টা খুললাম”। তাতে লেখা….

‘সভ্যতার অন্তে
সভ্যতার আদিতে
তুমি এসেছো-
লেখকের কলমে,
শিল্পির তুলিতে
জীবনের ক্যানভাসের আকাবাকা টানে
প্রিয়তমা আমার
তোমাকে চাই প্রতিটি জন্মে প্রতিটি ক্ষণে।
পৃথিবীর আনন্দে
জীবনের ছন্দে
তোমাকে দেখেছি-

কথাহীন ভাষায়,
দৃষ্টির গভীরে
হাতে হাত ধরে হেটে চলা সুদুরে
প্রেয়সী আমার
তোমাকে চাই প্রতিটি মূহুর্তে অন্তরে অন্তরে।
বসন্তের শাড়ীতে
বসন্তের রঙে
তোমাকে পেয়েছি-
খোপায় বাধা কাঠবেলীর ঢঙে
চুড়ির শব্দে,
মেহেদি রাঙ্গা হাতে
সুন্দরীতমা আমার
তোমাকে চাই আমার কবিতার খাতাতে’।

“কবিতা’টা পড়েই আরাফের চেহারা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। চিরকুট’টা আর শাড়িটা কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলাম। আরাফকে কেন জানি না ভিষণ মিস করছি। তাহলে কি আমিও আরাফকে ভালোবাসতে শুরু করেছি? এই পার্সেল আর রোজ রোজ এই মেসেজ যে আরাফ’ই পাঠায় সেটা একটু হলেও এখন আমার কাছে পরিষ্কার। কিন্তু আরও ভালো করে নিশ্চিত হতে হবে। আরাফকে হাতেনাতে ধরতে হবে।

ওকে বুঝতে দিবো না যে ওর চালাকি আমি ধরে ফেলেছি। কিন্তু আরাফ যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসে তাহলে ওর ফ্যামিলি কি আমাকে মানবে? যতই হোক ওরা তো অনেক বড়লোক। ওর ফ্যামিলিও নিশ্চয়ই চায় তাদের মতোই কোনো বড়লোক ঘরের মেয়ের সাথেই আরাফের দিতে। এসব ভেবে একটু মনটা খারাপ হয়ে গেলো। হঠাৎ ফোন’টা ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠলো। আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি রিমি ফোন দিয়েছে”। আমি মুচকি হেসে ফোনটা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো….

‘আসসালামু আলাইকুম’।
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’।
‘কেমন আছেন’?
‘জ্বী আলহামদুলিল্লাহ। আপনি’?
‘জ্বী আমিও আলহামদুলিল্লাহ। কি করছেন’?
‘বইন থাম থাম। তোর মুখে এতো ভালোভাবে কথা আমার হজম হইতাছে না’।
‘হিহিহিহি দেখলাম এভাবে কথা বললে তোর রিয়াকশন কি হয়’।

‘হুহ্ ঢং’।
‘কি করিস’?
‘আরাফকে মিস করি’।
‘কিহহহ বললি’?
‘আরে ভাই আস্তে, এতো জোড়ে চি’ল্লা’স ক্যান? আমার কান তো ফে’টে যাবে’।
‘না ভাই তুই কি কইলি এটা? আমার বিশ্বাস হইতাছে না। আরাফ ভাইয়াকে ভালো টালো বেসে ফেললি নাকি’?
‘উমমম মনে হয়’।
‘ওই ছেরি মনে হয় কি? ঠিক করে বল’?
‘আচ্ছা শোন তাইলে’…

‘হুম বল’।
‘(অতঃপর বিকালের সব ঘটনা সম্পূর্ণ খুলে বললাম রিমিকে)’
‘উফফ কি রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার’।
‘কিয়ের মধ্যে কি, পান্তা ভাতে ঘি’…
‘এই কথা বললি কেন’?

‘আমি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত না এটা আরাফ’ই কি না’?
‘তুমি আমারে ব’ল’দ বুঝাও সোনা? তুমি ব্রেসলেট পাইছো নিজেও সন্দেহ করছো’?
‘চুপ থাক। কয়েকদিন আগে আরাফের উপর নজর রাখমু তারপর হাতেনাতে ধরমু’।
‘আচ্ছা ঠিক আছো দোস্ত। আমি আছি তোর সাথে’।
‘আলাবু’।
‘আলাবু ঠু’।

“এভাবে আরও কিছুক্ষণ কথা বলা শেষ করে ফোন রেখে দিলাম। মাগরিব আযান দিয়ে দিয়েছে তাই নামাজ পড়ে পড়তে বসলাম। সাড়ে ৮ টার দিকে মেসেজ টোন বেজে উঠলো। এমন সময় কে মেসেজ পাঠাতে পারে আপনাদের অজানা নয়”। মোবাইল’টা নিয়ে মেসেজ ওপেন করলাম….
‘প্রতীক্ষার প্রহর চেয়ে বসে আসে বেদনা,
নিবিড় কাকনে শীতের যন্ত্রণায় উঠে কান্না।
উজান ভাটির তীরে ঢেউয়ে ভেসে যায় চেতনা,
পরশ পাথর কুড়িয়ে ধনুকের মতো করে ছলনা।

রাত নির্ঝর কতো পাহাড় পর্বতে ছিলো বসবাস,
যুগ যুগান্তরে কান্নার সাথে ভাগ্য নিয়ে করি হতাশ।
আকাশে জোনাকি নেমে আসে ঘরে ফিরে,
নদীর জলে বুক ভাসিয়া কান্না করি মায়ার জালে।
আকাশ বাতাস আঁধার আলো নিভিয়ে যাবে,
তোমার আমার প্রেমের পরশে ভালোবাসা থাকবে।
তোমাকে ডাকিয়া মায়াবীর রাঙা মুখটি বলে,
প্রিয়ার ভালোবাসার টানে আমি যাই চলে।

অন্তরেতে শির শির অনুভব করি,
প্রেম আঙ্গিনায় মুক্তি পেলে তোমাকে ধরি।
পথে প্রান্তরে ভালোবাসার মূল্য আছে,
প্রেমের পরশের মূল্য চলে গিয়েছে’।

“আমি মুগ্ধ হয়ে কবিতা’টা পড়লাম। কবিতার প্রতিটা লাইন আমাকে আরাফের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবার একটা মেসেজ”। আমি দেরি না করে মেসেজ’টা ওপেন করলাম…
‘আসসালামু আলাইকুম মিস। কেমন আছেন? আজকে বিকালে একটা পার্সেল পেয়েছিলেন না? সেটা কিন্তু আমি পাঠিয়েছি। খুলে দেখেছেন নিশ্চয়ই। কেমন লাগলো জিনিস গুলো? আমি জানি শাড়িটা আপনার অনেক পছন্দ হয়েছে। শাড়িটা পেয়ে তো আপনি একদম বুকে জড়িয়ে ধরে বসেছিলেন তাই না। কি ভাবছেন তো আমি এটা কিভাবে জানলাম?

আমি যে আপনার মনে নিজের জন্য জায়গা করতে একটু একটু করে সক্ষম হচ্ছি তা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি। আমার মনে হয় আমি নিজের বেশ কিছুটা জায়গা আপনার মনে তৈরি করেও ফেলেছি। কি ঠিক বললাম তো? এখনই এতো লজ্জা পাবেন না। আমি আমার দেওয়া শাড়ি-অলংকারে সজ্জিত আমার প্রিয়তমার লজ্জা রাঙা মুখ আমি নিজের চোখে দেখতে চাই। আমি আমার প্রিয়তমা লজ্জা রাঙা লাজুক হাসিতে বারবার ঘা’য়ে’ল হতে চাই।

আপনি কি আমার দেওয়া শাড়িতে নিজেকে জড়াবেন? আমার দেওয়া অলংকারে নিজেকে সাজিয়ে তুলবেন? কিন্তু একটা শর্ত আছে, আপনি নিজে খোঁপায় কোনো ফুল পড়তে পারবেন না। আপনার খোঁপায় আমি যত্ন করে ফুলের মালা গেঁথে দিবো। কেমন? ওহ্ হ্যা আরেকটা কথা, আমি কিন্তু আপনাকে এতো ‘আপনি, আপনি’ করতে পারবো না। আপনাকে যেদিন প্রপোজ করবো সেদিন থেকে আপনাকে আমি তুমি করে বলবো ঠিক আছে?

আর আপনিও আমাকে তুমি করে বলবেন। আপনি, আপনি বললে কেমন পর পর লাগে। আপনি তো আর আমার পর নন,একান্তই আমার ব্যাক্তিগত নিজের মানুষ। তাই তো? আমি জানি আপনি আমাকে দেখার লোভ সামলাতে পারছেন না। খুব করে চাইছেন ‘আমি কে’ জানার জন্য। তবে আর বেশি অপেক্ষা করাবো না আপনাকে। এবার সময় এসেছে আপনার সামনে আসার। খুব শীঘ্রই আপনার সামনে এসে আপনাকে চমকে দিবো হিহিহি। এখন আমাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ুন। বেশি রাত জাগবেন না একদম। ভালোবাসি’।

প্রণয়াসক্ত পর্ব ৬

“মেসেজ’টা দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। এভাবেও কাউকে এতো’টা ভালোবাসা যায় বুঝি? উনার প্রতি আমার মুগ্ধতা আরও বেড়ে গেলো। আমি সত্যি ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমের দেশে তলিয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারি নি”।

প্রণয়াসক্ত পর্ব ৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.